Skip to main content

Full text of "Cabbages And Kings"

See other formats


(051019025৩9 5100. 181768 
2 200৮9] 2 (0, 13601 


1391585911 21190818102) 5 
15261 0010660108,0100 8৮ 


প্রথম প্রকাশ : শ্রাবণ ১৩৬২ 


অন্থবাদ ত্বত্ব আজ্েয়ী মুখোপাধ্যান়্ 


প্রচ্ছদ শ্রৰীর সেন 


প্রকাশিক। £ আরতি ৮ক্বতী । অন্বেষা । 
৮৯ এ, এন কে. ঘোষাল রোড । কলকাতা-৭০০০৪২। 
সু্ণ : জগন্নাথ পান শান্তিনাথ প্রেস । 
১৬, ভেমেন্দ্র সেন সীট, কলিকাতা1-৭০০ ০০ ৬ 


কন্তাতেজ্েজ্ন যশ ক্কিং 






এ শর, ইস্ট 


০ 
ক ০৫ চি 
এ « 


4 // ১7, ॥ 
৮19 4 /্ি রা 






4. 


্ দিন সেলিনা ঠর রথ 
৮648 ৮ না ৰ রখ 
পে ৮. হ হলেও ৮৭ রা 
টি 45 রিযিক 





৫4 





ও তহ্হন্ম্ী 
( ভই্উজ্নিক্স্ম নিভন্নী তকপাল্লউশন্ন ) 
১৮৬২--১৯১০ 


আঅনুবাদকের 1কাক্িয়ৎ 
ওয়ালরাস আর কাঁরপেনটার গিয়েছিল অয়েস্টারঞ্ষের বাড়িতে-_ তাদের গর 
শোনাতে ৷ প্রবীণ অয়েন্টারেরা গল্প শুনতে চাঁয় নি কিন্ত যুব-অয়েস্টারের! বেরিয়ে 
পড়েছিল। জুতোর গল্প, জাহাজের গল্প, শীলমোহরের ছাপের গল্প ইত্যাদি অনেক 
গল্প হল _শুয়োরেস ডান! গজায় কি না, বীধাকপি আর বাক্তার মধ্যে গ্রভেদ 
কোথাঁয়--এই সব বিচারের শেষে একটিও অয়েস্টার রইল ন গন শুনতে, ওয়াঁল- 
রাসের পেটের মধ্যে কতক মেধোঁল, রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে 
বাঁকিদের সাবাড় করপ কারপেনটার । 
আযালসকে একটা কবিতা! শুনিয়েছিল টুইডল্ডাম আর টুইভলডি--ওয়াঁলরাস 
আযাণ্ড দি কাঁরপেনটার-যার বিষয়বস্তু উপরোক্ত উপাখাঁন। আযলিসের 
আয়নার দেশের মধ্য দিয়ে আজব ভ্রমণের কাঠিনী, সর্বকালের কিশোর কিশোরীদের 
জন্যে যা লিখে অমর হয়েছেন লুইস ক্যারল, এই কনিতা আবার সেই থ. দি 
লুকিং গ্লাস-এর অংশ । 
পলাতক ৫. হেনরী গিয়ে পড়েছিলেন তেমনি এক দেশে, এক ব্যানান। 
বিপাবলিন-এ, যেখানকাঁর পারদধমী জনতা ঘুব ওয়েস্টারদের মতোই চঞ্চল আর 
বিশ্বাসী । তাঁদের রাজ'-বাজ| খেলায় হুলিয় রাখে কলবি বাপা নী ধুরদ্ধরের দল, 
বুহৎ্শত্তির গান-বোট যাঁদের কুটনীতির প্রসান ভবসাঁ এদের ওখালরাস বশে 
চিহ্নিত করেছেন লেখক । আর আহে ফ্িটিকেবা, ক্ণামেরা-কীথে ট্যাবিদ্ট আর 
দেশত্যাগী ড্রপআউটদ-এব দল- এর! কাঁরিপেনটার । নব্রাশ্রয, নি!বিরোধী 
মু-্দয় শপ্লিং বুকের রম শাস খুবলে খেয়ে চলেছে বা কেবল স্প্যানিশ 
সমুদ্রের উপকূলে আঞ্চবিয়াতেই নয় (ও. হেনরর অজ্ঞাতবাসেব দেশটি আসলে 
হিলি হওুরাম ) বিশ্বের সকল অনুন্নত দেশেই চলেছে এই ভোজ পব। আর যা 
আজও শেষ হয়নি । 
আমেরিকান জাহিততা ছোটগল্পের মুকুটহীণ সমাট ও. হেনরীর একমাত্র 
উপন্থাস ক্যাবেজেন আযাণ্ড কিন | এই কাহিনীর প্রতিটি অন্চ্ছেদেই এক একটি 
প্রায় অটুট ছোট গল্প। তাদের বেঁধে রেখেছে খুবই আলগাঁভাবে একটি চিহ্নহীন 
স্তর, গ্রস্তাবনাঁয় ও শেষ উপাখ্যানে লেখক যার উল্লেখ করেছেন। ধৈর্যশীল পাঠক 
সুত্রটি অনুসরণ করে খুব একটা রুদ্ধশ্বাস রোমা অঙ্থভব হয়ত করবেন নী কিন্তু 
প্রতিটি চিত্রই বর্ণাঢ্য ও অভিনব । জুতো” আর “জাহাজ” শীর্ষক অনুচ্ছেদে 
পরিচ্ছন্ন হাঁসি ও কৌতুকের যেমন মারো, শ্যামরক ও তালবৃন্ততে তেমনি 
হাসির সঙ্গে ছড়িয়ে আছে মমুদ্ধ নিসর্গচিত্রের বর্ণনা । সর্বোপরি, কাহিনীটির 
আবহ সদীতে আছে একটা সাবিক বিষাদের সুর, অনেক লঘু ওচট্ুল কারুকাঁজের 
পিছনে করু* গম্ভীর বীণাঁর আওয়াজ । এই সুবের নিংস্কনে তুলতে পারা যায় না 
বিদূধকের গৌফের নিচে শ্বাপদের শ্বদস্তের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি বা হায়েনাঁর লালায়িত 
উচ্ছিষ্ট স্পর্শের অনুভূতি, য! খুঁজে চলেছে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে সরল বিশ্বাসের 
অকপট কোর্রিী কষেত্রগুলি। 

৬. 


ক্যাবেজেস গ্যাণ্ড কিংস--ও, হেনরীর নিজের দেখ! ও নিজের জীবনের সঙ্গে 
ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাক! কতকগুলি ঘটনার ইতিহাস---কাঁর অজ্ঞাতবাসের 
কালে যে ছোট্র দেশে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন তারই পতনোখানের বিষয়ে প্রেখা। 
স্মরূণ রাখা যেতে পারে, যে ছুৈবের শিকার হয়ে তাকে কারাবরণ করতে হয়ে ছিল, 
ক্যাবেজেস এাঁড কিংস-এর ঘটনাগুলি তার চ়ান্ত পরিণতির আগের পর্যায়ের 
বিবরণ--তাই মনে হতে পাঁবে যে এই চিরকিশোর গল্পকার তীর লেখ! সার্থক 
ছোটগন্পগ্রণি রচনা করার আগে যেন এই কাহিনীতে অনুশীলন করে নিচ্ছিলেন । 
করণচির, সরস মাধুর্যেভরা চিত্র আর নিভেজাল হাসির চিত্রগুলতে তাঁর রচনা- 
রীতির সবগুলি বৈশিষ্ট্যই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাবে। তার চেয়ে বড় কথ! 
এই যে এই কাহিনীর বিষয়বস্ত্র আজকের দিনেও বিন্ময়কর ভাবে, মর্ীস্তিকভাবে 
প্রাসঙ্গিক । কিন্ধ যে অনিবাধতা, এই ভাষান্তর কর্মটিতে অন্ুবাদককে প্রবুদ্ 
করেঠিল সেট! এর বিষয় বা বিস্তামের অভিনবত্ব বা রাজনৈতিক গ্রাসঙ্গিকত| নয়। 
কারাবাসের ফলেই চোঁক বা তার আগেকার অজ্জাতবাসের কিংবা পরের কয়েকটি 
বছরে নিউইয়র্কের পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর কালে, সমাজের নিচের তলার 
মান্গষদের সঙ্গে নিবিড় মেলামেশার ফলে অসংখ্য মার খাওয়া, হো৮ট খাওয়া, 
ভাগ্যের হাতে নানাভাবে নাস্তানাবুদ হওয়! মানুষজনের প্রতি অপরিসীম বোনা- 
বোধ ও. হেনরীর সকল রচনাকে পরিপুত করেছে। শুধু তাই নয়, এই সব 
বাতিল হয়ে যাওয়া, গ্থযজ-মেরুদণ্তী মানুষের সম্ভ! বা আত্ম! ব! মারাঠী-ভাষায় 
“পিপ্-এর মধ্যে শেষ পরধস্ত থেকে যায় একটা না একট! মূলগত নৈতিক আলম্ব, 
যত্ব করে দরদের সঙ্গে ও. তেনরী তাদের উদ্ধার করেছেন, তাঁর বর্ণনা কর! 
হতভাগ্যদের চরিত্রের মধ্যে। ক্যাবেজেস আযাণ্ড কিংস-এ এই জব চরিত্রের 
কয়েকজন পূর্বস্থরীকে চিনতে পেরে এবং তারপরে ও. হেনরীর জীবন ও সাহিত্য 
আলোচনায় কিছুটা সনিন্দ কালক্ষেপের পরে এই অন্থুবাদকের মনে হয়েছিল যে 
এই উপন্টাসের বাংলাভাষায় প্রচারের দরকার আছে লেখকের পরব্তা সফল 
সাহিত্যকতির পশ্চাৎপটটির পরিচয়ের জন্তে | 
অন্বাদটি সন্পূর্ণ আক্ষরিক, জ্ঞালন্র কোন বাক্যাংশও বাদ দেওয়া হয়নি। 
অনুবাদকের ব্যক্তিগত মত এই যে অন্য কোন উপায়ে ক্যাবেজেস্‌ আও কিংস-এর 
ভাষান্তর পূর্ণতা পেত ন।। কয়েকটি স্প্যানিশ শব্দের উচ্চারণ ও অর্থে হয়ত ক্রি 
থেকে গেছে । হিতৈষী বন্ধু কবি স্ুনীলকুমাঁর নন্দীর উৎসাহ ও প্রেরণার ফলেই 
অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন হয়েছে । নেভাংই অপরিচিত ভাতের প্রথম অনুবাদ 
প্রকাশ করতে “অন্বেষা? হে সাঁতস ও সহায়ত! দেখিয়েছেন সেজন্য এই প্রকাশনীর 
সঙ্গে ধারা ঘুক্ত তার! সবাই অন্ুবাদকের কাছে কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন! 
কলকাত। কান্তি চট্টোপাধ্যায় 


সী কুমাক অজ্ঞমক্াক 
হে দহ ৮৮৮ হু 


ক্যাবেজেন প্যাড কিংস 


সব্রধরের প্রস্তাবনা 


আঞ্চুরিয়াতে লোকে তোমাকে বলবে যে সেই উদ্বেল গণরাজ্যের 
প্রেসিডেন্ট মিরাফ্লোরেস প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন নিজের হাতে, 
সমুদ্রতীরের শহর কোরালিওতে । ওর বলবে যে আসন্ন বিপ্লবের 
অস্থবিধাগুলি এড়াতে তিনি তার পলায়ন পথে এই পর্যন্ত পৌছে- 
ছিলেন, তার সঙ্গে ছিল একটি আমেরিকান চামড়ার ব্যাগে এক লক্ষ 
ডলার সরকারী তহবিলের অর্থ, তার বাত্যাবিক্ষুব্ধ শীসনকালের স্মৃতি 
চিহ্ন, যে টাকা পরে আর পাওয়া যায়নি । 
এক রেয়াল দিলে যে কোন ছোট ছেলে তোমাকে দেখিয়ে দেবে শহরের 
পিছনে একটি কাঠের পুলের কাছে, তার সমাধিস্থল। সুন্দরী 
গাছের জলাভূমি ডিডিয়ে গেছে সেই কাঠের পুল। কাঠের একটি 
সাধারণ ফলক সেই সমাধির শিয়রে ৷ জ্বলন্ত লোহার শিক দিয়ে কেউ 
সেই স্মৃতিফসকে এই কথাগুলি লিখে রেখেছে £ 

রামন আনজেল দে লাক্রুস দেস 

ই মিরাফ্লোরেস 
প্রেসিদেনত দে লা রিপাবলিক! 
দে আনচুরিয়। 

কে সেম্যু হুয়েদ দিওস। 
প্রাণোচ্ছল এই জাতির চরিত্রের বৈশিষ্ট্য এই যে মৃত্যুর পরে তারা 
কোন ব্যক্তিকে তাড়া করে না। “ঈশ্বর তার বিচার করুন”__গণ- 
বিক্ষোভের অভিব্যক্তি এর বেশী এগোয়নি, যদিও এক লক্ষ ডলার 
নিখেজ হয়েছিল, যা! ছিল বহু আকাকিক্ষিত। নবাগত অতিথিকে 
কোরালিওর বাসিন্দারা বলবে তাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ছুঃখময় 
পরিসমাপ্তির কাহিনী । কেমন করে তিনি পালাবার চেষ্টা করেছিলেন, 
সঙ্গে নিয়ে সরকারী অর্থ আর ডনিয়া ইসাবেল গিলবাট, তরুণী 
আমেরিকান অপেরার গায়িকা। কেমন করে বিপক্ষ রাজনীতিক 


১ 


দলের কাছে ধর! পড়ে কোরালিওতে তিনি মার! যান নিজের মাথায় 
গুলি করে, অর্থকোষ বা সেনিওরা গিলবার্টকে পরিত্যাগ না করে। 
তারা আরে। বলবে যে নিয়া ইসাবেল ওর রোমহর্ষক ভাগ্যতরী 
বিশিষ্ট ভক্ত ও লক্ষ মুদ্রা হারানোর চড়ায় ঠেক খেয়ে নোঙর ফেলল 
এই শিস্তরঙ্গ উপকূলে আবার নতুন জোয়ারের অপেক্ষায় 
কোরালিওর লোকে বলে শীঘ্রই এই মেয়েটি একটি অন্থকুল জোয়ারের 
টান পেয়ে গেল ফ্রাঙ্ক গুডউইনের আকৃতিতে যে ছিল সেই শহরের 
একজন আমেরিকান নাগরিক, এবং অর্থবিনিয়োগকারী, যে ধনী 
হয়েছে সেই দেশের উৎপন্ন সামগ্রীর ব্যবসা করে, কদলী সম্রাট, 
রাবার রাজকুমার, ন'ল আর মেহগেনির জমিদার হিসেবে । তুমি 
শুনবে সেনিওরিটা গিলবার্ট ফ্রাঙ্ক গুডউইনকে বিবাহ করে 
প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর এক মাস পরে। যার ফলে ভাগ্যদেবী তার 
হাসিমুখ ফিরিয়ে নিতে না নিতেই ও তার হাত থেকে আর একটি 
উপঢৌকন আদায় করে নিল যা ছিল আরো দামী । 

ডন ফ্রাঙ্ক গুডউইন ক! তার স্ত্রীর সম্বন্ধে স্থানীয় লোকের! প্রশংসাই 
করবে । ডন ফ্রাঙ্ক তাঁদের মধ্যে রয়েছে অনেক বছর, তাদের শ্রদ্ধাও 
অর্জন করেছে । সেই সৈকত শহরের যতটুকু বিশিষ্ট সমাজ জীবন তার 
সম্রাজ্ঞী নিঃসন্দেহে ডন্‌ ফ্রান্কের স্ত্রী। এই রাজ্যের গভর্নরের স্ত্রী যিনি 
সম্মানিত স্প্যানিশ বংশোদ্ভবা “মণ্টেলিয়ন ই দলোরোসা দে লোস 
সানতস ই মেনদেস' সম্মানিত বোধ করেন যখন তিনি তার জলপাই 
রঙের আংটিপরা হাতে সেনিওরিট। গুডউইনের ডিনার টেবিলে স্াপ- 
কিনের ভাজ খোলেন । যদি তুমি তোমার উত্তর দেশের সংকীর্ণতী- 
বশত শ্রীমতী গুডউইনের চঞ্চল অতীতের কথা তোল, যে সময়ে ওর 
খুশীর জোয়ারে হালকা অপেরায় ভেসে যাওয়া! জীবন একজন বিজ্ঞ 
প্রেসিডেন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিল, অথবা সেই 
প্রেসিডেন্টের পতনের মূলে ওর ভূমিকা কি ছিল, তখন লাতিন 
জাতিস্ুলভ কাধ ঝশীকানিতেই পাবে উত্তর ব৷ প্রতিবাদ। কোরালিওতে 
সেনিওরিটা গুডউইন সম্বন্ধে লোকের মনে যে ধারণ ইদানীং ছিল তা 
ছিল ওর স্বপক্ষে, অতীতে তা যা-ই হয়ে থাক না কেন। 

তৰে তো! কাহিনী শেষই হয়ে গেল আরম্তের বদলে । বিয়োগান্তের 
উপনহাঁরে একটি রোমান্সের ক্লাইম্যাক্স সকল কৌতৃহুলের অবসান 


্‌ 


ঘটালো । কিন্তু আরো অনুসন্ধিংস্থ পাঠক ঘটনার সরল বিশ্যাসের 
ফাঁকে ঠাসবুনানী সুত্র ধরে এগিয়ে গেলে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ 
করতে পারবে । 

সমাধির ওপর মিরাফ্লোরেসের নামাস্কিত স্মৃতিফলকটি রোজ সাবান 
গাছের ছাল দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা হয়। এক বৃদ্ধ অর্ধরেড 
ইপ্ডিয়ান পরম্পরাপ্রাপ্ত অলস নিষ্ঠায় নিখু'তভাবে সেই কবরের 
পরিচর্যা করে। পরগাছা আর ঘাস সে ছেটে দেয়, পি'পড়ে, বিছা! 
আর গুবরে পোকা তুলে ফেলে দেয় আর প্লাজার ফোয়ারা! থেকে জল 
এনে ছড়ায় । এমন সুরক্ষিত কবর কোরালিওতে আর নেই। 
কেবলমাত্র ভিতরের সুত্রগুলির প্রতি নজর রাখলে বোঝা যাবে ষে 
সেই রেড ইগ্ডিয়ান গালভেদকে কেন একজন গোপনে অর্থ দেয় 
কবরটি সুরক্ষিত রাখার জন্য যে ব্যক্তি জীবিত অথবা মৃত প্রেসিডেন্ট 
মিরাফ্লোরেসকে কখনো দেখেনি আর কেনই বা সেই ব্যক্তি কখনো 
কখনো প্রদোষকালে বেড়াতে বেড়াতে দূর থেকে সেই অবহেলিত 
সমাধির দিকে শান্ত, বিষগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। 

কোরালিও ছাড়! অন্তর শোনা যায় ইসাবেল গিলবার্টের উচ্ছল জীবন- 
যাত্রার কথা । নিউ অলিরনসে ওর জন্ম, মিশ্রিত ফরাসী ও স্প্যানিশ 
প্রকৃতি ওর চরিত্রে সঞ্চারিত করেছিল উদ্দামতা ও উত্তাপ। শিক্ষা 
সে পেয়েছিল অল্লপই কিন্তু সহজাত জ্ঞানে ও চিনত পুরুষদের, বুঝত 
তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য । ওর চরিত্রে সাধারণ স্ত্রীলোকের থেকে ছিল 
অনেক বেশী হঠকারিতা, ছিল পাথিব সুখের ভোগতৃষ্ণা। কোনব্ূপ 
বন্ধন ছিল অসহনীয়। ও ছিল পতনের পরে তিক্ততা আসার পূর্বের 
অবস্থার মতো, জীবনকে একটি গোলাপ করে ও ধারণ করত 
ওর বুকে । 

ইসাবেল-_-তার পদপ্রান্তে অসংখ্য অনুগত পুরুষের মধ্যে একজনের 
প্রতিই আকৃষ্ট হয়েছিল । তার পাষাণ কঠিন হৃদয়ের নিভূততম 
প্রকোষ্ঠের চাবিকাঠি প্রতিভার দীপ্তিতে ভাম্বর কিন্তু অস্থির আঞ্ুরিয়ার 
প্রাক্তন শাসক একমাত্র প্রেসিডেন্ট মিরাফ্লোরেসই হস্তগত করেছিলেন। 
তবে কেন আমরা দেখি তাকে ফ্রাঙ্ক গুডউইনের স্ত্রী হিসেবে ( কোরা- 
লিওর অধিবাসীদের কথায় ) সুখী, নিস্তরঙ্গ, স্বপ্রময় কর্মহীন জীবন- 
যাপন করতে ? 


কাহিনীর ভিতরের স্ুত্রগুলি বহুদূর বিস্তৃত, সমুদ্র পেরিয়ে স্বুদূর 
বিন্যস্ত । তাদের অনুসরণ করলে জান। যাবে কেন ক্যালিফোনিয়! 
ডিটেকটিভ এজেন্সির শর্টি ও'ডে চাকরি হারিয়েছিল। আর হালক। 
বিনোদন ও সুখকর খেলার ছলে ঘুরে বেড়ানে। যাবে আনন্দের দেবতা 
মমাসের সঙ্গে উষ্ণমগ্ডলের তারা ঘের আকাশের নীচে যেখানে এক 
এক সময় বিষাদের দেবী মেলপোমেনি গম্ভীর পদক্ষেপে বিচরণ 
করতেন। কখনে। বা হাসি ছড়িয়ে পড়বে প্রভূত বনমাল। বা ভ্রকুটি 
কুটিল পাথরে যেখানে এককালে জলদস্ুর হাতে নিগীড়িতদের আর্ত 
ক্রন্দন শোনা যেত। বর্শা আর তলোয়ার ফেলে দিয়ে তরল হাস্য 
পরিহাসের বাগবিন্তাস করা যাক, প্রাচীন মরচেধরা রোমান্সের পিপে 
থেকে ফৌটা ফৌট! হালকা হাসি সঞ্চয় করা যাক, কেনন। হাসির জন্ত 
মুচকে ওঠা ও্ঠের আকৃতির এই বঙ্কিম তটরেখায় পাঁতিলেবু গাছের 
ছায়ায় আনন্দের অন্ুুসরণই প্রশস্ত | 

বস্তুতঃ স্প্যানিশ সমুদ্রের অনেক কাহিনী বলার রয়েছে । মহাদেশের 
সেই অংশটুকু যাঁর তীরে বঞ্চীক্ষুব্ধ ক্যারিবিয়ানের ঢেউয়ে ধোয়। 
তটভূমি, সমুদ্র সংলগ্ন ছুর্গম উষ্ণমণ্ডলের নিবিড় বনমালা ও উত্ত 
কণ্ডিলিয়েরার বেড়াজাল এখনো পর্বস্ত রহস্ত ও রোমান্সে ঘেরা 
অতীতে জলদন্থ্য আর বিপ্লবীরা এর পাহাড়ের শিখরে শিখরে 
প্রতিধ্বনি তুলেছিল আর এর আকাশে কণডর শকুন অনন্তকাল ধরে 
ভেসে বেড়ায় কেনন! ঘন সবুজ বীথিকার অন্তরালে ঠগী আর লুঠেরার 
দল তাদের কৃপাণ বন্দুকের ঝনঝনায় নিয়তই করেছে অফুরন্ত 
ভোজের আয়োজন । 

কখনো এই অঞ্চল অধিকার করেছে জলদন্থ্যুরা, কখনে। বা নিষ্ঠুর 
বৃহৎ শক্তি কখনে। বা বিদ্রোহী জনগোষ্জী। এতিহাসিক তিনশ মাইলের 
তটভূমি কখনো স্পষ্ট করে বুঝতে পারেনি যথার্থভাবে কাকে তার প্রভু 
বলে ডাকবে! পিৎসারো, বাঁলবোয়া, স্তর ফানসিস ড্রেক আর 
বলিভার তাঁদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল এই অঞ্চলকে খুষ্ট 
সাআ্াজ্যের অন্তভূক্তি করতে । স্যর জন মরগ্যান, লাঁফিৎ এবং অন্যান্ 
খরতরবারধারীরা এই উপকূলে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার নামে অনেক 


কামানের গোলা ব্যয় করেছে। 
সেই খেলা আজও চলছে। দস্যুর কামান থেমেছে কিন্তু টিনের 


& 


পটচিত্রের শিল্পী, ফোটে! বড় করার ছি"চকেরা, কোডাক কাধে 
ট্যুরিস্ট আর ভাগ্যান্বেধী ভদ্র ফকিরের দল খুঁজে বের করেছে এই 
দেশ আর তারা চালিয়ে যাচ্ছে সেই খেলা । জর্মনী, ফ্রান্স আর 
সিসিলির মদের ব্যাপারীরা তাদের খুচরে। সংগ্রহ এখান থেকেই করে। 
ভদ্র ভাগ্যান্বেধীরা শাসকদের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করে রেলপথ 
স্থাপন, বা কোন বাণিজ্যিক সুবিধার খসড়া প্রস্তাব নিয়ে । এই সব 
ছোট ছোট যাত্রাদলের সঙেরা সরকার চালানো আর ষড়যন্ত্রের খেলা 
চালিয়ে যায়। তার পরে একদিন বৃহৎ একাট জাহাজ কামান সমেত 
নিঃশব্দে এসে দাড়ায় আর এদের সাবধান করে দেয় যেন তাদের 
খেলনাগুলি ভেঙে না ফেলা হয়। আর এই সব পরিবর্তনের মধ্যে 
আসে নান ছুঃসাহসাী, তাদের খালি পকেট ভরতি করতে । হালকা 
তাদের মন, ব্যস্ত মস্তি, আধুনিক রূপকথার রাজপুত্র, সঙ্গে আছে 
আযালাম দেওয়া ঘড়ি যার সাহায্যে ভাবাঁবেগের চুম্বনের চেয়ে নিভু ল- 
ভাবে সুন্দরী ক্রান্তীয় দেশকে তার শতাব্দীর নিদ্রা থেকে জাগানে। 
যায়। সেই রূপকথার রাজকুমার হাতে শামরকের *একটি পল্লব নয়ে 
গবভরে দ্রাড়িয়েছে প্রভূত তালবৃন্তের বিপক্ষে, সে-ই তাড়িয়ে দিয়েছে 
মেলপোমেনিকে এবং কমোডকে দক্ষিণ সমুদ্রের তটরেখার সেজে 
ফুটলাইটের সামনে নাচের আসরে নামিয়েছে। 

অতএব, ছোট্র একটি গল্পে অনেক বিষয়ে বলার রয়েছে । সম্ভবত 
( থ. দি লুকিং গ্লাসের ) ওয়ালরাসের নোংরা কানেই এই গল্প শোনাবে 
ভালে কারণ এই কাহিনীতে সত্য সত্যই আছে জুতোর গল্প, জাহাজের 
গল্পঃ সীলমোহরের গালার ছাপের গল্প আর বাধাকপি আর রাজার 
বদলে প্রেসিডেন্টের কথা । 

এর সঙ্গে মোগ করা যাক একটু প্রেম আর প্রতিচক্রাস্ত আর এই 
ধধার সবত্র ছড়িয়ে দেওয়! যাক ডলার । আহ? ডলার যাউত্তপ্ত হয়েছে 
কেবল নিরক্ষীয় সুর্যের প্রখর তাপেই নয়, ভাগ্যান্বেবীদের হাতের 
উত্তাপেও আর প্রকৃতপক্ষে জীবন মানেই তো তাই, যার সম্বন্ধে কত 
কিছু বলবার রয়েছে যা বলতে বলতে সব চেয়ে বাক্যবাশীশ 
ওয়ালরা সও বুঝি ক্লান্ত হয়ে পড়বে ।-*" - 
পাস 


*আয়ার্ল খের স্বাধীনতার প্রতীক একটি গাছের পল্ল: 


এক 
ফকঙ্গ ইন ছি অরানিও 


শেয়াল বেরুল সকালে ॥ 


মধ্য'দনের উত্তাপে কোরালিও বিশ্রাম নিচ্ছিল, যেন এক স্তুলবুদ্ধি 
সুন্দরী পাহারা ঘেরা হারেমে আরাম করছে । শহরটি ছিল সমুদ্রের 
ধারে একফালি পলিমাটির তীরভূমিতে । এমারেলডের ব্যাণ্ডে গাথা 
একটি মুক্তোর মতে! এই শহর । শহরের পিছনে হুমড়ি খেয়ে ঝুঁকে 
আছে শহরের বুক বেয়ে সমুদ্রতটের লাইন ধরে কডিলিয়েরা পবত- 
শ্রেণী। সামনে সমুদ্রের বিস্তার, হাস্তমর জেলেরক্ষা ভ্রকুটিকুটিল 
পাহাডের থেকেও ন্যায়নিষ্ঠ। মন্থণ তীরে এসে টেউগুলি ঝুপ ঝুপ 
আওয়াজ করে মিলিয়ে যাঁয়। তোতাজাতের পাখিরা চিৎকার 
করছে কমলা আর শিমুল গাছের ঝোপ থেকে । তাল শ্রেণীর নমনীয় 
পাঁতাগুলি কাঁপছে একতানের কোরাসের মতো প্রধান। গায়িকাঁর 
আগমনের ইঙ্গিত পেয়ে। 

সহস। শহর উত্তেজনায় ভরে যায়। স্থানীয় একটি ছেলে ঘাসে ঢাক। 
রাস্তায় দৌড়ে এসে চেঁচায়, “বুসক। এল মেনিওব গুডউইন। 
আভেনিদে। উন তেলিগ্রামা পর এল্‌।” বার্তা ছড়িয়ে যায় তাড়াতাড়ি । 
কোরালিওতে কারুর টেলিগ্রাম আসে ন। সচরাচর । সোনওর 
গুডউইনের নামে হাকাঠাকি কয়েকটি দৌসাহেবী গলায় শোন। গেল 
সমুদ্রতীরের সমান্তরাল রগ ।টি লোঞ্জনে ভরে গেল দেখতে দেখভে । 
সকলেই চায় খবরটি তাড়াতাড়ি পৌছে যাক । মেয়েদের দল, গায়ের 
রং খুব ফিকে জলপাই থেকে ঘন বাদামী, রাস্তার কোণে কোণে জড়ে। 
হল আর করুণ সুরে বলতে লাগল, উন তেলিগ্রামা পব সেনিওর 
গুডউইন। নগর কোটাল, ভন সেনিওর এল করোনেল এনকার- 
নাসিওন রিও, যিনি স্বত্বারূট দলেব পক্ষীয় আর যিনি সন্দেহ করেন 
গুডউইনের আন্রুগত্য স্বত্বার বাইরের দলের প্রতি, তিনি বললেন 
ফিসফিসিয়ে “আহা?, আর গোপন ডায়েরীতে লিখলেন এই ঘটনাটি 


ঙ 


দোষ প্রমাণের সাক্ষ্য হিসেবে যে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে সেনিওর গুভউইন 
একটি টেলিগ্রাম পেয়েছিল । 

এই সব গোলমালের মধ্যে এক ব্যক্তি এসে দাড়াল ছোট্ট একটি 
বাড়ির ভিতর থেকে আর বাইরে তাকিয়ে দেখল । দরজ।র ওপরে 
একটি বিজ্ঞাপন “কেওগ ও ক্ল্যানসি') শুনলেই বোঝা যায় বিদেশী নাম। 
ব্যক্তিটি বিলি কেওগ, সৌভাগ্য আর সমৃদ্ধির সন্ধানী বালসেনা, 
বর্তমানে স্প্যানিশ সমুদ্রতটে ভ্রাম্যমান। টিনের পট আর ফোটোগ্রাফ, 
এই অস্ত্র নিয়ে এই নিরাশার উপকূল আক্রমণ করেছে সে ও ক্লযানসি। 
দোকানের বাইরে ছুটি বড় ফ্রেমে তাদের শিল্প ও কলার নিদর্শন 
সাজানো আছে। 

কে'গ দরজার পথে মাথা হেলিয়ে দাড়িয়েছিল, তার সাহসী ও 
হাসি খুশী মুখে কৌতুহলের ছাপ। রাস্তার কোলাহল ও চাঞ্চল্যের প্রতি 
তার আগ্রহ । যখন জানল কেন এই শোরগোল তখন মুখের একদিকে 
হাত রেখে চিৎকার করল, “হে ফ্রাঙ্ক” এত ভরাট গলায় ঘে নেটিভদের 
ক্ষীণ কলরোল তাতে চাপা পড়ে গেল এবং থেমে গেল। পঞ্চাশ গজ 
দূরে আমেরিকার কনসালের বাসস্থান । এই চিৎকারে সেই বাড়ির 
দরজ! থেকে গুডউইন বেরিয়ে এলো । কনসাল উইলার্ড গেডির সঙ্গে সে 
এতক্ষণ ধূমপান করছিল কনস্থুলেটের পিছনের বারান্দীয়, কোরালিওর 
সবজনম্বীকৃত শীতল জায়গায় । 

“চটপট এসো চিৎকার করে কেওগ, “শহরে দাজ। বেধে গেছে, তোমার 
নামে একট) টেলিগ্রাম এসেছে, ভাই । এ সব ব্যাপারে তেশমাকে 
সাবধান হতেই হবে। পাবলিকের অনুভূতি নিয়ে হেলাফেল। কর! 
ঠিক নয়। ভায়োলেটের স্ুগন্ধভর! গোলাগী চিঠি তোমার নামে 
শীঘ্রই আসছে আর তার পরেই এ দেশে নামবে বিপ্লব 

গুডউইন রাস্তায় নেমে এগিয়ে আসে, ছেলেটির হাত থেকে কাগজটি 
নেয়। গবাক্ষিনীরা তার দিকে তাকিয়ে রইল, লঙ্জাজড়িত সম্ভ্রম 
তাদের চোখে, কেন না তার মতো পুরুষ ওদের আকর্ণ করে। সে 
ছিল দীর্ঘাকৃতি, মাথার রং লাল, পরনে সাদা লিনেনের খেলাধূলার 
পোশাক আর হরিণের চামড়ার জুতো । আচরণ অত্যন্ত শিষ্ট, যেন 
একধরনের করুণা মেশানে! উদ্ধত ভাব ্বভাবন্থলভ দয়ালুতায় 
প্রশমিত। টেলিগ্রাম হাতে পৌছল, বাহক কিঞ্চিৎ দক্ষিণা পেল, 


ণ 


উত্তেজনা কমলে নগরবাসীরা কৌতুহল তাদের যেখান থেকে টেনে 
এনেছিল ছায়ার নীচে ফিরে গেল, স্ত্রীলোকের আবার কমলালেবু 
গাছের নীচে মাটির উন্ুনে রুটি সেঁকতে লাগল বা তাদের দীর্ঘ, সরল 
কেশদাম পরিচর্যায় ব্যাপৃত হল, পুরুষের! সিগারেট আর আঁড্ডা ফের 
শুরু করল চায়ের দোকানে । 

গুডউইন কেওগের দোকানের প্রবেশপথের নি'ড়িতে বসে টেলিগ্রামটি 
পড়ল। যেটি পাঠিয়েছে বব ঈঙ্গলহার্ট, রাজধানী সাজমাটেও-তে 
সে থাকে, আশী মাইল ভিতরে । ইঈলহাট আমেরিকান, সোনার 
খনির মালিক, যে বিপ্লববাদী আর “ভাল লোক" । টেলিগ্রামটির 
রচনাকৌশল থেকে তার কল্পনা ও বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। 

তার কাজ ছিল রাজধানী থেকে গোপন সংবাদ কোরালিগতে বন্ধুর 
কাছে পাগনো। স্প্যানিশ ব। ইংরেজিতে ভা কর। চলত না কেননা 
আঞ্চুরিয়ার রাজনৈতিক চক্ষু খুব সজাগ । শাসকদল আর বাইরে 
দল সর্বদা তটস্থ। কিন্তু ইঙ্গলহাট কুটনীতিতে দড়। একটি মাত্র 
সাংকেতিক ভাবার উপযোগ সে নরাঁপদে করতে পারতো, জোরালো 
এবং শক্তিশালী শ্্যাং। অতএব এই সেই খবর ষেট। পিছলে বেরিয়ে 
এসেছে কৌতুহলী সরকারী কর্মচারীদের হাতের ভিতর দিয়ে আর 
গুডউইনের চোখের সামনে এখন রূয়েছে। 

“হিস নিবস গতকাল জ্যাক র্যাবিট লাইন দিয়ে চলে গেছেন। 
কিটির মধ্যে সব খুচরো আর এক বাগ্ডিল মস্লিন সঙ্গে নিয়ে যার 
ব্যাপারে তিনি প্রায় উন্মাদ। বুডল্‌ ছয় অস্কের নীচে । আমাদের 
দঙ্গল ভালই আছে, তবে আমর! স্পনডুলিক গুলি চাই। তুমি 
পাকড়াৰে। প্রধান ব্যক্তি আর শুকনো পন্তগুলি জলের দিকে যাবে । 
কি করতে হবে তুমি জানে 1 বব?” সংকেত বাতা অদ্ভুত হলেও 
গুডউইনের কাছে তার মধ্যে কোন রহন্তই ছিল না। আঞ্চুরিয়াতে 
যে কয়জন ফাটকাবাজ আমেরিকান প্রথমে আসে সে ছিল তাদের 
মধ্যে সফলতম। এই সাফল্যের শিখরে উঠতে তাকে প্রয়োগ করতে 
হয়েছে সুক্্রবিচার আর দৃরদৃষ্টি। রাজনৈতিক গোপন চক্রান্ত ব্যবসারই 
একটি অঙ্গ হিসেবে সে নিয়েছিল । তীক্ষ মেধার জন্য প্রধান চক্রান্ত- 
কারীদের ওপর তার প্রভাব ছিল কম নয়, সে ছিল যথেষ্ট ধনী যার 
ফলে নীচু ধাপের আমলাদের শ্রদ্ধা পেতেও তার অস্থবিধ হয়নি । 


৮৮ 


বরাবরই একটি বিপ্লবী দল থাকে, আর বরাবরই সে সেই দলের সঙ্গে 
যুক্ত থাকে । কারণ, যখনই নতুন সরকার আসে, তার অন্থুগতরা 
তাদের পরিশ্রমের পুরস্কার পায় সেই সরকারের হাতে । বততমানে 
একাট লিবারেল পাটি প্রেসিডেন্ট মিরাফ্লোরেসকে স্রাবার চেষ্ট। 
করছে। চাকা যদি সফল ভাবে ঘোরে তাহলে গুডউইনের ত্রিশ 
হাজার একর শ্রেষ্ঠ কফি চাষের জমি পাবার কথা। প্রেসিডেন্ট 
মিরাফ্লোরেদের সাম্প্রতিক কয়েকটি কাজকর্মে গুডউইনের বিচক্ষণ 
বুদ্ধি অনুভব করেছিল ষে বিপ্লব ছাড়াই সরকারের পতন আসন্ন আর 
এখন ইঙ্গলভাটের টেলিগ্রাম তার উপলব্ধির সমর্থনই করছে । 

যে টেলিগ্রাম আঞ্ুরিয়ার সরকারী ভাষাবিদেরা! তাদের স্প্যানিশ বা 
প্রাথমিক ইংরেজি জ্ঞানের সাহায্যে বুঝতে পারেনি সেটা গুডউইনের 
কাছে পৌছে দিল একটি উত্তেজক খবর। সে জানল যে ব্রাস্ট্রের 
প্রেসিডেন্ট সরকারী অর্থভাগ্ডার সঙ্গে নিয়ে রাজধানী ছেড়ে গলে 
গেছেন । আরো জানল যে তার পলায়নের সঙ্গিনী সেই বিজয়িনী 
হুঃসাহসী ইসাঁবেল গিলবাট অপেরার গায়িকা, ঘার দলকে শ্রেসিডেনট 
সম্প্রত জাপ্যাবিত করেছেন এমন আডঙ্বরে যা সাধারণত রাজকায় 
মৃতিথিদের কা হয়! জ্যাক রাবিট লাইনের অর্থ আর কিছুই নয়, 
কবল কোরালও আর এভধানীর মধ্যে খচ্চরের পিঠে যাওয়াআসার 
প্রচলিত ব্যবস্থা । বে হীঙ্গত ররেছে বুডল ছয় অস্কের শচে তা থেকে 
জাতীয় তহবিলের অবস্তা! করশভাবে উদঘ।টিত। আরো অত্যি 
যে পরবতা শাসকদল, যাঁদের পথ এখন পরিষ্কার, এই অর্থ তাদের 
দরকার । জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা না হলে আর 
বিজয়াদের অধিকারে অর্থ শা থাকলে অবস্থা বেশ বিপদসংকুল। 
অতএব একান্ত প্রয়োজন প্রধান ব্যক্তিটিকে পাঁকড়ানো মার যুদ্ধ ও 
প্রশাসনের প্রধান সম্বল অর্থ ফিরে পাওয়া চাই । 

গুডউইন টেলিগ্রামটি কেওগকে দিল । বলল, “পড়ে দেখ বিলি, বব 
ইঙ্গলহাট পাঠিয়েছে । সাংকেতিক ভাষ। তুমি কি ধরতে পারছ ? 
মিড়ির অপর প্রান্তে বসে কেওগ মনযোগ দিয়ে পড়ল । 

“এটা কোন সাংকেতিক ভাষাই নয়” অবশেষে সে বলল। “এর 
নাম সাহিত্য আর তার মানে ভাষ। ব্যবহারের একটা রীতি য! 
লোকের মুখে দেওয়া হয়েছে। কল্পনার সাহায্যে যারা লেখে তাদের 


৪১ 


কখনো! শেখানে। হয়নি । এই ভাষা আবিষ্কুত হয়েছিল ম্যাগাজিনে 
কিন্ত আমি জানতাম না যে প্রেসিডেন্ট নরভিন গ্রীণ তার সম্মতির 
ছাপ দিয়েছেন কিনা । এখন আর এটা সাহিত্য নয়ঃ এখন এটা 
ভাষা। অভিধান এর সংজ্ঞ। দিতে চেষ্ট। করে সিদ্ধান্ত দেয় এটি 
কথ্য ভাষা। যখন পশ্চিমের ইউনিয়ন এই ভাষা মেনে নিয়েছে 
তখন খুব শাভ্রই একটি জাতি গড়ে উঠবে যারা এই ভাবায় কথা 
বলবে ।' 

তুমি বড়বেশা ভাবাতত্বের কথা এনে ফেললে বিলি” গুডউইন 
বলল, “তুমি কি এর মানেট। বুঝতে পেরেছ ?' 

“নিশ্চয়” সেই ভাগ্যবাদী বললে, “সব ভাষাই তার কাছে সহজ 
হয়ে আসে যাকে তা বুঝতেই হবে । আমি একবার প্রাচীন চাইনিজ 
ভাষায় দেওয়া স্থান ত্যাগ করার আদেশ বুঝতে ভুল করতে পারিনি 
ঘখন সেই আদেশের পিছনে একটি গাদা বন্দুকের নল আমার পিঠে 
ঠেকানে। হয়েছিল। আমার হাতে ধরা এই ছোট সাহিত্যিক প্রবন্ধটিব 
অর্থ একটি খেল। যার নাম “ফকপ ইন দি মরনিং”। কখনে। খেলেছ 
ফ্রাঙ্ক, বখন তুমি ছোট ছিলে?” 

'মনে পড়ছে» গুডউইন হেসে বললে, 'দবাই পরস্পরের হাত ধরে 
আর... না, না তা নয়, বাধা দিল কেওগ, “একটা চমৎকার দৌডবাপের 
খেল! তুমি গুলিয়ে ফেলছ অল রাউণ্ড দি রোজ বুশের সঙ্গে । ফকস 
ইন দি মরনিং-এর আসল কথাটা হাত ধরাধরির একেবারেই উলটো । 
আমি বলছি কেমন করে এই খেল। খেলতে হয়। এই প্রেসিডেন্ট 
ব্যক্তিটি আর তার খেলার সাথী সান নাটেও থেকে দাড়িয়ে উঠে 
টেচিয়ে বললে, “ফকস ইন দি মরনিং”। ভুমি আর আঁি এখানে 
দাড়িয়ে বলি “গুজ আযাণ্ড দি 211৩4” ওর। বলবে, “লগুন পৌছতে 
ক'মাইল পথ”, আমর বলি, "অল্পই, যদি তোমার লম্ব। ঠ্যা কতজন 
বেরিয়েছে ?” ওরা বলবে, “অনেক, অনেকজন ধরতে পারো কি ?” 
আর তক্ষুণি খেল। শুরু হয়ে গেল) 

গ্ুডউইন বললে, 'বুঝলাম, কিন্ত গুজ আযাণ্ড দি গ্যাগ্ডারকে আমাদের 
হাতের ফাক দিয়ে পালাতে দেওয়া ঠিক নয়, তাদের পালকের দাম 
অনেক । আমাদের দল সরকারের খালি কর। জুতো পায়ে গলাতে 
সক্ষম আর প্রস্তত। কিন্তু ট্রেজারি যদি খালি থাকে তাহলে আমর! 


১ও 


ততক্ষণ ক্ষমতায় থাকব ঠিক যতক্ষণ পৌষ-না-মানা ঘোড়ার পিগে একটি 
শিশু থাকতে পারে । আমাদের শেয়ালের খেল। খেলতে হবে এই উপ- 
কুলের প্রতি ফুট জমির ওপর নজর রেখে যাতে তারা এই দেশের 
বাইরে পালাতে না পারে।, 

কেওগ বললে, 'খচ্চরের পিঠে আসার প্রোগ্রামের হিসাব অনুযায়ী সান 
মাটেও থেকে আসতে পাচ দ্রিন লাগবে । আমাদের পাহারার ঘণটিগুলি 
তৈরীর জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে। সমুদ্রতীরে কেবল তিন 
জায়গা থেকে ভেসে যাওয়ার আশা তারা করতে পারে, এখান থেকে 
সলিটাস থেকে আর আলাজান থেকে । এই' [তন জায়গায় পাহার। 
দিতে হবে। দাবার প্রবলেমের মতে। সহজ 1! ফক্স্-এর চাল আর 
তিন চালে মাত করতে হবে। ও গুজি, গুজি গাণ্ডার, কোথা যাও 
ভাই! সাহিত্য পদবাচ্য টেলিগ্রামের কৃপায় এই তমসাচ্ছন্ন পিতৃভূমির 
সম্পদ অটুট থাকবে সেই খাঁটি রাজনৈতিক দলের হাতে যারা 
সরকারের পরিবর্তন চাইছে ।, 

প্রকৃতপক্ষে কেওগ অবস্থার যথার্থ বিশ্লেষণ করেছিল । রাজধানী 
থেকে নেমে আসার রাস্তা পর্যটনের পক্ষে অত্যন্ত ব্লান্কর। ধু'কতে 
ধুকতে আসা, কখনে। বরফের মতে। ঠাণ্ডা, কখনে। গরম, ভিজে স্যাত 
সেঁতে, কখনো বাঁ খর । পথ গিয়েছে উত্তুঙ্গ পাহাড়ের গা বেয়ে, পচা 
দড়ির মতো পাক দিয়ে, কোথাও নেমে গেছে বরফখতল নদীর ভিতর 
আর সাপের মতো! এ'কেবেকে গেছে শুধের আলে! পৌঁছয় ন। 
এমন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে, যার মধ্যে মারাত্মক পোকামাকড় আর 
জানোয়ারের বাস। সানুদেশে এসে পথ ত্রিখুলের মতো৷ তিনটি 
ধারায় বিভক্ত হয়েছে, মধ্যেরটি গিয়ে শেষ হয়েছে আলাজানে। 
একটি শাখা এসেছে কোরালিওতে, তৃতীয়টি দ্বিখণ্ডিত করেছে 
সলিটাসকে। পাহাড়ের সানুদেশ থেকে সমুদ্রের মধ্যে মাইল পাঁচেক 
চওড়া পলিমাটির তীরভূমি। এইখানে নিরক্ষীর বনমালা সব চেয়ে 
ঘন, গভীর। জঙ্গল থেকে এখানে-সেখানে খানিকটা জমি পরিক্ষার 
করে কলা, কমলালেবুর বাগান করা হয়েছে। বাকি অংশে বন্য 
প্রকৃতির উন্মাদ বিস্তার । বাঁদর, টেপির, জাগুয়ার, কুমির আর অন্যান্য 
প্রকাণ্ড সব সরীস্থপ আর পোকামাকড়ের আস্তানা । যেখানে রাস্তা 
নেই সে সব জায়গার মধ্য দিয়ে একটি সাপও বোধহয় অতি কষ্টে, 


১৯ 


এগিয়ে যেতে পারে এমনি ঘন লতাগুল্মের ঝোপ। সুন্দরী গাছের 
জলা! ডিঙিয়ে নিরাপদে যেতে পারে ডানাহীন এমন প্রাণী বিরল। 
অতএব, পলাতকেরা! ওই তিনটি রাস্তার একটি দিয়েই সমুদ্রতীরে 
পৌছবার আশ! করতে পারে। 

গুডউইন বললে, “ব্যাপারটা! গোপন রাখো, বিলি । গদীয়ানদের 
আমরা জানতে দিতে চাই না যে প্রেসিডেন্ট পালাচ্ছেন। আমার 
মনে হয় ববের খবরট! রাজধানীতে এখনে! পর্যন্ত একটি স্কুপ। তা 
ন। হলে সে খবরটি গোপনে পাঠাবার চেষ্টা করত না। আর তাছাড়। 
তাহলে সবাই জানতো । আমি যাচ্ছি ডাক্তার জাভাল্লার কাছে, 
একজন লোককে পাঠাতে হবে টেলিগ্রাফের তার কাটতে।। 

গুডউইন উঠে পড়ল । কেওগ তাঁর ট্রগী খুলে দরজার পাশে ঘাসের 
ওপর ছু'ড়ে ফেলে দিয়ে একটি উচ্চনাদী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 

কে্টটা কিসের বিলি” গুডউইন শুধোয়, উঠে দাড়িয়ে, “এই প্রথম 
আমি তোমার দীথ নিঃশ্বাস শুনলাম 1, 

কেওগ বলল, এইটিই শেষ, এই বেদনাময় বাতাসের সঙ্গে সঙ্গেই 
আমি নিজেকে ছেড়ে দিলাম প্রশংসনীয় কিন্তু বরক্তিকর সততার 
জীবনে । কোথায় লাগে টিনের পটশিল্লের বাবসা ! এই মহান, উচ্ছল 
রাজহংস-রাজহংসীদের জাতের সুবিধাগুলির কাছে। না, ন! ফ্রাঙ্ক 
আমি বলছি না যে আমি প্রেসিডেন্ট হবো, আর তা ছাড়া টাকার 
থলিটি মস্ত বড় অঙ্কের যা আমার পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়, কিন্তু 
কেন জানি আমার মনে হচ্ছে, আমার বিবেক আমাকে আঘাত করছে 
নিজেকে একটি জাতির ফোটোৌগ্রাফ তোলার নেশায় ব্যস্ত রাখার জন্থ, 
তাদের সঙ্গে পালিয়ে না গিয়ে। ফ্রাঙ্ক, তুমি কি কখনো সেই 
মসলিনের বাণ্ডিলটিকে দেখেছ, মহুদাশয় যাকে গুটিয়ে নিয়ে 
'পালাচ্ছেন ।; 

'ইসাবেল গিলবাট, হেসে বলল গুডউইন, “না, একবারও নয়। তার 
সম্বন্ধে যা শুনেছি তাতে মনে হয় নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কোন 
কিছুই তার আটকাবে না। কিন্তু, রোমান্টিক হয়ে উঠো না, বিলি। 
মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় যে তোমার শরীরে আইরিশ রক্ত 
আছে।' 

“আমিও তাকে দেখিনি” বলল কেওগ, “কিন্ত লোকে বলে যে তার 


১২ 


তুলনায় পুরাণের, ভাস্কর্ষের আর উপন্যাসের যত রমণী, তার! পটের' 
ছবির মতো! তুচ্ছ হয়ে যায়। ওরা বলে, কোন পুরুষের দিকে ও 

একবার তাকালে সেই পুরুষ তৎক্ষণাৎ বাঁদর হয়ে গাছে উঠে তার জন্য 
ডাব পেড়ে আনবে । একবার ভেবে দেখ ফ্রাঙ্ক, এই প্রেসিডেন্ট 

ব্যক্তিটির কথা । ঈশ্বর জানেন কত লক্ষ ডলার এক হাতে আর এই 

মসলিনের মায়াবিনী অন্ত হাতে, পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে 

হামদরদী খচ্চরের পিগে, চারিদিকে পাখি গাঁন গাইছে, ফুল ফুটছে। 

আর এখানে দেখ বিলি কেওগ সাজ! পাচ্ছে এক পণুশ্রমের ব্যবসাতে 

যাতে সে মিসিং লিঙ্কদের মখের আদলের নকল করে চলেছে টিনের 
ওপর। কেন, ন! সে সংভাবে জীবন ধারণ করতে চায়। প্রকৃতির 

কি অবিচার ।, 

'থুণী থাকো ভাই, গুডউইন বললে, “ভুমি একটি ঝকঝকে শেয়াল, 

তোমার পক্ষে রাজহংসকে ঈর্ষা কর! মানায় না । হতে পাঁরে চিত্ত 
চাঞ্চল্যকারিণী গিলবার্ট তোমার প্রতি আর তোমার পটচিত্র গুলিতে 

আগ্রহ দেখাবে আমরা তার রাজকীয় সঙ্গীকে দরিদ্র করে ফেলার 

পরে ।। 

“সে আরো খারাপ কিছু করতে পারে কিন্তু তা করবে না। সে 

একটি তুষ্টা স্ত্রীলোক আর এই প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিটি ভাগ্যবান । কিন্তু 
আমি ক্ল্যানসির শপথের আওয়াজ পাচ্ছি_-ওকে সব কাজ করতে 

হচ্ছে বলে। কেওগ গ্যালারির পিছনদিকে চলে গেল, স্তঃস্ষত্ত গাবে 
শিস্‌ দিতে দিতে, যার ফলে মনে হবে না যে পলাতক প্রসিডেণ্টের 
ছুর্ভাগ্যের জন্য কিছুক্ষণ গুবেই সে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল । 

গুডউইন বড় রাস্তা ছেড়ে একটি সরু গলি ধরল, যেটি বড় রাস্তার সঙ্গে 

লম্বভাবে মিশেছে । এই পার্থসড়কগুলি ঘন ঘাসে ঢাকা । পুলিসের 

কোমরের তলোয়ার সেই ঘাস বেশ। বাড়তে দেয় না। পাথরের রাস্তা, 

চাতালের চেয়ে চওড়া নয়, নীচু নীচু জ্যাডোবির বা কীচ। ইটের 

বাড়িগুলির পাশ দিয়ে দিয়ে চলে গেছে । গ্রামের সীমানায় এসে এই 

রাস্তাগুলি ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে যায় আর এখান থেকে শুরু হয় 

তালপাতায় ছাঁওয়া ক্ারিবদের কুটিরগুলি, আরো গরীব লোকের 

ডেরা, জ্যামীইক1 আর পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের নিগ্রোদের কাঠের 
ঝৌপড়ি। কয়েকটি ইমারত এদের মধ্যে মাথা উচু করে আছে, 


১৩ 


কালাবোথা বা! জেলের ঘণ্টাঘর, হোটেল দে লোস্‌ এসত্রানজারোস্‌; 
ভিস্ুভিয়াস ফ্রুট কোমপানির এজেন্টের বাসস্থান, বানার্ড ব্রানি- 
গ্যানের দোকান ও বাসস্থান, একটি ভগ্ন গিজা একদা যেখানে 
কলম্বাস পদার্পণ করেছিলেন আর সবচেয়ে দর্শনীয় কাস। মোরেনা, 
প্রীম্মের রাজভবন, আঞ্চুরিয়ার প্রেসিডেন্টের। তটের সমান্তরাল 
প্রধান বাস্তায়--কোরালিওর ব্রডওয়েতে বড় বড় দোকান, সরকারী 
অফিস, পোস্ট অফিস, মদের দোকান, বাজার । 

চলতে চলতে গুডউইন বার্নার্ড ব্রানিগ্যানের বাড়ির পাশ দিয়ে গেল। 
এটি আধুনিক কাঠের বাড়ি, দোতলা । একতলায় ব্রানিগ্যানের 
দোকান, দোতলায় থাকার অংশ। বাড়ির চতুর্দিকে শীতল 
বারান্দা বাইরের পাঁচিলের আধাআধি দূরত্ব পর্ষস্ত। একটি স্ুন্ররী 
প্রাণোচ্ছল তরুণী সাদ! পোশাকে সভ্ভিত, রেলিডে ঝুঁকে দাড়িয়ে- 
ছিল। নীচের দিকে তাকিয়ে গুডউইনকে দেখে হাসল । তার গায়ের 
রং স্প্যানিশ উচ্চবংশীয়দের চেয়ে বেশী গভীর নয়, আর নিরক্ষীয় 
চন্দ্রালোকের মতো সে ঝলমল করছিল, আলো ঝরছিল তার গ! 
থেকে। 

গুড় ইভনিং মিস পলা» ট্রগী খুলে হাসিমুখে গুডউইন বললে। 
তার আচরণে কোন পার্থক্য ছিল না, স্রী-পুরুষ নিবিশেষে সকলের 
সঙ্গে কথাবার্তার সময়ে ! এই বৃহৎ আমেরিকান ব্যক্তিটির অভিবাদন 
পেতে কোরালিওতে সকলেই কামনা করে। 

“কিছু খবর আছে নাকি, মিঃ গুডউইন? দয়া করে না বলবেন 
নাঁ। কি রকম গরম পড়েছে, নয় কি? আমি ঠিক ম্যারিয়ানার 
মতো! নিজেকে ভাবছি তার পরিখা ঘের! গ্রেঞ্ত-এর মধ্যে না কি রেঞ্জের 
মধ্যে, যা গরম । 

“না, বলবার মতো কোন খবর নেই” গুডউইন বললে । চোখে 
একটু ছুষ্ুমি ফুটিয়ে আবার বললে, “কেবল আমাদের গেডি দিন দিন 
আরে বিরক্ত, আরো গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। ওর মনকে শান্ত করার 
জন্য যদি কিছু না ঘটে তাহলে আমাকে ওর বাড়ির পিছনের বারান্দায় 
ধূমপান করতে যাওয়া ছেড়েই দিতে হবে, আর তেমন ঠাণ্ডা জায়গায় 
আর আছে কোথায়।, 

ওর মুখ গম্ভীর নয় তো” পল! বললে একটু আবেগের সঙ্গে, 'হখন 


১৪ 


ও১.-*কিন্ত হঠাৎ সে থেমে গেল, আর নিজেকে গুটিয়ে নিল, সুখ চোখ 
হয়ে উঠল লজ্জায় রাঁডা। কেন না, তার মা ছিলেন একজন 
মেসতিদো মহিলা, আর স্প্যানিশ রক্ত পলার মধ্যে এনে দিয়েছিল 
এক ধরনের লাজুঁকতা যা ছিল তার রূপের একটি অলঙ্কার, তার 
প্রকৃতির অপর র্ধভাগের বহিঃ প্রকাশের প্রবণতার পাশাপাশি । 


ছ্ই 


ছি লোটাদ আঅ)া& দি বটল 


কমল আর বোছল 


উইলার্ড গেডি, কোরালিওতে নিযুক্ত আমেরিকার কনসাল, ধীরে 
স্স্থে তার বাষিক রিপাট তৈরী করছিল । গুডউইন বেড়াতে বেড়াতে 
ভিতরে এসেছিল বারান্দার ছায়ায় ধূমপান করতে কিন্তু গেডিকে 
কাঁজে নিবিষ্ট দেখে চলে গেল। যাবার সময় কন্সালের আতিথেয়তার 
অভাবকে দু"কথা শুনিয়ে গেল । 

“আমি নাগরিক সেবা দপ্রুরের কাছে কমপ্লেন করব» গুডউইন বললে, 
“তবে জানি না ওটি একটি দপ্তর না কেবল একটি তত্ব। তোমার কাছে 
কেউ না পায় নাগরিকম্থুলভ বাবহার, না পায় সেবা । তুমি কথাই 
বলো না, পান করার জন্য কিছু রাখো না। একি রীতি তোমার, 
নিজের দেশের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবার | গুডউইন বেরিয়ে 
গেল হোটেলের দিকে, বন্দরের ডাক্তারকে যদি এক দান বিলিয়ার্ড 
খেলায় নামানো যায়। পলাতকদের আটক করবার সব ব্যবস্থা সম্পূর্ণ 
হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা করার খেল! । 

কন্সাল তার রিপোর্ট সম্বন্ধে আগ্রহী ছিল। বয়স তার মোটে চবিবশ, 
আর কোরালিওতে সে ততদিন আসেনি যতদিনে উষ্ণমগ্ডলের উত্তাপে 
সকল উৎসাহ ঠাণ্ডায় জমে যার । কর্কট ও মকরক্রান্তির অন্তর্বতা 
অঞ্চলে এই বিপরীতার্থক উক্তির তাৎপর্য রয়েছে । এত হাজার কাদি 
কলা, এত হাজার কমলা ও নারিকেল, এত আউন্স ব্বর্ররেণু এত 
পাউগ্ড রাবার, কফি, নীল, সারসাপারিলা-_ বস্তত রপ্তানি গত বছরের 
তুলনায় বিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 


১৫ 


একটু খুশীর ঝিলিক বয়ে গেল কনসালের দেহের মধ্য দিয়ে । হয়ত 
স্টেট ডিপার্টমেন্ট যখন এই রিপোর্টের ভূমিকা পড়ে লক্ষ্য করবে,_ 
আর তখনই সে চেয়ারে পিঠ ঠেক্কিয়ে হেসে উঠল । তার অবস্থাও 
বাকি লোকদের মতোই খারাপ। এই মুহুর্তে সে ভুলে গিয়েছিল যে 
কোরালিও একটি তুচ্ছ রাষ্ট্রের তুচ্চ এক শহর, পড়ে আছে দ্বিতীয় 
স্তরের সমুদ্রের গলিপথে । তখন তার মনে পড়ল জনস্বাস্থ্য বিভাগের 
ডাক্তার গ্রেগ-এর কথা, যিনি লগ্ডনের ল্যানসেট পান্রকার গ্রাহক, 
তিনি যেমন আশ। করেন ল্যানসেট পত্রিকায় বিলেতের স্বাস্থ্য বোর্ডে 
পাঠানে! গীতজ্বর সম্বন্ধে তার লেখা রিপোর্টের উদ্ধতি থাকবে! 
কনসাল জানত যে দেশে তার পরিচিত পঞ্চাশজনের মধ্যে একজনও 
হয়ত কোরালিওর নাম শোনেনি । সে জানত অন্তত দুজন লোক এই 
রিপোর্ট পড়বে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ছোট পদের কর্মচারী 
আর সরকারী ছাপাখানার কম্পেজিটার। হয়ত যে ব্যক্তি অক্ষর 
সাঙ্কায় তার নজবে পড়বে যে কোরালিওতে বাণিজ্যের উন্নতি হয়েছে 
আর দে বিয়ার ও পনিরের ফাকে এই কথ! জানাবে তার কোন 
ইয়ারকে। সবে মাত্র সে লিখেছে সবচেয়ে বিস্ময়ের কথ। এই যে 
আমেরিকার বড় বড রণ্তানীর ব্যাপারীরা কেন যেন উদাসীন এবং 
তার! ফরাসী ও জর্মন ব্যবসায়ীদের হাতে সম্পদে ভরপুর এই দেশের 
বাবসাধ়িক দখল ছেড়ে দিয়েছে-এমন সমর সে শুনল একটি 
স্টীমারের ধরা গলার আওয়াজ | কলম রেখে গেডি তার পানামা 
টূগী ও ছাতা নিল। আওয়াজ শুনে সে বুঝল ভালঙাল্ল৷ নামের 
ফলের জাহাজটি এসেছে । এই জাহাজটি ভিন্ত্ভিয়াম ফল কোমপানির, 
নিয়মিত যাওয়া-আসা করে। কোরালিওতে পাঁচ বছরের বালক 
পর্যন্ত ভোয়ের শব্দ শুনে বলতে পারে জাহাজের নাম। 
কনসাল ছায়া ঘেরা একটু ঘুর পথে তারে এলো! অনেকদিনের 
অভাসে চলার গতি এমন নিখুত ভাবে নিয়ন্ত্রিত করল যে সে যখন 
সমুদ্রতীরে পৌছল তখন কাস্টম বিভাগের নৌকে। ফিরে আসছে 
নিয়মমাফিক পরিদর্শন শেষ করে। 

কোরালিওতে বন্দর নেই। বড় জাহাজগুলি তীরের অন্তত 
একমাইল দূরে নোঙর করে। যখন ফল নিয়ে যায় তখন সেই ফল 
জাহাজে পৌছে দেওয়া হয় ছোট ছোট নৌকো করে । সলিটাসে সুন্দর 


৬৬ 


বন্দর আছে, তাই সেখানে নানারকমের জাহাজ দেখা যায় কিন্তু 
কোরালিওর তট ছু"য়ে যায় কেবল কয়েকটি ফলের জাহাজ । কখনো 
একটি ভবঘুরে জাহাজ, কখনো বা ম্পেনের কোন রহস্যময় পালতোলা 
জাহাজ বা ফ্রান্সের এক স্টীমার দেখা যায় ভালোমানুষের মতো ঈাড়িয়ে 
আছে কোরালিওর উপকূল থেকে কয়েক মাইল দূরে । কাস্টমসের সব 
কমাদের তৎপরতা! তখন দ্বিগুণ বুদ্ধি পায়। রাত্রে ছু-একটি পাল- 
তোল নৌকা অনির্দেশ পাড়ি দিচ্ছে দেখা যাবে। আর সকালে 
কোরালিওর দোকানে দোকানে থি.স্টার হেনেসি, আঙরের মদ আর 
অন্যান্য পানীয়ের আমদানী অনেক পরিমাণ বেড়ে যাবে । লোকে বলে 
সেদিন কাস্টমসের কমীদের লাল ডোরাদার ট্রাউজারের পকেটে অনেক 
রূপোর টাকার ঝনঝনি শোনা যায় আর কাস্টমসের জাবদ। খাতায় 
আমদানী শুক্কের ঘরে নতৃন কোন অঙ্ক বসবে না। 

কাস্টমসের নৌকো। আর ভালহাল্লার নৌকা একই সময় তীরে 
ভিড়ল। যখন অল্পজলে তার! দ্রাড়িয়ে গেল, তখনো শুকনো তীরভূমি 
থেকে পাঁচ গজ দূরত্ব রয়েছে, বেখানে টেউগুলি আছড়ে পড়ছে । 
অর্ধনগ্ন ক্যারিব ছেলেরা ঝাঁপিয়ে নেমে গেল জলে, পিঠে করে 
নামিয়ে আনল ভালহাল্লার পারসারকে আর কাস্টম কর্মীদের, স্ৃতির 
সার্ট আর লাল ডোরাদার নীল প্যাণ্ট যাদের চিহ্িত করেছে। 

কলেজে গেডির বেসবলের ফার্ট্ট বেসম্যান হিসেবে নাম ছিল। 
এখন সে ছাতা বন্ধ করে বালিতে গেঁথে রাখল--তার পরে হাটতে হাত 
দিয়ে দাড়াল। পারসার বেসবলের পীচারের ভঙ্গিতে কনসালের দিকে 
ছু'ড়ে দিল একটি ভারি বাগ্ডিল, খবরের কাগজ সুতো দিয়ে বাঁধা, এই 
স্টীমারে নিয়মিত বা আসত তার জন্য | গেডি লাফিয়ে উঠে লুফে নিল 
সেই বাণ্ডিল, বেশ জোরে ঠক” করে একটা শব্দ হল। তীরে যারা বেডা- 
চ্ছিল, কোরালিওর জনসংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, হেসে উঠল তার! 
হাততালি দিয়ে। প্রতি সপ্তাহে তার! প্রত্যাশ। করে খবরের কাগজ এই 
ভাবে গেডির হাতে পৌঁছবে, কোনবারই তারা নিরাশ হয় ন|। 
কোরালিওতে নতুনত্বের আবির্ভাব কদাচিৎ হয়ে থাকে । 

আবার ছাত। খুলে কনসাল ফিরে গেল তার কনস্থুলেটে । এক 
মহান জাতির প্রতিনিধির বাসস্থানটি ছিল কাঠের একটি ছ-কামরার 
বাড়ি যার তিনদিকে বাঁশ, কাঠের খুঁটি আর নীপ। জাতীয় তালগাছের 


১৭ 


গুঁড়ি দিয়ে তৈরী কারান্দা। একটি কামর! সরকারী অফিস, সাধারণ- 
ভাবে সাজানো, একটি ডেস্ক, একটি দোলনা! আসন, তিনটি বেতের 
চেয়ার। দেয়ালে দেশের প্রথম ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছবি টাঙানো 
আছে। অপর কামরাটি কনসালের থাকার ঘর। 

কনসাল যখন ফিরল তখন বেলা! এগারোটা অতএব প্রাতরাঁশের 
সময়। চাঁনকা নামে যে ক্যারিব মেয়েটি রাম্ম। করে, সমুদ্র মুখী বারান্দার 
দিকে সে খাবার সাজাচ্ছিল। এই জায়গাটির প্রসিদ্ধি আছে কোরালিওর 
সবচেয়ে ঠাণ্ডা বসবার জায়গা হিসেবে । প্রাতরাশে ছিল হাঙরের 
পাঁখনার স্যুপ, ভাঙার কাকড়ার স্টন্‌, ব্রেডফ্রট, সিদ্ধকরা ইগ্যয়ানার» 
স্টেক, আগুয়াকেটিস্ৎ সছ্চ কাট! আনারস, ক্লারেট আর কফি। গেডি 
আসনে বসে রাজকীয় আলস্তের সঙ্গে খবরের কাগজের বাগ্ডিল খুলল । 
এখন কোরালিওতে বসে ছুদিন ধরে সে পড়বে পৃথিবীতে কোথায় কি 
ঘটছে ঠিক যেমন পৃথিবীর আমরা মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দাদের কাধ- 
কলাপের বিষয়ে অযথার্থ বিচ্ছানের আজগুবি কাহিনীগুলি পড়ে 
থাকি । কাগজগুলি তার পড়া হলে ক্রমে ভ্রমে সকল ইংরেজিভাষা 
নাগরিকদের কাছে পাঠানো হবে । 

যে কাগজটি তার হাতে প্রথম ঠেকল সেট। ছিল তোশকের মতে? 
মোটা ছাপা বস্ত, নিউ ইয়র্কের একটি সংবাদ পত্রের রবিবারের সংখ্য।-- 
গ্রাহকেরা সাহিত্যের আমেজ লাগ! দিবানিদ্রার জন্য বাবহার করে। 
পত্রিকাটি খুলে কনসাল টেবিলে রাখল, একট৷ চেয়ারে পিঠ দিয়ে 
পত্রিকার ওজনট। সামলাল তার পরে সে আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু 
করল, মাঝে মাঝে পাতা ওলটায় আর বিষয়বস্তুর ওপর চোখ বোলায়। 
অল্লক্ষণের মধ্যে একটি ছবির ওপর তার চোখ পড়ে, অর্থপৃষ্ঠা, একটি 
ফোটে! ব্িস্্রী ছাপা । অলস কৌতৃহলে মে দেখল ফোটোর নীচে 
বড় হফের শিরোনমো এবং তার নীচের কলমটি। হ্যা, তার ভূল 
হয়নি । ছবিটি আটশে! টনের প্রমোদতরী আইডেলিয়া, যার মালিক 


১। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বন অঞ্চলে স্থলে ও গাছে বিচরণশীল 
কয়েক জাতের সরীত্প এদের কোন কোন প্রজাতির মাংস ও ডিম সুস্বাদু 
খাস । 


২। ভ্রাক্ষাঁজাতীয় ফল। 


সংলোকদের সেরা, টাকার বাজারের মিডাস, সমাজের মধ্যমনি জে. 
ওয়ার্ড লিভার । 

আস্তে আস্তে কফিতে চুমুক দিতে দিতে গেডি পড়ে ফেলল 
ওই স্তম্তটি। মিঃ টলিভারের বিষয়আশয়ের ফিরিস্তির পরে প্রমোদ- 
তরীর অঙ্গসজ্জার একটি বর্ণনা রয়েছে আর তারপরে একটি খবরের 
বীজ সরষের বীজের আকারের টাইপে ছাপা হয়েছে। মিঃ টলিভার 
কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথির সঙ্গে পরদিন তরী ভাসাঁবেন এবং ছয় 
সপ্তাহের জন্য মধা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের ধারে এবং বাহামা 
দ্বীপপুর্জের আশেপাশে বেড়াবেন। অতিথিদের মধ্যে আছেন নরফো- 
কের শ্রীমতী কামবারল্যাণ্ড পেন ও মিস আইদা পেন। 
সংবাদদাতা, পাগক যেমন চাঁয়, মূর্খ সবজাস্তার ভূমিকা নিয়ে একটি 
প্রেম কাহিনীর উদ্ভাবন করেছে । মিস পেন ও মিঃ টলিভারের নাম 
এমনভাবে জড়ানো হয়েছে যে পড়লে মনে হবে বিবাহেরই শুধু 
অপেক্ষা । তার বর্ণনার মধ্যে “গুজবের রানী” “ছোট্র পাখি” “কেহ 
আশ্চষ হবে না” প্রভৃতি শব্দের চুল ব্যবহার কর হয়েছে আর সৰ 
শেষে অভিনন্দন জানানো হয়েছে । 
প্রাতরাঁশের শেষে গেডি খবরের কাগজ নিয়ে বারান্দার ধারে গেল, 
তার প্রিয় ডেক চেয়ারে বসে একটি চুরুট ধরাল, বাশের রেলিঙে পা 
ছড়িয়ে দিল। সমুদ্রের দিকে তাঁকিয়ে সে এই ভেবে খুশী হল যে খবরটি 
পড়েসে মোটেই বিচলিত হয়নি। নিজেকে মে বললে যে তার বেদন। সে 
সম্পূর্ণ জয় করেছে যে বেদন। তাঁকে স্থেচ্ছানির্বাসনে পাঠিয়েছিল এই 
কমলের দেশে । আইদ'কে সে কখনো ভুলবে না ঘদ্দিও, কিন্ত তার 
কথা ভাবতে এখন আর কোনে। জ্বালা বোধ হচ্ছে না। তাদের ভূল 
বোঝাবুঝি ও কলহ যখন হয় তখন সে ঝৌকের মাথায় এই কনসালের 
চাকরী যোগাড করেছিল আইদার প্রতি প্রতিশোধের বাসনায়, তার 
সামনে থেকে তার জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। 
এতে সে সম্পূর্ণ ভাবে সফল হয়েছে । কোরালিওতে তার গত এক 
বছরের জীবনযাত্রায় তাদের মধ্যে কোন বাতা বিনিময় হয়নি, যদিও 
আইদার খবর সে মাঝে মাঝে পেয়েছে, যে কয়জন বন্ধুকে সে এখনো 
চিঠিপত্র লিখত তাদের পত্রে প্রসঙ্গত উল্লেখে। তথাপি একটু 
তৃপ্তিকর উত্তেজনা সে পেল এই জেনে যে টলিভার বা অন্থ কারুকে 


১৯ 


সে এখনে! বিবাহ করেনি । তবে দেখা যাচ্ছে টলিভার এখনে। আশা 
ছাড়েনি। যাই হোক আজ আর কিছু আসে যায় না। কমলের 
ফল তার খাওয়া হয়ে গেছে । এই চিরন্তন শান্ত অপরাহের১ দেশে 
সে সুখী, তৃপ্ত। আমেরিকায় পুরানো দিনগুলি এখন জাল! 
ধরানো স্বপ্রের মতো! মনে হয়। সে কামনা করে আইদ। তার মতো! 
সুখী হোক। বাতাসে তেমনি প্রাণ জুড়ানো সুগন্ধ যেমন ছিল 
স্মদূর আভালনে। এখানে অলস রোমান্টিক লোকজনের মধ্যে 
বলগাহীন রূপকথার দিনগুলি, জীবন এখানে গাঁন ফুল আর নরম 
হাসি দিয়ে তৈরি। পাহাড ও সমুদ্রের সান্নিধ্যের প্রভাব, উষ্ণমগ্ডলের 
স্বচ্ছ শুভ্র রাত্রির মায়া, প্রেম ও সৌন্দর্যের কত মোহময় প্রতিচ্ছবি, 
এ সব নিয়ে সে প্রকৃতই তৃপ্ত--আর আছে পল। ব্রানিগ্যান । 

গেডি পলাকে বিবাহ করতে চায়, অবশ্ঠ পল! যদি রাজি হয়। যদিও 
তার স্থির বিশ্বাস ও রাজি হবে। কিন্তু প্রস্তাব করতে গেডির অনেক 
দ্বিধা । কন্বার সে খুবই কাছাকাছি চলে গিয়েছে কিন্ত অজান1! কোন 
সংশয় তাকে পিছিয়ে এনেছে হয়ত সেটা তার সহজাত সুপ্ত বিশ্বাস 
যে তাঁর পুরনে। জগতের সঙ্গে যতটুকু বন্ধন ছিল তা একেবারেই ছিন্ন 
হবে এই বিবাহে । 

পলাঁকে নিয়ে সে প্রকৃতই সুখী হবে। স্থানীয় কোন মেয়ে তুলনায় 
ধারে কাছে পৌছয় না। নিউ অলিয়ন্সের এক কনভেন্টে ও ছু 
বছর পড়েছিল। কখনে। যদি সে নিজের পারদগিতার পরিচয় দিতে 
ইচ্ছা করত, তখন ম্যানহ্যাটেন আর নরফোকের মেয়েদের সঙ্গে কোন 
পার্থক্যই বোঝ। যেত না। কিন্তু ঘরোয়! বেশবাসেই ওকে বেশী 
রমণীয় দেখায়, মধ্যে মধ্যে যখন সে স্থানীয় মেয়েদের মতো! কাধখোলা।; 
পুরোহাতা পোশাক পরে। 

বানাড ব্রানিগ্যান কোরালিওর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী । দোকান ছাড়াও 
তার আছে একদল মালবাহী খচ্চর এবং তাদের সাহায্যে সে অন্তর্বতা 
শহর ও গ্রামগুলির সঙ্গে কারবার চালায়। সে বিবাহ করেছিল 
স্থানীয় একটি উচ্চ স্প্যানিশ বংশোদ্ভব। মহিলাকে যার জলপাই রডের 


১) [0 00০ 21690000606 0909 0100 & 1900. 
[0 10101) 1৮ ৪9 81878 20610900 (006150603 109667 
['0017800 ). 


১০ 


গালে ইশারায় বোঝ! যায় রেডইগ্ডিয়ানদের বাদামীর রেশ। 
আইরিশ আর স্প্যানিশ সংমিশ্রণে যে সন্ততিটি তাদের জন্মেছিল, 
সৌন্দর্যে ও বৈচিত্র্যে সে ছিল এক বিরল নিদর্শন । ওরা লোক ভারি 
চমতকার আর ওদের বাড়ির দোতলাটি গেডি আর পলার জন্ 
সাজানোই রয়েছে, কেবল গেডির মন স্থির করে প্রস্তাব করার 
অপেক্ষা । 

ইতিমধ্যে ছু ঘণ্টা কেটে গেছে, কনসাল পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়েছে। 
খবরের কাগজগুলি তার চারপাশে ছড়ানো পড়ে আছে। বারান্দায় 
চেয়ারে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ননিবিড় চোখে সে যেন এক স্বর্গরাজ্য দেখছে। 
স্র্যকে তাদের চওড়া পাতার ঢাল দিয়ে আড়াল করে রেখেছে একটি 
কলাগাছের ঝাড় । কনস্থলেট থেকে সমুদ্রতীর পর্ষস্ত ঢালু জমিতে শুধু 
পাতিলেবু আর কমলার গাছ ফুলে ফুলে ফেটে পড়ছে। সমুদ্র থেকে 
একটি ধারা খানিকট। জমি চিরে একটি হুদের স্য্টি করেছে এবড়ে! 
খেবড়ো একটি স্ষর্টিকের মতো, তারই ওপর দিয়ে প্রকাণ্ড একটি হালক' 
সবুজ শিমুল গাছ মেঘ পর্যস্ত সোজা উঠে গেছে। সারি সারি 
নারিকেলের গাছ হাওয়ায় ছুলছে। তাদের স্রসজ্জিত বড় বড়, রোদলাগ। 
সবুজ পাত। শ্লেট রঙের শাস্ত সমুদ্রের ওপর ঝলমল করছে। নীচের 
ঝোপের সবুজের ফাঁকে ফাকে তার অনুভূতি দেখতে পায় সি ছুর লাল, 
গেরুয়া আর বাসন্তী রডের আভা । বনপুষ্পের, বনফলের আর 
ক্যালাবাশ গাছের নীচে চানকাঁর মাটির উন্থুনের ধোয়ার ভ্রাণ আসে 
নাকে । সে অনুভব করে কুটার থেকে ভেসে আস৷ নেটিভ মেয়েদের ক্ষীণ 
হাসির শব্দ, বুলবুলের গান, তীরের ওপর প্রায় নিঃশব্দ মীড়ের মতো! 
তেঙে পড়া ঢেউ আর ধুর সমুদ্রের মধ্যে দিগন্তে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে 
ওঠা একটি বিন্দু । 

অলস কৌতৃহলে সে লক্ষ্য করে সেই অস্পষ্ট বিন্দুটি বড় হতে হতে 
আইডেলিয়ার আকৃতি নিল, দ্রুতগতিতে তীরের দিকে আসতে দেখা 
গেল তাকে । নিজের জায়গা থেকেই গেডি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখল 
ওই সুন্দর সাদ প্রমোদ তরীটির দিকে য৷ ক্রমশ কাছে আসছিল, 
কোরালিওর প্রায় সামনাসামনি । তীর থেকে এক মাইলের মধ্যে 
এসে পড়ল। সে দেখল ইয়টের গায়ের পিতলের অংশ থেকে ঠিকরে 
আসা আলো, ডোরাকাট। রঙীন ডেকের ছাদ, ততটুকুই, আর বেশী 


২১ 


কিছু নয়। ম্যাজিক লনের আলাইডে দেখা জাহাজের মতো 
আইডেলিয়! কনসালের ছোট্ট জগতের আলোকবুস্ত স্পর্শ করে চলে 
গেল। সমুদ্রের কিনারায় ভেসে থাক] ধোঁয়ার মেঘ না থাকলে মনে 
হত জাহাজটি কল্পনার, তার অলস মস্তিক্ের স্থষ্ট একটি অলীক ছায়া- 
মৃতি। 

গেডি তার অফিসে ফিরে গেল। তার রিপোট নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়া- 
চাড়া করল। খবরের কাগজের সংবাদটি তাঁকে যেমন অবিচলিত 
রাখতে পেরেছে, আইডেলিয়ার আসা এবং নিঃশর্ষে চলে যাওয়া 
তেমনি তাকে আরো নিলিপ্ত করেছে । এর ফলে আরে শান্তি ও 
স্থের্য এসেছে তার মনে, যখন একটি পরিস্থিতির সকল অনিশ্চয়তা দূর 
হয়ে গেছে । সে জানত মানুষ কখনে। কখনো! আশা করে থাকে নিজের 
মনের অগোচরে । আজ যখন সেই মেয়েটি ছু হাজার মাইল সাগর 
পেরিয়ে এসেছিল অথচ কোন চিহ্ন না রেখে চলে গেল, তখন এমন 
কি তার অবচেতন মন থেকেও অতীতের সঙ্গে কোন সংঅ্বব না রাখাই 
ভালো । 

সন্ধ্যায় খাওয়ার পরে, স্ৃধ যখন পাহাড়ের পিছনে নেমে গেছে, গেডি 
বেড়াতে গেল নারিকেল গাছের নীচে বালুবেলায়। মৃদু বাতাস 
বহে আসছে তীরের দিকে, ছোট ছোট ঢেউয়ে জমুদ্রগাত্র তরঙ্গিত। 
একটি ছোটখাটো ব্রেকার কোমল “সুইশ* শব্দ করে বালির ওপর ভেঙে 
পড়ল, সঙ্গে নিয়ে এল উজ্জ্বল একটি বন্ত যা আবার ঢেউয়ে সঙ্গে 
সমুদ্রের দিকে গড়িয়ে যেতে থাকে । পরের তরঙ্গটিতে সেই বস্তুটি 
তীরে এসে আটকালে', গেডি তখন সেটা তুলে নিল। বস্তুটি লম্বা 
গলার স্বচ্ছ কাঁচের একটি মদের বোতল । ছিপিটি এ*টে জোর করে 
নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বোতলের মুখ পর্যন্ত, লাল গাল দিয়ে সেই 
অংশ সীল করা হয়েছে । বোতলের মধ্যে ছিল বাইরে থেকে যতদূর 
দেখা যাচ্ছিল, একটি কাগজ, বোতলের ভিতরে ঢোকাবার চেষ্টায় 
যেটা! বেশ কুঁকড়ে গিয়েছে । সীলের ওপর মোহরের ছাপ দেওয়া! 
হয়েছিল সম্ভবত নামাঙ্কিত আংটির সাহাযোে, কোন নামের আগ্ 
অক্ষরের মনোগ্রাম । কিন্তু সীল করা হয়েছিল তাড়াতাড়ি, তাই 
কোন অক্ষর বোঝ। যাচ্ছিল ন1! আন্দাজ কর! ছাড়া । গেডির মনে হল 
সে যেন তার পরিচিত আই. পি. অক্ষর ছুটি সীলমোহরের মধ্য থেকে 


২ 


পড়তে পারছে আর তখনি অদ্ভুত এক অস্বস্তির অনুভূতি তাঁকে আচ্ছন্ন 
করল। আইদ! পেন-এর স্মৃতি আরে নিবিড, আরো ঘনিষ্ঠভাবে 
সে অনুভব করল। প্রমোদতরীটি দেখার থেকে অনেক তীত্র এই 
অনুভূতি । বাড়ি ফিরল সে, ডেস্কের ওপর বোতলটি রাখল । 

টুপী আর কোট ছাড়ল, একটি বাতি জ্বালাল, কেন না হৃম্ঘ গোধূলির 
পরে রাত্রি ভিড় করে নেমে এসেছিল । গেডি পরীক্ষ। শুরু করল 
সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা বস্তরটিকে। আলোর নীচে বোতলটি ধরে 
নানাদিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে সে বুঝল ভিতরে রয়েছে ছু ভাজ কর 
একটি চিঠি লেখার কাগজ ছোট ছোট অক্ষরের লেখায় ভরা । আরো, 
কাগজের রংও সাইজ আইদ! যেমন ব্যবহার করত ঠিক তেমনি । 
মার তার বিশ্বাম হাতের লেখা আইদারই । বোতলের কাচ নিখুত 
ছিল না, তাই আলোর রশ্মি এমনভাবে বেঁকেচুরে ভিতরে যাচ্ছিল 
যাতে কোন শব্দ পাঠোদ্ধার কর! যায়নি, কিন্তু কয়েকটি বড় অক্ষর 
গেভির মনে হল নিশ্চয়ই অশইদার | 

বোতলটি ডেস্কে নামিয়ে রাখতে গিয়ে গেডির চোখে বিহবলত। ও 
কৌতুকের হাসি ঝিলিক দিয়ে গেল। টেবিলের ওপর সে তিনটি 
চুরু১ রাখল । বারান্দা থেকে ডেক চেয়ারটি এনে নিজেকে আরাম 
করে বিছিয়ে দিল। সমস্যাটি চিন্তা করার জন্ত তাঁর তিনটি চুরুট 
টান। দরকার । 

যেহেতু সত্যিই একটা সমস্তা ওই বোতল । তার মনে হল বোতলটি 
দেখতে না পেলেই ছিল ভাল। কিন্ত বোতলটি রয়েছে চোখের 
সামনে । তার মনের শাস্তি কেড়ে নেবার জন্ত কেন ওট। সমুদ্র থেকে 
ভেমে এলো! এই স্বপ্ের দেশে, যেখানে সময় কোন বিচারের 
ব্যাপারই নয়, তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তুচ্ছ বিষয়ের ওপার অনেক 
সময় নিয়ে চিন্তা করা । বোতলটির সম্বন্ধে তার মাথায় এলে। অনেক 
অদ্ভু * থিয়োরি, একটি একটি করে সে তাদের বাতিল করতে থাকে । 
জাহাজ বিপন্ন হলে কখনে। কখনেো। এই উপায়ে সাহায্যের আবেদন 
ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আইডেলিরা জাহাজকে সে দেখেছে 
তিন ঘণ্টা আগে নিরাপদ ভ্রতগতিতে চলে যেতে । মনে করো, 
জাহাজের কর্মচারীর। বিদ্রোহ করেছে এবং উদ্ধারের জন্ত এই আবেদনটি 
পাঠানো হয়েছে । কিন্তু এই অসম্ভব ব্যাপার যদি ঘটেও, সে ক্ষেত্রে 


২৩ 


চার পাতা চিঠি লিখবে উদ্দিগ্ন বন্দীর তাদের উদ্ধারের জন্য, যত্ব করে 
তাদের আত্মপক্ষের যুক্তিগুলি সাজিয়ে ? 

এইভাবে অবাস্তব থিয়োরীগুলি বাদ দিতে “দিতে বিষয়টির একটিই 
সম্ভাবনা থেকে গেল যে বোতলে তারই জন্য একটি খবর পাঠানে। 
হয়েছে । আইদ| জানত যে সে কোরালিওতে আছে। বোতলটি 
সে-ই পাঠিয়েছে যখন ইয়টটি উপকূলের কাছাকাছি এসেছিল এবং 
বাতাস ছিল তীরমুখী। 

গেডি যখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল তখন তার কপালে কুঞ্চনের 
একটি দাগ পড়ল, মুখে ফুটে উঠল দাটের ভাব। চুপকরে সে বসে 
রইল, দরোজার বাইরে শাস্ত রাস্তায় ভেসে বেড়ানো বড় বড় 
জোনাকির দিকে তাকিয়ে । যদি ওই বোতলে তার জন্য আইদার 
পাঠানে। একটি চিঠি থাকে তাহলে তার অর্থ কি হতে পারে মিটমাঁট 
করে নেওয়ার একটি উদ্যোগ ছাড়া? আর তাই যদি হয় তবে 
নিরাপদ ভাক ব্যবস্থার সাহায্য না নিয়ে এই অনিশ্চিত আর সস্ত। 
কায়দা কেন? একটি খৎ বোতলের মধ্যে রেখে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া । 
ব্যাপারটার মধ্যে একটা হালক! আর খেলো আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে__ 
নিন্দনীয় যদি না বল। হয়। 

এই চিন্তায় তার অহমিকা জেগে উঠল এবং বোতলটি পাবার পরে যে 
ভাবাবেগ পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল সেটা দমিত হল। 

কোট পরে, টুপী হাতে নিয়ে গেডি বাইরে বেরুল। একটি সরু রাস্তা 
ধরে সে আসে একটি ছোট চত্বরের কিনারায় যেখানে ব্যাণ্ড বাঁজছিল, 
নিরুদ্ধেগ, অলসভাবে মানুষজন বেড়াচ্ছিল। কয়েকটি ভীরু মেয়ে, 
বিন্ুনী করা কালে। চুলে জোনাকি লেগে রয়েছে, তার দিকে সলজ্জ 
প্রশুয়ের দৃষ্টি রেখে দ্রেত চলে গেল। বত।স জুই আর কমলার ফুলের 
গন্ধে মন্থর । 

কনসালের পদক্ষেপ থামল বানার্ড ব্রানিগ্যানের বাড়িতে এসে। 
বারান্দায় পল একটি দোলনা আসনে বসে ছুলছিল। বাসা থেকে 
পাখির মতো, দোলনা থেকে সে নেমে এলো। গেডির গলার 
আওয়াজ পেয়ে তার কপোল হল রডিন। ওর পরিধেয় লক্ষ্য করে 
গেডি সুগ্ধ হল, মসলিনের ফাপানে। ফোলানে। পোশাক, তার ওপর 
সাদ! ফ্ল্যানেলের জ্যাকেট, সব কিছুতে স্টাইল আর পরিচ্ছন্নতা 


৪ 


পরিস্ফুট। সে বলল বেড়াতে যাবার কথা, পাহাড়ের রাস্তায় পুরনো 
ইদারার দিকে । পাথরের চাতালে ওরা বসল আর এতদিনে গেডি সেই 
আকাতিক্ষিত কিন্ত বু বিলম্বিত প্রস্তাবটি পেশ করল। যদিও সে 
নিশ্চিন্ত ছিল যে তাকে “না” শুনতে হবে না তথাপি পলার সম্পূর্ণ আত্ম- 
সমর্পণের মাধুষে সে শিহরিত হল। এখানে সে একটি হৃদয় পেল 
প্রেম ও একনিষ্ঠতা দিয়ে যা তৈরী। এখানে খামখেয়ালিপন। 
নেই? প্রশ্ন নেই, আদব কায়দার ক্রটি বিচ্যুতিতে দোষ ধরা 
নে্ই। 

সে রাত্রে গেডি যখন পলাকে বাড়ী পৌছে দিয়ে চুম্বনের পরে বিদায় 
নিল তখন তার মনে হল তার স্থুখের সীমা নেই। “এই অন্তঃসার 
শুন্ত কমলের দেশে, চিরকাল বেঁচে থাকা অলস শয্যায়” তাঁর কাছে 
মনে হল, যেমন অনেক নাবিকের মনে হয়েছিল, সবোত্তম আর সবচেয়ে 
সহজ। তার ভবিষ্যৎ হবে যেমনটি চাই তেমনি। সে পেয়েছে 
স্বর্গরাজ্য যেখানে সর্প নেই। তার ঈভ প্রকৃতই তার অর্ধাঙ্গিনী হবে, 
মোহমুক্ত আর সেজন্যই মোহময়ী । আজ রাত্রে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, 
তার হৃদয় স্বচ্ছ, আশ্বাসিত পরিতৃপ্তিতে পূর্ণ । 

গেডি বাড়ি ফিরল, সেই অপুর্ব বেদনা ময় প্রেমের গান 'লাগোলোনদ্রিনা'র 
স্থর শিস্‌ দিতে দিতে । দরজায় পৌছতে তার পোষা বাঁদরট। 
লাফিয়ে নেমে আসে, কিচ কিচ করতে করতে । কনসাল তার 
ডেস্কের কাছে এসে কিছু বাদাম খুজল বাদরকে দেবার জন্য৷ 
অন্ধকারে হাতড়াতে তার হাতে ঠেকল সেই বোতলটি। সে চমকে 
উঠল, মনে হল শাতল, গোল সাপের গায়ে হাত দিয়েছে । সে ভুলে 
গিয়েছিল যে বোতলটি ওখানে রয়েছে । 

গেডি আলো জ্বালায়, বাদরকে খাওয়ায়, তারপর চিন্তাকুলভাবে একটি 
চুরুট ধরিয়ে বোতলটি হাতে নিয়ে সমুদ্রতীরের দিকে আস্তে আস্তে 
হেঁটে গেল। আকাশে চাদ ছিল, সমুদ্র ৰলমল করছিল | বাতাস 
ঘুরে গেছে, যেমন যায় প্রত্যেক সন্ধ্যায়, এখন স্থিরভাবে ভূমি থেকে 
সমুদ্রের দিকে বইছিল। জলের কিনারায় পৌছে গেডি সেই না- 
খোলা বোতলটি ছুঁড়ে দিল বহুদূরে সমুদ্রের মধ্যে। মুহুর্তের জন্য 
সেট! ডুবে গেল, তার পরেই ভেসে উঠল তার দৈর্ধের ছিগুণ হয়ে। 
গেডি ঈাড়িয়ে দাড়িয়ে লক্ষ্য করে। চাঁদের আলে। এত উজ্জ্বল যে সে 


২৫ 


দেখতে পাচ্ছিল কেমন করে বোতলটি ভেসে উঠছে, ডুবছে ছোট 
ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে । অতি ধীরে সেটা তীর থেকে দূরে যেতে থাকে, 
কখনো ঝলসে উঠে কখনো বা ঘুরপাক খেতে খেতে । বাতাস তাকে 
সমুদ্রের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা হয়ে গেল 
নিছক একট বিন্দু, বোঝ! যায় কি যায় না আর তারপরে তার রহস্য 
ঢাকা পড়ে সমুদ্রের বৃহত্তর রহস্তের মধো। গেডি তখনে। তীরে 
ধ্াড়িয়ে রইল, ধূমপান করতে করতে সে তাকিয়ে ছিল জলের 
দিকে । 

“সাইমন ও সাইমন, শীঘ্র ওঠ, ভবাঁট গলায় জলের কিনারায় কেউ 
চিৎকার করছিল। বৃদ্ধ সাইমন ক্রুজ একজন মিশ্রজীতীয় ধীবর ও 
স্নাগলার। সে থাকত জলের ধারে তার কুটীরে। কাচা ঘুম থেকে 
এইভাবে তাকে জাগানো হল। 

জুতো পায়ে সে বাইরে এলো'। ভালহাল্লার একটি ছোট ডিডি 
থেকে তখন নামছিল সেই জাহাজের তৃতীয় মেট, যার সঙ্গে সাইমনের 
পরিচয় ছিল, আর ছিল তিনজন নাবিক। শীঘ্র যাও সাইমন, ডাঃ 
গ্রেগকে ডেকে আনো বা মিঃ গুডউইনকে বা মিঃ গেডির কোন বন্ধুকে, 
আর তাদের নিয়ে এসো এখানে, এক্ষুণি 

ব্বর্গের ঝধিরা 1” ঘুম জড়ানো! গলায় সাইমন বলল, “মিঃ গেডির 
কিছু হয়নি তো? 

“তাকে ওই টারপলিনের নীচে রাখা হয়েছে, মেট বলল 
ভিজির দ্রিকে আঙুল রেখে, “সে জলে ডুবে অর্ধমৃত। আমরা 
ওকে স্টামার থেকে দেখতে পাই তীর থেকে প্রায় এক মাইল 
দুরে পাগলের মতো সীাতরে যাচ্ছে বাইরের দিকে ভেসে যাওয়। 
একটি বোতলের পিছসে । আমর ডিডি নামিয়ে ওর দিকে যাই । 
বোতিলট। প্রায় ধরে ধরে এমন সময় ওর দম ফুরিয়ে যায় আর 
ডুবে যায়। ঠিক সময় আমরা ওকে তুলে আনি, হয়ত বেঁচে যাবে 1 
কিন্তু ডাক্তারই সেট। সঠিক বলতে পারবে ॥ 
ছু হাতে চোখ কচলাতে কচলাতে বুদ্ধ বলল, “একটা বোতল ? 
তার ঘুম তখনো ঠিক ছোটেনি, “কোথায় সেই বোতল £ 
“ভেসে যাচ্ছিল ওদিকে কোথাও,” সমুদ্রে নির্দেশ করে মেট বলল» 
নীম যাও, সাইমন? | 


২৬ 


স্মিথ 


গুডউইন আর সেই খাঁটি দেশভক্ত জাভাল্লা তাদের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার 
সাহায্যে সকল রকমের সাবধানতায় নিশ্চিন্ত হল প্রেমিডেণ্ট মিরা- 
ফ্লোরেস ও তার সঙ্গিনীর দেশত্যাগ ঠেকানোর ব্যাপারে । তার! 
বিশ্বাসী দূত পাঠালে! সলিটাস আর আলাজানে স্থানীয় নেতাদের 
এই পলায়নের বিষয়ে অবহিত করতে আর জলের লাইনে পাহার৷ 
বসাতে এবং যে কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পলাতকদের গ্রেপ্তারের 
নির্দেশ দিয়ে, যদি তারা সেইসব অঞ্চলে পৌছয়। এর পরে বাকি 
রইল কোরালিও জেলাটির চৌকিদারী আর শিকার আসার অপেক্ষা 
করা। জাল বেশ ভালই বিছানো হয়েছে। রাস্তার সংখ্যা এতই 
অল্প আর জাহাজে ওঠার সুবিধা এতই কম আর ছুই বাঁ তিনটি নির্গম 
পথ এমনই সুরক্ষিত যে এটা আশ্চর্যের ব্যাপার হবে যদ্দি জালের ফাক 
দিয়ে দেশের এত বিপুল পরিমাণের সম্ভম, রোমান্দ ও আনুষঙ্গিক 
পিছলে বেরিয়ে যায়। নিঃসন্দেহে, প্রেসিডেন্ট চলাফেরা! করবেন 
যথাসম্ভব গোপনে এবং চোরেব মতো। তীরের কোন নির্জন স্থান 
থেকে নৌকোয় চড়ার চেষ্টা করবেন । 

ইঙ্গলহাট-এর টেলিগ্রাম পাবার পরে চতুর্থ দিনে নরওয়ের জাহাজ 
'কার্লদ্ফিন? যেটা নিউ ইযর্কের ফলের ব্যাপারীদের চার্টার করা ছিল, 
কোরালিওর উপকূলের কাছাকাছি নোঙর করল তার সাইরেনের 
তিনটি ধরা গলার ভে বাজিয়ে। কার্লম্ফিন ভিন্ৃভিয়াস ফল 
কোম্পানির লাইনের জাহাজ ছিল না । ওটা ছিল একট। পাঁচরকমের 
সওদা বহা সখের মালবাহী জাহাজ। নগণ্য একটি কোম্পানির, 
যার। ভিস্ৃভিয়াসের প্রতিদ্বন্্ীর স্তরের অনেক নীচে । কার্শসফিন-এর 
গতিবিধি বাজারের ওপর নির্ভর করত। কখনো! কখনে! জাহাজটি 
নিয়মিত যাতায়াত করত দোজান্ুজি নিউ অলিয়ন্স ও স্প্যানিশ সমুদ্র 
বরাবর আবার কখনো যেন ভুলবশত চলে যেত মবিল বা চার্লসটন: 
বা উত্তরে নিউইয়র্ক পর্যস্ত ফলের বিতরণের রাস্ত। ধরে। 


২৭ 


-গুডউইন বেড়াতে বেড়াতে তীরে এলো যেখানে যথারীতি ভিড় জমে 
ছিল জাহাজটি দেখতে । এখন যে কোন সময়ে প্রেসিডেন্ট 
মিরাফ্লোরেস তার দেশের সীমা ছেড়ে যেতে পারেন তাই আদেশ ছিল 
কড়া পাহারা ও নজর রাখার। তীরের ধারে যে কোন জাহাজ 
আসবে তাদের প্রত্যেকটিকেই পলাতকদের একটি সম্ভাব্য পলায়নের 
উপায় মনে করা হবে। আর, নজর রাখা হচ্ছে প্রতিটি ডিডি আর 
পালতোলা নৌকোর প্রতি যেগুলি কোরালিওর সমুদ্রগামী বহরের 
অস্তভূক্তিছিল। গুডউইন আর জাভাল্লা সব্ত্র বিচরণ করছিল কিন্তু 
কোনরূপ বাহুল্য ন! দেখিয়ে পলায়নের ফাকতালের প্রতি লক্ষ্য রেখে। 
কাস্টমস-এর করম্ীর1 তাদের বোটে নিজেদের বিশিষ্টতা বজায় রেখে 
কার্শসফিনের দিকে চলে গেল। স্টীমার থেকে ভাণ্ডারী তার 
কাগজপত্র নিয়ে একটি বোটে কুলে এসে ভিডল আর সঙ্গে নিল 
কোরালিওর বহিরাগত রোগ নিয়ন্ত্রণের ডাক্তারকে তার সবুজ ছাতা 
আর জ্বর মাপার থার্মোমিটার সমেত। তখনই একদল ক্যারিবীয় 
শ্রমিক ছোট ছোট নৌকায় তীরে রাখা হাজার হাজার কলার কীদি 
ভরে বৈঠা বেয়ে স্টামারের দিকে চলল । কার্লসফিন-এর কোন যাত্রী 
তাঁলিক! ছিল ন1 তাই সরকারী পরীক্ষা! শীঘ্রই শেষ হল। ভাগ্ডারী 
জানালো স্টীমারটি আগামীকাল সকাল পর্ষন্ত নোঙর কর থাকবে। 
নিউইয়রক থেকে সম্প্রতি সে আসছে যেখানে কমলালেবু আর 
নারিকেলের বোঝা সম্প্রতি সে রেখে এসেছে। ছ-তিনটি বড় 
বড় মালবাহী নৌকো সে ভাড়া নিয়েছে যাতে তাড়াতাড়ি মাল 
বোঝাই শেষ করে শীঘ্র ফিরে আমেরিকার সাম্প্রতিক ফলাভাবের 
স্লযোগ নিতে পারে। 

বিকেল চারটে নাগাঁদ 'ণই উপকূলে অপবিচিত আর একটি সামুদ্রিক 
যান দিগন্তে দেখা গেল, যেন আইডেলিয়াকে অন্ুরণ করছে, একটি 
অত্যন্ত সুঠাম বাম্পতরী, হালকা হলুদ রঙ ছিমছাম, যেন স্টালের 
পাতে খোদাই করা চিত্র। তীর থেকে কিছু দূরে ইয়টটি ভাসতে 
থাকে, ঢটেউএর তালে একবার দেখা যায় আবার অদৃশ্য হয়, বৃষ্টিপড়া 
পুকুরে হাসের মতো । তীরে এলে! একটি দ্রুতগামী ডিঙি যাঁর ঈাড়- 
বাহীরা উদ্দিপরা, একজন গাঁট্রাগোট্টা ব্যক্তি লাফিয়ে নামল বালির 
'*পর। 


২৮ 


আগন্তক তীরে আঞ্চুরিয়ার পাচমিশেলী জনসমাবেশ যেন পছন্দ করল: 
না, সে এগিয়ে গেল গুডউইন-এর দিকে, নিরভলভাবে যার আকৃতি 

আশংলো-স্তাকসন। গুডউইন তাকে সৌজন্তের সঙ্গে অভিবাদন জানাল । 

' কথাবার্তায় জানা গেল আগন্তকের নাম স্মিথ আর সে এসেছে ওই 

ইয়টে। সংক্ষিপ্ত জীবনী, সত্যিই। কেন না ইয়টটি তো৷ দেখাই 

যাচ্ছিল আর স্মিথ নাম আন্দাজ কর! কঠিন নয়। কিন্তু গুডউইন, 
যাঁর অনেক কিছু দেখ। ছিল, তাঁর চোখে স্মিথ আর তার ইয়টের মধ্যে 
একটা বৈসাদৃশ্য প্রকট হল। স্মিথের বুলেটের আকৃতির মাথা, 
বকা চোখ আর হোটেলে যারা ককটেল মেশায় তাদের মতো গোফ। 
ইয়ট থেকে নেমে আসার পূর্বে যদি সে পোশাক না বদলে এসে থাকে 
তাহলে তার নিখুত, পরিপাটা প্রমোদতরীর ডেককে অসম্মান করছে 
তার মুক্তা-ধূমর ভাবি ট্রগী, ঝকমকে জাম! কাপড আর ক্লাউনের 
মতো গলার রুমাল । প্রমোদতরীর মালিকেরা সাধারণত আরো 
স্থসমঞ্জস পোশাক পরে। 

স্মিথ কাজের কথায় যেমন ত্বরিত, আত্মপ্রচারে তেমন নয়। কোরা- 

লিওর প্রাকৃতিক দৃশ্যের উল্লেখ সে করল, ভূগোলের বইয়ে যেমন থাকে 

তদ্রপ দৃষ্ঠাবলী দেখে সে বিস্মিত হয়েছে। তারপরেই সে খোঁজ 
করল আমেরিকার কনসালের। গুডউইন তারা ও ডোরাদাগের 
পতাকার দিকে দেখাল, কননুলেটের বাড়ির ওপর যেটি উড়ছিল, 
কমলালেবু গাছের ঝোপের আড়ালে । 

ণকনসাল মিঃ গেডি বাড়ীতেই আছেন+, গুডউইন বললে, “কয়েকদিন 
আগে উনি প্রায় ডুবে গিয়েছিলেন, সমুদ্রে সাতার কাটতে গিয়ে, 
ডাক্তার তাকে কয়েকদিন বাড়িতেই থাকতে বলেছেন ॥ 

বালির ওপর দিয়ে পা চালিষে স্মিথ তখনই কনস্থলেটের দিকে চলল, 
তার সাজপোশাক নিরক্ষীয় নীল সবুজের মধ্যে দৃষ্টিকটু লাগছিল । 
গেডি বসেছিল তার দোলনায়ঃ মুখ কিছুটা ফ্যাকাসে, ভঙ্গি ক্লান্ত । 
সে রাত্রে ভালহাল্লার নৌকো যখন তাকে কুলে নিয়ে আসে সমুদ্রের 
মধ্য থেকে মৃতপ্রায় অবস্থায়, ডাঃ গ্রেগ আর আর তার অন্যান্ত বন্ধুরা 
অনেক ঘণ্টার পরিশ্রমে জীবনের যেটুকু রেশ দেখা যাচ্ছিল সেটুকু বজায় 
রাখতে পেরেছে । সেই বোতল আর তার নিশ্পাণ খবর সমুদ্রের মধ্যে 
চলে গিয়েছে-_যে সমস্তা সেট। খু টয়ে তুলেছিল তার অবসান হয়েছে 


২৯ 


সহজ একটি যোগ অঙ্কের সমাধানে । এক আর একে ছুই হয় 
পাটিগণিতের নিয়মে, আর প্রেমের নিয়মে তা হয় এক । 

একটা! অদ্ভুত থিয়োরী আছে যে মানুষের আত্ম! ছুটি । একটি বহিরঙ্গের 
আত্মা যা কাজ করে সাধারণ অবস্থায়, আর একটি কেন্দ্রীয় আত্মা, 
যেটা বিচলিত হয় মাত্র দ্ব-একবার কিন্তু বেগের সঙ্গে, তেজের সঙ্গে । 
যখন মানুষ বহিরঙ্গ আত্মার অধীন তখন সে দাড়ি কামায়, ভোট দেয়, 
ট্যাক্স জম] দেয়। পরিবারের হাতে টাকা তুলে দেয়, টাদা দিয়ে 
বই কেনে, নিজেকে সাধারণ নিয়মে মানিয়ে নিয়ে চলে । কেন্দ্রীয় 
আত্মা একবার প্রবল হয়ে উঠুক, আর চক্ষের নিমেষে সে তার 
আনন্দের অংশীদারের প্রতি গালিবর্ধণ শুরু করতে পারে । আঙ্ল 
মটকানোর অবসরে সে তাঁর রাজনীতি পালটাবে, নিবিড় বন্ধুকে 
মর্মান্তিক অপমান করবে । হঠাৎ সে মঠেবা নাচঘরে চলে যেতে 
পারে, কবিত। বা গান লিখতে পারে, গলায় দড়ি দিতে পারে কা 
স্ত্রীকে চাইবার আগেই চুমো খেতে পারে। তার সব টাকাকড়ি 
জীবাণু আবিষ্কারের জন্য দান করতে পারে । তারপর বহিরঙজ আত্ম! 
ফিরে আসে আর আমাদের নিরাপদ সুস্থ মস্তিষ্কের নাগরিককে 
আমরা ফিরে পাই। এ হল অহং-এর বিদ্রোহ বাঁধাধর। নিয়মের 
বিরুদ্ধে। আর এর ফলে অণু, পরমাণু ঝাঁকানি খায় যার যেখানে 
জায়গা আবার সেখানে ভালমতো! থিতিয়ে যাবার জন্য । 

যে ধাক। গেডি খেয়েছিল সেটা ছিল হালকা ওজনের । গ্রীষ্মের সমুদ্রে 
সামান্য পাতার কাটা, ভেসে যাওয়া একটি বোতলের পিছনে । এখন 
সে আবার আত্মস্থ হয়েছে । তার ডেস্কের ওপর ডাকে দেবার 
অপেক্ষায় রয়েছে একটি চিঠি সরকারকে লেখা তার কনসাঁল পদ থেকে 
ত্যাগপত্র, তার জায়গায় একজন নিয়োগ হওয়। মান্ন কার্যকরী হওয়ার 
অনুরোধ! বার্মীর্ড ব্রানিগ্যান কোন কাজ আধাখেচড়া করত না, 
-গেডিকে তার লাভজনক ব্যবসার পার্টনার করে নিচ্ছে সে সঙ্গে 
সঙ্গেই, এদিকে পলা! ব্যস্ত ছিল ব্রানিগ্যানদের বাড়ির দোতল। নতুন 
করে সাজানোর পরিকল্পনায় । 

কনস্াল তার দেলিনা থেকে উঠল, অপরিচিত ব্যক্তিকে আসতে 
দেখে। আগন্তক বললে, “যেমন ছিলেন বসেই থাকুন” তার বড়ো 
-সড়ে হাত নাড়ালে! ভারিকী চালে। 


ডগ 


“আমার নাম স্মিথ, আমি একটি ইয়টে এসেছি । আপনিই তো৷ 
কনসাল, ঠিক কি না। একজন লম্বা চওড়া ঠাণ্ডা প্রকৃতির লোক 
সমুদ্রতীর থেকে আমাকে এই দিকে পাঠাল। আমার মনে হয়েছিল 
জাতীয় পতাকাকে একবার সম্মান দেখানো উচিত ।, 

“বন্থুন” গেডি বললে । “আপনার স্টামারটি দৃষ্টির সামনে আসা 
থেকেই আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি। মনে হয় বেশ জোরে চলে। কত 
টনের ? 

“আমাকে খানাতল্লাশ করুন" ম্মিথ বললে, “আমি যদি জানি ওর ওজন 
কত। হ্যা, তবে ছোটে বেশ জোরেই, র্যামলার ওর নাম। 
জলে চলার সময়ে ভেসে যাওয়া কোন আবর্জনা ওকে স্পর্শ 
করে না। এই প্রথম আমি ওটায় চড়লাম। এই উপকুল বরাবর 
আমি পাড়ি জমিয়েছি রাবার, লাল লঙ্কা আর বিপ্লবের পয়দা হয় 
কোথায় দেখব বলে । আমার ধারণাই ছিল না এমন সিনারি এ 
জায়গায় । এই জঙ্গলে ভবা সরু গলার কাছে সেনট্রাল পার্ক 
লাগেই না। বাঁদর, নারিকেল আর তোত! এখান থেকেই তো 
রপ্তানী হয়, নয় কি? 

হ্যা ও সবই আমাদের প্রচর আছে, গেডি বললে, “আমি 
নিঃসন্দেহ যে সেনট্রাল পার্কের সঙ্গে তুলনায় আমাদের গাছপালা 
আর জন্তজানোয়ারের! প্রাইজ পাবে | 

তা হয়ত পাবে” আগন্তক হেসে বললে, আমি তো এখনে 
দেখিনি। তবে আন্দাজ করছি জানোয়ার আর গাছপালার প্রশ্নে 
আপনার! আমাদের হারিয়ে দেবেন। আচ্ছা, বেডাতে আসে কি 
এখানে বেশি লোকজন % 

“বেড়াতে আসে? গেডি প্রশ্ন করল, “আপনি বোধ হয় বলছেন 
স্টীমারে যাত্রী আসে কি না। না, কোরালিওতে খুব কমই নামে, 
কদাচিৎ ছু-একজন অর্থ-বিনিয়োগকারী। ট্যুরিস্টরা সাধারণত আরো 
দক্ষিণে যার এই উপকূল দিয়ে, আরো! বড়ো শহরে, যেখানে বন্দর 
আছে।' 

“একটা জাহাজ দেখা যাচ্ছে কলা বোঝাই হচ্ছে, স্মিথ বললে, “ওই 
জাহাজে কোন যাত্রী এসেছে কি? 

“ওটা হল -কার্লস্ফিন” কনসাল বললে, “ছল বয়ে নিয়ে যায়, 


৩১ 


বাউগুলে জাহাজ, গত খেপে নিউ ইয্র্ক গিয়েছিল। না, কোন যাত্রী 
আসেনি । ওর নৌকোকে তীরে আসতে আমি দেখেছি, তাতে কোন 
যাত্রী ছিল না। এখানে অবসর বিনোদনের একটিই উত্তেজনার ব্যাপার 
আছে আমাদের, স্টীমার এলে দেখা, আর তাতে যদি যাত্রী থাকে 
তাহলে সার] শহর ভেঙে পড়ে । মিঃ স্মিথ, কোরালিওতে যদি কিছু- 
দিন থাকেন তাহলে আমি আপনার সঙ্গে পরিচয় করে দেব এখানকার 
কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে । চার-পাচজন আমেরিকান আছে যাদের 
সঙ্গে পরিচয় থাকা ভালো, আর আছে অবশ্য স্থানীয় পদস্থ ব্যক্তিরা 1: 
ধন্বাদ, ইয়টের মালিক বললে, “আপনীকে আমি কষ্ট দেব না। 
ওইসব ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হইতে আমার খুব ইচ্ছে, কিন্ত আমি 
এখানে থাকছি না। আচ্ছা, সমুদ্রতীরের ঠাণ্ডা লোকটি একজন 
ডাক্তারের কথা বলছিল । বলতে পারেন, কোথায় তার দেখ। পাবো ? 
র্যামলারে চলাফেরা ব্রডওয়ে হোটেলের মতো স্থির নয়। অল্প-বিস্তর 
সী-সিকনেস হয়ে থাকে কখনো। কখনো । তাই ভাবছিলাম ডাক্তারের 
কাছে ছু-এক মুঠো চিনির বড়ি আদায় করে নেব, যদি কাজে লাগে ।, 
“ডাঃ গ্রেগকে আপনি হোটেলে পাবেন” কনসাল বললে, “এই 
দরজা থেকে দেখতে পাচ্ছেন ওই যে দোতল! বাঁড়ি, ব্যালকনিওয়ালা, 
যেখানে কমলালেবুর গাছগুলি ।” 

হোটেল দে লস এসব্রানজারোস ছিল 'একটি নিঃঝুম পাস্থশালা, 
পরিচিত বা অপরিচিত সকলেরই প্রায় পরিত্যক্ত, হোলি সেপালকার 
সরণীর এক কোণে দাড়িয়ে । এক পাশে ছোট ছোট কমলালেবু গাছের 
ঝোপ ছিল, চারধারে নীচু পাথরের পাঁচিল, কোন লম্বা লোক 
অনায়াসে যা ডিডিয়ে আসতে পারত । কাচা ইটেব ওপর পলেস্তারা 
দেওয়া]! বাড়ি, নানা রঙের ছাপ সারা গায়ে নোন। বাতাস আর 
রৌদ্রের প্রভাবে ! ওপরের ব্যালকনিতে ছিল একটি কেন্দ্রীয় দরজা, 
ছুটি জানলায় ছিল চওড়া! খড়খড়ি, কাচের পরিবর্তে । 

নীচের তলায় দুপাশে ছুটি দরজা, গলিপথ, পাথরের মেঝে। 
নালিকান মাদাম] টিমোতি ওরতিদ-এর পাঁনশীল1 ছিল নীচের তলায় । 
ছোট কাউনটারের পিছনে ব্রার্ডি আনিসাডা, বা স্কচচ ধোয়া আর 
শন্যান্ত কমদামী বোতলের গায়ে কদাচিৎআসা খরিদ্দারের হাতের 
আঙ্লের ছাপ। ওপরতলায় চার-পীচটি কামর! অতিথিশালার জন্ত 


৩২ 


যাতে অতিথি কদাচিৎ বাস করত। কখনো হয়ত ফলের বাগিচার 
মালিক বাগান থেকে ঘোড়ায় চড়ে এসেছে দালালের সঙ্গে 
আলোচনার জন্য, একটি বিষণ্ন রাত্রি কাটিয়ে গেছে ওই থমথমে 
হোটেলের ওপরতলায়। কখনো ছোটখাট সরকারী কর্মচারী দপ্তরের 
কাজে এসে জীকজমকের বদলে মাদামার গোরস্থান-সুলভ আপ্যায়নে 
ভীত, বিস্মিত হয়েছে । কিন্তু মাদাম। নির্ভাবনায় তার মদের দোকানে 
বসে থাকতেন। ভাগ্যের সঙ্গে ওর কোন বিবাদ ছিল না। কারো 
যদি খাছ, পানীয় আর থাকার জায়গার দরকার থাকে, তারা আসুক 
তাদের তাই দেওয়া! হবে । এসতা বিউয়েনো, সেই ভালো । যদি 
কেউ না আসে নাই আন্ুক, এসতা বিউয়েনো, তাও ভালো । সেই 
বিচিত্র ইয়টের মালিক যখন হোলি সেপালকারের রাস্ত। দিয়ে 
হোটেলে যাচ্ছিল, তখন সেই পোড়ো হোটেলের একমাত্র স্থায়ী 
অতিথি দরজায় বসে সমুদ্রের বাতাস সেবন করছিলেন। 

ডাঃ গ্রেগ, কোয়ারানটিন ডাক্তার, বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাট, মুখ লাল, 
আর এত লম্বা! দাঁড়ি টোপেক। থেকে টেরা-ডেল-ফুয়েগে পর্যন্ত কারো 
ছিল না। তার চাকরি দক্ষিণের কোন রাজ্যের স্বাস্থ্য বোডের 
সৌজন্যে। সেই রাজ্য ভয় করত দক্ষিণের সমুদ্র-বন্দরগুলির প্রাচীন 
শত্রু গীতজ্বরকে, তাই ডাক্তার গ্রেগকে পরীক্ষা করতে হত সকল 
নাবিক আর যাত্রীদের যারা কোরালিও ছেড়ে যাবে, প্রাথমিক লক্ষণের 
জন্য । কাজ ছিল সামান্য, বেতন কোরালিওর পক্ষে পর্যাপ্ত, অবসরও 
বিস্তর আর এই সং ডাক্তার প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকেও কিছু আয় 
করেন। স্পানিশের দশটি শব্দও তিনি জানতেন না, কিন্ত সেট। কোন 
বাধা ছিল 'না। নাড়ী দেখা আর ফি নেওয়ার জন্য ভাষাবিৎ হতে 
লাগে না। এই বিবরণের সঙ্গে যোগ কর! যাক ডাক্তারের একটি 
কাহিনী, মস্তিষ্বের একটি অপারেশনের যা! তার কোন শ্রোতা শেষ 
পর্যন্ত শুনত না, আর তিনি বিশ্বাম করতেন ব্রাপ্ডি একটি রোগ- 
প্রতিষেধক। ডাঃ গ্রেগ সম্বন্ধে যা কিছু বলার তার শেষ এতেই 
হবে। 

ডাক্তার একটি চেয়ার টেনে এনেছিলেন পাশের রাস্তাটিতে। কোট 
ছিল না তার গায়ে, দেয়ালের দিকে ছিল তীর পিঠ, ধূমপান 
করছিলেন আর দাঁড়িতে হাত বুলোচ্ছিলেন। তার হালক। নীল চোখে 


৩ ৩৩ 


বিস্ময়ের ভাব ফুটে উঠল যখন বিচিত্র রঙের পোশাকে স্মিথকে 
দেখলেন। 

“আপনি ডাঃ গ্রেগ, কেমন কিনা বললে ন্মিথ, তার টাইপিনের 
কুকুরের মাথাটিতে হাত বুলোতে বুলোতে । “কনস্টেবল, মানে 
কনসাল আমাকে বলল যে আপনি এই পাস্থশালায় থাকেন। 
আমার নাম স্মিথ আমি এসেছি একটা ইয়টে। বাঁদর, আনারস; 
গাছ এই সব দেখতে দেখতে সমুদ্রে বেড়াচ্ছি। ভিতরে আমন, 
কিছু পান করা যাক ডাক্তার। এই কাঁফের তো বেশ দুরবস্থা দেখছি, 
কিন্ত গল। ভিজোবার মতে। কিছু পানীয় দিতে পারবে ? 

“আমি আপনার সঙ্গে যোগ দিতে পারি সামান্ত ত্রাণ্ডি চুমুক দিতে” 
বললেন ডাঃ গ্রেগ, তাড়াতাড়ি উঠে। “এই আবহাওয়ায় আমার 
বিশ্বাস ব্রাণ্ডি অনেক রোগ ঠেকিয়ে রাখে । বারে ঢোকার সময়ে 
স্থানীয় একটি লোক খালি পায়ে নিঃশব্দে এসে দীনষ্ডায়, সে ডাঃ 
গ্রেগকে স্প্যানিশভাষায় কিছু বললে । পরনে স্ৃতীর সার্ট আর 
ছেঁড়। লিনেনের ট্রাউজার, চামড়ার বেণ্ট । মুখের চেহারা জন্তর মতো, 
প্রাণবন্ত কিন্তু সন্ত্রস্ত, বিশেষ বুদ্ধিদীপ্ত নয়। উৎসাহ ও আন্তরিকভাবে 
অনেক কথা সে বলে গেল, কিন্ত হুঃখের বিষয় সেগুলি বৃথা ব্যয়িত 
হল। ডাঃ গ্রেগ তার নাড়ী দেখলেন। 

“তোমার অন্ুুখ ? তিনি জিজ্ঞেস করলেন। 

“মি যুহের এসতা৷ এনফারমা এন লা কাসা, বললে সেই লোকটি, 
এইভাবে সে বোঝাতে চাইল একমাত্র সেই ভাষায় ষা সে জানত, যে 
তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে তাদের তালপাতা-ছাওয়া 
কুটিরে। 

ডাঃ গ্রেগ তার প্যান্টের পকেট থেকে সাদা পাউডারে ভরা একমুঠো 
ক্যাপসুল বের করলেন। দশটি তিনি গুণে গুণে ওর হাতে দিলেন 
আর তার তর্জনী তুলে ধরলেন আডম্বরের সঙ্গে । 

“একটা খাবে, ডাঃ গ্রেগ বললেন, প্রতি ছু ঘণ্টায় । এবার তিনি 
ছুটি আডল দেখালেন, নাঁড়লেন জোরের সঙ্গে নেটিভ লোকটির মুখের 
সামনে। 

নিজ্জের ঘড়িটি বের করে ভায়ালের চারপাশে ছুবার আঙল ঘুরিয়ে 
দেখালেন । 


৩৪ 


“ছুই, ছুই, ছু ঘণ্টা, বারবার বললেন ডাক্তার । 

“সে সেনিওর, লোকটি বললে ভগ্ন গলায়। 

সে একটি রূপোর ঘড়ি পকেট থেকে বের করল এবং ডাক্তারের হাতে 
দিল। “মি ব্রিউ” তার সামান্ত ইংরেজিতে অতি কষ্টে বললে, 'আদার 
ওয়াচি টরমরো । তার পরে ভগ্ন ছদয়ে ক্যাপন্থলগুলি নিয়ে চলে গেল । 
'মশায়। অত্যন্ত মুখর জাত” ডাক্তার বললেন ঘড়িটি পকেটে 
রেখে । ও আমার চিকিৎসার নির্দেশকে ফি চাইছি মনে করেছে। 
যাই হোক,ঠিক আছে, ওর কাছে আমার পাওনা অনেক, আর সম্ভুবত 
দ্বিতীয় ঘড়িটি ও আনবেই না । এর! আপনাকে যষ। কিছু প্রমিস করবে 
তার ওপর মেণটেই ভরসা কর! যায় না। হ্যা, সেই ড্রিংকের কথা 
এবার। মিঃ স্মিথ, কোরালিওতে আপনি এলেন কেমন করে? 
কার্লাসফিন ছাড়া আর কোন জাহাজ আসার খবর তো আমি 
পাইনি ।, 

সেই জনশুন্ত বারে তারা আয়েশ করে বসেছিলেন। ডাক্তারের 
অড্ণরের পূর্বেই মাদামা একটি বোতল রেখেছিলেন সামনে । তাতে 
কোন আঙলের দাগ ছল না। ছ চুমুক পান করার পরে স্মিথ বললে, 
“আপনি বলছেন কার্সস্ফিন-এ কোন যাত্রী আসেনি । আপনি কি 
নিভূল ডাক্তার? আমি যেন সমুদ্রতীরে শুনলাম এক ব। ছুজন যাত্রী 
ছিল ।; 

“ওর! তুল বলছে, মশায় । আমি নিজেই গিয়েছিলাম আর সকলকেই 
পরীক্ষা করেছি, যেমন নিয়ম । কার্পসিফিন শঘ্রই ফিরে যাবে কলার 
কাদি ভরা হয়ে গেলেই, কাল ভোর নাগাত, আর আজ বিকেলের 
মধ্যেই সব কিছু তৈরি থাকবে । না মশায়, ওর কোন যাত্রী-তালিকা 
ছিল না। থি.স্টার কেমন লাগল! একটি ফ্রেন্চ জাহাজ থেকে ছু 
নৌকো! ওই জিনিস গত মাসে নেমেছে । এর জন্য আঞ্চুরিয়া সরকার 
যদ্ধি কোন আমদানি শুল্ক পেয়ে থাকে তাহলে আপনি আমার টরপিটা 
নিয়ে নিতে পারেন। আপনি আর যদি না খান, আস্থন বাইরে 
ঠাণ্ডায় একটু বসা যাক। আমরা নির্বাসিতরা বাইরের জগতের 
লোকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুব কমই পেয়ে থাকি 1, 

ডাক্তার আর একটা চেয়ার টেনে আনলেন বাইরে রাস্তায় তার নতুন 
বন্ধুর জন্ত । ছুজনে বসলেন । 


৩৫ 


“আপনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, কত জায়গায় ঘুরেছেন, অভিজ্ঞত। 
অনেক। নীতি, দক্ষতা, শ্তায়বিচার ও পেশাগত সততার একটা 
ব্যাপারে আপনার মতামত মূল্যবান। আমি আনন্দিত হবো যদি 
আপনি একটি কেসের ইতিহাস শোনেন যেটা চিকিৎসার ইতিহাসে 
অভূতপূর্ব ।' 

প্রায় ন বছর আগের কথা, আমি তখন আমার দেশের শহরে 
প্র্যাকটিস করি। মাথার আঘাতের একটি কেসে আমাকে ডাকা হয়। 
আমি,নির্ণয় করি যে হাড়ের একটি কুচি মস্তিষ্কের ওপর চাপ দিচ্ছিল 
এবং এক ধরনের অপারেশন যার নাম ট্রিপ্যানিং তাই কর! দরকার । 
যাই হোক রোগী ধনী, সামাজিক প্রতিষ্ঠা আছে। আমি তাই 
মতামতের জন্য ডাকলাম ডাক্তার'-* 

স্মিথ চেয়ার ছেড়ে উঠল, বিনীত মার্জনা ভিক্ষার ভঙ্গিতে ডাক্তারের 
হাত ধরল । 

“বাঃ ডাক্তার, গল্পটা আমি আগাগোড়া শুনবই । আমার দারুণ 
কৌতুহল হচ্ছে । আরম্তটা যেমন হয়েছে, আমি জানি শেষটাও হবে 
দারণ। বারনি ও ফ্রিন আসোসিয়েশনের পরবতী মিটিংয়ে আমি গল্পট। 
বলতে চাই আপনার আপত্তি না৷ থাকলে । কিন্তু আমার কয়েকটা 
দরকারী কাজ আছে যেগুলি আমাকে এখনই সারতে হবে। কাজ- 
গুলি সারা হলে আমি যদি সময় পাই ফিরে এসে বাকিটা শুনব, 
কেমন ? 

“নিশ্চয়ই, ডাক্তার বললেন, “আপনার কাজ সেরে আস্থুন। আমি 
অপেক্ষা করব আপনার জন্ত। ভাবুন দেখি, পরামর্শের জন্ত বড়ো 
বড়ো ডাক্তার যাদের ডাক হয়েছিল তার একজন বললে কি না রক্তের 
একটা দলার জন্তই ওই উপসর্গ, আর একজন বললে ফোড়া, আর 
আমি আগাগোড়া"*ত ? 

এখন বলবেন না ডাক্তার। গল্পটা জমছে না। আমি ফিরে 
আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমি সমস্তট! শুনতে চাই, কেমন ? 
পাহাড়ের! তাদের প্রশস্ত স্বন্ধদেশ বাড়িয়ে দিল আপোলোর ঘরে 
ফেরা অশ্বগুলির মাঝামাঝি কদমের পদক্ষেপ ধারণ করার জন্য । 
নীচের হুদ আর কলার ঝোপে আর সুন্দরীর জলায় দিনাবসান 
হচ্ছিল, যেখানে নীল কাঁকড়ার দল তাদের রাত্রিকালের ভ্রমণের 


৩৩ 


বেরুতে শুরু করেছিল। অবশেষে সবচেয়ে উচু পাহাড়ের মাথায়ও 
দিনের শেষ হল। তারপর অল্ল সময়ের গোধুলি, মথের ওড়ার মতো! 
ক্ষণিক, এলে! আর শেষ হল। সাউদার্ন ক্রস তার সবচেয়ে উঁচু 
চোখ তুলে পামগাছের মাথার ওপর দিয়ে উঁকি দিল; জোনাকির 
তাদের মশাল জ্বালিয়ে কোমল পায়ে নেমে আসা রাত্রির আগমন 
ঘোষণ1 করল। 
দূরে নোঙ্গর কর! কার্লস্ফিন ছুলছিল, তার বাতিগুলির অসংখ্য 
প্রতিবিষ্ব কেঁপে কেঁপে জল ভেদ করে গহন গভীরে নেমে গিয়েছিল। 
ক্যারিব শ্রমিকের! ব্যস্ত ছিল বড়ো বড়ো নৌকোয় করে ভূপাকারে 
সাজানো ফলের রাশি বয়ে নিয়ে আসতে । 
বালুবেলায় একটি নারিকেল গাছে হেলান দিয়ে বসেছিল স্মিথ 
তার চারিপাশে অনেকগুলি সিগারের টুকরো ছড়ানো । সে প্রতীক্ষা 
করছিল, স্টামারের দিক থেকে তার চোখের দৃষ্টি একবারও না সরিয়ে | 
বৈষম্যের প্রতিকৃতি এই ইয়টের মালিক তার সমস্ত কৌতুহল নির্দোষ 
ফলের জাহাজটির ওপর স্তাস্ত করেছিল । ছুবার তাকে বলা হয়েছে যে 
কোন যাত্রী কোরালিওতে নামে নি ওই জাহাজ থেকে । তথাপি 
সেই একাগ্রতা নিয়ে যা একজন অলস ভ্রমণকারীর পক্ষে বেমানান, 
সে মামলাটির আপীল নিজের চক্ষু কর্ণের ওপর বিচারের জন্য দায়ের 
করেছিল । আশ্চর্যের ব্যাপার, সে একটি বিচিত্র গাত্রবর্ণের গিরগিটির 
মতে! নারিকেল গাছের তলায় ঝুকে বসেছিল, আর ওই প্রাণীটিরই 
সদৃশ পুতির মতো ঘূর্ণায়মান চোখ দিয়ে কার্লস্ফিনের ওপর তার 
গুপ্তচরবৃত্তি টালিয়ে যাচ্ছিল । 
সাদা বালুর ওপর সাঁদা ডিজিটি পাহার! দিচ্ছিল সাদা পোশাকের 
ইয়টের এক নাবিক। অল্প দুরে তীর বরাবর রাস্তা কালে-গ্রানদ-এর 
একটি পানশালায়, বাকি তিনজন নাবিক কোরালিওর একমাত্র 
বিলিয়ার্ড টেবিলের চারপাশে ঘুরছিল। আবহাওয়া যেন উচ্চকিত, যেন 
কিছু ঘটবে । এমন প্রত্যাশ। যা কোরালিওর বাতাসে ছিল অভিনব । 
উজ্জল রঙীন পালকের আকাশে ভেসে যাওয়া পাখির মতো স্মিথ এসে 
নামে এই তালগাছে ঘের! উপকূলে, ঠোট দিয়ে তার পাখা পরিষ্কার 
_করে নেয়, তার পরে নিঃশবে পক্ষ বিস্তার করে আবার উড়ে যায়। 


* দক্ষিণ গোলার্ধে দৃশ্ত তারামণ্ডল 


৩৭ 


ই 
চি 


যখন সকাল হল, তখন স্মিথ নেই, অপেক্ষমান ডিজি নেই, ইয়ট নে 
তীরের অদূরে । ম্মিথ তার আগমনের উদ্দেশ্য যেমন জানায়নি 
তেমনি কোন পদচিহ্ন রেখে যায়নি যা থেকে জানা যাবে কোরালিওর 
বালুর ওপর তার পদক্ষেপ কোন্‌ রহস্তের পিছনে অনুসরণ করেছিল 
সে এসেছিল, লীচের রাস্ত। ও রেস্তভোরায় প্রচলিত ভাষায় কথ 
বলেছিল, বসেছিল নারিকেল গাছের নীচে আর তারপরে অদৃশ্থ হয়ে 
গিয়েছিল। পরের দিন ম্মিথ বিহীন কোরালিও প্রাতরাশে কীচকল! 
ভাজ খেতে খেতে বলেছিল ছবির মতো! পোশাকপরা লোকটি চলে 
গেছে। ছুপুরের ঘুমের সঙ্গে সঙ্গে একবার হাই তুলে ঘটনাটি হারিয়ে 
গেল ইতিহাসের ভিতরে। 

তাই এখন কিছুকালের জন্য স্মিথ এই নাটকে দৃশ্যের পিছনে চলে 
যাবে। সে কোরালিওতে আর কোনদিন ফিরে আসেনি, ডাঃ গ্রেগ- 
এর কাছেও নয়, যিনি বৃথাই বসে থাকেন তার ফালতু দাঁড়ি নাড়তে 
নাড়তে তার নিঃসঙ্গ শ্রোতাকে সেই উদ্দীপনামর় ট্রিপ্যানিং আর 
রেষারেষির কাহিনী শোনাবার জন্য | কিন্তু এই আলগা পাতাগুলির 
স্বচ্ছ বর্ণনার বাড়বাড়ন্ত হোক, শ্মিথ আবার তার ভান! ঝাঁপটাবে 
তাদের মধ্যে । যথ। সময়ে সে এসে বলবে কেন সেই রাত্রিতে সে 
অন্বগুলি চুরুটের টুকরো নারিকেল গাছের চারিপাশে ছাড়য়েছিল: 
এ কাজ তাকে করতেই হবে। কেন না, ভোরের আগে যখন সে 
তার ইয়ট র্যামলারের পাল তুলে চলে যায় তখন সে তার সঙ্গে নিয়ে 
যায় একটি ধাঁধার উত্তর যা এমনই গুরুভার ও অসম্ভব হে 
আঞ্ুরিয়াতে কেউই সেই উত্তরটি কল্পন! করতেও সাহস করেনি । 


চার 
ধারা পড়ো _ 
পলায়মান প্রেসিডেন্ট মিরাফ্লোরেস আর তার সঙ্গিনীকে আটক করার 
প্ল্যান বিফল হবার কোন সম্ভাবনা ছিল না। ডা: জাভাল্লা নিজে 
গিয়েছিলেন আলাজান বন্দরে যাতে সেই পয়েন্টে পাহারার যথাযথ 
ব্যবস্থা হয়। স্লিটাস-এ লিবারেল দেশপ্রেমিক ভ্যারাস কে কড! 


৩৮ 


নজর রাখার ব্যাপারে নির্ভর করা যেত। কোরালিও ও তার আশ- 
পাশের জেলার সব দায়িত্ব গুডউইন নিয়েছিল । 

প্রেসিডেন্টের পলায়নের খবর উপকূলের শহরগুলিতে যে রাজনীতিক 
দল ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের খুব নির্ভরযোগ্য সদস্য ছাড়া আর 
কারুকে জানানো হয়নি। সান মাটেও থেকে সমুদ্রতীর পযন্ত 
টেলিগ্রাফের তার জাভাল্লার একজন অনু5র পাহাড়ের রাস্ত। ধরে 
কেটে রেখে এসেছে । এই তারগুলি মেরামত হওয়া আর রাজধানী 
থেকে খবর এসে পৌছানোর বহ্ুপূর্বে পলায়ন বা গ্রেপ্তারের প্রশ্নের 
মীমাংস। হয়ে যাবে। 

কোরালিপর ছুই পার্থে উপকূল বরাবর এক মাইল অঞ্চলে গুডউইন 
সশস্ত্র পাহার! বসিয়েছিল। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল রাত্রে কড়া! 
নজর রাখার যাতে মিরাফ্লোরেস গোপনে সমুদ্রের তীরে কোন নৌকা 
বা ডিক্ষে জোগাড় করে জলে ভাসার চেষ্টা না করতে পারেন। এক 
ডজন রক্ষী কোরালিওর রাস্তায় সন্দেহ বাঁচিয়ে টহল দিত পলায়মান 
ব্যক্তিটির যদি শহরে আবির্ভাব ঘটে তৎক্ষণাৎ তাকে আটক করার জন । 
গুডউইন নিঃসন্দেহ হয়েছিল। কোন সাবধানতা নেওয়া বাকি ছিল 
না। ঘাসে ঢাকা গলির মতো সরু সরু কিন্তু গালভরা নামধারী 
রাস্তাগুলিতে সে নিজে ঘুরে বেডীত এই চৌকিদারীতে ব্যক্তিগতভাবে 
অংশ নিতে । যেমন নির্দেশ ছিল বব ইঙ্গলহার্টের। 

শহরটি ব্যস্ত ছিল তার সাগ্্য প্রমোদযাপনের ঈষদুষ্ণ অধ্যায়টিতে। 
ছ-একজন অলস ফুল বাবু, সাঁদা ডাক্‌ এর পোষাক, ঝুলন্ত নেকটাই 
আর দোছুল্যমান সরু বাঁশের ছড়ি ঘুরিয়ে ঘাসে ছাওয়। গলিপথে 
যাচ্ছিল তাদের পছন্দ মতো সেনিওরিটাদের বাড়ীতে । সংগীত সাধন! 
যারা করত, গোঙানির স্তরে তারা কনসার্টিনা৷ বাজিয়েই চলেছে; 
দরোজা ব1 জানালায় বসে কেউ ব' গীটারের বিষঞ্ন সুর তুলছে হাতের 
ছোয়ায় । দৈবাৎ হছএকজন সৈনিক ব্যারাক থেকে বেরিয়ে ক্রুত পায়ে 
চল্সে যায়, মাথায় ঘাসের টুপি লট পট, করছে, লক্বা বন্দুক বর্শার মতে। 
এক হাতে ফেৌোলাতে দোলাতে । প্রতিটি ঝোপের মধ্যে বড়ো বড়ে। 
গেছে! ব্যাউ বিকট বিরক্তিকর কট কট, আওয়াজ তুলছে । শহরের. 
বাইরে য্খোনে গলিপথগুলি জঙ্গলে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়েছে সেখানে 
খাগ্সংগ্রহের জন্য নির্গত বেবুনের দলের গলার ঘড়ঘড় আওয়াজ আর 


৩৯ 


মসীকৃ্ণ খাড়িতে কুমীরের কাশির শব্ধ জঙ্গলের স্তব্ধতা বিদীর্ণ 
করছিল । 

রাত্রি দশটার মধ্যে রাস্তাগুলি জনশূন্য হয়ে যায়। যে কয়েকটি 
তেলের প্রদীপ রাস্তার কোণে কোণে পাণুর আলো! বিকীরণ করে 
জ্বলছিল, কোন মিতব্যয়ী নগরকর্মী সেগুলি নিভিয়ে দিয়েছে। একদিকে 
ঝুকে পড়া পাহাড় আর অন্তদিকে এগিয়ে আসা সমুদ্রের মধ্যে 
কোরালিও শান্তভাবে ঘুমোচ্ছিল, যেমন ঘুমোয় চুরি করা শিশু, 
হরণকারীদের কোলের মধ্যে। উঞ্চমগুলের এই নিবিড় অন্ধকারের 
মধ্যে হয়ত পলিমাটির নিম্নভূমির বিস্তীর্ণ প্রাস্তরের কোন ক্ষীণ সুত্র 
ধরে সেই মহৎ ছুঃসাহসী আর তার সঙ্গিনী ভূমির শেষ প্রান্তে আসার 
চেষ্টা করছে । ফকস্‌ ইন দি মরনিং-এর খেল! শীঘ্র শেষ হতে চলেছে। 
গুডউইন ধীর পদক্ষেপে দীর্ঘ নীচু ব্যারাকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল 
যেখানে মিলিটারির দল ঘুমোচ্ছিল তাদের পায়ের আদ্গুলগুলি 
আকাশের দিকে রেখে । একটি আইন ছিল যে, কোন অসামরিক 
ব্যক্তি রাত্রি নটার পরে সামরিক ঘণাটির কাছে আসতে পারবে না 
কিন্তু গুডউইন সর্বদাই এই সব ছোট খাট আইনগুলি ভুলে যেত। 
“কিউয়েন ভিভে ।” প্রহরী চিৎকার করে ওঠে তার প্রকাণ্ড মাসকেট 
সামলাতে সামলাতে । 

“আমেরিকাঁনো” গর্জন করে ওঠে গুভউইন, মাথা না ঘুরিয়ে, না থেমে 
সে চলতে থাকে। দক্ষিণে সে গেল, তার পরে বাঁয়ে, সেই পথ ধরে যেটা 
পৌছেচে প্রাজা নাশিওনাল-এ। একটি সিগারের টুকরো! ছু'ড়ে ফেলার 
দূরত্বের মধ্যে হোলি সেপালকার সড়কটি এসে মিশেছে, সেইখানে হঠাৎ 
সে থামল । 

সে দেখতে পেল, দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি, কালো পোশাক, হাতে মস্তো 
এক ব্যাগ, আড়াআড়ি দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে সমুদ্রতীরের দিকে । দ্বিতীয়- 
বার তাকাতে গুডউইনের নজরে পড়ল একজন স্ত্রীলোক, পুরুষটির 
কন্ুইএর পাশে যেন তাকে এগিয়ে যেতে বলছে, এমন' কি তাদের 
নিঃশব', দ্রুত গমনে সহায়ত করছে। এই ছজন কোরালিওর বাসিন্দা 
নয়। 

গুডউইন অনুসরণ করতে থাকে দ্রুততর গতিতে, কিন্তু গোয়েন্দাদের 
প্রিয় কোন কৃত্রিম পদ্ধতিতে নয়। চরিত্রের গদার্যবশত এই 


৪০ 


আমেরিকান ব্যক্তিটির মনে হয়নি যে তার ভূমিকা! গোয়েন্দা 
পুলিশের । সে নিজেকে আঞ্চুরিয়ার জনগনের প্রতিনিধি মনে করে। 
রাজনৈতিক কারণ না থাকলে সে তৎক্ষণাৎ ওই ব্যক্তিদের সামনে গিয়ে 
টাকাগুলি দাবী করত। তাদের দলের নীতি ছিল বিপন্ন অর্থকোষ 
ফিরে পাওয়া, জাতীয় তহবিলে তা ফেরত দেওয়া, এবং নিজেদের 
ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের ঘোষণা! করা, বিনা রক্তপাতে, বিনা বাধায়। ওই 
নরনারী দুজন হোটেল দে লোস এসত্রানজারোস-এর ছুয়ারে এসে 
থামল। পুরুষটি অধৈর্যের সঙ্গে যে ধাক। দিল তাতে মনে হয় প্রবেশ 
পথ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিজ্ভরত। সেই ব্যক্তির ছিল না। মাদামার 
সাড়া পেতে দেরী হল কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আলো দেখা গেল, দরোজ! 
খোল। হল, অতিথিরা ভিতরে গেল। 

গুডউইন নিস্তব্ধ রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল একটা সিগার ধরিয়ে। 
ছুমিনিটের ভিতর ওপরতলার খড়খড়ির ফাক দিয়ে ক্ষীণ আলোর 
রেশ দেখা গেল। ওরা ঘর ভাড়। নিল, নিজের মনেই বলল গুডউইন, 
তার মানে ওদের সমুদ্রযাত্রার ব্যবস্থা ঠিক হয়ে ওঠেনি এখনো । 

এই সময় দেখা দিল আর এক ব্যক্তি, নাম এসতেবান দেলগাদো। 
সে একজন নাপিত, চলতি সরকারের একজন শত্রু আর, যে কোন 
প্রকারের স্থিতাবস্থার বিপক্ষে উৎফুল্ল চক্রাস্তকারী। এই ক্ষৌরকার 
ছিল কোরালিওর সব চেয়ে বিষ্ন সারমেয়, প্রায়শ রাত্রি এগারটা। 
পর্যস্ত বাইরে থাকত। সে একজন উগ্র লিবারেল, গুডউইনকে দেখে 
বেশ জাকিয়ে অভিবাদন করল একই আদর্শের পথিক ভ্রাত। 
হিসেবে । . কিন্তু সে একটি দরকারী খবর দিল। 

“ভাবেন কি, ডনফ্রাঙ্ক', সে বললে, চক্রান্তকারীদের বিশ্বজনীন গোপন 
স্বরে, আজ আমি দাড়ি কামিয়েছি, ল! বারবা আপনারা কি যেন 
বলেন-_হুইসকার-_এই দেশের প্রেসিডেনটের হুইসকার, দেখুন ভেবে 
একবার। এল সেনিগর প্রেসিডেন্ট নিজেকে গোপন করছেন, 
বেমালুম হতে চাঁইছেন। মনে হল তিনি চান না কেউ তাকে চিনতে 
পারে--কিস্ত ক্যারাজো-_কেউ কি দাড়ি কামাতে পারে মুখের দিকে 
না তাকিয়ে? উনি এই সোনার টাকাটি আমাকে দিয়েছেন আর 
বলেছেন চুপচাপ থাকতে । আমার মনে হয় ডনফ্রাঙ্ক, এর মধ্যে 
কোন ব্যাপার আছে । 


৪. 


“তুমি কি প্রেসিডেনট মিরাফ্লোরেসকে কখনো দেখেছ? খুঁডউইন 
জিগগেস করল। 

“একবার মাত্র" এসতেবান উত্তর দিল, “তিনি বেশ লহ্বা, গালের 
জুললী ইয়া চওড়া, কালো ।, 

তুমি যখন কামাচ্ছিলে তখন সেখানে আর কেউ ছিল ? 

“একজন বৃদ্ধা রেড ইনডিয়ান, মেনিওর, ওই ববাড়ীরই লোক আর একজন 
সেনিওরিটা, সন্ত্রান্ত মহিলা, কি দারুণ সুন্দরী, হে ভগবান !, 

“ঠিক আছে এসতেবান', গুডটইন বলললে, “খুব ভাগ্যের কথা তু 
এই কেশবিষ্ঠাসের খবরটি দিলে । আগামী সরকার এরজন্ 
তোমার কথা মনে রাখবে ॥ তারপর অন্লকথায় দেশের সঙ্গীন 
পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে দিল এবং নির্দেশ দিল বাইরে থাকতে এব' 
হোটেলের দুই পাশের দুটি রাস্তার দিকে নজর রাখতে, লক্ষ করতে 
হোটেলের কোন দরোজ। বা জানালা দিয়ে কেউ বাইরে যাওয়ার 
চেষ্টা করছে কি না। গুডটইন নিজে যে দরোজ! দিয়ে অতিথিরা 
ভিতরে গিয়েছে সেদিকে এগিয়ে গেল, দরোজা খুলে ভিভরে প্রবেশ 
করল। 

মাদাম। ততক্ষণে ওপর থেকে আবার নীচে নেমে এসেছেন, তার 
অতিথিদের আরামের বন্দোবস্ত করতে । বারের ওপর তার বাতি 
রাখা ছিল। তার বিশ্রাম বিদ্িত হওয়ার জন্য এক থিমবল্‌ রাম সবে 
মাত্র পান করতে যাচ্ছিলেন, ভীত বা বিস্মিত না হয়ে তিনি তাকালেন 
তৃতীয় আগন্তকের দিকে । 

“আহা, সেনিওর গুডউইনঃ গরীবের বাড়ীতে পায়ের ধুলো দিয়ে 
ধন্ত করলেন কত দিন পরে । 

ছা, আসতে হবে আরো ঘন ঘন” গুডউইন বলে তার গুডউইন- 
স্বলভ হাসির সঙ্গে। “শুনেছি আপনার কেনিয়াক উত্তরে বেলিজ 
থেকে দক্ষিণে রিও পরস্ত সবার সেরা । তার প্রমাণের জন্ত আনুন 
একট বোতল ছুজনের জন্য, উন ভাসিতো, একটি বড়ো মাপের | 
আমার আগুয়ারদিয়েস্তে, মাদাম। গবের সঙ্গে বললেন, “সবার 
সেরা । এ জিনিস জন্মায় স্থন্দর বোতলে কলাগাছের অন্ধকার ঝোপে। 
হ্যা সেনিওর, কেবলমাত্র মধ্যরাত্রে এদের তুলে আনে নাবিকেরা। 
দিনের আলো ফোটবার আগে আপনার বাড়ীর পিছনের দরোজায় । 


৪২ 


ভালো আগুয়ারদিয়ন্তে এমনই এক ফল যাঁকে খুব কঠিন হাতে 
সামলাতে হয় । 

কোরালিওতে ব্যবসার যূলসুত্র ছিল চোর চালান, প্রতিযোগিতার 
বদলে। এর কথা বলত লোকে ধূর্ততার সঙ্গে, কিন্তু একধরণের 
অহঙ্কারের সঙ্গেও, যখন এই কারবার বেশ সাফল্যের সঙ্গে নিষ্পন্ন হত। 
কাউনটারে একটি রূপোর ডলার রেখে গুডউইন বললে, “বাড়ীতে আজ 
অতিথি এসেছে আপনার ।, 

খুচরে! গুণতে গুণতে মাদাম! বললেন, “না বলছে কে, ছুজন, কিন্তু এসে 
পৌছবার পরে যুহূর্তমাত্র কেটেছে । একজন সেনিওর, ঠিক বৃদ্ধ বলা 
চলে না, একজন সেনিওরিটা, বেশ সুন্দরী । তাদের ঘরে তাঁরা উঠে 
গেছে১--ভ্যুমেরো নয় আর নযুমেরে। দশ |; 

“ওই ভদ্রলোক আর ওই মহিলার আসার প্রতীক্ষা! করছিলাম আমি 1, 
গুডউইন বললে, “আমার বিশেষ দরকারী আলোচন। করতেই হবে 
ওদের সঙ্গে । আপনি কি দেখা করতে দেবেন ?? 

“বিলক্ষণ শান্তভাবে একটি দীর্ঘশ্বাস চেপে মাদাম! বললেন, “সেনিওর 
গুডইইন কেন ওপরে উঠবেন ন৷ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে । 
এসতা বিউয়েনো, বেশ বেশ, রুম নং ন্ুযুমেরো নয়, আর রুম নং 
গ্যমেরো দশ |? 

গুডউইন তার কোটের পকেটের ভিতর আলগা করল একটি 
আমেরিকান রিভলবার, যা সে কাছে রাখত, অন্ধকার খাড়া সিড়ি 
বেয়ে ওপরে উঠে গেল ! দোতলার হলে একটি বাতি জলছিল যার 
গেরুয়া আলোয় সে চিনে নিল কামরার নম্বর । নয় নম্বর কামরার 
দরোজার হাতল ঘোরাতে সেট। খুলে গেল, গুডউইন ভিতরে গিয়ে 
দরোজা বন্ধ করল। কামরার দীন হীন আসবাবের মধ্যে টেবিলের 
এক কোণে যে বসেছিল সে যদি ইসাবেল গিলবাট হয় তাহলে সংবাদ 
ওর সৌন্দর্যের যথার্থ বিবরণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে । একটি হাতের ওপর 
মাথাটি রাখা ছিল। শরীরের প্রতিটি রেখায় অপরিসীম ক্লান্তি লেখা 
ছিল, মুখাবয়বে ছিল গভীর বিহ্বলতা। চোখের তারা ছিল ধূসর 
বর্ণের আর সেই একই ছাদের যেমন ছিল ইতিহাসের সমস্ত 
হৃদয়েশ্বরীদের । তার সাদ অংশ পরিষ্কার আর উজ্জল, চোখের মণির, 
ওপর সমান্তরাল ভারি পক্ম দিয়ে ঢাকা যার নীচে তুষার শুভ্র রেখা 


৪৩ 


দেখা যাচ্ছিল । এই চোখ স্ুচিত করে মহত্ব, প্রাণশক্তি আর, কল্পনায় 
যদি ধারণ! করা যায়, অত্যন্ত উদার স্বার্থপরতা । যখন আমেরিকান 
ব্যক্তিটি প্রবেশ করল, ও চোখতুলে তাকালো, ৰিম্মিত প্রশ্ন সেই 
দৃষ্টিতে, কিন্তু ভয় নেই। 

গুডউইন টুপি খুলে বসল, তার নিজের প্রথামত চেষ্টাকৃত স্বাচ্ছন্দ্যের 
সঙ্গে টেবিলের এক কোণে । তার ছুই আঙ্,লের ফাকে একটি জবলম্ত 
চুরুট। সে এই ঘরোয়া ভঙ্গি বেছে নিয়েছিল কেনন। সে জানত 
মিস গিলবাট বাহুল্য পছন্দ করবে না। স্ত্রীলোকটির পূর্ব ইতিহাস 
সে জানত যাতে প্রচলিত আদব কায়দার স্থান ছিল নগণ্য | 

“গুড ইভনিং, মে বলল, “দেখুন ম্যাডাম কাজের কথায় সরাসরি 
আসাযাক। আপনি লক্ষ করবেন আমি কোন নাম উল্লেখ করছিনা, 
কিস্ত আমি জানি পাশের কামরায় কে আছেন এবং চামড়ার ব্যাগে 
তিনি কি রেখেছেন । সেই ব্যাপারেই আমি এখানে এসেছি । আমি 
আত্মসমর্পণের শর্ত জানাতে এসেছি ।। 

মহিলাটি নড়ল না, উত্তর দিল না, কেবল স্থির দৃষ্টিতে গুডউইনের 
হাতের চুরুটের দিকে লক্ষ করতে থাকে । 

“আমরা চাই", গুডউইন বলে চলে, চিস্তিতভাবে তার পায়ের বাকৃক্ষিনের 
জুতোর ওপর চোখ রেখে, 'আমি জনতার একট! বিরাট অংশের তরফ 
থেকে বলছি, তাদের চুরি করা অর্থ তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক । 
আমাদের শত্তগুলি এর চেয়ে বেশী কিছু নয়, সেগুলি অত্যন্ত সরল । 
নিরবাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে আমাদের 
শর্তগুলি পালিত হলে আমর! বেশী বাধার স্যর করব না। অর্থ 
ফিরিয়ে দিন আর আপনি ও আপনার সঙ্গী যেখানে যেতে চান চলে 
যান। প্রকৃতপক্ষে আপনাদের সাহায্য করা হবে, যে জাহাজ 
আপনারা পছন্দ করেন তাতে জায়গা! করে দেবার। আর নিতান্ত 
আমার বাক্তিগত দায়িত্বে আমি দশ নম্বরের ভদ্রলোককে অভিনন্দন 
জানাচ্ছি তার স্ত্রী-সৌন্দর্ষের স্ুরুচির জন্য ।” চুরুট মুখে ফিরিয়ে 
আনতে গুডউইন লক্ষ করল মেয়েটির চোখ বরফ শীতল একাগ্রতার 
সঙ্গে তার চুরুটের ওপর নিবদ্ধ। দেখা যাচ্ছে একটি কথাও ওর 
কানে যায় নি। গুডউইন বুঝতে পারল, চুরুটটি জানালার বাইরে 
ছু'ড়ে ফেলে সকৌতুকে হাসল, টেবিল থেকে নেমে দাডাল। 


৪88 


“এবার ঠিক হয়েছে+ মহিলাটি বললে, 'এখন আমার পক্ষে আপনার" 
কথা শোনা সম্ভব। আর, সদাচারের আর একটি পাঠ যদি নেন,, 
তাহলে আপনি বলতে পারেন আমি কার দ্বারা এভাবে অপমানিত 
হ্‌চ্ছি।, 

“ঃখিত” গুঁডউইন বললে, এক হাত টেবিলে রেখে, 'আমার হাতে 
সময় এতই কম যে শিষ্টাচারের পাঠ নেওয়া হয়ে উঠবে না। শুনুন, 
আপনার শুভবুদ্ধির কাছে আমি আবেদন করছি। আপনি 
একাধিকবার প্রমাণ করেছেন যে নিজের স্থবিধার ব্যাপারে আপনি 
বেশ সচেতন । এখন এমন অবস্থা যে আপনার বুদ্ধি প্রয়োগ করতে 
হবে। এর মধ্যে রহস্ত কিছু নেই। আমার নাম ফ্রাঙ্ক গুডউইন আর, 
আমি এসেছি টাকার জন্ত। ঘরে আমি ঢুকেছি আন্দাজে । অপর 
কামরাটিতে ঢুকলে এতক্ষণে আমি টাকা পেয়ে যেতাম। দশনম্বর 
কামরায় ভদ্রলোক তার ওপর স্স্ত বিরাট এক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। 
তিনি তার দেশবাসীদের থেকে বিরাট অঙ্কের অর্থ ডাকাতি করে 
নিয়েছেন। আমি এই টাক1 তাদের হারাতে দেব না। আমি বলব 
না ওই ভদ্রলোক কে। তবে যদি আমাকে জোর করে তাকে দেখতে 
হয় আর যদি তিনি হয়ে পড়েন রিপাবলিকের একজন মস্ত বড়ো কতা 
ব্যক্তি তাহলে আমার কর্তব্য হবে তাকে গ্রেপ্তার করা । বাড়ীট। পাহারা 
দেওয়া হয়েছে । আমি খুব উদার শর্ত দিচ্ছি। পাশের ঘরের ভদ্র- 
লোকের সঙ্গে আলোচনা যে আমাকে করতেই হবে এমন নয়। চামড়ার 
ব্যাগট। দিয়ে যান যাতে টাকাটা আছে আর তার পরেই আমি এই 
ব্যাপারে ছেদ টেনে দেব! মহিলাটি তার চেয়ার ছেড়ে উঠল» 
দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে। 

“আপনি এখানে থ!কেন, মিঃ গুডউইন', ও জিগগেস করল একটু 
পরে। 

হ্যা। 

“এই যে আপনি আমাদের ওপর চড়াও হলেন, কোন ক্ষমতার, 
অধিকারে ॥ 

“আমি রিপাঁবলিকের একজন প্রতিনিধি । আমাকে টেলিগ্রাম করে 
জানানে। হয়েছিল দশ নম্বর কামরার ভদ্রলোকের গতিবিধির কথা ।, 
“আমি কি আপনাকে ছুই বা তিনটি প্রশ্ন করতে পারি? আমার 


৪৫ 


বিশ্বাস কাপুরুষতার চেয়ে সত্যভাষণ আপনার পক্ষে সহজ। এটা 
কি ধরনের শহর, কোরালিও-ই তো এর নাম, নয় কি? 

“বলবার মতো! শহরই নয়”, গুডউইন হেসে বললে । কলার শহর 
যেমন হয়। খড়ের কুঁড়ে, কাচা ইটের বাড়ী, পাচ ছটি দোতল। 
দালান, থাকার জায়গা! খুবই কম, বাসিন্দারা দৌআশল। স্প্যানিশ, 
রেড ইনডিয়ান, ক্যারিব আর নিগ্রো। বেড়াবার রাস্তা নেই, নেই 
কোন আমোদ প্রমোদ । নীতিবোধ কিছুটা আলগা! । মোটামুটি 
চিত্রট। এরকম |, 

“সামাজিক ব1 ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এখানে বাস করার কোন প্রেরণ! 
আছে কি ? 

“আছে বৈ কি”, গুডউইন ভাল করে হেসে বললে, খানে বিকেলের 
চায়ের আসর নেই, নেই হাত অরগ্যান বা ভিপার্টমেনটাল স্টোর, 
আর বহিষ্ষারের সনদ নেই কোন দেশের সঙ্গে ॥ 

“উনি বলেছিলেন” মেয়েটি 'বলে চলে যেন নিজের মনেই, সামান্ত 
ভ্রুকুটি করে, “যে এই সব উপকূলে সুন্দর আর বড়োসড়ো৷ শহর 
আছে। বলেছিলেন এসব জায়গায় সহজ সমাজ ব্যবস্থা আর বিশেষ 
করে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান আমেরিকানদের একটি কলোনি আছে।' 
কিছুট। বিস্ময়ের সঙ্গে তার দিকে তাকিয়ে গুডউইন বললে, “আছে 
একটি কলোনি আমেরিকানদের আর সেখানে ভাল লোক কিছু 
আছে নিশ্য়। কয়েকজন আইনের হাত থেকে বাঁচবার জন্য 
দেশত্যাগী। আমার স্মরণে আসছে ছজন পলাতক ব্যাঙ্ক 
প্রেসিডেনট, একজন সেনা বিভাগের খাজাঞ্চি কিছুটা ধোয়াটে যার 
অতীত, একজন বিধবা, তার ক্ষেত্রে সেঁকো। বিষের সন্দেহ করা হত। 
আর আছি আমি এই কলোনিতে তবে বিশেষ কোন অপরাধ করে 
এখনে! বিখ্যাত হয়ে উঠি নি); 

“আশা ছাড়বেন না", মেয়েটি বললে শুষ্ষ স্বরে, আপনার আজকের 
আচরণের পরে আর আপনার অজ্ঞাত থাকার কোন গ্যারানটি আছে 
বলে মনে হয়না । কোথাও একটা ভুল হয়েছে, বুঝতে পারছিনা! 
সেটা কোথায়। কিন্ত ওকে আপনি বিরক্ত করবেন না আজ 
রাত্রিতে । পথের শ্রমে অত্যন্ত ক্লাস্ত হয়ে উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন জাম! 
কাপড় না ছেড়েই। আপনি চুরি করা টাকার কথা বলছেন। 


৪৬ 


আপনীর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা । যেখানে আছেন 
ওখানেই থাকুন, আমি চামড়ার ব্যাগট। নিয়ে আসছি যেটার ওপর 
আপনার অত লোভ, আপনাকে ওটা! দেখিয়ে দিচ্ছি ।, 

ছটি কামরার মাঝখানের বন্ধ দরোজাটির দিকে গিয়ে ও থামল, মুখ 
ঘুরিয়ে গুড়উইনের দিকে বিষঞ্ন অন্বেষার দৃষ্টিতে তাকালো, যে দৃষ্টি 
শেষ হল একটি রহস্তময় হাসিতে | 

“আপনি দরোজ। ঠেলে আমার ঘরে টোকেন", মেয়েটি বললে, “আর 
ইতরের মতো ব্যবহারের পরে নিন্দনীয় অভিযোগ করেন'--ও দ্বিধায় 
পড়ে, যেন যা বলতে যাচ্ছিল পুনবিবেচনী করে নেয়, “কিন্ত আবার, 
ব্যাপারটা যেন একটা ধাধার মতো, আমার স্থির বিশ্বাস কোথাও 
একট। ভূল হয়েছে ।? 

দরোজার দিকে ও এক পা এগোয়, কিন্তু গুডউইন ওর হাত মৃদু 
আকর্ষণ করে ওকে থামিয়ে দিল। ইতিপূৰরে আমি বলেছি মেয়ের! 
রাস্তায় তার দিকে ফিরে ফিরে তাকাতো । সে ছিল ভাইকিংদের 
মতো! পুরুষ, লম্বা চওড়া, ব্ুদর্শন আর সদয় যোদ্বাভাব। মেয়েটির 
রং শ্যামল, গবিত, উজ্জল বা পাণ্ডর--ওর মেজাজ অনুসারে । আমি 
জানিনা ঈভ ছিলেন শ্যামলী কি গৌরী, কিন্তু এই মেয়েটির মতো 
কেউ যদি সেই উদ্ভানে থাকত তাহলে আপেল খাওয়া হতোই। এই 
স্বীলোকটি গুডউইনের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে আর সে তা জানত না। 
কিন্ত নিয়তির প্রথম যন্ত্রণা কিছুটা সে নিশ্চয়ই অনুভব করেছিল 
কেননা, মেয়েটির মুখোমুখী দাড়ানোর পর থেকেই ওর সম্বন্ধে প্রচলিত 
জনশ্রুতি তার কাছে অত্যন্ত তিক্ত লাগছিল । 

'ভূুল যদি কোথাও হয়ে থাকে" তীত্রন্বরে সে বললে, সটা আপনার । 
আমি ওই ব্যক্তিটিকে ততটা দোষ দিই না যে হারিয়েছে তার দেশ, 
তার সম্মান আর হারাতে গলেছে সান্ত্বনা ন্গরূপ চুরি করা সম্পদ, 
যতট1 দোষ দিই আপনাকে, কারণ, ঈশ্বরের নামে বলছি আমি বেশ 
দেখতে পাচ্ছি এই অবস্থায় সে কেমন করে পৌছাল। আমি বুঝতে 
পারছি আর তার জন্ অন্ুকম্পা হচ্ছে । আপনাদের মতো! স্্ীলোকদের 
জন্তই এই হতঙচ্ছাড়া সমুদ্র উপকূলে যত হতভাগার! দেশাস্তরী হয়ে 
আসে, যারা মানুষকে ভুলিয়ে দেয় তাদের ওপর ন্যস্ত বিশ্বাস, য! টেনে 
আনে**" |? 


৪৭ 


হতাশার ভঙ্গি করে মেয়েটি তাঁকে বাধা দিল । 

থাক, আর প্রয়োজন নেই আপনার আমাদের অপমান করার, শীতল 
কণ্ঠে ও বললে । “আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন, আর 
জানিনা! পাগলের মতো! আজগুবি কত ভুল আপনি করছেন। কিন্ত 
একজন ভদ্রলোকের পোর্টম্যানটোর ভিতরে কি আছে দেখালে যদি 
আপনার হাত থেকে রেহাই পাওয়! যায় তাহলে আমি আর এক 
মূহুর্ত দেরী করব না।? 

দ্রেত আর নিঃশবে সে পাশের ঘরে গেল আর চামড়ার ভারি ব্যাগটি 
নিয়ে এলো, আমেরিকানটির হাতে সেটা তুলে দিল শান্ত ঘৃণায় সঙ্গে । 
গুডউইন তখনি ব্যাগটি রাখল টেবিলের ওপর, স্ট্র্যাপগুলি খুলতে 
লাগল। মেয়েটি পাশে দাড়িয়ে থাঁকে, মুখভঙিতে অসীম দ্বণা ও 
বিরক্তি নিয়ে । 

ব্যাগটি খুলে গেল পাশ থেকে চাপ দেওয়াতে । গুডউইন টেনে বের 
করল ছু তিনটি পোশাক আর তার পরে বেশী অংশ যা দিয়ে ভরা 
ছিল-_বাগ্ডিলের পর বাগ্ডিল আমেরিক। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাঙ্ক আর 
ট্রেজারির 'নোট, বেশী মূল্যের। মোট। মোটা অঙ্ক যা লেখা ছিল 
কাগজের ব্যাণ্ডে যা দিয়ে নোটগুলি বাঁধা ছিল, তার থেকে হিসাব 
মতে। দাড়ায় প্রায় এক লক্ষ ডলার । 

চকিতে গুডউইন স্ত্রীলোকটির দিকে তাকাল আর আশ্চর্য হয়ে দেখল, 
আর কেন যেন আনন্দের একটি শিহরণ বয়ে গেল ওর শরীরের মধ্য 
দিয়ে, যে মেয়েটি বাস্তবিক একটি ধাকা খেয়েছে । ওর চোখ ছুটি 
বড়ে। বড়ো হয়ে উঠেছে, ও হাঁফাচ্ছিল, টেবিলের গায়ে অবসন্ন ভাবে 
শরীরের ভার রেখে দাড়িয়েছিল। তাহলে দেখ! যাচ্ছে যে ও জানত 
না ওর সঙ্গী সরকারের অর্থকোষ লুঠ করেছে। কিন্ত নিজেকে 
গুডউইন রাগত ভাবে জিজ্ঞেস করে, কেন সে খুশী হচ্ছে ভাবতে যে 
এই ঘুরে বেড়ানো, নীতিহীন গায়িকাটি ততট! খারাপ নয় যতটা তার 
সম্বন্ধে প্রচারিত হয়েছিল । 

অপর কামরায় একটি শব্দ হল যাতে ছুজনেই চমকে উঠল । দরোজাটি 
খুলে গেল এবং একজন দীর্ঘদেহী বর্ষাঁয়ান গাট গাত্রবর্ণের অধুন! 
ক্ষৌর কর! ব্যক্তি দ্রুত এই কামরায় এলেন । 

প্রেসিডেনট মিরাফ্লোরেসের সব ছবিতেই তার যত্বে সাজানো ঘন 


৪৮ 


কৃষ্তবর্ণের জুলগী দেখা যেত কিন্ত নাপিত এসতেৰান-এর কাহিনী 
গুডউইনকে নতুন কিছু দেখার জন্ প্রস্তুত রেখেছিল । 

সেই ব্যক্তি অন্য কামর! থেকে প্রায় হুমড়ি খেয়ে এই ঘরে এলেন । 
বাতির ওহ্ল্যে তার নিদ্রায় ভারি চোখ পিটপিট করছিল । 

ঝরঝরে ইংরেজিতে তিনি বললেন, “এর মানে কি”? আমেরিকানের দিকে 
তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, "ডাকাতি ? 

প্রায় তারই কাছাকাছি+, গুডউইন উত্তর দিল, “কিন্ত আমার বোধ হচ্ছে 
ঠিক সময়ে এসে পৌছে সেটা ঠেকাতে পেরেছি । আমি সেই সৰ 
লোকের প্রতিনিধিত্ব করছি যারা এই অর্থের মালিক এবং আমি 
এসেছি সেই টাঁক। তাদের ফিরিয়ে দিতে | নিজের আলগা লিনেনের 
কোটের পকেটের মধ্যে সে হাত রাখে। 

অপর ব্যক্তির হাত ভ্রত পিছনের দিকে চলে যায়। 

“বের করবেন না” তীক্ষন্বরে গুডউইন বললে, "আমি পকেট থেকে 
আপনাকে কভার করছি ।, 

মেয়েটি সামনে এগিয়ে এলো, এক হাত তার দ্িধাগ্রস্ত সঙ্গীর কাধের 
ওপর রেখে টেবিলের দিকে নির্দেশ করে। মৃছৃম্বরে শুধায়, “সত্যি 
করে বলো, কার টাকা এগুলি ॥ 

তিনি কোন উত্তর না দিয়ে ফেললেন একটি গভীর, বিলম্বিত 
দীর্ঘশ্বাস। ঝুঁকে পড়ে চুমো! দিলেন মেয়েটির কপালে, তারপরে 
পিছিয়ে গিয়ে অন্ত কামরায় ঢুকে গেলেন আর দরোজাটি বন্ধ করে 
দিলেন। গুরডউইন তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিল, লাফিয়ে গেল 
দরোজার . ওপর, কিন্তু পিস্তলের আওয়াজ তার হাতে প্রতিধ্বনিত 
হয়ে এলো, দরোজার হাতলে তার হাত স্পর্শ কর! মাত্র। ভারি কিছু 
পতনের শব্দ হল, কেউ তাকে সরিয়ে পাশের ঘরে প্রবেশ করল যেখানে 
ওই ব্যক্তির দেহাবসান হয়েছে । 

এক নিদারুণ হতাশ, গুডউইনের মনে হল বীর যোদ্ধা আর স্বর্ণ 
হারানোর থেকে অনেক গভীর যা সেই মোহিনী নারীর অন্তর নিংড়ে 
সেই মুহূর্তে ভেঙে ভেঙে বেরিয়ে এলো সেই রক্তাক্ত সম্মানহানির 
কামরা থেকে, সকল ক্ষমার, সকল কোমলতার, পাথিব সাস্তবনার সেই 
নাম,-ও$১ মা, মা, মাগো, মা)? 

এদিকে বাইরে কোলাহল সুরু হয়েছিল। গুলির আওয়াজে নাপিত 


8 ৪৯ 


এসতেবান চীৎকার করে উঠেছে। গুলির আওয়াজে শহরের অর্ধেক 
বাসিন্দা! জেগে উঠেছে । রাস্ত। থেকে লোকের পায়ের শব, সরকারী 
নির্দেশগুলি শাস্ত বাতাসে আন্দোলিত হতে থাকে । গুডউইনকে 
একটা কর্তব্য পালন করতে হবে। অবস্থার ফেরে তাকে তার 
পছন্দকর। দেশের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে হয়েছে। দ্রুত 
সেই ব্যাগে সব অর্থ ভরে নিয়ে সে ব্যাগটি বন্ধ করল, জানালার 
বাইরে ঝু"কে সেটি নামিয়ে দিল কমলালেবু গাছের ওপরে । 
কোরালিওতে ওরা তোমাকে বলবে, কেন ন। অতিথিকে এই কাহিনী 
শোনাতে তারা আনন্দ পায়, সেই ছুংখময় পলায়নের শেষভাগ । ওরা 
বলবে কেমন করে আইনরক্ষীর। ছুটে এলে! যখন বিপদের সংকেতধবনি 
বেজে উঠল। কমানডাঁনট লাল চটী আর রেস্তেশরার প্রধান খান- 
সামার মতো! কোট পরে, সৈম্তের! তাদের দীর্ঘাকার বন্দুক নিয়ে, 
তাদের চেয়ে বেশী সংখ্যায় অফিসারের দল সোনালি তকমা আর 
কাধের ব্যাজ লাগাতে লাগাতে, খালি পায়ে পুলিশের! ( এই দলে 
যারা একমাত্র কর্মদক্ষ ) আর বিচলিত নগরবাসীর দল সকল গাত্র- 
বর্ণ ও আকৃতির মানুষ ছুটে এলো। ওরা বলে মৃত ব্যক্তির মুখাকৃতি 
গুলির ফলে অনেকট৷ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গুডউইন আর 
এসতেবান তাকে সনাক্ত করেছিল। পরদিন, টেলিগ্রাফের তার 
মেরামত হলে পরে খবর আসতে থাকে । প্রেসিডেন্টের পলায়নের 
খবর নগরবাসীদের জানানো হল। সান মাটেও-তে বিপ্লবীদল 
সরকারের কার্ধভার নিজেদের হাতে নিয়েছে বিন! বাধায় আর সেই 
পারদ সদৃশ-মতি জনগণের জয়ধ্বনি হতভাগ্য মিরাফ্লোরেসের বিষয়ে 
কৌতুহল মুছে দিল। 

ওরা তোমাকে বলবে নতুন সরকার শহরগুলিতে কেমন করে খানা- 
তল্লাসী চালিয়েছিল, রাস্তার পাথর ওলটপালট করে, হৃত অর্থ যা 
প্রেসিডেন্ট সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার উদ্ধারের জন্য, কিন্তু বৃথা । 
কোরালিওতে সেনিওর গুডউইন তল্লাসীদলের সরদারীর ভার নিজেই 
নিয়েছিল- মেয়ের যেমন করে চুল আচড়ায় সারা! শহর তেমনিভাবে 
আচড়েছিল কিন্তু সেই টাকা আর পাওয়। যায় নি। 

তাই তারা মৃত ব্যক্তিকে কবর দিল, কোন সম্মান না দেখিয়ে, শহরের 
পিছনে, সুন্দরীর জল! ডিডিয়ে গেছে কাঠের ছোটি সেতু, তারই 


৫ 


পাশে । এক রেয়াল দিলে যে কোন ছোট ছেলে সেই কবর তোমাকে 
দেখিয়ে দেবে । ওরা বলবে যে সেই বৃদ্ধা রেড ইনডিয়ান যার 
কুটারে নাপিত তার দাঁড়ি কামিয়েছিল, সে একটি কাঠের ফলক তৈরী 
করে দিয়েছিল আর জ্বলন্ত শিক দিয়ে তাতে একে দিয়েছিল তার 
নাম ধাম। 

তুমি আরো শুনবে, পরবর্তী বিপদসংকুল দিনগুলিতে গুডউইন শক্তিমান 
দুর্গের মতে। ডনিয়! ইসাবেল গিলবাটকে রক্ষা করেছিল। আর, ওর 
অতীত জীবনের ব্যাপারে__সংকোচ যদি কিছু থাকে, ত৷ দূর হয়েছিল । 
আর মেয়েটির খামখেয়ালী উদ্দামতা যদি ব। কিছু থেকে থাকে তাও 
দূর হয়েছিল, আর তাদের বিয়ে হল আর তার! সুখী হয়েছিল । 

এই আমেরিকান দম্পতী শহরের উপকগ্জে পাহাড়ের কোলে একটি 
বাড়ী তৈরী করেছিল। ইট, তালের গুড়ি, খড়, বাঁশ, কাচা ইট আর 
স্থানীয় কাঠ যার রপ্তানী মূল্য একটি সম্পত্তির সমান, এই সব দিয়ে 
তৈরী জটিল স্থাপত্যের নিদর্শন সেই বাড়ী। তার চারিদিকে ব্বর্গের 
শোভা আর ভিতরেও স্বর্গের খানিকটা, সে বাড়ীর ভিতরের সৌষ্ঠবের 
কথ! বলতে স্থানীয় লোকেরা হাত পা নেড়ে প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়। 
তার মেঝের পালিশ আয়নার মতো, ইনডিয়ানদের হাতে বোনা 
সিলকের তন্তর কম্ঘল পাতা, লম্বা লম্বা অলঙ্করণ আর ছবি, আর 
বাগ্যন্ত্র আর কাগজে মোড়া দেয়াল, ভেবে দেখুন আপনারা, তার! 
সরবে ঘোষণা করে । 

কিন্ত কোরালিওতে ওরা বলতে পারে না (যা তোমর! জানতে 
পারবে ) সেই টাকার কি হল গুডউইন যা কমলালেবু গাছের ভিতর 
ফেলে দিয়েছিল। কিন্ত সে কথা পরে হবে। এখন তালের পাতায় 
পাতায় হাওয়া! দোল! দিচ্ছে, আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে খেলাধুলায়, 
গ্রমোদে | 


৫১ 


পাচ 
(00105 15116 101096061৬0 
প্রেমের জন্য ফেশতাযাগী- নম্বর দুই 


আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র কনসাল হবার উপধুক্ত কাঠের স্টক ভালে 
করে দেখে নিয়ে ডেলসবার্গ আলাবামাঁর মিঃ জন ডি. গ্রাফনরিড আযাট- 
উডকে নিবাচন করল ইস্তফা দেওয়া উইলার্ডগেডির স্থলে। মি: 
আযাটউডের প্রতি পক্ষপাতশুন্তভাবে বলা যায় এক্ষেত্রে সে নিজেই 
চাকরিটি চেয়েছিল। ন্ষেচ্ছানির্বাসিত গেডি-র মতোই স্থুন্দরী স্ত্রী- 
লোকের কুহকী হাসি জনি আাটউডকে ফেডারেল সরকারের চাকর 
গ্রহণের মতো বেপরোয়া পদক্ষেপে ধাবিত করেছিল। যাতে সে অনেক, 
অনেক দূরে চলে যেতে পারে আর সেই সুন্দর মুখ আর না দেখতে হয় 
যে তার নবীন জীবন এনন করে বিপর্ষস্ত করেছিল। কোরালিওতে 

নসালের চাকরী যথেষ্ট দূরে সরে যাওয়ার একটি প্রকৃষ্ট আর 
রোমানটিক জায়গা, যা ডেলসবার্গ-এর জীবনের গ্রামা দৃশ্পটে 
প্রয়োজনীয় নাটকের উপস্থাপনা করতে পারে। অতন্তভাড়িত 
দেশাস্তরীর ভূমিকার অভিনয় করার কালে জনি স্প্যানিশ সমুদ্রে 
বাত্যাহতদের দীর্ঘ তালিকায় নিজের নামটি সংযৌজন করেছিল 
জুতোর বাজারের কলকাঁঠি নেড়ে, আর রেখে যায় অতুলনীয় কী্তি 
যার ফলে তার দেশের একটি অপদার্থ আগাছাকে অপরিচয় থেকে 
উন্নীত করেছিল আস্তর্জীভিক বাণিজ্যের পণ্য হিসেবে । 
গোলমাল শুরু হয়েছিল যেমন হামেশাই হয়ে থাকে শেষ হবার বদলে; 
একটি প্রেম থেকে । ডেলসবার্গে ইলাইজা। হেমস্টেটর নামে একব্যক্তি 
ছিলেন ধাঁর একটা মুদীর দোকান ছিল । পরিবার বলতে তার ছিল 
রোজিন নামে এক মেয়ে যে নামটি “হেমসটেটর” নামের পারুণ্ 
খানিকটা ম্বালন করছে। এই তরুণীটির ছিল প্রচুর দৈহিক আকর্ষণ 
যার ফলে, সেই অঞ্চলের যুবকের দল বেশ চঞ্চল হয়েছিল। এদের 
মধ্যে যারা একটু বেশী চঞ্চল হয়েছিল তার মধ্ো ছিল জনি, জর্ 


৫ 


আযাটউডের ছেলে-_ওরা বাস করত পুরানো কলোনিয়াল প্রাসাদে, 
ডেলসবার্গ-এর এক প্রান্তে । 

মনে করা সঙ্গত যে কমনীয় রোজিন একজন আযাটউডের ভালবাসার 
প্রতিদান সানন্দেই দেবে, কেন না এই নামটির সম্মান ও প্রতিষ্ঠা 
রাজ্য ব্যেপেই ছিল বহুদিন থেকে । মনে করা অসঙ্গত নয় যে মেয়েটি 
সেই পুরানো প্রাসাদোপম যদিও প্রায় জনশৃন্ট আটউডদের বাড়ীতে 
সমারোহের সঙ্গে নববধূর বেশে প্রবেশ করতে রাজীও হবে। কিন্তু 
তা হল না কারণ দিগন্তে মেঘ ছিল, ঝপ্চার মেঘ, একজন প্রাণবন্ত, 
ধূর্ত কৃষকের আকৃতিতে, যে স্পধিত হয়েছিল অভিজাত আাটউডের 
প্রতিপক্ষ হতে । 

এক রজনীতে জনি রোজিনের কাছে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল যা! 
যুবক যুবতীদের কাঁছে গভীর তাৎপর্ষের প্রন্ন । অনুষঙ্গ ছিল সবই 
যথাযথ, টাদের আলে? করবী, ম্যাগনোলিয়া আর দোয়েলের গান। 
সেই মুহুতে পিঙ্কনি ডমন-এর ছায়া তাদের মাঝখানে এসেছিল কিন! 
ত1 জান। নেই কিন্তু রোজিনের উত্তর সম্মতিবাচক ছিল না। মিঃ জন 
ডি গ্রাফনরিড আটউড অভিবাদন করে বিদায় নিল, তার টুপি প্রায় 
ছুঁয়ে গেল জমির ঘাস, তারপরে মাথ! উচু করে কিন্তু হৃদয়ে আর 
বংশভালিকায় একটি ক্ষত নিয়ে চলে গেল। হেমসটেটর প্রত্যাখ্যান 
কবছে একজন আযাটউডকে ! ধুক্তোর। 

সেই বছরের অন্যান্থ ছুর্টনার মধ্য ছিল একজন ডেমোক্রাট 
প্রেসিডেনট । জজ আযাটউড ছিলেন ডেমোক্রাট দলের একজন 
বিশিষ্ট যুদ্ধাশ্ব। জনি ধরে বসল বিদেশে চাকরীর জন্ত তদবির করতে। 
সে চলে যাবে দূরে বহু দূরে । হয়ত অনেক বছর পরে রোজিন 
ভাববে তার প্রেম কত পবিত্র, কত সত্য, কত একনিষ্ঠ ছিল, আর, 
হয়ত মেই মাখনে একফৌট। চোখের জল পড়বে পিঙ্ক ডসনের প্রাত- 
রাশের জন্য যা সে মস্থন করে তুলছিল। রাজনীতির চাক। ঘুরল। 
জনি কোরালিওতে কনসাল নিযুক্ত হল। 

যাবার আগে সে হেমসটেটরদের বাড়ী গেল বিদায় জানাতে । 
রোজিনের দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক গোলাপী আভা দেখা গেল। ছুজনে 
যদি একল! হত তাহলে হয়ত যুক্তরাষ্ট্রকে আর একজন কনসাঁল খুঁজতে 
হত। কিন্তুপিঙ্ক ডসন ছিল সেখানে এবং তার প্রথামত চারশ 


৫৩ 


একরের ফলের বাগান” তিনশ মাইল লম্বা আলফালফার মাঠ আর 
হুশ একরের চারণভূমি-_এইসব গল্প করছিল। তাই জনি রোজিনের 
করমর্দন করল নিরুত্তাপভাবে যেন ছদিনের জন্য যাচ্ছে মনট, 
গোমারিতে | ইচ্ছা করলে, আচরণে তারা হতে পারত রাজা রাজডার 
মতো-_এই আযাটউডেরা। 

“ফালতু টাক লগ্নী করার কোন সুবিধার খোজ যদি পাও আমাকে একটা 
খবর দিও, জনি+ পিঙ্ক ডসন বললে । “কয়েক হাজার ডলার যে কোন 
সময়ে আমার হাতে থাকে কোন লাভজনক কারবারে লাগাবার জন্য ৷ 
“নিশ্চয়, পিঙ্ক, সে রকম কিছু সন্ধান পেলে আনন্দের সঙ্গে তোমাকে 
জানাবো”, জনি বললে প্রসন্নভাবে ৷ 

অতঃপর জনি চলে গেল মবিল-এ এবং সেখান থেকে একটি ফলের 
স্টমারে চড়ে আঞ্চুরিয়ার তীরাভিমুখে রওনা হল। 

নতুন কনসাল কোরালিওতে পৌছে সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের 
এীশ্বর্ষে মুগ্ধ হল। বয়স তার মোটে বাইশ। যৌবনে বিমর্ষতা 
পরিধেয়-র মতো সারাক্ষণ গায়ে লেগে থাকে না যেমন থাকে বার্ধক্যে। 
বিভিন্ন খতুর মতো! ছঃখ সেখানে রাজত্ব করে কখনো কখনো । 
অন্থ সময়ে উপলব্ধির তীব্রতায় সে পদচ্যুত হয়। 

বিলি কেওগ আর জনির বন্ধুত্ব গড়ে উঠল অল্পদিনেই । কেওগ নতুন 
কনসালকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে শহর দেখালো, যে কয়জন আমেরিকান, 
মুষ্টিমেয় ফ্রেনচ আর জর্সন যাঁদের নিয়ে কোরালিওর বিদেশী গোষ্ঠী 
তাদের কাছে নিয়ে গেল। তারপরে অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থানীয় 
পদস্থ কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়া হল আর তার পরিচয়পত্র 
দোভাষীর সাহায্যে পেশ করা হল। 

দক্ষিণরাজ্যের এই যুবকটির মধ্যে এমন কিছু ছিল যা বিদগ্ধ কেওগের 
ভাল লেগেছিল। তার আচরণ এতই সহজ ও সরল যেন শিশুর 
মতো৷। কিন্তু এমন শাস্ত অনায়াস পটুতা তার ছিল যা অনেক বয়স 
ও অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় । উদ্দি বা খেতাব, লাল ফিতা বা বিদেশী 
ভাষা, পাহাড় ব। সমুদ্র তার প্রাণ চাঞ্চল্যকে দমিত করতে পারে নি। 
সে সকল যুগেরই উত্তরাধিকার সঙ্গে নিয়ে এসেছে, একজন আযাঁটউড, 
ডেলসবার্গ-এর, অথচ তার মনের গরভীরের মধ্যেও কোন চিন্তা রয়েছে 
ভার মুখমণ্ডল থেকেই তা জানা যেত! 


৫৪ 


গেডি কনন্থ্যুলেটে এসেছিল অফিসের কাজকর্ম বুঝিয়ে দিতে । সে 
আর কেওগ তাদের সরকার কি ধরণের কাজ তার কাছে আশা করে 
সেই প্রসঙ্গে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছিল। 

“ঠিক আছে”, জনি বললে, তার সরকারী বসবার জায়গা থেকে 
যেখানে সে তার দোলনা আসনটি খাটিয়েছিল। কোন কাজ যদ্দি 
এসে পড়ে যা করতেই হবে তখন সেগুলি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে 
দেবো । তোমরা আশা করতে পারে না যে একজন ডেমোক্রাট তার 
প্রথম টার্মে খাটবে ।, 

“এই শিরোনামাগুলি পড়ে দেখতে পারো গেডি বলছিল, “বিভিন্ন 
রপ্তানী পণ্যের, যার হিসেব তোমাকে রাখতে হবে। বিভিন্ন জাতের 
ফল তালিকাভুক্ত, মূল্যবান কাঠ, কফি, রাবার-** 

'শেষেরটির হিসেবটা শোনাচ্ছে ভাল', বাধা দিয়ে আটউড বললে। 
শুনলে মনে হয় ওই হিসেবট! টেনে লম্বা করা যাবে । আমি একটা 
নতুন ফ্ল্যাগ, একটি বাঁদরঃ একটি গীটার আর এক পিপে আনারস, 
কিনতে চাই। রাবারের হিসেবের মধ্যে ওই খরচগুলি ঢুকবে কি?' 
“ওগুলি তে পরিসংখ্যান” গেডি হেসে বললে, “তুমি খরচের হিসেবের 
কথ ভাবছ। হয ওই হিসেবট। একটু ইল্যাসটিক হলে ভাল হয়। 
কালি কলমের হিসেবট। কখনো কখনো৷ আলগাভাবে অডিট কর! হয় 
স্টেট ডিপার্টমেনটে |, 

“আমর! বৃথা সময় নষ্ট করছি কেওগ বললে, “এই লোকটি বড় চাকরী 
করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছে । এই বিগ্ভার শিকড় পর্যস্ত সে এক 
লহমায় পৌছে যায় তার শ্যেন দৃষ্টি একবার মাত্র বুলিয়ে নিয়েই। 
শাসন প্রতিভা তার উক্তির প্রতি শব্দেই লক্ষ্য কর! যায়।; 

অলসভাবে জনি বললে, «আমি কাজ করার জন্ত এই চাকরী নিই নি। 
আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম পৃথিবীর এমন এক জায়গায় যেখানে 
খামারের কথ! শুনতে হবে না, এখানে খামার নেই তো? 

না, যে ধরণের খামারের সঙ্গে তোমার পরিচয় তেমন কিছু নেই” 
প্রাক্তন কনসাল বললে, “কৃষিবিষ্ভা এই অঞ্চলে অপরিচিত। লাঙল 
ব৷ শস্তকাট1 আঞ্চুরিয়ার সীমানার মধ্যে কখনো ছিল ন1।” 

“এই দেশই আমার দেশ” মৃছুম্বরে কনসাল বললে, আর তারপরে 
সে ঘুমিয়ে পড়ল । 


সেই হাসিখুশি পটচিত্রের শিল্পী জনির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে 
চলল। খোলাখুলিভাবে সবাই বলত যে তার উদ্দেশ ছিল 
কনস্থ্যলেটের পিছনের বারান্দায় সেই আকাঙ্খিত শীতল জায়গাটিতে 
বসবার সুযোগ পাওয়া । কিন্তু উদ্দেশ্য তার ন্বার্থজনিত বা বন্ধুত্থের 
প্রেরণায় যাই হোক না কেন, সেই বিশেষ সুবিধা সে পেয়েছিল । 
এমন রাত্রি কম ছিল যখন তাদের দুজনকে দেখা না যেত সমুদ্রের 
হাওয়ায় বিশ্রাম নিতে রেলিঙের ওপর গোড়ালি রাখা, চুরুট আর 
ব্রাণ্ড নাগালের মধ্যে । ৃ 

একদিন সন্ধ্যায় তারা এমনি বসেছিল মুখ্যত নিঃশব্দে, যখন তাদের 
কথ থেমে গিয়েছিল একটি অস্বাভাবিক রাত্রির নিশ্তবধতার প্রভাবে । 
পুণিমার প্রকাণ্ড টাদ আকাশে, সমুদ্রের জল যেন শুক্তির মতো । 
সমস্ত শব্দ থেমে গেছে, বাতাস বইছিল অত্যন্ত মুদুভাবে, শহর শুয়ে 
শুয়ে হীফাচ্ছিল, অপেক্ষা করছিল রাত্রি জুড়োবার জন্ত। তীর থেকে 
কিছুদুরে ভিম্ৃভিয়াস লাইনের ফলের স্টীমার আনডাডর দাঁড়িয়েছিল, 
ফল বোঝাই হয়ে গেছে, ভোর ছটায় রওনা হবে। বেলাভূমিতে নেই 
কোন বিচরণকারী। চাদের আলো এমনই উজ্জ্বল যে ছুজনে দেখতে 
পাচ্ছিল কৃলের ওপর ছোট ছোট হুড়িগুলি চক্চক্‌ করছে, মৃছ ঢেউ 
এসে বার বার যখন তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল। 

কুলের অনেক দক্ষিণে তীর বরাবর একটি পাল তোলা নৌকা! সাদা 
ডানার কোন সামুদ্রিক পাখির মতো! ভাসছিল। বাতাসের চক্ষুর 
বিশ ডিগ্রির মধ্যে তার যাওয়ার “দক ছিল । সেজন্) সেটা দীঘ ছোট 
ছোট ধাকায় পাক খাচ্ছিল একটি মহিমাদৃপ্ত স্কেটারের মতো। আবার 
তার চালকদের কৌশলে কৃলের কাছে এলে! সেই তরী, এবার প্রায় 
কনস্থ্যলেটের মুখোমুখী । আর তখনি পরীর রাজ্যের ভেরীর মতো 
স্পষ্ট, অদ্ভূত সুর শোনা গেল। সেই পরীর বাঁশি, স্বৃমিষ্ট, রূপোলি 
আর আচমকা সুপরিচিত “হোম, সুইট হোম”-এর সুর সতেজে ভেসে 
এলো । 

এই দৃশ্য যেন কমলের দেশের জন্যই সাজানো | উফ্ণমগ্ডলের সমুদ্রের 
আধিপত্য, অপরিচিত তরীর রহস্য আর চন্দ্রালোকে ঝলমল জল- 
রাশির ভিতর থেকে ভেসে আসা সঙ্গীত যেন ন্বপ্রময় মোহজাল 
ছড়িয়ে ছিল। জনি আাটউডের অনুভূতি তীব্র হল, তার মনে পড়ল 


৫৬ 


ডেলসবার্গের কথা। কিন্তু যে মুহূর্তে কেওগ এই ভ্রাম্যমান সঙ্গীতের 
বিষয়ে একটি থিয়োরীর কথা চিন্তা করে একট। সিদ্ধান্তে পৌছাল, 
সেইক্ষণেই সে লাফিয়ে উঠল রেলিঙে আর তার কান ফাটানো চিৎকার 
কামানের গোলার মতো! কোরালিওর স্তব্ধতা বিদীর্ণ করল । 
'মেল-লিন-গার-আ-হয়-*") 

নৌকাটি তখন বাহিরমুখী ছিল কিন্তু সেখান থেকে স্পষ্ট একটি 
প্রত্যাভিবাদন শোনা গেল-__ 

“গুডবাই, বিলি, বাড়ী চললাম-_বাই।' 

তরীটি যাচ্ছিল আনডাডরের দিকে । নিঃসন্দেহে, কোন যাত্রী যার 
নৌকার পারমিট আছে তীরের উত্তরের কোন জায়গা থেকে এই 
পালতোলা নৌকার চলেছে ফলের স্টামারের ফিরতি ট্রিপের যাত্রী 
হিসেবে তাতে উঠতে । একটি ১সকা পায়রার মতো ছোট নৌকাটি 
তার আক বাকা রাস্তায় ঘুরপাক খেতে খেতে সাদা পাল সমেত 
মিলিয়ে গেল ফলের স্টামারের বৃহৎ শরীরের আড়ালে । 

“ও ছিল এইচ পি মোলংগার”, ব্যাখ্যা করে কেওগ্‌, চেয়ারে আবার 
বসে। "নিউইয়র্কে ফিরে যাচ্ছে । ও ছিল এই সবজির বাগান যাকে 
ওরা দেশ বলে, তার বিগত পলায়নপূর প্রেসিডেনটের প্রাইভেট 
সেক্রেটারী । ওর চাকরা আর নেই, মনে হয় মেলিংগার সেজন্য খুশী। 
'ম্যাজিকের রাণী জো-জো-র মতো সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উধাও হচ্ছে 
কেন”, জনি জিগগেস করল, “গদের দেখাতে চায় যে সে তোয়াক্কা 
করে না? 

“যে শব্ধ শুনলে সেটা ফোনোগ্রাকের) কেওগ বললে । “আমি ওটা 
ওকে বিঁক্র করেছিলাম । এই দেশে মেলিংগার-এর একটা গোপন 
ব্যবস! ছিল, যেটাতে প্রথবীতে সে ছিল অদ্বিতীয়। ওই কলের গান 
একবার তাকে বাচিয়েছিল আর সেজন্য সবদ1 ওই যন্ত্রটা নিজের সঙ্গে 
নিয়ে ঘুরত 

“বলে! আমাকে ঘটনাটা” জনি বললে, আগ্রহ দোখয়ে। 

“আমি কাহিনী বর্ণনা! করতে পারিনা”, বলল কেওগ, “আমি ভাষ! 
ব্যবহার করতে পারি বক্তব্যের জন্থ। কিন্তু যখন একটি ঘটনার বর্ণন। 
করি, কথাগুলি আসে তাদের ইচ্ছে মতো, ঠিকঠিক আবহাওয়াটা। 
মিলে গেলে অর্থ বোঝা যায় আর তা৷ না হলে যায় না। 


৫৭ 


“আমি ওর গোপন ব্যবসাটির কথ শুনতে চাই” জনি পুনরুক্তি করল। 
“তোমার কোন অধিকার নেই ন! বলার। আমি তোমাকে ডেলসবার্গ- 
এর প্রতিটি পুরুষ, প্রতিটি মেয়ে এমনকি প্রতি লাইট পোস্টের কথা 
বলেছি । 

তুমি শুনবে বৈকি” কেওগ বললে, “আমি বলছিলাম সহজাত 
প্রবৃত্তিতে আমার বর্ণনা ঘুলিয়ে যায়। বিশ্বাস কোরো না। এই 
শিল্প আমি শিখেছি, যেমন আরে! অনেকগুলি কল! ও বিজ্ঞান আয়ত্ত 
করেছি 


102 09110006780 & 006 037816 
ফোনলোগ্রাক আর গোপন বাবসা 


“কী ছিল সেই গোপন ব্যবসা জনি জিগগেস করল, তেমনি অধৈর্ষের 
সঙ্গে, যেমনটি দেখা যায় বিরাট পাঠকগোঞ্জীর, যাদের গল্প বল! হয়। 
“কলা ও দর্শনের রীতির বিপরীত হচ্ছে সৌজাস্থজি কথ! জানিয়ে 
দেওয়।, শাস্তভাবে কেওগ বললে । গল্প বলার কায়দা হল শ্রোতার 
যা শুনতে চায় তা সব কিছু গোপন রাখা ততক্ষণ যতক্ষণে মূল বিষয়- 
'বস্তর সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই এমনি সব বিষয়ে তোমার প্প্রিয় 
মতামতগুলি বলা হয়ে যায়। একটি ভালো গল্প একটি তেতো বড়ির 
মতো যার চিনির কোটিং আছে ভিতরে । অতএব আমি আর্ত 
করছি একটি জন্ম পত্রিক! দিয়ে যেটি নির্দেশ করে চেরোকী জাতিকে 
আর শেষ করব একটি নীতি কথার সুর দিয়ে । 

“আমি আর হেনরি হরসকলার এই দেশে প্রথম ফোনোগ্রাফ নিয়ে 
আসি, হেনরি ছিল সিকি আশলা, কোয়াটার ব্যাক চেরোকী, পুবের 
দেশে শিখেছিল ফুটবলের কায়দাকানুন আর পশ্চিমের দেশে চোরাই 
হুইসকির । তার চলন, বলন ছিল সহজ, ছটফটে । মাথায় প্রায় 
ছফুট, চলাফেরা রাবারের টায়ারের মতো। হ্যা সে ছিল একটি 
ছোটথাট ব্যক্তি, মাথায় পাঁচ ফুট পাঁচ বা পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি 
মাঝামাঝি লম্বা বা মাঝামাঝি বেঁটে । কলেজ ছেড়েছিল একবার» 


৫৮ 


মাঁসকোগী জেল তিনবার) শেষের প্রতিষ্ঠানটি রেড ইনডিয়ান অঞ্চলে' 
হুইসকি বেচার জন্য সে কোন চুরুটের দোকানে এসে পিছন 
ফিরে থাকতো না, তেমন জাতের রেড ইনডিয়ান সে ছিল না। 
“হেনরীর সঙ্গে আমার দেখা হয় টেকসারকানাতে, এই ফোনোগ্রাফের 
প্রকল্পটি সেখানেই স্থির হয়। তার কাছে ছিল তিনশ ষাট ডলার 
রেড ইনডিয়ানদের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে কিছু জমি ব্টনের দরুণ। 
আর আমি লিটল রক থেকে একটা বেদনাময় দৃশ্য দেখে চলে 
এসেছিলাম। এক ব্যক্তি একট বাকসের ওপর দাড়িয়ে সোনার 
ঘড়ি ফিরি করছিল, প্যাচ দেওয়া কেস, গা-চাবি, এলগিন মেসিন, 
ভারি সুন্বর। দোঁকান থেকে কিনলে দাম কুড়ি ডলার। তিন 
ডলারে লোকে মারামারি করছিল কেনার জন্ত। লোকটির কাছে 
এক ব্যাগ ভরতি এই ঘড়ি ছিল আর সে প্লেটে রাখ! গরম বিস্কুটের 
মতো। সেগুলি বিলোচ্ছিল। ঘড়ির পিছনট1 খোল। যায় না কিন্ত 
ক্রেতারা কানের কাছে এনে টিক টিক শব্দ শুনে খুশী হচ্ছিল। এই 
ঘড়িগুলির মধ্যে তিনটি ছিল আসল ঘড়ি, বাকিগুলি নকল। কেমন 
করে? কেন, সেগুলি ছিল খালি কেম যার মধ্যে একটি করে এক 
ধরণের কালে। পোক1 ভরা ছিল যাঁর! ইলেকট্রিক বাতির চার পাশে 
ওড়ে! এই পোকাগুলি মিনিট আর সেকেগ্ড গুনতে পারে চমৎকার ।' 
তাই, যে লোকটির কথা রলছিলাম সে রোজগার করল ছ'শ অষ্টআশি 
ডলার। তারপর সে চলে গেল, কারণ সে জানত যে এই ঘডিগুলিতে 
চাবি দেবার সময় দরকার হৰে একজন কাট বিজ্ঞানীর আর সে তো 
তা ছিল. ন1। 

“তাই, যা বলছিল'ম হেনরীর ছিল তিনশষাট ডলার আর আমার ছুশ 
অষ্টআশি। দক্ষিণ আমেরিকাতে ফোনোগ্রাফের প্রবর্তন করার, 
আইডিয়াটা ছিল হেনরীর, তবে আমি নিদ্ধিধায় তা গ্রহণ করেছিলাম 
কেন না যে কোন প্রকারের কলকবজায় আমার ঝোঁক ছিল। 

“ল্যাটিন জাতীয় লোকদের” হেনরী বললে, “কলেজে শেখ কায়দায়, 
ফোনোগ্রাফের শিকার হবার প্রবণতা রয়েছে । ওদের মনোবৃত্তি চারু- 
কলার দিকে । সঙ্গীত, রং আর আনন্দের তৃষ্ণা ওদের মজ্জাগত, হাত 
অর্গানের গায়ককে ওরা বাহবা দেয় আর তাবুর মধ্যে চারপেয়ে 
মুরগীকেও, যদিও যুদীর আর খাবারের দেন! বাকি পড়ে থাকে। 


৫৯ 


তাহলে, আমি বললাম, ল্যাটিনদের আমরা টিনে ভরা সঙ্গীত 
রপ্তানী করব। কিন্তু আমার মনে পড়েছে মিঃ জুলিয়াস সীজারের 
উক্তি ওদের সম্বন্ধে, ওমন! গ্যালিয়া ইন ত্রেস পারতেস দিভিসা এসত; 
যার অর্থ আমাদের বিদ্বেষের সবটাই দরকার হবে পার্টকে গাছে 
বাধতে । | 
“বিগ্তে জাহির করা আমি ঘ্বুণা কর্তাম। কিন্তু একজন রেড 
ইনডিয়ানের কাছে কথা বলার কায়দায় হারতে আমি রাজী নই, যে 
জাতের কোন ধারই আমরা ধারিনা কেবল সেই জমিটুকু ছাড়া যায় 
ওপর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

“একটি চমৎকার ফোনোগ্রাক আমরা কিনলাম টেকসারকানাতে, সব 
চেয়ে ভালো কোম্পানির আর এক ট্রাঙ্ক রেকর্ড। মালপান্তর বাঁধ 
ছাঁদা করে টি এণ্ড পি ধরলাম নিউ অলিয়নস-এর দিকে । 

“সেই প্রসিদ্ধ গুড় ও নিগ্রো। সঙ্গীতের কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ আমেরিকা 
গামী একটি স্টামারে আমরা চড়লাম। সলিটাসে আমরা নামলাম 
ওখান থেকে চল্লিশ মাইল উত্তরে। জায়গাটা! দেখতে উপাদেয়। 
বাড়ীগুলি সাদা তক্‌ তক্‌ করছে, প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে তাদের দিকে 
তাকালে মনে হবে সিদ্ধ ডিম লেটুস-এর সঙ্গে পাতে দেওয়! হয়েছে । 
শহরের উপকণে আকাশ ছোয়া পাহাড়, বেশ শান্ত, যেন তারা কেবল 
বলছে শ-শ-শ.। মাঝে মাঝে একট। করে ঝুনো নারকেল গাছ থেকে 
খসে বালির ওপর পড়ছে, সেখানে এর বেশী কিছু ঘটছে না। হ্যা, 
আমার মনে হল এই শহর অত্যন্ত চুপচাপ। আমার মনে হয় 
গ্যাব্রিয়েল যখন তার বাঁশি বাজানো থামাবে আর গাড়ীটা চলতে 
সুর করবে আর ফিলাডেলফিয়া তার হাতল ধরে চলবে আর 
পাইনগালি আরকানসাস শেষ পাদানিতে লাফিয়ে উঠবে তখন এই 
শহর সলিটাস ঘুম ভেঙে উঠবে আর জিগগেস করবে, কেউ কি কিছু 
বলছেন ? 

চটীমারের ক্যাপটেন আমাদের সঙ্গে তীরে এলে। পরীক্ষা নিরীক্ষার 
জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের কনসালের কাছে আমাকে ও হেনরীকে পরিচয় 
করে দিল, আরো! একজন বিচিত্র বর্ণের লোকের সঙ্গেও ঘিনি ব্যবসা 
ও লাইস্নসে বিভাগের প্রধান, সাইনবোর্ড দেখে তা অনুমান 


করলাম । 


শৎ 


আমি সাতদিন পরে আবার এই বন্দর ছু*য়ে যাবো” ক্যাপটেঃ 
বললে । 

“ততদিনে” আমরা বললাম, “আমরা টাকা কামাচ্ছি, ভিতরের 
শহরগুলিতে, আমাদের গ্যালভানাইজড্‌. প্রধানা গায়িকা; 
সাহায্যে টিনের খনি থেকে সুসা-র ব্যাণ্ডের মার্চের সুরের নকল তুজে 
এনে ।, 

ক্যাপটেন বললে, “তোমরা সে সব কিছুই করবে না। তোমর 
সন্মোহিত হয়ে যাবে। যেকোন ভদ্রলোক দয়া করে স্টেজে উ্ে 
এই দেশের চোখের দিকে ভালে। কৰে তাকিয়ে দেখেন, তাহলে তিনি 
সেই থিয়োরীতে বিশ্বাসী হবেন যে তিনি একটি মক্ষিকা, এলগিন 
মাখনের কারখানায় । ঢেউ-এর মধ্যে হাটুজলে দাড়িয়ে তোমর 
আমার জন্যে অপেক্ষা করবে আর তোমাদের এই মেসিনটি যা থেবে 
পবিত্র সঙ্গীত কল বিষ্ভার মাংসের পরোটা বের হয়ে আসে এই 
মেসিনট1 বাজাবে £ “কোথা পাই হেন ঠাই গৃহ যেথা! মোর” । 
হেনরী কুড়ি ডলারের একটি নোট বের করল এবং বাণিজ্যদপ্তর থেবে 
তার বদলে পেল লাল ছাপ মার? একটি কাগজ, স্থানীয় ভাষায় লেখ 
একটি কাহিনী আর শৃহ্থ কাঁনাকড়ি ফেরত পয়সা । 

তারপর আমর কনসালকে লাল আঙুরের মদে পুর্ণ করে দিলাম একি 
পরিচয় পত্রের জন্ত। সে ছিল একজন যুবক চেহারার লোব 
পঞ্চাশের উপর বয়স, ফ্রেনচ আইরিশ মেজাজের আর অসস্ভোষে পূর্ণ 
হ্যা), সে ছিল একজন চা!পট! হয়ে যাওয়া ব্যক্তি, পানীয় যার শরীবে 
জমে থাকে দুঃখ ও মেদ সঞ্চয় করতে । হ্যা, আমার মনে হয় জে 
ছিল ওলন্দাজ, খুবই বিষণ আবার হাসি খুশী, তার মেজাজ অনুসারে 
এই অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, সে বললে, যার নাম ফোনোগ্রাফ এই 
অঞ্চলে এখনো এলে পৌছায় নি। এখানকার লোকেরা এর নামং 
শোনেনি । শুনলেও তারা বিশ্বীপই করবে না। সরল হৃদয়, প্রকৃতি, 
দুলাল এরা, প্রগতি এদের বাধ্য করেনি একটা টিন কাটারবে 
তাঁনকারী বলে বিশ্বাপ করতে, মেসিনে রাগবিস্তার এদের রক্তাত্ত 
বিপ্লবের প্রেরণ। দিতে পারে । এই পরীক্ষা তোমরা করতে পারো 
সবচেয়ে ভাল হয় তোমরা! যতক্ষণ বাজাবে ততক্ষণ যদি এর! নিদ্রাম? 
থাকে । এই যন্ত্রটি এরা ছু'ভাবে গ্রহণ করতে পারে-__একাগ্রভাব 


৬১ 


শুনতে শুনতে বেছু'শ হয়ে পড়তে পারে, আটলন্টো-র কর্ণেলের 
'মাচিং থ, জিয়া শুনতে শুনতে যেমন হয়, অথবা এর! উত্তেজিত হয়ে 
সঙ্গীতের যন্ত্রটিকে কুড়ুল দিয়ে টুকরো টুকরো করে তোমাদের জেলে 
পুরতে পারে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমি আমার কর্তব্য করব। 
স্টেট ডিপার্টমেন্টে টেলিগ্রাম পাঠাব আর, তোমাদের যখন গুলি করে 
মারা হবে তখন তোমাদের শরীরের ওপর তারা আর ডোরাদাগের 
'পতাকাট! জড়িয়ে দেবো আর এদের হুমকি দেবে প্রতিশোধের, 
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশের তরফ থেকে । পতাকাট এখন বুলেটের 
গর্তে ভরে গেছে এই কারণে । এর আগে হবার আমি আমার 
সরকারকে কেব্ল্‌ করেছিলাম গোটা ছুই গান বোট পাঠানোর 
অনুরোধ জানিয়ে, যাতে এখানকার আমেরিকানদের সুরক্ষার ব্যবস্থা! 
হয়। প্রথমবার স্টেট ডিপাটমেন্ট আমাকে একজোড়া গামবুট 
পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয়বার কেবল পাঠাই গলীস্‌ নামক একটি লোকের 
ফাসি হওয়া রদ করার জন্য । আগীলটি ওর! পাঠালে কৃষি বিভাগের 
'সেক্রেটারীর কাছে। আসন আমরা বারের ওধারের সেনিওরকে 
একটু বিরক্ত করি, আরে! কিছু লাল মদের জন্য । এই ছিল আমার 
আর হেনরী-হরসকলোরের কাছে সলিটাসের কনসালের স্বগতোক্তি। 
তা সত্বেও আমরা সেইদিন বিকেলে একট। ঘরভাঁড়। নিলাম কাঁলে দে 
লস এঞ্জেলেস-এ তীরের সমান্তরাল প্রধান রাস্তায়, আমাদের ট্রাঙ্কুলি 
রাখলাম সেখানে । একটি মাঝামাঝি সাইজের ঘর, একটু অন্ধকার 
কিন্তু বেশ ছিমছাম, যদিও ছোট । রাস্তাটি বিচিত্র, নানান ছাদের 
বাড়ী আর সাজানো বাগানের গাছে ভরতি । ছু-পাশে চমৎকার ঘাসের 
পায়ে চল! পথ দিয়ে কৃষকেরা! আসছে, যাচ্ছে। পৃথিবীর পটভূমিকায় 
যেন অপেরার কোরাস, রাঙ্গা কাফুজলা ম-এর প্রবেশের পুরে । 
পরেরদিন, ব্যবসা সুরু করার পুরে যন্ত্রটি বাড়পৌছ করছি এমন সময় 
দীর্ঘদেহী একজন অতি সুদর্শন, সাদা পোশাক পরা শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি 
'দরোজার সামনে এসে দাড়াল এবং ভিতরে তাকিয়ে দেখল । আমরা 
আমন্ত্রণ করলাম, সে ভিতরে এসে আমাদের নিরীক্ষণ করে দেখতে 
থাকে। লম্বা একট! চুরুটের প্রান্ত সে চিবোচ্ছিল, চোখে কুঞ্চন 
'রেখা, চিন্তাকুল। যেন একটি তরুণী, পার্টিতে যাবার আগে ভাবছে 
“কোন পোশাক পরবে। 


৬ৎ 


“নিউইয়র্ক” আমার দিকে তাকিয়ে অবশেষে বললে । 

আদি নিবাস, তারপরে কখনো! কখনো, আমি বললাম, “সব চিহ্ন 
কি এখনো মুছে যায় নি ?, 

খুবই সহজ, সে বললে, যখন জানবে কি করে বললাম, ওয়েসট 
কোটের ফিটিং দেখে । অন্য কোথাও ওয়েস্ট কোটের কাটিং ঠিক হয় 
না। কোট হতে পারে কিন্ত ওয়েসট কোট নয়। শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক 
হেনরীর দিকে তাকায় আব্র ইতঃস্তত করে। 

ইনভিয়ান, পোষমান] ইনডিয়ান, হেনরী বললে । 

মেলিংগার, সেই ব্যক্তি বললে, হোমর পি মেলিংগার। বন্ধুগণ 
তোমাদের আটক করা হল। জঙ্গলে শিশুর মতো তোমাদের অবস্থ। 
হবে একজন রেফারী ব1 অভিভাবক না থাকলে । আমার কর্তব্য 
হচ্ছে তোমাদের চালু করে দেওয়া । আমি তোমাদের ঠেকোগুলি 
সরিয়ে দিয়ে এই নিরক্ষীয় কাদার ডোবার মধ্যে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে 
দেবো । তোমাদের নামকরণ হবে, তোমরা আমার সঙ্গে এখন 
আসবে আর আমি আঙ্রের মদের একটি বোতল ভাঙব তোমাদের 
গলুই-এর ওপর, হয়েলের নিয়ম অনুসারে । 

পুরো ছুদিন ধরে হোমর পি মেলিংগার আমাদের আপ্যায়িত করল। 
সেই ছিল রাজা কাফুজলাম। হেনরী আর আমি যদি হই জঙ্গলের 
শিশু, তাহলে সে ছিল ব্যাঙ্গম। পাখি, সবচেয়ে উঁচু ডালের । আমি 
সে আর হেনরী হরসকালার হাত ধরাধরি করে ঘুরলাম, ফোনো- 
গ্রাফটি কত জায়গায় বাজালাম, পান ভোজন, আমোদ-প্রমোদ হল 
অনেক। যেখানেই আমরা দরোজা খোল! পেয়েছি ভিতরে গিয়ে 
মেসিনটি বাঁজিয়েছি আর মেলিংগার সকলকে বুঝিয়েছে সঙ্গীতের 
কৌশল আর তার সার! জীবনের ছুইবন্ধু সেনিওরেস আমেরিকা- 
নোসদের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছে । সেই যাত্রাদলের কোরাসের 
দল উত্তেজিত হয়েছে আর বাড়ী বাড়ী আমাদের সঙ্গে ঘুরেছে। 
প্রতিটি স্থর বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন পানীয় পাওয়া গেছে। 
স্থানীয় লোকদের একটা বিশেষ পানীয় ছিল জিভে যার স্বাদ এখনে! 
লেগে আছে। একটি ডাবের মুখ কেটে তার জলের সঙ্গে ক্রেন 
ব্র্যাপ্ডি আর অন্তান্ত আনুষঙ্গিক ঢেলে দিত | আমর! সেটি খেয়ে- 
ছিলাম আরে অন্তরকমেরও । 


৬৩ 


আমার আর হেনরীর টাকা ছিল অচল! সমস্ত খরচ হোমর পি 
মেলিংগার-এর | ওই ব্যক্তি শরীরের এমন সব জায়গা থেকে ছোট 
ছোট নোটের তাড়া বের করত যেখান থেকে জাদুকর হাঁরমানও 
খরগোৌস বা ওমলেট বের করতে পারত না। মনে হয় বিশ্ববিষ্ঠালয় 
প্রতিষ্ঠা, অফ্িডের সংগ্রহশালা প্রন্ৃতি স্থাপন করেও এত অর্থ ওর 
হাতে থাকত যে সারা দেশের কষ্তাঙ্গদের ভোটও সে কিনে নিতে 
পারত। হেনরী আর আমি অবাক হয়ে ভাবতাম তার গোপন 
বাবসাটি কি। একদিন সন্ধ্যায় সে নিজেই আমাদের বলল। 

বন্ধুগণ, সে বললে, আমি তোমাদের প্রতারিত করেছি । তোঁমর। 
ভাবতে পাবে! আমি একটি রং করা প্রজাপতি, কিন্ত প্রকৃতপক্ষে আমি 
এই দেশে সবচেয়ে পরিশ্রম করি! দশবছর পূর্বে আমি এই 
উপকূলে এসেছিলাম । আর এই গত ছু'বছরে এসে পৌছেচি তার 
চোয়ালে। হ্যা, আমি এই জিগ্ার কেক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত 
নিতে পারি যে কোন রাউগ্ডের শেষে । আমি তোমাদের কাছে 
গোপনে বলব কেননা তোমরা! আমার স্বদেশবাপী এবং আমার 
অতিথি যদিও আমার পছন্দ কর। দেশে সবচেয়ে নিকুষ্ট শব্দ প্রস্তুতের 
যন্্র এনে হাজির করেছ। আমার কাজ হচ্ছে এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির 
একান্ত সচিবের আর আমার কর্তবা হচ্ছে ওই রাষ্ট্রটি চালানো । 
বিজ্ঞাপনে আমাকে শিরোনাম দেওয়া হয়না তবু সালাদের কান্ুন্দি 
আমিই । এমন একটি আইন কংগ্রেসে যায় না, এমন একটি 
ব্যবসায়িক সুবিধা মঞ্জুর হয় না) এমন কোন আমদানী শুহ্ক বসানে! 
হয় না যা এইচ-পি মেলিংগারের হাতের রান্না আর মশলা মেশানো 
ছাড়। হয়েছে । বাইরের অফিসে আমি প্রেসিডেন্টের দোয়াতে কালি 
ভরি বা যে সব রাষগ্রনেত। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্ত 'আঁসেন 
তাঁদের পকেটে ছোরা বা ডাইনামাইট আছে কিনা দেখি কিন্থ 
পিছনের ঘরে সরকারী নীতি আমার নিদেশেই স্থির হয়। তোমর। 
চিন্তাই করতে পারবে না আমি কেমন করে চালাচ্ছি । এই গোপন 
ব্যবসা কেবল এই এক জায়গায় চলছে । আমি তোমাদের জানাচ্ছি । 
মনে পড়ে, কপিবুকের প্রথম লাইন, সততাই শ্রেষ্ঠ নীতি। আমি 
সতত্াকে বাবহার করছি গোপন কারবারের মূলধন হিসেবে । এই 
গণতন্থ্ে একমাত্র আমি স্তবাক্তি। সরকার তা জানেঃ জনগণ 


৬৪ 


তা জানে, ব্যবসায়ীর। সেটা জানে । বিদেশী অর্থ বিনিয়োগকারীর 
তাজানে। আমি সরকারকে বাধ্য করি ন্যস্ত বিশ্বাস রক্ষা করতে। 
কাউকে চাকরীর আশ্বাস দিলে সে সেই চাকরী পাঁয়। বিদেশী 
আমানত যদি কোন ব্যবসায়িক সুবিধা খরিদ করে তাহলে তার 
মাল পায়। সোজান্ুজি লেনদেন-এর একাধিকার আমি চালাচ্ছি। 
কোন প্রতিযোগিতা নেই। কর্ণেল ডিওজেনিস যদি তার লঠনের 
আলে! এই অঞ্চলে ফেলেন তাহলে আমার ঠিকান। খু'জে পেতে তার 
ছু'মিনিট লাগবে । এই ব্যবসাতে মোটা অঙ্কের লাভ নেই কিন্তু 
ব্যবসাটি সুনিশ্চিত, আর এর ফলে রাত্রিতে নুস্থিরে নিদ্রা দেওয়া যায়।” 
এইভাবে হোমর পি মেলিংগার বক্তৃতা দিল আমার ও হেনরী হরস- 
কলারের কাছে। তার পরে সে এই খবর দিল। 

বন্ধুগণ, আজ সন্ধ্যায় একদল বিশিষ্ট নাগরিককে আমি একট। পার্টি 
দিচ্ছি। তাই তোমাদের সাহাষ্য চাই। তোমরা সঙ্গীতের এই 
হাসকিং মেসিনটি নিয়ে এসে যাতে ব্যাপারটার বাইরের চেহারা 
দেওয়া যাবে একটা ফাংশনের | গস্ভীর বিষয়ের অবতারণ। হবে কিন্তু 
বাইরে থেকে তা বোঝা যাবে না। তোমাদের মতো লোকের সঙ্গে 
কথা বলতে আমি আরাম পাই। কত বছর ধরে আমি কষ্ট পাচ্ছি 
কাউকে ঘুসি মেরে উড়িয়ে দেবার জন্ত আর সেই কাজের কথা জাক 
করে বলার জন্ত! কখনো কখনো দেশের জন্য আমি কাতর হই, 
এখানকার চাকরির সমস্ত উপার্জন ও অন্ঠ সুবিধা ত্যাগ করতে চাই 
যদি থারটি ফোরথ গ্রীটের এক কোণে ঘণ্টা খানেকের জন্ একটা 
স্টেক আর ক্যাভিয়ার স্তানডুইচ নিয়ে বসতে পাই, দাড়িয়ে দাড়িয়ে 
রাস্তায় গাড়ী যাওয়া দেখতে পাই, ভাজা চিনেবাদামের গন্ধ পাই 
গিসেপের ফলের দোকানের পাশে 1, 

হ্যা, সত্যিই ভারি চমৎকার ক্যাভিয়ার পাওয়। যায় বিলি বেনাক্রার 
দোকানে, থারটি ফোরথ প্রীটের এক কোণে, আমি বললাম । 

ঈশ্বর জানেন” বাধা দিয়ে মেলিংগার বললে, “তোমরা আগে যদি বলতে 
যেবিলি রেনফোর সঙ্গে তোমাদের পরিচয় আছে তাহলে তোমাদের 
সুখী করার জন্য আমি হাজার উপায় বের করতাম। ওই একটি লোক 
যে জানে না অসাধুতা কাকে বলে। এখানে আমি সততার 
ব্যবসাতে টাক উপার্জন করছি আর ওই ব্যক্তি তার জন্য লোকসান 


৫ ৬৫ 


দিচ্ছে। কারামবস্! কখনো কখনো এই দেশ আমার বিবমিষা 
এনে দেয়। এখানকার সব কিছু গলিত । সরকারী আমলা থেকে 
স্ুরকরে কফির দানা তোলে যেব্যক্তি সকলে একজন অন্যজনের 
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, নিজেদের বন্ধুদের চামড়া খুলে নেবার জন্তয। 
যদি একজন খচ্চরের সহিস কোন সরকারী অফিসারকে টুপি খুলে 
অভিবাদন জানায়, সে ব্যক্তি তখন মনে করে সে একজন জনপ্রিয় 
নেতা আর সে কলকাঠি নাড়তে সুরু করে বিপ্লব বাধিয়ে সরকার 
ওলটাবার জন্ত। প্রাইভেট সেক্রেটারী হিসেবে আমার কাজ হল 
এইসব বিপ্লবের গন্ধ কোথা থেকে আসছে খুঁজে বের করা, হামবড়া- 
গুলোকে আটকে ফেলা, তার বেরিয়ে পড়ে সরকারী সম্পত্তির রঙের 
আস্তরণের ওপর আীচড় কাটবার আগে । আর সেইজন্যেই আমি এই 
স্যাতা ধরা! উপকূলের শহরে রয়েছি । এই জেলার গভর্ণর আর তার 
অনুচরের। বিদ্রোহের প্লট করেছে । আমি তাদের সকলের নাম জানি 
আর তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি আজ সন্ধ্যায় ফোনোগ্রাফের 
গান শোনবার জন্ত, এইচ-পি-এম-এর সৌজন্তে। এইভাবে সবকটাকে 
একসঙ্গে আজ জড়ো করব আর তারপরে কিছু ঘটার সন্তাবন। ওদের 
প্রোগ্রাম অনুসারে ॥ 

আমর! তিনজন বসেছিলাম পিউরিফায়েড সেনটস্‌ ক্যানটিনের এক 
টেবিলে । মেলিংগার গ্লাসে আঙ়রের মদ ঢালে, তাকে চিস্তিত 
দেখাচ্ছিল। আমিও চিন্তা করছিলাম । 

“এই দলটা খুব ধূর্ত' সে বললে, কিছুটা বিচলিত। “একটা বিদেশী 
রাবারের সিণ্তিকেট ওদের টাক! দিচ্ছে আর আক ঘুষ দিতে ওরা 
প্রস্তুত। এই কমিক অপের। আর আমার সহ্য হচ্ছে না» মেলিংগার 
বলে চলে। িসট, প্িভারের ভ্রাণ আবার আমার নাকে পেতে চাই, 
সাসপেগ্ডার পরে বেড়ীতে চাই। এক এক সময়ে মনে হয় ছেড়ে দিই 
এই চাকরী, কিন্তু আমি একটি গর্দভ, এই চাকরীর জঙন্ত গর্বও আমার 
হয়। ওই যাচ্ছে মেলিংগার, এখানে ওরা বলে, পর দিওস, দশলক্ষ 
টাকা দিলেও ওকে ছোঁয়া যাবে না_এই রেকর্ড আমি সঙ্গে নিয়ে 
যেতে চাই আর, একদিন বিলি রেনফ্রোকে দেখাতে চাই। আর সেই 
চিন্তাই আমার মুঠো শক্ত করে দেয় যখনই আমি মোটাসোটা একটি 
বস্ত দেখি যাকে আমি একটি জভঙ্িতেই কবজা করাত পাবি 


৬৬ 


এবং সেই সঙ্গে আমার গোপন ব্যবসাটি খোয়াতে পারি। দোহাই, 
আমাকে নিয়ে বাদর নাচ করাতে ওদের দেবো না। ওরা সেটা 
জানে। অর্থ আমি উপার্জন করি সংভাবে আর তাই খরচ করি। 
কোনদিন হয়ত কিছু টাকা জমিয়ে আমি ফিরে যাবো আর বিলির 
সঙ্গে ক্যাভিয়ার খাবো । আজ রাত্রিতে আমি ওদের দেখাব মেলিংগার, 
প্রাইভেট সেক্রেটারী_-কি করে বানান করতে হয়-_তুলো৷ আর টিম 
পেপারের আস্তরণ ছাড়িয়ে নেবার পরে 1 

উত্তেজনায় মেলিংগার কাপছিল, পানীয় ঢালতে গিয়ে বোতলের গলার 
ঠোক্ধরে গেলাস ভেঙে ফেলল । আমি মনে মনে বললাম, শেতাঈ 
ব্যক্তি, আমার ভুল হচ্ছে না, চোখের কোণ দিয়ে আমি দেখতে পাচ্ছি 
যে একটা টোপ ফেলা হয়েছে । 

সেই রাত্রে, ব্যবস্থা মতো আমি আর হেনরী ফোনোগ্রাফটা নিয়ে 
গেলাম একট কাঁচা ইটের বাঁড়ীতে, একট! ছোট রাস্ত। ধরে, ঘাস 
যেখানে হাটু অবধি গভীর। লম্বা! ঘর, তেলের বাতি জলছিল। 
অনেকগুলি চেয়ার ছিল আর শেষপ্রান্তে একট। টেবিল । টেবিলে 
আমর ফোনোগ্রাফটা রাখলাম । মেলিংগার ছিল সেখানে, পায়চারী 
করছিল । তার সমস্তার চিন্তায় চঞ্চল । সে চুরুট চিবোচ্ছিল আর থুথুর 
সঙ্গে ত। ফেলে দিচ্ছিল, মাঝে মাঝে ক হাতের বুড়ো আঙুলের নখ 
টাতে কাটছিল । 

আস্তে আস্তে এই গানের আসরে নিমন্ত্রিতেরা জড়ে। হচ্ছিল, জোড়ায় 
জোড়ায় বা তিনজনের দলে । গায়ের রং তাদের নান। রকমের, তিন 
দিনের ধূমপান করা মীয়ারশাম-এর পাইপের রং থেকে পেটেনট, 
লেদারের পালিশের মতো, মোমের মতো! মোলায়েম তাদের কথাবার্তা, 
সেনিওর মেলিংগারকে শুভ সন্ধ্যা জানাতে আনন্দে মরে যাচ্ছেন 
তারা। আমি ওদের স্প্যানিশ কথাবার্তা বুঝতে পারছিলাম--আমি 
দুবছর মেকসিকৌতে একটা রূপোর খনির পামপিং ইনজিন চালিয়েছি 
কিন্ত আমি ওদের তা বুঝতে দিলাম না । 

প্রায় পঞ্চাশজন জড়ো হয়েছে এমন সময়ে ওদের মধ্যে রাজা মৌমাছিটি 
এসে ঢুকল, রাজ্যের গভন্নর। মেলিংগার দরোজা! থেকে নিজে তাঁকে 
প্রধান বসবার আসন পর্ধস্ত আগলে নিয়ে এলে।। এই ল্যাটিন 
ব্যক্কিটিকে দেখে বুঝলাম সেক্রেটারী মেলিংগারের কার্ডের সকল 


৬৭ 


নাচই কেড়ে নেওয়া হবে। লোকটি বৃহদাকার, স্কোয়াশের মতে। 
মুখের চেহারা, রাবারের ওভার স্ু-র মতে। গায়ের রং আর হোটেলের 
প্রধান ওয়েটারের মতে। চোখের দৃষ্টি । 

মেলিংগাঁর ঝরঝরে ক্যাস্টিলীয় ভাষায় বুঝিয়ে বলল যে তার আত! 
আনন্দে অস্থির হয়ে উঠছে তার সম্মানিত বন্ধুদের কাছে আমেরিকার 
বৃহত্ধম আবিষ্কার, যুগের আশ্চর্য, উপস্থিত করতে । হেনরী ইঙ্জিতটি 
বুঝে একটি পিতলের ব্যাণ্ডের রেকর্ড চালিয়ে দিল, উৎসব সুরু হল। 
গভনর লোকটি অল্প অল্প ইংরেজি জানতো, বাজন৷ থামলে সে বললে, 
“ভেররি ফাইন, গ্র-র-রে-সিয়াস দি আমেরিকান জেনটলমেন, দি 
সে। এসপ্লেনভীড মুজিক আযাজ টু প্লেই। 

টেবিলট1 ছিল লম্বা, হেনরী আর আমি একপ্রান্তে, দেয়ালের দিকে 
বসেছিলাম । গভর্ণর অন্য প্রাস্তে। হোমর পি মেলিংগার ছিল এক 
পাশে । আমি সবেমাত্র ভাবছিলাম মেলিংগার এই দলকে কেমন 
করে সামলাবে এমন সময় স্থানীয় প্রতিভা খেল্‌ সুর করল। 

এই গভর্ণর ব্যক্তিটি বিদ্রোহ বা ষড়যন্ত্রের পক্ষে উপযুক্ত ছিল। আমি 
মনে করি এই লোকটি ছিল সদা গ্রন্তত, আর সেজন্ত তারঞহাতে 
সময়ও থাকতো! । হ্্য। এই ব্যক্তি খুব তৎপর ছিল। টেবিলে হাঁত 
রেখে সেক্রেটারীর দিকে সে মুখ ফেরালো ৷ 

“আমেরিকান সেনিওরেরা কি স্প্যানিশ জানেন? দেশীয় ভাষায় 
সে জিগগেস করে। ৃ 

“না, ওরা জানে না” মেলিংগার বললে । 

“তাহলে শুনুন”, সেই ল্যাটিন ব্যক্তিটি বললে তৎক্ষণাৎ “বাজনা 
চমৎকার, কিন্ত দরকারী নয়। কাজের কথাই হোক, আমি ভালই 
জীনি কেন আমরা এখানে এসেছি । কেন না, এখানে আমি দেখছি 
আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুদেরও। ০সনিওর মেলিংগার, গতকাল আপনি 
কানাঘুষায় শুনেছেন আমাদের প্রস্তাব। আজ আমরা খোলাখুলি 
বলব। আমরা জাশি আপনি প্রেসিডেনটের নেক্নজরে আছেন, 
আর তার ওপর আপনার প্রভাবও আমাদের অজান! নয়। সরকার 
বদল হবেই। আপনার কাজের মূল্য আমরা বুঝি। আপনার বন্ধুত্ব ও 
সাহাধ্য আমাদের এতই কাম্য যে.**১ মেলিংগার হাত ওঠায় কিন্তু গভর্ণর 
তাকে থামিয়ে দেয় ; “আমার বলা শেষ হলে আপনি কথা বঙ্গবেন। 


৬৮ 


গভর্ণর তারপরে একটা কাগজে মোড় বাণ্ডিল পকেট থেকে বের করে 
টেবিলের ওপর মেলিংগারের হাতের কাছে রাখে। 

«এর মধ্যে আপনি পাবেন পঞ্চাশ হাজার ডলার আপনার দেশের 
সুদ্রায়। আপনি আমাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন ন৷ কিন্তু 
আমাদের কাছে আপনার দাম অতগুলি টাকা হতে পারে। 
রাজধানীতে ফিরে যান। আমরা যেমন নির্দেশে দিই তেমনি 
করুন। ওই সঙ্গে একটা কাগজ পাবেন যাঁতে আপনাকে যা 
করতে হবে সব লেখা আছে। না বলবার মতো নির্ুদদ্ধিত! 
দেখাবেন না)” 

গভর্ণর ব্যক্তিটি থামল, চোখ তার মেলিংগারের দিকে, কত ব্যঞ্জন। 
তাতে, কত নিরীক্ষণ। আমি মেলিংগারের দিকে তাকালাম, আর, 
আমার মনে হল এ সময়ে বিলি রেনফ্রে। যে তাকে দেখতে পাচ্ছে ন! 
সেটাই ভালো । কপালে তাঁর ঘাম ফুটে উঠেছে, স্থান্ুর মতো 
দাড়িয়ে, আঙ্লের প্রান্ত দিয়ে প্যাকেটটিতে টোকা দিচ্ছে। 
কোলোরাডে৷ মাড়ুরোর দল তার গোপন ব্যবসাটি আত্মস্তাৎ করতে 
চায়। একবার সে তার রাজনীতি পালটাক, পাচটি আঙুলে প্যাকেটটি 
ধরে ভিতরের পকেটে পুরে ফেলুক | 

হেনরী কিসফিস করে জিগগেস করে, “প্রোগ্রামে ছেদ পড়ল কেন? 
আমি ফিসফিসিয়ে উত্তর দিই £ “এইচ পি ঘুষের খপ্পরে পড়েছে, বিরাট 
আকারের, সেন্টারের সাইজের, আর এই কেলেগুলে। ওকে ভাবিয়ে 
তুলেছে আমি দেখলাম মেলিংগারের হাত প্যাকেটটির আরে! 
কাছে চলে যাচ্ছে । হেনরীকে ফিসফিস করে বললাম, “ও ছুবল হয়ে 
পড়ছে হেনরী বলল, 'আমরা ওকে মনে করিয়ে দেবো নিউউয়র্কের 
থারটি ফোরথ দ্বীটের বাদামভাজাওয়ালার কথা ।' 

হেনরী ঝুকে বাক্‌স থেকে একখান! রেকর্ড বের করল, ফোনোগ্রাফে 
লাগালে। আর চালিয়ে দিল। সেট ছিল কর্ণেটের সোলে। বাজনা, 
অতি চমতকার, নিখু'ত, নাম ছিল-হোম, সুইট হোম। যতক্ষণ সেই 
স্বর বাঁজছিল পঞ্চাশজনের একজনও নড়েনি আর গভর্ণর তার চোখের 
দৃষ্টি স্থির রেখেছে মেলিংগারের দিকে । আমি দেখলাম আস্তে আস্তে 
মেলিংগারের মাথ। উচু হচ্ছে আর তার হাত সরে আসছে প্যাকেট 
থেকে! রেকর্ডটির সুরের শেষ ধ্বনিটি পর্যস্ত কেউ নড়েনি। আর 


৬৯ 


তারপরেই হোমর পি মেলিংগার টাকার বাণ্ডিলটি তুলে নিয়ে মারল 
ছুড়ে গভর্ণরের মুখে । 

“এই আমার উত্তর বললে মেলিংগার প্রাইভেট সেক্রেটারী, “আর 
একটি উত্তর পাবে কাল সকালে । তোমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে 
ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আছে আমার কাছে। শো শেষ হয়েছে ভদ্র- 
মহোদয়গণ | 

“এখনো এক অঙ্ক বাঁকি রয়েছে”, গভর্ণর বললে, “তুমি তো। প্রেসিডেন্টের 
চাকর, চিঠি নকল করো আর দরোজায় কেউ ধাক্কা! দিলে খুলে দাঁও। 
আমি এখানকার গভর্ণর । সেনিওরগণ, আমি আপনাদের আদেশ 
করছি আমাদের আদর্শের খাতিরে এই ব্যক্তিকে ধরুন |, 

সেই ষড়যন্ত্রকারীদের দল চেয়ারগুলি ঠেলে রেখে একসঙ্গে এগিয়ে এলে।। 
আমার কাছে স্পষ্ট প্রতীত হল মেলিংগারের একট। ভূল হয়েছে গ্রাণ্ড 
স্ট্যাণ্ডের নাটক করার লোভে তার শক্রকে দলবদ্ধভাবে ডাকা । 
আমার মনে হয়েছিল ওর আরো একট! ভূল হয়েছে কিন্তু সেকথ! 
থাক। মেলিংগারের আর আমার ব্যবসা সম্বন্ধে ব্যক্তিগত বিচার বুদ্ধি 
অনুসারে মতভেদ থাকা সম্ভব । 

সেই ঘরে একটি দরোজা, একটি জানালা, ছুটিই ঘরের সামনের দিকে । 
এদিকে জন পঞ্চাশ ল্যাটিন ব্যক্তি দল বেঁধে আসছে নিয়ম শৃঙ্খলার 
প্রতিভূকে বাধা দিতে । বলতে পারো আমরা তিনজন, কেননা আমি 
আর হেনরী তৎক্ষণাৎ ঘোষণ! করলাম নিউইয়র্ক সিটি আর চেরোকাী 
জাতির সহানুভূতি ছুর্বলতর দলের দিকে । 

আর তখনই হেনরী হরসকলার উঠল একটি পয়েন্ট অফ ভিসঅর্ভারে, 
চমৎকার দেখিয়ে দিল আমেরিকান ইগ্ডিয়ানের শেখ বিষ্চা, প্রকৃতিদত্ত 
নতুনত্বের ও স্বাভাবিক বুদ্ধির নমুনা । সে উঠে দাড়ালো, ছৃহাত দিয়ে 
মাথার ছ'পাশের চুলগুলি সমান করে নিল, যেমন ছোট মেয়েদের 
খেলার সময়ে করতে দেখা যায়। 

“তোমরা ছুজন আমার পিছনে এসো+, হেনরী বললে । 

“সরদার, কি করতে হবে ? আমি জিগগেস করি । 

ফুটবলের ভাষায় সে বললে, “আমি ব্যাক সেনটার করতে যাচ্ছি। 
ওদের মধ্যে কেউ ট্যাকল করতে জানে না, আমাকে ফলে। করো 
তোমর! হুজন খুব কাছাকাছি থেকে, আত্ম খেল। চালাও জোরসে।, 


৭৩ 


তারপর সেই লাল মানুষটি এমন আওয়াজ ছাড়ল মুখ থেকে যার ফলে 
সেই ল্যাটিন জনতা৷ থামল, চিস্তিতভাবে ইতস্তত করতে শুরু করল। 
তার ঘোষণায় ছিল কারলাইলের যুদ্ধনাদ আর চেরোকী কলেজের জয়- 
ধ্বনির মিশ্রণ। সেই চকোলেট রঙের দঙ্গলের মধ্য দিয়ে বেরুল ঠিক যেন 
একটি মটরদান। একটি ছোট ছেলের নিগ্রো শুটার গুলতি থেকে। 
তার ডান হাতের কনুইয়ের ধাক্কায় গভর্ণর ছিটকে পড়ল ফায়ার 
প্লেসের জালির ওপর আর তার ফলে তার দৈত্য বরাবর একটি গলির 
স্থষ্টি হল এত চওড়া যে একজন স্ত্রীলোক একটি মই কোন কিছুতে না 
ঠেকিয়ে নিয়ে যেতে পারে । আমাকে আর মেলিংগারকে কেবল 
তাঁকে অনুসরণ করতে হল। সেই রাস্ত৷ থেকে মিলিটারী হেড 
কোয়ার্টারে আসতে আমাদের তিন মিনিট লাগল, এখানকার বিলি 
ব্যবস্থা মেলিংগারের নিয়ন্ত্রণে । "একজন কর্ণেল আর এক 
ব্যাটেলিয়ন খালি পায়ের পদাতিক নিয়ে আমর ফিরে গেলাম সেই 
জলসার জায়গায়, কিন্তু চক্রাস্তকারীর দল তখন চলে গেছে । আমরা 
ফোনোগ্রাফটি ফিরে পেলাম, যুদ্ধের সম্মান সহ, ছাউিনিতে অ।মরা ফিরে 
এলাম বাজাতে বাজাতে “সব কালোই আমার কাছে একরকম ।” পরের 
দিন মেলিংগার আমাকে আর হেনরীকে একপাশে নিয়ে গেল আর 
দশ, কুড়ি ডলারের নোট ছাড়তে থাকে । 

“আমি এই যন্ত্র কিনতে চাই, কালকের ফাংশনের শেষ সুরটি আমার 
ভালে লেগেছিল', ও বললে। 

“মেসিনের দামের থেকে এযে অনেক বেশী টাকা, আমি বলি। 
মেলিংগার বললে, “এতো সরকারী টাকা, সরকার দিচ্ছে, তাছাড়া এই 
সুর বাজাবার জ'তাটি সরক্ষার সস্তায় পাচ্ছে।, 

আমি আর হেনরী তা বেশ ভালভাবেই জানতাম । আমরা জানতাম 
যে এই ফোনোগ্রাফ হোমর পি মেলিংগারের গোপন ব্যবসা অটুট 
রেখেছ যখন সে প্রায় তা হারিয়ে বসেছিল। কিন্ত তাকে বলিনি 
যে আমর সেটা জানতাম | 

“বন্ধুগণ, তোমরা এখন কিছুদিন এই উপকুল দিয়ে আরো! নীচের দিকে 
চলে যাও” মেলিংগার বললে, যতদিন না আমি এই বদমাশগুলোকে 
পাকড়াচ্ছি। যদি তোমরা না যাও তাহলে ওরা তোমাদের বিপদে 
ফেলবে । আর যদি বিলি,.রেনফোর সঙ্গে দেখ হয় তাহলে তাকে 


৭১ 


বোলে! আমি নিউইয়র্কে ফিরে আসছি যেইমাত্র সংভাবে কিছু টাকা 
জমিয়ে উঠতে পারব | : 

আমি আর হেনরী গ! ঢাক। দিয়ে রইলাম কয়েকদিন, তারপর সেই 
স্টামারটা ফিরে এলো। 

তীরে যখন ক্যাপটেনের নৌকা দেখলাম, আমরা জলের কিনারায় 
গিয়ে দাড়ালাম । আমাদের দেখে ক্যাপটেনের হাসি আকর্ণ 
বিস্তৃত হল। 

“বলেছিলাম, তোমরা আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকবে"? সে বললে, 
কোথায় সেই মাসের পরোট। তৈরীর মেসিনটা ? 

*ওট] এখানে থাকছে, এখানে হোম, সুইট বাজাবে” আমি বললাম । 
“আমিও তো! তাই বলেছিলাম+, ক্যাপটেন বললে, “ওঠ নৌকায়।, 
“আর, এইভাবে" কেওগ বললে,“আমি আর হেনরী হরসকলার এই 
দেশে ফোনোগ্রফের প্রচলন করি । হেনরী ফিরে গেল স্টেটস-এ 
আর আমি এই নিরক্ষীয় অঞ্চল টুঁড়ে বেড়াচ্ছি সেই সময় থেকে। 
ওরা বলে তারপর থেকে মেলিংগার ওই ফোনোগ্রাফটি ছেড়ে এক 
মাইল দূরেও থাকতে পারত না। আমার মনে হয় ওটা ওকে মনে 
করিয়ে দিত ওর গোপন ব্যবসার কথা যখনি ও শুনতে পেত ঘুষদাতার 
ভৌতিক গলার আওয়াজ আর দেখত তাদের চোখের ইসারা আর 
হাতে ঘুষের টাকা” 

“আমার মনে হয় একটি স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে ওটা দেশে নিয়ে যাচ্ছে” 
কনসাল বললে । 

“না, স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নয়” কেওগ বললে, “নিউইয়র্কে ওর দুটো! লাগবে, 
একটা দিনে ও একট রাত্রে বাজবে ।, 


সাত 


টাকা ধাথা 


আঞ্চুরিয়ার নতুন সরকার কাজ আরম্ভ করল উৎসাহের সঙ্গে । প্রথম 
কাজ হল কোরালিওতে একজন প্রতিনিধি পাঠানো, কড়। নির্দেশ দিয়ে 
যে সম্ভব হলে যে কোন উপায়ে সেই অর্থ উদ্ধার করতে হবে যা 


এ 


হতভাগ্য মিরাফ্রলোরেস ট্রেজারি থেকে সরিয়েছিল। নতুন প্রেসিডেনট 
লোসাদার প্রাইভেট সেক্রেটারী কর্ণেল এমিলিও ফালকনকে রাজধানী 
থেকে পাঠানো হয়েছিল এই দরকারী তদন্তের ভার দিয়ে। 
উষ্তমগুলের কোন রাষ্ট্রের প্রেসিডেনটের একান্ত সচিবের পদটির দাযিত্ব 
অনেক। তাকে হবে কুটনীতিজ্ঞ, গুপ্তচর, প্রশাসক, তার প্রধানের 
দেহ রক্ষী, গোপন চক্রান্ত বা বিপ্লবের ষড়যন্ত্র ভগ অবস্থায় ভ্রাণশক্তির 
সাহায্যে আন্দাজ করার ক্ষমতা । গদীর পিছনে সকল শক্তি ব৷ 
নীতির নির্দেশনা অনেক সময়ে তাঁরই, এবং প্রেসিডেনট তাকে পছন্দ 
করে নিবাচন করেন বিবাহের পাত্রী নির্বাচনের থেকে ডজনগুণ 
বেশী যত্রের সঙ্গে। কর্ণেল ফালকন একজন সুন্দর, শিক্ষিত 
ভদ্রলোক, স্প্যানিশ সৌজন্ততা ও ন্ুম্মিত মেজাজের প্রতীক 
তিনি এলেন কোরালিওতে হারানো টাকার থলির জুড়িয়ে 
যাওয়া পদচিছ্ ধরে খুঁজে বের করবার কাজটি নিয়ে। কোরালিওতে 
তিনি মিলিটারী কাদের সঙ্গে আলোচনা করলেন, কারণ তাদের 
নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এই অন্বেষণে সহযোগিতা করার । কর্ণেল 
ফালকন কামা মোরেনার একটি কামরায় তার অফিস বপিয়েছিলেন। 
এক সপ্তাহ ধরে সেখানে আধা সরকারী অধিবেশন ডেকেছিলেন, 
তিঁশই একক প্রধান জুরী। ডেকে পাঠালেন সেই সব ব্যক্তিদের 
ঘাদের সাক্ষ্য কোনরূপ আলোকপাত করতে পারবে সেই আথিক 
ট্রাজেডির ব্যাপারে, প্রয়াত প্রেসিডেনটের মৃত্যুর মতো সামান্চ 
ট্রাজেডির সঙ্গে যা ঘটেছিল । 

এইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল যাদের তার মধ্যে ছুতিন জন-যার 
একজন সেই নাপিত এসতেবান ছিল-_-তারা ঘোষণা করল যে 
প্রেসিডেনটের সমাধির পুৰে তারা তাকে সনাক্ত করেছিল । মহামহিম 
সেক্রেটারার সামনে দাড়িয়ে এসতেবান সাক্ষ্য দিল, হ্যা, সেই ব্যক্তি 
প্রেসিডেনট ছিলেন, নিঃসন্দেহে । বিবেচনা করুন, যার দাড়ি কামাবে। 
তার মুখ দ্েখবনা? তিনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন একটি 
ছোট বাড়ীতে, তার দাড়ি কামিয়ে দেবার জন্য । তার দাড়ি ছিল 
কালো, ঘন। প্রেসিডেনটকে আমি আগে দেখেছিলাম কি? 
একবার সলিটাস-এ তাকে দেখেছিলাম গাড়ীচড়ে যেতে, অনেক দূর 
থেকে । আমি তার দাঁড়ি কামিয়ে দিলাম, আমাকে তিনি একটি 


৭৩ 


সোনার টাকা দিলেন, বলেছিলেন কাউকে কিছু না জানাতে । কিন্ত 
আমি একজন লিবারেল, আমার দেশকে আমি ভক্তি করি, আমি 
আমি বলেছিলাম সেনিওর গুডউইনকে 1, 

জানা গেছে” কর্ণেল ফালকন বললেন মিষ্টি গলায়, “যে বিগত 
প্রেসিডেনটের সঙ্গে ছিল একটা বড়ো আমেরিকান চামড়ার ব্যাগ 
যাতে অনেক টাকা ছিল। তুমি কি সেট দেখেছিলে ? 

“দেভেরাস, সত্যি বলতে, না", এসতেবান উত্তর দ্িল। “সেই ছোট 
বাড়ীতে আলে ছিল একট! তেলের বাতি যাতে প্রেসিডেনটের দাঁড়ি 
কামাতে আমার অসুবিধা হচ্ছিল। এরকম হয়ত কিছু ছিল কিন্তু 
আমি দেখিনি। সে ঘরে একজন তরুণী মহিল। ছিল, একজন 
সেনিওরিটা, অতি স্থন্দরী, যাকে খুব কম আলোতেও দেখতে 
পেয়েছিলাম । কিন্তু টাকা, সেনিওর, বা সেই আধারটি যাতে তা 
রাখ ছিল আমি তা দেখিনি ।, 

কমানডানট আর অন্ত অফিসারের সাক্ষ্য দিল যে তারা জেগে 
উঠেছিল এবং সতর্ক হয়েছিল হোটেল দেলোস এসত্রানজারোস থেকে 
গুলির আওয়াজে । রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সম্মান বজায় রাখার জন্য 
তখনি তার! সেখানে ছুটে যায়, দেখে একব্যক্তি মৃত আর ভার হাতে 
ধরা ছিল একটা পিস্তল । সেই মৃত ব্যক্তির পাশে একজন তরুণী খুব 
কাদছিল। ওরা যখন সে ঘরে যায় তখন সেনিওর গুডউইন সেখানে 
ছিলেন। কিন্তু টাকার ব্যাগ তারা দেখেনি । 

মাদামা টিমোতি ওরতিজ, সেই হোটেলের মালিকান-_ যেখানে ফকস 
ইন দি মরনিং-এর খেল] শেষ হয়েছিল বললেন সেই দুজন অতিথি 
আসার কাহিনী । 

“আমার বাড়ীতে তার এলো”, তিনি বললেন, একজন সেনিওর, বৃদ্ধ 
বল। চলেনা, একজন সেনিওরিট, খুব স্থন্দরী | তারা বলেছিল কোন 
খান্ভ বা পানীয় তাদের লাগবেনা, এমন কি আমায় অগুয়ারদিয়স্তে 
পর্যন্ত নয়, যা সবার সেরা । তাদের ঘরে তারা উঠে গেল, ন্যুমেরে। 
নযুয়েভে আর স্থ্যমেরে৷ দিয়েখ। তারপরে এলেন সেনিওর গুডউইন, 
উনি সি'ড়ি দিয়ে উঠে গেলেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে । তারপর 
আমি একটা ভীষণ জোরে শব শুনলাম যেন কামানের আওয়াজ- 
সবাই বলল পুরানে। প্রেসিডেন্ট গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন । 


৭8 


এসতা বিউয়েনোঃ আমি টাকার ব্যাপারটা জানিন। বা যে বস্ততে, 
টাকাট। রাখা ছিল সেটাও দেখিনি ॥ 

শীঘ্রই কর্ণেল ফালকন এই সিদ্ধান্তে পৌছলেন যে অদৃশ্ঠ হয়ে যাওয়া 
টাকার বিষয়ে যদি কেউ কোন সন্ধান দিতে পারে তাহলে সে ব্যক্তি 
হবে সেনিওর গুডউইন। কিন্তু বিজ্ঞ সেক্রেটারী সেই আমেরিকান 
ব্যক্তিটির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করলেন অন্য রাস্তায়। 
গুডউইন নতুন সরকারের একজন শক্তিশালী বন্ধু এবং এমনই এক 
ব্যক্তিত্ব যার সততা। বা সাহসের ব্যাপারে উদ্দাসীন ভাবে কোন পন্থা 
নিয়ে কাজ করা যায়না । এমন কি প্রাইভেট সেক্রেটারী ও এই রাবারের 
রাজপুত্র বা মেহগিনির জমিদারকে সাধারণ নাগরিকের মতো 
জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইতঃস্তত করলেন । তাই তিনি গুডউইনকে 
পাঠালেন একটি পুষ্প কোমল পত্র যার প্রতিটি শব্দ থেকে মধু 
ঝরছে। তাকে অন্ত্ররোধ করা হচ্ছে একটি সাক্ষাৎকার মঞ্জুর করার 
জন্য | উত্তরে গুডউইন সেক্রেটারীকে ডিনারের নিমন্ত্রণ জানালো 
তার বাড়ীতে । 

নিমন্ত্রণের নির্ধারিত জময়ের পুর্বে আমেরিকান নিজে হেঁটে গেল 
কাসা মোরেনাতে এবং অকপট বন্ধুভাবে অতিথিকে অভিবাদন করল। 
তারপর ছুজনে একত্রে হেঁটে এলো শীস্ত বিকেলে, গুডউইনের বাড়ীতে, 
ওই পাড়াতেই। 

কর্ণেল ফালকনকে বসতে দিল একটি বড়ো ঠাণ্ডা ছায়া ঘেরা ঘরে 
যার পালিশ করা কাঠের মেঝে আমেরিকার যে কোন লক্ষপতির 
ঈর্ষার বস্ত্র, তারপরে সে ভিক্ষা করে নিল অল্প সময়। পেরিয়ে গেল 
একটি বারান্দা যেখানে গাছপাল। ও জাফরী দিয়ে ছায়া করা আছে। 
সে এলো একটি লম্বা বড়ো কামরায়-অপর মহলে সমুদ্রের দিকে। 
বড়ে। বড়ো খড়খড়ি গুলি খোল। ছিল, সমুদ্রের বাতাস ঘরের মধ্যে 
আনছিল স্বাস্থ্য ও ন্িগ্ধতার তরঙ্গ । গুডউইনের স্ত্রী বসেছিল একটি 
জানালার পাশে, বিকেলের সমুদ্রের একটি জল রঙের ছবি সে 
আকছিল । 

এই স্ত্রীলোকটিকে দেখে মনে হবে সে সুখী-শুধু তাই নয়, তাকে 
দেখে মনে হবে সে তৃপ্ত । কোন কবি যদি যথাযথ উপমার সাহায্যে 
তার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে যায় তাহলে তার পূর্ণ স্বচ্ছ চোখ, সাদার 


৭৫ 


মাঝখানে ধূসর চোখের তারার সঙ্গে টাদের দেশের ফুলের তুলনা 
সে করবে। পুরাণের সেই সব দেবীর! যাদের সৌন্দর্য সাহিত্যে 
স্থায়ী হয়েছে, শ্রীমতী গুডউইনের বর্ণনায় কৰি তাদের বাদ দেবে। 
তার সৌন্দর্য স্বর, ওলিমপাস পর্বতের নয়। যদ্দি কল্পনা করা যায় 
ঈভ বিতাড়িত হয়ে অগ্নিময় যোদ্ধাদের মোহিত করে আবার শাস্তভাবে 
উদ্ভানে ফিরে এসেছেন তবেই তার সৌন্দর্যের উপলব্ধি তোমার 
হবে। তেমনি মানবীয় অথচ ইডেনের সঙ্গে মানানসই ছিলেন 
শ্রীমতীগ্রডউইন। 

যখন তার স্বামী ঘরে এলো, সে তাকাল মুখ তুলে, তার অধরোষ্ঠ 
ফাক হল, দেখা দিল কুঞ্চনের রেখা । চোখের পাত। ছুতিন বার কেঁপে 
উঠল-_এই চাঞ্চল্য ( কাব্যদেবী ক্ষম। করুন) মনে করিয়ে দেয় বিশ্বস্ত 
কুকুরের লেজ নাড়ার কথা, তার দেহ সামান্ত তরঙজ্িত হল, মৃছ বাতাসে 
হিল্লোলিত উইলে। গাছের মতো! । এইভাবে সে তার স্বামীর আগমনে 
সাড়া দিত যদি দিনের মধ্যে বিশবারও গুডউইন আসত তার কাছে। 
কোরালিওতে যার! মদের বোতলের সামনে বসে ইসাবেল গিলবাটের 
পুর্জীবনের চাঞ্চল্যকর কাহিনীগুলির আলোচনা করত, তারা যদি 
ফ্রাঙ্ক গুডউইনের স্ত্রীকে সেই অপরাহ্ছে গৃহিনীর সম্ভ্রম ও মহিমায় 
ভূষিত অবস্থায় দেখত তাহলে তার! বিশ্বাস করতে চাইত না, বা তুলে 
যেতে রাজী হত সেই সব বিচিত্র কাহিনী সেই মহিলাকে জড়িয়ে যার 
জন্ঠ তাদের প্রেসিডেনট তার দেশ, তার সম্মান হারিয়েছিলেন। 
“একজন অতিথিকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করে বাড়ীতে এনেছি” গুঁডউইন 
বললে, “একজন কর্ণেল ফালকন, সান মাটেও থেকে সরকারী কাজে 
এসেছে । আমার মনে হয়না তোমার তার সঙ্গে দেখা হওয়ার কোন 
দরকার আছে। তোমার জন্ত আমি স্ত্রী সুলভ সুবিধাজনক, আর 
অনিন্দ্যনীয় মাথাধরার ব্যবস্থা করলাম ।' 

“সেই হারানো টাকার ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্ত এসেছে, তাই নয় 
কি? তার স্কেচ থেকে মুখ না তুলে বললে মিসেস গুডউইন। 

“ঠিকই আন্দাজ করেছ” গুডউইন বললে, "স্থানীয় লোকেদের গত তিন 
দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কিন্তু আঙ্কল স্তামের একজন প্রজাকে 
কাঠগড়ায় টেনে আনতে লঙ্জ! পাচ্ছিল, তাই ব্যাপারটাকে একটা 
একট! সামাঞ্জিক ফাংশনের বাইরের চেহারা দিতে রাজী হয়েছে। 


৭৬ 


আমারই খাগ্ভ ও পানীয়ের সদব্যবহার করতে করতে আমার নির্যাতন 
করবে আর কি।, 

এমন কোন লোকে পেয়েছে কি, যে দেখেছিল টাকার ব্যাগট! ? 
“একজনও নয়। এমন কি মাদাম! ওরতিজ ধার চোখ কতই সঙ্গ 
শুল্ক বিভাগের লোক কখন আসছে দেখতে, তিনিও মনে করতে 
পারেননি কোন মাল পত্র ছিল কি না।? 

শ্রীমতীগুডউইন তুলি নামিয়ে রাখল, তারপরে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 
“আমি খুব ছুঃখিত ফ্রাঙ্ক” সে বললে, “ওরা তোমাকে কত কষ্ট দিচ্ছে ওই 
টাকার ব্যাপারে । কিন্তু আমরা ওদের জানতে দিতে পারিনা, তাই 
নয় কি? 

“কখনোই নয়, তা দিলে আমাদের বুদ্ধি বিবেচনার প্রতি ঘোর অবিচার 
কর। হবে» গুঁডউইন হেসে উঠে বললে, সে একধরণের কাধ ঝাঁকানি 
দিল যেটা সেনেটিভদ্রে কাছে শিখেছিল । 

«আমেরিকানো” যদিও আমি কিন্তু যেই ওরা জানতে পারবে যে ওই 
টাকার ব্যাগট! আমরা আত্মন্াৎ করেছি তার আধঘণ্টার মধ্যে আমাকে 
কালাবোঝায় নিয়ে যাবে। না, আমরাও তেমনি অচ্ঞজ সাজব ওই 
টাকার ব্যাপারে, কোরালিওর আর পাঁচজন মূর্খেরই মতো 1? 

তুমি কি মনে করো যে লোকটিকে ওরা পাঠিয়েছে সে তোমাকে সন্দেহ 
করে? জিজ্ঞেস করল শ্রীমতী গুডউইন, তার ভ্রছটি একটু 
কুঁচকে । 

“সন্দেহ না করাই ভাল, তারপক্ষে” নিরুদ্ধেগে বললে গুডউইন, "ভাগ্যের 
কথা ওই টাকার থলিটা কেবল আমার চোখে পড়েছিল। গুলি 
ছড়ার সময় আমি ছিলাম সেই ঘরগুলিতে । সেজন্ত স্বাভাবিক 
ভাবেই এই ব্যাপারে আমার ভূমিকা কতটুকু ছিল সেটাওরা বিশেষ 
করে তদন্ত করবে । কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই । ঘটনার সুচী 
অনুসারে দেখা যাচ্ছে কর্ণেলের একটি ভাল মতো! নৈশাহার পাওনা 
পাওনা রয়েছে যার শেষে মিষ্টান্নের জায়গায় থাকবে আমেরিকান 
ধাপ্পা। এই ব্যাপারের শেষ এখানেই হবে, আমি মনে করি ।” 
শ্রীমতীগুডউইন উঠে গেল জানালার ধারে। গুডউইন তার পাশে 
গিয়ে দঈাড়াল। গুডউইনের শক্তিমান দেহের ওপর শরীরের ভার 
রেখে তার স্ত্রী ঈ্াড়িয়েছিল যেমন সে সব সময়ই রাখত সেই অন্ধকার 


৭৭ 


রাত্রি থেকে যেদিন গুডউইনকে সে তার আশ্রয়ের ছুর্গ ভেবে 
নিয়েছিল। এইভাবে তারা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিল। 

জানালার সামনে উষ্ণমণ্ডলের ঘন সবুজ শাখা, পাতা ও লতার 
প্রাচুর্যের ভিতর দিয়ে নিপুণতার সঙ্গে একটি দৃশ্যপট ছেঁটে কেটে রাখা 
হয়েছে যার শেষে কোরালিওর সুন্দরী গাছের জলার পরিক্ষার করা 
অংশ। এই শুন্যময় সুড়ল্গের অন্য প্রান্তে তারা দেখতে পেল সেই 
সমাধি আর তার কাঠের ফলক যাতে হতভাগ্য মিরাফ্লোরেসের নাম 
লেখা ছিল। এই জানাল থেকে, যখন বৃষ্টির জন্ত নিকটে যাওয়৷ 
সম্ভব হত না বা সুর্য যখন প্রখর উজ্জ্বল তখন গুডউইন-এর সবুজ 
ফলবান ছায়াময় ঢালু জমির ওপর থেকে তার স্ত্রী সেই সমাধির দিকে 
শান্ত, বিষণ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত যদিও তার বর্তমান স্থখের সেটা 
কোন বিদ্ব ছিল না! 

“আমি তাকে কত ভালবাসতাম, ফ্রাঙ্ক; সে বললে, “সেই নিদারুণ 
পালানো আর তার ভয়ঙ্কর পরিনাম সত্বেও। তুমি আমাকে কত দয়া 
করেছ, আমাকে কত সুখী করেছ। সব কিছু কি রকম জটিল ধাঁধার 
মতো। হয়ে গেল। আচ্ছা, ওরা যদি জানতে পারত যে টাকাগুলি 
আমরা পেয়ে ছিলাম তাহলে কি ওরা তোমাকে বাধ্য করতে পারত 
সরকারকে তা ফেরত দিতে ? 

“ওরা নিশ্চয়ই সে চেষ্টা করত', গুডউইন বললে । “ভুমি ঠিক বলেছ, 
যে ব্যাপারটা একট! ধাধা আর ধাধাই থাকুক ফালকন আর তার 
দেশের লোকেদের কাছে যতক্ষণ না! এর সমাধান হচ্ছে আপনা থেকেই । 
তুমি আর আমি, যার! এই ব্যাপারে অন্ত সকলের চেয়ে বেশী জানি, 
আমরাও সমাধানের অর্ধেকটা জানি। এই টাকার ব্যাপারে কোন 
ইঙ্গিত ও আমরা বাইরে যেতে দিতে পারিনা । ওরা যে কোন 
থিয়োরীতে আসুক প্রেসিডেন্ট টাকাগুলি পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে 
রেখেছিলেন বা! কোরালিওতে পৌছবার আগেই জাহাজে করে দেশের 
বাইরে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমার মনে হয় না ফালকন 
আমাকে সন্দেহ করে। ওখুবই নিথু'ত তদস্ত করার চেষ্টা করছে 
যেমন ওর ওপর নির্দেশ কিন্ত জানতে ও কিছুই পারবে ন11, 

এই স্ব কথাবার্তা ওদের হল। কেউ যদি গোপনে ওদের কথ! 
সশ্রুনত বা অলক্ষ্যে ওদের দেখত তাহলে আর একটি ধাঁধার উদ্ভব হত। 


৭৮ 


কায়ণ, তাদের ছুজনের মুখের চেহারায় বা ভাবও ভঙ্গিতে যা দেখা 
যাচ্ছিল (যদি মুখের চেহারা বিশ্বাসযোগ্য হয়) তা ছিল স্যাকসন 
সততা আর গবৰ আর সনম্মানযোগা চিন্তা । গুডউইন-এর স্থির চোখ 
আর দৃঢ় মুখভঙ্গি যা বাস্তবের ছাচে ঢালা হয়েছে তার অস্তবের দয়া, 
মহত্ব আর সাহস দিয়ে, সেই মুখাবয়বে তার বক্তবোর সঙ্গে সঙ্গ তিপূর্ণ 
কোঁন ভাবই ফুটে ওচেনি । আর তার স্ত্রীর কথ! বলতে গেলে তার 
মুখসৌষ্ঠৰ তার দোষীস্থলভ কথাবার্তা সত্বেও নিফলুষতা ঘোষণ! 
করছে । ভঙ্গিতে মহিমা, চোখের দৃষ্টিতে পবিত্রতা, তার স্বতম্কুর্ত 
আত্ম নিবেদন একবারও এই চিন্তা মনে জাগায়ন। যে প্রেমের জন্া, 
প্রেমাম্পদের অপরাধের ভাগ সে নিয়েছে । না, এখানে একটা 
অসঙ্গতি রয়েছে চোখের দেখ। আর কানের শোনার মধ্যে । 

গুডউইন আর তার অতিথিকে ডিনার দেওয়া হল বারান্দায়, শীতল 
ছায়াঘেরা লত! ও ফুলের মাঝখানে । আমেরিকান গৃহস্বামী মহিমায় 
উজ্জ্বল সেক্রেটারীর কাছে মার্জন। ভিক্ষা করে নিল শ্রীমতী গুডউইন- 
এর অনুপস্থিতির জন্য: যিনি অনুস্থ মাথার যন্ত্রণায়, যে মাথার যন্ত্রনা! 
সামান্য ঠাণ্ডা লেগে হয়েছে। 

আহারের পরে প্রথামতো। কফি আর সিগার নিয়ে তারা বসল । কর্ণেল 
ফালকন অপেক্ষা করলেন, প্রকৃত স্প্যানিশ সৌজন্যতার যেমন রীতি, 
যে গৃহস্বামী সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন সেই বিষয়টি যার আলোচনার 
জন্ত এই আয়োজন। বেশীক্ষণ তাকে অপেক্ষা করতে হল না। 
সিগার ধরানো মাত্র আমেরিকান পথ পরিক্ষার করল জিগগেস করে 
যে সেক্রেটারী মহাশয়ের তদন্ত এ পর্ষস্ত কোন আলোকপাত করতে 
পেরেছে কি সেই হারানো টাক! ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে । 

“আমার আজ অবধি এমন একজনের সঙ্গে দেখা হল না যে সেই 
ব্যাগট! বা টাক দেখেছে । তবুও আমি লেগে রয়েছি । রাজধানীতে 
প্রমাণ রয়েছে যে প্রেসিডেন্ট মিরাফ্লোরেস সানমাটেও থেকে রওন! 
হয়েছিলেন এক লক্ষ ডলার সঙ্গে নিয়ে, তার সঙ্গে ছিল অপেরার 
গায়িক। ইসাবেল গিলবার্ট । সরকার সরকারীভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে 
বিশ্বাস করতে চায়না” কর্ণেল ফালকন একটু হেসে বললেন, “যে 
আমাদের বিগত প্রেসিডেন্টের রুচি এমন হবে যে তার পলায়ন পথে 
বাড়তি বোঝ স্বরূপ কাম্য বস্তু ছুটির একটিকেও পরিত্যাগ করবেন।” 


৭৯ 


“আমার মনে হয় আপনার জানা! দরকার এই ব্যাপারে আমার কি 
বলবার আছে» গুডউইন সোজানুজি কাজের কথায় আসে। “সেজন্ 
বেশী কথা খরচ করার দরকার হবে ন1।, 

“সেই রাত্রে এখানে আমাদের অন্ত বন্ধুদের সঙ্গে আমি প্রেসিডেন্টেয় 
সন্ধানে ছিলাম। ইতিপূর্বে আমাদের জাতীয় গোপন বার্তায় 
ইঙ্গলহার্-এর একটি টেলিগ্রামে আমাকে জানানো হয়েছিল । 
ইঙ্গলহার্ট রাজধানীতে আমাদের একজন নেতা । রাত্রি দশটা নাগাত 
আমি দেখতে পাই একজন লোক ও একটি স্ত্রীলোক রাস্তা দিয়ে দ্রুত 
যাচ্ছে। তার! হোটেল দেলোস এসত্রানজারোস-এ যায় ও সেখানে 
ঘর ভাড়া নেয়। আমি তাদের অনুসরণ করে ওপর তলায় যাই। 
বাইরে পাহারায় রেখে যাই এসতেবানকে যে ইতিমধ্যে এসেছিল । 
নাপিত আমাকে বলেছিল যে প্রেসিডেন্টের মুখের দাড়ি সে সেই 
রাত্রে কামিয়েছে, তাই তাকে কামানো-গাল অবস্থায় দেখার জন্য 
প্রস্তুত ছিলাম। যখন আমি তাঁকে জনগণের তরফ থেকে অভিযোগ 
করলাম তখন একটি পিস্তল বের করে তিনি নিজেকে তৎক্ষণাৎ গুলি 
করলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে অনেক অফিসার আর নাগরিকেরা 
এসে পড়ল। পরের ঘটনার বিবরণ আমার মনে হয় আপনার জানা 
আছে । গুডউইন থামল । লোসাদার চর অপেক্ষা করতে থাকে, 
ভাব দেখায় যে আরো কিছু শুনতে চাঁয়। 

“আর তারপর” আমেরিকান বলতে থাকে অপর বাক্তির চোখের ভিতর 
স্থির দৃষ্টি রেখে, প্রতিটি শব্দের ওপর ইচ্ছাকৃত জোর দিয়ে, “আপনি 
আমাকে বাধিত করবেন যা আমি এখন বলব যত করে শুনে । আমি 
কোন বাগ বা থলি কোন রকমের দেখিনি বাকোন টাকা য! 
আঞ্চুরিয়া প্রজাতন্ত্রের । যদি প্রেসিডেন্ট মিরাফ্রোরেম সরকারী তহবিলের 
কোন টাক! নিয়ে পালিয়ে থাকেন বা তার নিজের কোন টাক] আমি 
তার কোন চিহ্ন দেখিনি সেই বাড়ির মধ্যে বা অন্যত্র, সে সময় বা 
অন্তা সময়। এই উক্তিটিতে কি আমার বিষয়ে আপনার যা কিছু 
তদন্ত করার ছিল তার সব কিছু মিটছে।” কর্ণেল ফালকন মাথা নত 
করে অভিবাদন করলেন, তার চুরুট একটি নিখুঁত বস্কিমরেখা 
আঁকল। তার কর্তব্য শেষ হয়েছে। গুডউইনকে প্রতিবাদ করা 
যায়না। সে সরকারের একজন অনুগত সেবক এবং নতুন প্রেসিডেন্টের 


পুর্ণ আস্থ! আছে তার ওপর। চরিত্রের খজুতা ছিল গুঁডউইনের 
মূলধন যা তাকে বিশ্বাসী করেছে, ঠিক যেমন মিরাফ্লোরেসের সেক্রেটারী 
মেলিংগার-এর গোপন ব্যবসা করেছিল তাকে । “অনেক ধন্বাদ 
সেনিওর গুডউইন” ফালকন বললে, এই খোলাখুলি কথা বার্তার জন্ | 
আপনার মুখের কথাই যথেষ্ট প্রেসিডেন্টের কাছে। কিন্তু সেনিওর 
গুডউইন, আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে এই ব্যাপারের সঙ্গে 
যুক্ত প্রত্যেকটি রু, ধরে অনুসরণ করতে । এর একটির আমি এখনো 
কাছেই আসতে পারিনি । আমাদের ফরাসী বন্ধুরা বলেন শের- 
সেলা ফাম-_যখন একটা রুহস্তের কোন হদিশ পাওয়া যায় না । কিন্তু 
এক্ষেত্রে আমাদের খুজে দেখতে হবেনা । যে স্ত্রীলোকটি বিশত 
প্রেসিডেন্টের সঙ্গিনী ছিলেন তার পলায়নের সময়ে তিনি নিশ্চয়ই--.” 
'এক্ষেবরে আমি আপনাকে বাধা দেবো+, গুডউইন মাঝপথে বললে । 
টা এটা ঠিক কথা সেই হোটেলে আমি যখন প্রেমিডেন্ট মিরা 
ফ্লোবেসকে মাক করতে এসেছিলাম তখন আমি সেখানে একজন 
মহিলাকে দেখি । আমি অন্থুরোধ করবো, দয় করে মনে রাখবেন তিনি 
এখন আমার স্ত্রী। আমি যা বললাম তা যেমন নিজের তরফ থেকে 
তেমনি গুর তরফ থেকেও। উনিও সই বাগের পরিণতি সম্বন্ধে 
কিছুই জানেন ন।, বা সেই টাকার বিষয়েও যা আপনারা খুজছেন। 
আপনি মহামহিম প্রেসিডেন্টকে বলবেন আমি তার নির্দোষীতার 
গারাটি দিচ্ছি। আমার বলার প্রয়োজন হওয়া! উচিত নয়, কর্ণেল 
ফালকন, যে আমি চাইনা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা বিরক্ত করা 
হোক । 

কর্ণেল ফালকন আবার মাথা নুইয়ে অভিবাদন করলেন। “পর সু 
পুয়েসতো, বিলক্ষণ, না না” তিনি উচ্চ কণ্ঠে বললেন। তারপর 
জিজ্ঞালাবাদ যেন হয়েছে বোঝাবার জন্য যোগ করলেন, “তবে এখন 
সেনিগর মআাপনার গ্যালারি থেকে দয়া করে আমাকে দেখান যে 
বহিরূরশ্থের কথা আপনি বলেছিলেন। আমি সমুদ্র বড় ভালবাসি । 
সন্ধ্যা নাগাত গুডউইন তার অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে হেটে শহরে 
পৌছে কালে গ্রানদের এক প্রান্তে তাকে বিদায় অভিবাদন জানিয়ে 
ছেড়ে দ্রিল। সে বাড়ীর দিকে ফিরছিল এমন সময় একজন 
'বীলজিবাব' ব্লাইদ যার হাবভাব কোন রাজকীয় সভামদের মতো! 


৬ ৮৬ 


আর বাইরের আকৃতি কাকাতুয়ার মতে! গুডউইনকে পাকড়াও করল 
একট। বার-এর দরোজায় কিছু প্রাপ্তির আশায়। 

ব্রাইদের নতুন নামকরণ হয়েছিল তার অধঃপতনের বিরাটত্বের স্বীকৃতি 
হিসেবে । একদা অতীত কোন স্বর্গ হতে বিদায়ের কালে দেবদূতদের 
সঙ্গে ছিল তার মেলামেশ।। কিন্তু নিয়তি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে 
দিয়েছিল মাথা নীচু অবস্থায় উষ্ণ মণ্ডলে যেখানে তার বুকের মধ্ো 
ছিল পিপাসাঁর জ্বাল। য। কখনোই মিটত না। কোরালিওতে তাকে 
বল! হত সমুদ্রতীরের কুড়ানো দলের একজন কিন্তু আসলে সে ছিল 
একজন বিবেকবান আদর্শবাদী যার প্রচেষ্টা ছিল জীবনের নিরস 
সত্যগুলি বিশ্লেষণ করা বাম আর ব্রার্ডির সাহাযো । বীলজিবাবের 
মতোই তার হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছিল আনমনীয় দৃঢতার 
সঙ্গে কীণ] বাঁ মুকুট নয়, একটি সোনার ফ্রেমের চশমা, ভাব হত 
এশ্বর্ষের চিহ্ন হিসেবে । এই চশমা মে পরত দর্শনীয় নিশিঈতার সঙ্গে 
যখন সে সমুদ্রতীবে টহল দেওয়ার কাজে বেরুত, তার বন্ধুদের থেকে 
মাশুল াকায়ের জন্বা। কোট অজানা উপায়ে হার হদের প্রভাবে 
রক্তিম মখমগ্ডল মন্থণভাবে কামানো পাথ 51 এ ছাড়া সে যে কেন 
লোককে শোষণ করত বেশ মাহমার সঙ্গে, পধাপ্ত মাহলা নর আর 
বুষ্টি ও হিমের হাত থেকে রক্ষা পাবার আশ্রয় পেতে প্রয়োজনীয় 
অর্থের জন্য । 

“হালে! গুডউইন” সেই হতভাগ]| টেচিয়ে ডাকল, “আমি ভাঁবছিল।ম 
তোমার দেখা পাবো । বিশেষ করে ভোনাকেই আংম খুকছিলাম; 
চলোনা কোথা যাই যেখানে আমরা কথা বলতে পারি। তুমি 
নিশ্চয় জানো এখানে একটি লোককে পাঠানো হয়ছে হতভাগ্য 
মিরাফ্লোরেস যে টাফাগুল হারিয়েছিল সেগুলি উদ্ধারের জন্তয ।' 

হ্যা, গুডউইন বললে, “আমি তার সঙ্গে কথ! বলছিলাম । চলো! 
এসপাদার দোকানে । আমি তোমাকে দশ মিনিটমাত্র সময় দিতে 
পারি? 

তারা বার-এ একটি টেবিলে বসল, কাচা চামড়ায় মোড়া ছোট 
ছোট টুলে। 

“কিছু পান করবে তো 1১ গুডউইন বললে । 

“কত তাড়াতাড়ি আনবে? ব্রাইদ বললে, সকাল থেকে আমার ভিতরটায় 


৮৭ 


খরা চলছে, হি-মুচাচো, এল আগুয়ারদিয়স্তে পর আকা ।” ( ওহে 
ছোঁকর। আমাদের জন্য একটি করে ত্র্যাণ্ডি )। 

“এখন বলে। আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলে কেন, গুডউইন বললে 
পানীয় যখন তাদের সামনে রাখা হল। ুলোয় যাক ভাই', জড়িত 
গলায় ব্লাইদ বললে, “আমি তোমার সাক্ষাৎ চেয়েছিলাম কিন্তু এখন 
এইটাই আমার পছন্দ । ত্রাপ্ডি সে সবটাই গলায় ঢেলে দিল এবং 
সতৃষ্ণভাবে খালি গেলাসটপ দিকে তাকিয়ে রইল । 

“আর একটি নাও” গুডউইন বললে । 

ভদ্রলোকদের মধ”, সেই বিতাড়িত দেবদূত বললে, “আমি তোমার ওই 
“একটি” শব্দটি পছন্দ করছি না, কিন্তু যে ভাবমৃত্তি ওই শবটি বোঝাচ্ছে 
সেটি মন্দ নয়!” গ্রামগুলি আবার ভর্তি করা হল। রাইদ নিজের 
প্লান থেকে মহানন্দে চুমুক দিল। প্রকৃত আদর্শবাদীর অবস্থার দিকে 
সে ক্রমশ এগোচ্ছিল। 

'ছুই এক মিনিটের মধ্যে আমাকে যেতে হবে? গুডউইন আভাস দেয়, 
কোন বিশেষ কিছু বলার ছিল কিঠ 'ব্রাইদ তখনি কোন জবাব 
দিল না। 

'বুড়ো। লোসাদা এই দেশকে তার পক্ষে অতান্ত গরম করে তুলবে, 
অনেক পরে সে বললে, “যে ব্যক্তি ট্জারির টাক! ভরতি ব্যাগটা 
নরিয়েছে। নয়কি? তুমি কিবলো 

“নঃসন্দেহে তা সে করবেই” গ্রুডউইন শীন্তভাবে ্গীকার করে ধীরেনুস্থে 
উঠে দাড়িয়েছিল্‌, 'ভামাকে এবার বাড়ীর দিকে দৌডুতে হবে হে। 
মিসেস গ্রডউইন একলা রয়েছেন । তোমার বিশ্ষে দরকারী কিছু 
ছিল না, কি বলো ?' 

ঠিক আছে”, ব্লাইদ বললে, “অবশ্য যদি ভুমি কিছু মনে না করে যাবার 
মাগে বার থেকে আর এক গ্রাস পানীয় পাঠিয়ে দাও। বুড়ো এসপাদ! 
আমার বাকির খাতাঁটি বন্ধ করেছে, লাভ লেকসান খতিয়ে দেখে । 
আর, এইসবগুলর দামও তুমি দিয়ে যাবে লক্ষমীছেলের মতো, 
দেবে তো? 

“ঠিক আছে”, গুভউইন বললে, “বিউয়েনো নশে, শুভ রাত্রি 
বীলজিবাব ব্রাইদ তার মদের গ্লাসের সামনে বসে একটি নোংরা 
রুমাল দিয়ে তার সোনার চশমার ফ্রেম পাঁলিশ করতে থাকে । 


৮৩ 


“ভেবেছিলাম পারব, কিন্তু পারলাম না” নিজের মনেই বিড়বিড় করে 
বললে, কিছুক্ষণ পরে। কান ভদ্রলোক কথনে। পারে কি তাকে 
ব্ল্যাকমেল করতে,যার সঙ্গে বসে সে পান করে £ 


আট 
রৌসেনাপতি 


চলকে পড়া দুধের জন্য আঞ্চুরিয়ার সরকারের চোখের জল ঝরে না। 
তাঁর ছুধের উৎম অনেকগুলি, আর ঘড়ির কাট। সকল সময়ই দোহনের 
কাল ইঙ্গিত করছে । এমন কি সেই ঘন নবনীত যা ট্রেজারি থেকে 
মন্থন করেছিল চন্দ্রাহত মিরাফ্লোরেস, নতুন ত্বত্বারূড দেশপ্রেমিকেরা 
তার জন্য খামোঁক। হাহুতাঁশে সময় নষ্ট করল না। দার্শনিকের মতো! 
সরকার ঘাটতি পুরণের জন্য আমদানী শুন্ক বাড়িয়ে দিল আর ধনী 
নাগরিকদের এই মর্মে ইশারা দেওয়া! হল যে সামর্থা মতো অর্থ সাহায্য 
দেশপ্রেমের পরিচায়ক হিসাবে গণ্য করা হবে! নতুন প্রেসিডেন্ট 
লোসাদার শাসনকালে সম্বদ্ধির সুচনা আশা করা যাবে। ক্ষমতাচ্যুত 
পদাধিকারীরা আর সামরিক পেটোয়ারা নতুন একটি লিবারেল পার্টি 
বানালো, আর ক্ষমতায় আবার ফিরে আসার মংলৰ ভাজতে স্থুরু 
করল। আঞ্চুরিয়াতে রাজনীতির খেলা সুরু হল। চৈনিক কমেডির 
মতো ধীরে ধীরে জট খুলতে খুলতে তার দৈর্ঘ বিস্তার করতে লাগল । 
এখানে ওখানে উইংসের ফাক দিয়ে আনন্দ উকি মারে, অল্পক্ষণের জন্য 
ললিত পদের বক্তৃতাগুলি আলোকিত করে যায়। 

এক ডজন কোয়ার্ট শ্যামপেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আর তার ক্যাবিনেটের 
একটি মামুলি বৈঠকে একটি নৌবহরের স্থষ্টি হল আর ডন ফেলিপ 
ক্যারেরা নিযুক্ত হল নৌসেনাপতি। 

এই নিয়োগের বাহাছুরির অনেকটা প্রাপ্য, অবশ্য শ্যামপেনের পরে, 
ডন সাবাস প্মসিডোর, সদ্ধ স্থায়ীকৃত যুদ্ধ মন্ত্রীর | 

প্রেসিডেন্ট ক্যাবিনেটের বৈঠক ডেকেছিলেন কয়েকটি রাজনৈতিক প্রশ্বের 
ও রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কাজকর্মের আলোচনার জন্য । বৈঠকটি ক্লাস্তিকর, 


৮৪ 


আলোচনা ও পানীয় হয়ে উঠেছিল শুষ্ক। ডন সাবাসের এক হঠাৎ 
পাগলামির মেজাজ তাকে এই কাজে প্ররোচিত করেছিল যার ফলে 
গন্তীর রাষ্ট্র চিন্তার মধ্যে এক চিমটে কৌতুকের মশলা মেশানো! হল । 
কাধধার। বিলম্বকরণের মধ্যে ছিল ওরিল দেল মাব অঞ্চলের উপকুল 
বিভাগের একটি রিপোর্টের আলোচনা যাতে ছিল কোরালিও শহরেব 
কাসটম হাউসের আটক করা উধধ, চিনি ও থি-স্টাঁর ত্র্যাপ্ডি সমেত 
পালতোল। জাহাজ এসত্রেলা দেল নশ-এর বিষয়। তার সঙ্গে ছিল 
ছয়টি মার্টিনি রাইফেল আর আমেরিকান হুইসকি। শ্মাগলিং-এর 
মাঝেই হাতে নাতে ধরা পড়ে এই জাহাজটি এখন আইনত রাষ্ট্রের 
সম্পন্তি। 

কাসটমস্রে কালেকটার তার রিপোর্টে গতান্ুগতিকতার থেকে 
আলাদাভাবে এইটুকুই লিখেছিপ যে জলযানটি সরকারী কাজে 
লাগানো উচিত | 

দশ বছরের মধ্যে তার ডিপার্টমেন্টের ওই একটিই সাফল্য । 
কালেকটার তাই নিজের ডিপাটমেন্টের পিঠ চাপড়ানোর সুযোগ 
নিয়েছিল । 

প্রায়শই সরকারী অফিসারদের দরকার হত উপকূল বরাবর এক 
জায়গা! থেকে অন্ত জায়গায় যাওয়ার আর সে জন্য কোন যানবাহনের 
বাবস্থা ছিল না। এছাড়া জাহাজটি একদল অনুগত উপকূল রক্ষী 
দিয়ে চালালে ম্মাগলিং এর প্রকোপ কমতে পারে। 

এই সঙ্গে কালেকটর একজনের নামও উল্লেখ করেছিল যার বিশ্বস্ত 
হাতে তরীটি নিরাপদে তুলে দেওয়া যায়। কোরালিওর একজন যুবক, 
নাম ফেলিপ ক্যারেরা-_খুব জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন নয় তবে বিশ্বস্ত আর 
এই অঞ্চলের সর্বশ্রেষ্ঠ নাবিক । 

এই ইঙ্গিতে যুদ্ধমন্ত্রী একটি বিরল পরিহানের উপস্থাপনা করলেন যা 
সরকারের কার্ষকরী সভার একঘেয়েমি দূর করে তাতে প্রাণসঞ্চার 
করেছিল। 

এই নগন্য সমুদ্রতীরের কদলীরাষ্ট্রের সংবিধানে একটি ভুলে যাওয়া 
ধারা ছিল যাতে রাষ্ট্রের একটি নৌব্হর থাকার ব্যবস্থা ছিল। এই 
ধারাটি, যেমন আরো! অনেকগুলি স্িবেচন। প্রশ্থত ধারার বেলায় 
হয়েছিল, রাষ্ট্রে স্থপ্টিকাঁল থেকেই কার্যকরী হয় নি- আঞ্চুরিয়াতে 


৮৫ 


নৌবহর ছিলনা বা তার কোন প্রয়োজনও দেখা দেরূন | ডন সাবাসের 
পক্ষেই এটা সম্ভব হয়েছিল-__তিনি ছিলেন একযোগে বদ্ধান, আমুদে। 
খাম খেয়ালী ও ছুধিনীত_ঘে সংবিধানের এই ভুলে বাওয় 
অনুষচ্ছেদটি পৃথিব তে কৌতুকের ভার বৃদ্ধি করবে, নিদেন পক্ষে তার 
উৎসাহী সহকমীদের হাসির দ্বারা । 

ছদ্মগাস্তীযের সকৌত্ুক ভঙ্গিতে যুন্ধমন্ত্রী প্রস্তাব করলেন একটি নৌবহর 
স্থট্টির। বিতর্কে তিনি এর প্রয়োজনীয়তা ও দেশের নহিম। বৃদ্ধির 
সম্ভাবনার কথ হালকা, রঙ্গ'ভর। উৎসাহে এমন ভাবে বললেন যে এই 
প্রহসনটির পরিহাসে প্রভাবিত হল এমন কি প্রেসিডেন্ট লোসাদার 
গাম্তীধ€। 

সেই তরল মতি রাজ পুরুষদের |শরায় শিরায় ছিল উচ্ছল শ্যামপেন। 
আঞ্চুরিরার গন্তার শাসক মহলে গুরুতর রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচণা 
পানীয় দ্বারা লঘু করার রীতি প্রচলিত ছিল না। এই দ্রাক্ষাসব ভেট 
পাঠিয়েছিল ভিস্মভিয়াস ফল কোম্পানীর একজন প্রতিনিধি । 
আপ্চুরিয়। প্রজাতন্ত্র ও কোম্পানীর মধ্যে কয়েকটি যুক্তি সম্পন্ন হবার 
পরে হাদ্য সম্পর্কের নিদূর্শন হিসেবে । 

কৌতুক টেনে নিয়ে যাওয়া হল তার শেষ পধন্ত। সাড়ম্বরে একটি 
সরকারী নথি তৈরী হল, বুজীন শ্বীলমোহর, ঝককৰকে রিবন আর 
ফুলকাটা হস্তাক্ষরের সহি সমেত । এই সন্দটি সেোনগর ডন ফেলিপ 
ক্যারেরাকে ভূষিত করল আঞ্চুরিয়। প্রজাতন্ত্রেদ ফ্ল্যাগ আযাডনিরাল 
রূপে । এইভাবে পাচ মিনিটের মধ্যে এক ডজন একসষ্্রা ড্রাই 
বোতলের প্রতাপে এই দেশ তার স্থান করে নিল বিশ্বের নৌশক্তির 
এক সদস্য রূপে আর ফেলিপ ক্যারেরা বন্দরে প্রবেশ করার প্রাককালে 
উনিশ তোপের সম্মানের আধকারী হল। 

দক্ষিণের দেশের জাতিদের মধ্যে সেই প্রকারের কৌ হুকপ্রিয়তার 
অভাব আছে য। কোন ব্যক্তির প্রকৃতিদত্ত দুর্ভাগ্য বা দোষকে আমোদ 
প্রমোদের বিষয় করে তোলে । তাদের চরিত্রের এই ত্রুটির জন্ত তাদের 
হাঁসির উদ্রেক হয় না (যেমন তাদের উত্তর দেশের ভ্রাতৃবর্গের হয়) 
যখন.কোন বিকলাঙ্গ, অল্প বুদ্ধি বা পাগল তারা দেখে। 

ফেলিপ ক্যারেরাকে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল তার বুদ্ধি বৃত্তির 
অর্ধেক দিয়ে। তাই, কোরালিওর লোকেরা তাকে বলত “এল 


৮৩ 


পত্রেসিটো লোকো,-বেচারা ছোট্ট পাগলা,--আার বলত ঈশ্বর তর 
অর্ধেক পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, বাকি অর্ধেক নিজের কাছে বেখে। 
গম্ভীর যুবক, ফেলিপের পাগল আখা। নেতিবাচক ভাবে সত্য। 
ডাঙায় সে কারুর সঙ্গে কথাবার্তা বলত না। সে বুঝেছিল সে অনেক 
ব্যাপারে ভাঁঙার ওপর অপট্র। ডাঙায় অনেক কিছু জানতে বা বুঝতে 
হর। কিন্তু জলে তার একমাত্র প্রতিভার বলে যে কোন ব্যক্তির 
সমকক্ষ :স ছিল। ঈশ্বর যে সব নাবিকদের ঘত্রু করে সম্পূর্ণ করে 
গড়েছিলেন তাদের কেউ তার মতো! পালতোল। নেক চালাতে 
পারত না। বাতাসের বিপরীতে সে ভার পালের নৌক। নিয়ে যেতে 
পারত আন্থাযে “কান নাবিকের থেকে অন্তত পাঁচ ডিগগ্রা। ঝড় 
তুফানে যখন শ্ন্ত নাংবকেরা ভয়ে কাপে তখন ফেগের জুকীচিনন্ত 
দৌধত্রপটপ্প কথ। কেউ মনে আনত না। সে ছল একজন সম্পর্ণ 
নাবিক যদিও ধা অসম্পুন মানব । তার কোন নৌক। ছিল না, উপকূলে 
ভেসে বেড়ানো পালতোলা নৌকার মাঝি নাল্লার দলে মস কাজ 
করত, প্টামাদ্ে ফল পৌছে দিত সেই সব স্থানে যেখানে বন্দর 
ছিল নং। জল ভার সাহম ও দক্ষতার খটাতর কথা ননে রেখে 
আর দেই সঙ্গে তার মানাসক অসম্পূর্ণতার €ন্ অন্ুক্ষম্পাঞজ 
কালেকটর তার নাম পাঠিয়েছিল ধরাপড়া নৌকার বোগ্যতম রক্ষক 
হিসেধে। ডন সাবাসের কৌতুকের ফলশ্রুতি যখন একটি আঙম্বর 
পূর্ণ রাষ্ীয় সন্দ রূপে এসে পৌছাল, কালেকটরের মুখে হাসি 'দখ! 
দিল। সে আশা কবেনি যে তার তদ্ধিরের ফল এমন ত্বরি৬ ও 
অভাবিত হবে। একটি ছোকরাকে সে পাঠালো ভবিষ্যৎ সো 
সেনাধ্যক্ষকে ডেকে আনতে। 

কালেকটার তার সরকারা আবাদে অপেক্ষা করছিল । কালে গ্রানদে 
সরণীতে ছিল তার অফিস, জানালার ভিতর দিরে হু হু করে বয়ে ঘাঁয় 
সমুদ্রের বাতাস সারা দিন। সাদা [লিনেনের পোশাক আর 
ক্যানভাসের জুতো! পরে একটি প্রাচীন ডেসকে বসে সে কাগজপত্র 
নাড়াচাড়া করে। কলমদানীতে বসে একট। কাকাতুয়া বাছাইকর। 
ক্যাস্ট্রিলীয় বুলিতে অফিসের একঘেয়েমির মধ্যে বৈচিত্র্য আনে। 
কালেকটারের অফিসের ছুই দিকে ছুটি কামরা, একটিতে তার 
কেরানীকুল, নানা বর্ণের যুবকের দল উৎসাহ ও দৃশ্বমানভাবে তাদের 


৮৭ 


বিভিন্ন সরকারী কাজ কবে। খোলা রোজা দিয়ে দেখা যায় অন্ত 
কামরায় জামাকাপড়ের সঙ্গে সম্পকশুন্ত ব্রোঞ্জ রং-এর একটি শিশু 
মেঝেতে খেলা করছে । হাওয়ায় মধো ঘাসেব দোলায় তৃপ্তিতে দোল 
খায় আর গীটার বাঙ্তায় একটি ছিপছিপে মেয়ে, গায়ের রং হালকা 
পাতিলেবু। এই ভাবে একপাশে দেশান্দন সরকারী পায়িহ পালন ও 
অন্থদিকে গাঠস্থ্যসুখের প্রণ্তিস্তবিন গাছের পত্লিরাহ কালেকটন্ব হুদ য়ে 
আরো স্বুখের সঞ্চার হল যখন নিষ্পাপ এফলিপেক ভাগ্যের উন্নতিব 
ক্ষমত] তার হাতে এলো । 

ফেলিপ এসে দাড়াল কালেক৩বেব সম্মুখে। বিশ বছবেব যুবক, দেহ 
সৌষ্ঠটব নিন্দাৰ নয়, কিন্তু দৃষ্টিতে স্থুদূব চিগাকুল শৃম্ততা। পরনে 
সাদা স্তীর প্যাণ্ট, লাল .ডাবা ওয়া সামবিক পোশাকের আব্ছ। 
অনুকরণ । জ্যাল জ্যালে শীল সাট, গল। খোলা, খালি পা | হাতে 
আমেবিকা। থেকে আমদানী করা সব চেষে কমদামী ঘাসেব টুপি । 
“সেনিওর কারের” কালেকটব বললে গন্ভীরভাবে, সনদটি দোখয়ে। 
“আমি তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম প্রেসিডেন্টর আজ্ঞায়। এই 
দলিলটি যা আমি তোমাকে অর্পণ করছি তার বলে তোমার পদ এখন 
হল এই মহান প্রজাতন্ত্রেে নৌসেনাধ্যক্ষ। আর তোমার 
পরিচালনাধান এখন থেকে এই বাষ্ট্রেব সকল নৌসেনা ও বণতরী। 
তুমি ভাবতে পাবে বন্ধু ফেলিপ যে আমাদের নৌবহর কোথায়, কিন্ত 
হা], এসত্রেলা দেল নশ নামেন পাল তোল। জাহাজ যা আমাব সাহসা 
কমীরা স্মাগলারদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিষেছে সেটা এখনি তোমাৰ 
অধীনে দেওয়| হচ্ছে । (শীকাটি দেশের সেবাঁয় বাবহার কব হবে। তুমি 
সকল স্ময় প্রস্তুত থাকাবে সরক'বা কর্মশরীদের উপকূল বরাৰর এক 
স্থান থেকে অন্ত স্থানে নিয়ে যাওয়াব জন্তা। তুমি উপকূল পাহাব! 
দেবে এবং তোমার সাধ্যমত ম্মাগলিং বন্ধ করবার চেষ্টা করবে। সমুদ্রে 
তোমার দেশের সম্মান ও স্বাধীনতা কায়েম রাখবে আর আঞ্চুরিয়াকে 
বিশ্বের গবিত নৌশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবে । তোমা 
প্রতি এই নির্দেশগুলি জানাতে প্রেসিডেন্ট আমাকে আদেশ করেছেন । 
ঈশ্বর জানেন কেমন করে এই কর্তব্যগুলি পালিত হবে কেনন! তার 
পত্রে নৌবহরের কমী কাবা হবে বা সে জন্য অর্থব্যয়ের কথা কিছু 
লেখা নেই। সম্ভবত তোমার সহকারীদের তোমাকেই সংগ্রহ করে 


1১৮ 


নিতে হবে সেনিওর আডমিরাল-_-সেটা! আমি ঠিক জানি না_কিন্ত 
তোমার ওপর বিরাট সম্মান ন্যস্ত হয়েছে। এখন আম তোমার 
সনদ তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। নৌকাটি নিতে যখন তুমি প্রস্তত 
হবে আমি আদেশ দেব সেটা তোমাকে যেন দেওয়া হয়। আমার 
প্রতি এই পর্ধস্ত নির্দেশ রয়েছে । 

ফেলিপ সনদটি নিল কালেকাত্ন্ধর হাত থেকে । একবার খোলা 
জানাল। থেকে সমুদ্রের দিকে তাকালো, তার স্বভাব মতো গভীর কিন্তু 
নিরর৫থক চিস্তাকুল দৃষ্টি দিয়ে। তার পর সে ফিরে গেল একটি কথাও 
না বলে? রাস্তার গরম বালির ওপর দিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে । 

“পত্রেসিটে। লোকো» দীর্ঘ নিংশ্বাস ফেলে কালেকটার বলল আর 
কলমদানিতে কাকাতুয়াট। টেচিয়ে উঠল, লোকো-লোকো-লোকো। 
পরদিন সকালে এক অদ্ভুত মিছিল সারি দিয়ে কালেকটরের দপ্তরের 
রাস্তা দিয়ে হেটে এল। এর শীর্ষে ছিল নৌবহরের প্রধান। ফেলিপ 
কুড়িয়ে বাড়িয়ে সংগ্রহ করেছে সামরিক পোশাকের একটি করুণ 
প্রতিচ্ছবি, একজোড়া লাল প্যান্ট, একটি পুরোন ছোট জ্যাকেট, নীল 
রঙের ওপর সোনালী জরির অলঙ্করণ, একটি পুরোন মিলিটারি ক্যাপ, 
বেলিজের ব্রিটিশ সৈন্যদের ফেলে দেওয়া এবং সমুদ্রে ভেসে আসা আর 
ফেলপের কুড়িয়ে আনা । কোমরের বেজটের সঙ্গে বাধা কোন 
প্রাচীন জাহাজের তরবারি, যেটা পাউরুটির কারিগর পড়ো লাফিৎ 
তাকে দিয়েছে আর সগবে বলেছে সেট! তার পুরবপুরুষ বিশ্ববিশ্রুত জল 
দন্থ্যর থেকে উত্তরাধিকার স্ত্রে তার হাতে এসেছিল । আ্যডমিরাঁলের 
পায়ে পায়ে আসছে তার নতুন জাহাজের কমীদল । তিনজন ঝকঝকে 
কালো হ্াস্তময় ক্যারিব, উধবাঙজগ কোমর পর্যন্ত নগ্ন, তাদের খালি 
পায়ের দাপটে বালি বৃষ্টির মতো চারিদিকে ছিটোচ্ছে। 

খুবই সংক্ষেপে আর ন্বমর্ধাদায় আস্থাবান ভঙ্গিতে ফেঙল্সিপ চাইল তার 
জাহাজের ভার কালেকটারের কাছে । আর এখন তার জন্য একটি নতুন 
সম্মান অপেক্ষা করছিল । কালেকটারের স্ত্রী যে সকল সময় দোলায় 
শুয়ে গীটার বাজাত বা নভেল পড়ত-_তায় লেবু রঙের শাস্ত 
বক্ষে ছিল অপর্ধান্ত রোমান্প। কোন প্রাচীন বই-এ সে দেখেছিল 
একটি ফ্র্যাগের চিত্র যেটা আঞ্চুরিয়ার নৌবহরের ফ্ল্যাগরূপে চিহিন্ত 
ছিল। হয়ত জাতির প্রতিষ্ঠাতার৷ ওই ফ্ল্যাগটির পরিকল্পনা করেছিলেন 


৮৯ 


কিন্ত যেহেতু নৌবহরই গড়ে তোলা হয়নি তাই ফ্র্যাগটি ঢাক। পড়েছিল 
বিস্মৃতির গর্ভে। বহু পরিশ্রমে নিজের হাতে কালেকটারের স্ত্রী সেই 
প্যাটার্নের একটি ফ্ল্যাগ তৈরী করেছে, নীল-সাদ। জমির ওপর একটি 
লাল ক্রস্‌চিহ্ু। এখন ও ফেলিপকে সেটি দিল এই কথাগুলি বলে, 
“বীর নাবিক, এই তোমার দেশের পতাকা । সত্যে তোমার নিষ্ঠা 
থাকুক, প্রাণপণ করে একে রক্ষ+ করবে। ঈশ্বর তোমার সহায় 
ভোন।? 

অাডমিরাল পদে নিয়োগের পরে এই প্রথম নৌসেনাধ্যক্ষের মুখে 
ভাবাবেগের চিহ্ন দেখা গেল। সে সেই সিলকের পতাকাটি নিল, 
অত্যন্ত ভক্তিভরে তার ওপর হাত বোলালো। কালেকটারের স্ত্রীকে 
সে বলল, “আমি আডমিরাল। জমিতে দীড়িয়ে এর 
বেনী উচ্ছসিত ভাবাবেগের ক্ষুরণ তার পক্ষে সম্তব হল না। সমুদ্রে 
ওই পতাক1 তার নৌবহরের মাস্তুলের ওপর উড়তে থাকলে আরো 
গভীর ও মুখরভাবে হয়ত তার মনের আবেগ সে প্রকাশ করতে 
পারত । 

আডমিরাল তার সাগরেদদের নিয়ে তখনি চলে গেল। পরের দিন 
মহা উৎসাহে তারা এসত্রেলা৷ দেল নশকে সাদ। রঙে, নীল বর্ডারে 
নতুন করে তুলল । ফেলিপ নিজেকে আরো সার্জালো একগোছ! 
জ্বল টিয়াপাখির পাঁলক টুগীতে গুজে । আবার তারা হেঁটে গেল 
কালেকটারের অফিসে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করল 
জাহাজের নাম বদলে করা হয়েছে এল নাশিওনাল। 

পরের কয়েক মাস নৌবহরের কাটলো! অনেক গোলমালের মধ্যে। 
একজন আযডমিরালও বিচলিত হয় যখন কী করতে হবে তার কোন 
নির্দেশ নাআসে। কিজ্ম কোন আদেশ এলোনা, কোন বেতনও 
এলোনা। এল নাশিওনাল অলসভাবে নোঙউন কর! রইল । 

যগ্থন ফেলিপের সামান্ঠ পুজি ফুরলো, সে গেল কালেকটারের কাছে 
খরচের কথা তুলতে । 

'বেতন? কালেকটার অবাক হয়ে হাত তুলে বলল, 'ভালগাম দ্রিওস্‌। 
গত সাঁতমাস আমার বেতনের এক সেনটাভোও আমি পাইনি। আর 
তুমি চাইছ আযডমিরালের মাইনে? কুইয়েন সাব! বলে।কি? 
তিন হাজার পেসোর কম হবে না তোমার মাইনে । মিরা! খুব 


৪9৩ 


শিগগিরই এই দেশে একটা বিপ্লব আসছে । তার লক্ষণ হচ্ছে 
সরকার কেবল চাইছে পেসো, আর পেসো, এদিকে দেবার 
বেলায় কিছু নয়।; 

আযাডমিরাল কালেকটারের অফিস ত্যাগ করল, তাঁর গম্ভীর মুখে যেন 
খুশির ভাব । বিপ্লব মানে যুদ্ধ আর সে সময় সরকার নিশ্চয় তাকে 
সেবা করার স্থুযোগ দেবে । আডমিরাল হয়ে বেকার বসে থাকার 
বড় যন্ত্রণা । এদিকে তার ক্ষুধার্ত কর্ণচারীরা পয়স। ভিক্ষা করছে কল 
ব। তামাক কেনার জন্য । যখন-সে ফিরল তার হাসিধুশী ক্যারি সঙ্গীদের 
কাছে, তারা লাফিয়ে উঠে তাকে স্তালুট করল তার শিক্ষণ মতো । 
'এসো, মুচাচোরা” আযাডমিরাল বলল, “দেখা যাচ্ছে সরকার দরিদ্র হয়ে 
পড়েছে! অ।মাদের দেবার মতো! টাকা ভার নেই। তাহলে বেঁচে 
একার জন্য আমাদের পয়সা রোজগার করতে হবে । এই ভাবে 
আমরা দেশের সেবা করে চলব । শ্ান্র তার। আমাদের সাহায্য 
চাহবে।? 

এখন থেকে এল নাশিওনাল তীরের অন্ত তরীর মতো ভাঢ়। খাটতে 
লাগল । কল। বা কমলা বয়ে নিয়ে যেতে সুরু করল তাঁর থেকে 
মাইলখানেক দূরে যে সব ফলের জাহাজ নোঙর করে তাতে! স্বয়ন্তুর 
শৌবহর যে কোন দেশের বাঁজেটে বর্ণাক্ষর পাবার যোগ্য । 

নিজের ও সঙ্গীদের জন্ত যথেষ্ট বোজগার হলে ফেলিপ তার নৌবহর 
নোঙর করে রাখে আর টেলিগ্রাফ অফিসের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, 
যেন কোন ভেঙ্গে যাওয়া যাত্রীদলের কোরাশের একজন, ম্যানেজারের 
তাবুতে ধর্ণা দিয়েছে । তার হৃদয়ে সব্দা জাগরুক ছিল আশা, 
রাজধানী থেকে জাদেশ পাওয়ার। আযডমিরাল হিসেবে তাকে 
একবারও ডাক] হয়নি দেশের প্রয়োজনে, এটাই তার গব ও দেশাত্ম- 
বোধকে পীড়া দিচ্ছিল। প্রতিবারই সে গম্ভতীরভাবে আশা নিয়ে 
জজ্ঞেস করে। অপাঁরেটার খুঁজে দেখার ভাঁণ করে, তারপর উত্তর 
দেয়, এখনেো। আসেনি দেখছি সেনিওর এল আলমিরান্ত, পোকো 
তিয়েমপোঃ একটু সবুর করুন 

বাইরে লেবু গাছের নীচে কর্মীরা আখ গিবোয় বা ঝিমোয়। খুশি 
তারা যে তাদের দেশও খুসী কিছু কাজ না পেয়েও। 

গ্রীষ্মের প্রথমদিকে একদিন হঠাৎ বেঁধে গেল বিপ্লব যা কালেকটার 


৪১ 


আশঙ্কা করেছিল। এট! ধূমায়িত হচ্ছিল বহুদিন ধরে। প্রথম 
বিপদের সংকেতে আযাডমিরাল তার নৌবহর নিয়ে গেল পাশের একটি 
রাষ্ট্রের বড় এক বন্দরে। ফলের বেসাতি করে অর্থ সংগ্রহ করল 
নৌবহরের জন্য গুলি আর পাঁচটি মার্টিনি রাইফেল কেনার জন্য । 
তারপর সে গেল টেলিগ্রাফ অফিসে । নিজের পছন্দ মতো কোনে 
বসে রইল, পোশাক তার দ্রেত চলেছে ধ্বংসের পথে। তার প্রকাণ্ড 
তরবারি ছুই লাল পায়ের মাঝখানে রাখা-সে প্রতীক্ষা করতে লাগলো 
বহু বিলম্বিত কিন্তু শীঘ্র আসন্ন আকাক্ষিত আদেশের | 

এখনো আসেনি, সেনিগর এল আলমিরান্ত' টেলিগ্রাফের ক্লার্ক তাকে 
বলল, 'পোকেো তিয়েম্পো! ॥? 

এই উত্তর শুনে বসে পড়ল আডমিরাল, তার প্রকাণ্ড তরবারি 
কোষের মধ্যে ঝন্ঝন্‌ করে উঠল আর সে টেবিলের ওপর রাখা 
টেলিগ্রাফ যন্ত্রের টরে টক্কা শুনল বসে বসে 'আসবে সেই আদেশ, 
আবচল বিশ্বাসে সে বলল, “আমি নৌসেনাপতি।: 


য় 
পতাকা সর্বোভম 


সেই বিদ্রোহীদলের শীর্ষে ছিলেন দক্ষিণ প্রজাতন্ত্রের হেকটর, সুপ্তি 
থিকীয়ান, ডন বাস প্লাসিডে। | ভ্রাম্যমান সৈনিক, কবি, বিজ্ঞানবেত্া, 
রাজপুরুষ এবং সধবিদ্ঠাবিশারদ ও বোদ্ধা_আশ্চর্ষেরবিষয় এই যে তার 
নিজের দেশের নিভৃত জীবন নিয়েও তিনি খুশী থাকতে পারতেন । 
প্লাসিভোর খামখেয়ালিপনা, রাজনৈতিক চক্রান্তে মেতে ওঠা, বলত 
তার একজন বিশিষ্ট বন্ধু যে তাকে খুব ভাল ভাবে জানত । উনি ষেন 
খুঁজে পেয়েছেন সঙ্গীতের একটি নতুন মুর্ঘনা, বাতাসে এক নতুন 
সুগন্ধ, নবীন ছন্দ অথব! বিস্ফোরক । এই বিপ্লবকে নিংড়ে তিনি 
সকল চাঞ্চল্য নিষ্কাশিত করে ফেলবেন আর একসপ্তাহ পরে একে সম্পূর্ণ 
ভুলে যাবেন, ভেসে যাবেন বিশ্বের সমুত্রে, তার নিজন্য ছুই মাম্তলের 
জাহাজে, ভরে উঠবে তার বিশ্ব বিখ্যাত সংগ্রহ । কিনের সংগ্রহ? 


৪২ 


হায় ভগবান ! সব কিছুর। পোৌস্টেজ স্ট্যাম্প থেকে প্রত্বতত্ের পাথরের' 
দেবমূত্তি পর্যন্ত । 

কিন্ত 'একজন চারুকলাবিদ হিসেবে নান্দনিক প্লাসিডে, বেশ প্রাণবস্ত 
এক গোলমাল পাকিয়েছেন। জনগন তাকে বাহব। দিত, তার উজ্জ্বল 
কর্মধারা তাদের বুকে চমক জাগায়, আর তার নিজের দেশের মতো 
তুচ্ছ ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত হতে দেখে কৃতকৃতার্থ হয়। 
রাজধানীতে তার সহযোগীদের আহবানে তারা সাড়া দেয় যদিও 
সৈম্তদল (বিধিমত ঘটনার পরিবর্তে ) সরফারের অনুগত থাকে । 
সমুদ্রতীরের শহরগুলিতে জোরালো লড়াই কাধে । গুজব শোন! 
যায় বিপ্লবে উসকানি ছিল ভিম্ুভিয়াস ফল কোম্পানির, যাদের 
প্রভুত্ব ভত'সনার হাসি আর আঁঙ্লের হেলনে চাইত আকঞ্ুরিয়ীকে 
ভাল ছেলেদের দলে রাখতে । এদের ছুটি জাহাজ ট্রাভলার আর 
সালভাদর বিদ্রোহী সৈন্তদল বহন করে তীর ববাবর অনেক জায়গায় 
রেখে এসেছে এমন শোনা যায়। 

এতদিন পর্ষস্ত কোরালিওতে কোন বিদ্রোহ হয়নি । সামরিক শাসন 
চলছিল, গাঁজলা বোতলের মধ্যেই ভরা ছিল, অন্তত সাময়িক ভাবে। 
রাজধানীতে প্রেসিডেন্টের সৈম্তরাই ছিল ক্ষমতাশীলী জার গুজব 
শোনা যেত বিদ্রোহীদের দলপতির! পালাতে বাধ্য হয়েছিল আর 
তাদের তাড়া কর! হচ্ছিল । 

কোরালিওর ছোট্ট টেলিগ্রাক অফিসে সব সময় সরকারী কর্মচারীর 
দল আর অনুগত নগরবাসীদের ভিড় জনে থাকত, রাজধানী থেকে 
কি নির্দেশ আসছে জানার জম্ত। একদিন সকালে টেলিগ্রাফ যন্থুটি 
বাজতে শুর করল আর অল্লক্ষণ পরে অপারেটর সরবে ঘোষণা করল, 
“'আডমিরাল ভন সিনিওর ফেলিপ ক্যারেরার জন্য একটি 
টেলিগ্রাম 1, 

পায়ের খস্‌ খস্‌, টিনের কোষের ভিতরে অদির বঙ্কার, আর 
তক্ষণাৎ আাডমিরাল তার নিজের প্রতীক্ষার জায়গা থেকে লাফিয়ে 
এলো সেই ঘরের মাঝখানে টেলিগ্রামটি নেবার জন্য । খবরটি তার 
হাতে দেওয়! হল। একটি করে শব্দ বানান করে করে পড়ে সে 
বুঝলে এটি তার প্রতি একটি সরকারী নির্দেশ এই মর্মে তোমার 
জাহাজ নিয়ে এখনি রওনা হও। রিও রুয়িথের মুখে অপেক্ষা করো ।' 


৯৩) 


'আঙ্গফোরাণের ব্যারাকে গরুর মাংস পৌঁছে দেবার জন্য । মারতিনেজ 
জেনারেল। তার দেশের প্রথম আহ্বানে নেই কোন মহিমার ছৌয়]। 
তথাপি আহ্ব ন এসেছে তাই আ্যাডমিরালের বুকে খুশীর জোয়ার। 
তরবারির বেলট, টেনে বাধলো৷ আর একটি ছিদ্র পর্যন্ত । দৌড়ে গিয়ে 
তার ঘুমন্ত সঙ্গী"দর জাগালে! আর তার পনেরো মিনিটের মধ্যেই 
“এল নাশিওনাঁল” তীরের দিক থেকে বহে আসা বাতাস ঠেলে জলদি 
উক্তান বেয়ে কুল বরাবর ছোট ছোট পদক্ষেপে পাড়ি দিল। রিও 
রুয়িথ একটি শীর্ণ নদী, কোরালিওর দশ মাইল দক্ষিণে সমুদ্রে পড়ছে। 
উপকূলের সেই অংশ ভনহীন আর জঙ্গলে পূর্ণ। কডিলিয়েরার একটি 
গভীর খাতের মধা দিয়ে রিও রুরিথ বহে চলেছে, শীতল, ফেনিল, 
এবং মোহানার কাছে চগুড়া ও ধীর, পলিঘাটির চরের ওপর দিয়ে 

সমুদ্রে নিশেছে। 

দুই ঘন্ট।)র মধ্যে এল নাশিওনাল নদীমুখে প্রবেশ করল। নদীর 
তাঁরে বুড়া বড়ো গাছেচ সারির ঘন সন্নিবেশ। প্রভূত লতাগুলস 
ভনিকে আস্ডন্প করেছে আব জলের মধো কিছুটা নিমজ্জিত । জাহাজ 
টি সেখানে প্রবেশ করল আরো নিবিড় নীরবভার রাজ্যে! 
জ্বল, সবুজে, হিরাণ আর পুষ্পশোভার লোহিতে, রিও রুয়িথের 
ছত্রাকার নদাগুখে কোন শব শোনা যায়না, কোন চাঞ্চলা নজরে 
পড়ে না কেবল সদুদ্রগামী জল নৌকার গায়ের ওপর ওলট পালট 
হওয়ার আওয়াজ ছাড়! মাংস বা খাগ্ সেই জনহীন নিস্তবতার 
মধা থেকে নিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। 
আডমিরাঁল স্সির করুল নোউর ফেলবে, আর শিকলের ঝনঝন 
ভাঁওয়াজে বনস্থলী ভহক্ষণা মুখর হয়ে উঠলো; রিও রুয়িথের 
নদীমুখ তার প্রাহঃকালের নিদ্রায় ছিল সগ্ন'! তোত! আর বেবুনের 
দল গাছে গ!ছে হল সরবঃ হিস্‌, হিস্‌, হুয়ির হুয়ির আর বুম্‌ বুম্‌ শব্দে 
প্রাণীজগত জেগে উঠলো; বৃহৎ মসীকৃষ্ণ একটি সচল অবয়ব দগ্যের 
সামনে এলো অল্কালের জন্ত যখন একটি চমকিত টেপির লতাঝোপের 
মধ্যে দিয়ে পালাবার রাস্তা খুজছিল। 
নৌবহব আদেশ অনুযায়ী নদীমুখে অপেক্ষা করতে থাকলে ঘণ্টার 
পর ঘন্টা । কম্মীরা ডিনার তৈরী করল । হাঙরের পাখনার সুপ, কলা, 
কাঁকড়ার ঝাল আর অয় স্বাদের মদ। আযডমিরাল একটি তিন ফুট 


রী; 


*১৪ 


লম্বা! টেলিস্কোপ নিয়ে পঞ্চাশগজ দূরের হুর্ভেন্ভ জঙ্গলে পুঙ্থা নুপুঙ্ঘরূপে 
দেখতে লাগল । 

সূর্যাস্তের প্রায় কাছাকাছি সময়ে তাদের বাঁদিকের জঙ্গল থেকে 
হালো ও-৩-আওয়াজ প্রতিধবনিত হল। উত্তরও দেওয়া হল। তখন 
তিনজন ব্যক্তি খচ্চরের পিঠে নদী তীরের বারো গজের মধ্যে পড়ি কি 
মরি করে ছুটে এলো । সেখানে তারা নামলো । একজন তার বেণ্ট 
খুলল আর তলোয়ারের খাপ দিয়ে প্রচণ্ড জোরে খচ্চরদের পিঠে এক 
এক বাড়ি মারল যার ফলে তারা চার প! তুলে জঙ্গলের মধ্যে দ্রুত 
অদৃশ্ঠ হল। 

আকৃতিতে এই বাক্তিগুলি মাংস ও খাগ্ বহে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে 
বিসদৃশ ছিল । একজন লম্বা চওড়া, হত্যন্ত তৎপর, দর্শনীয় দেহসৌষ্ঠব, 
এাটী স্পানিশ টাইপের আর হাবভাবে সোনকদের প্রধান। অন্য 
তুজন বাক্তি ছোটখাটে?, বাদামী মুখমণ্ডল, সাদ মিলিটারি পোশাক, 
জাম! কাপড় ভিজে, ময়লা আর 'ছড়া। যেন অবস্থার চাপে তীর। 
বন্া, কাদা আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তাড়া খেয়ে বেডিয়েছে। 


ওতে, দিনিওর আলমিরান্ত। বুহৎ ব্াক্তি চেচিয়ে বজল, 
'“তাসার ডিও নামও ।? 

রা রা রর টি রা ১০০ রে ০৫ 
(৩৮ আনাতনা চল, ফেলিপ একজন কাারিবকে সঙ্গে নিয়ে বেঠ। 


রুচৎ বান্তু জের কিনারা কোদর প্ধন্ত লতাঝোপের মধো ধাভিয়ে 
ছিল। ডিষ্টির হালের কাছে কাকাতুয়ার আকৃতি মানুষটিকে দেখে 


হার চল্স্বির সাতা মুখ্মগ্ুলে সকৌতুক আগ্রহ ফুটে উঠলে।। 
এসের পর মাস নিনা মাইনে আর বিনা কোন মিষ্ট বাক্যে অপরিসীম 
পরিশ্রমে আডিমিতালের জীকজদক স্তিমিত হয়ে এসেছে । তার*লাল 
ট্রাউজার এখন তাঁলি মারা, ছঁড়া। কোটের সোনালি জরি আর 
বোতাম প্রায় সবই লুপ্ত হয়েছে । ট্রপির মামনেট। ঝুলে পড়েছে 
চোখের কাছাকাছি । আ্যডদিরালের পায়ে জুতো নেই। 

“প্রিয় আডমিরাল' বৃহৎ ব্যক্তি টেচিয়ে বলল, তার গলার আওয়াজ 
যেন ভেরীরব, “তোমার হস্ত চুম্বন করি । আমি জানতাম তোমার 
একনিষ্ঠতার প্রতি আমরা নির্ভর করতে পারি। আমাদের সংবাদ 
তুমি জেনারেল মাতিনেজের পাঠানে। তারে পেয়েছ। ডিডিটা আরও 


৫ 


একটু কাছে নিয়ে এসো! প্রিয় আডমিরাল। এই চলন্ত লতাঝোপে; 
মধ্যে অতিকষ্টে আমরা ঈাড়িয়ে আছি । 

ভাবলেশহীন মুখে ফেলিপ তাকে লক্ষ করতে লাগল । থাগ্চ আর 
মাংস বয়ে নিয়ে ষেতে হবে আলফোরানের সেনা ছাউনিতে, “হে 
উদ্ধৃতি করল । 

কষাইদের দোষ নেই ভাই আলমিরাস্ত, সে মাংদ তোমার জন্থ 
এখানে অপেক্ষমান নেই। কিন্তু ঠিক সময়ে তুমি এসে পৌছেচ যার 
ফলে গরুগুল্ি বেঁচে যাবে । এখনি তোমার জাহাজে আমাদের নিযে 
চলো। সৈনিকেরা, তোমরা আগে, ডিডিটা ছোট, আমার জন্ব 
আবার ফিরে এসো ।, 

ডিডি দুজন অফিসারকে নিয়ে এলো পালতো লা জাহাজটিতে, আবার 
ফিরে গেল বৃহৎব্যক্তিকে নিয়ে আসতে । 

থাছ্ের মতে! তুচ্ছ জিনিস কিছু আছে কি ভাই আডমিরাঁল ?' 
জাহাজে এসে কাতরস্বরে বুহদাকাঁর বললে । “মার হয়ত, কফি 1 
বীফ আর খাদ্য । নমত্রেদেদিওস। আর কিছুক্ষণ গেলে আমর 
ওই খচ্চর তিনটির একটিকে ভক্ষণ করতাম যাদের কর্ণেল র্যাফেল 
মাপনি আপনার তরবারির খাপ দিয়ে কত হান্দিকভাবে অভিনন্দন 
জানালেন বিদায়ের আগে । কিছু খেতে দাও আর তারপরে আমর' 
পাড়ি দিচ্ছি__কোথায় যেন--আলফোরানের সেনাছাউনিতে-_তাই 
নয় কি? 

ক্যারিবেরা খাবার তৈরী করল, এল নাশিওনালের তিনজন যাত্রী সেই 
খাবার ছুভিক্ষের ক্ষুধার সঙ্গে আহার সুরু করল। ক্ুর্যাস্ত নাগাত 
বাতাস নিয়মমত ঘুরে গেল, পাহাড়ের দিক থেকে শীতল বাতাস হৃদের 
আাণ আর নীচু জমির সুন্দরী গাছের জলাভূমির স্বাদ বয়ে নিয়ে এলো । 
জাহাজের প্রধান পালটি তুলে দেওয়া হল, বাতাসে সেটা ফেঁপে উঠল 
আর সেই মুহূর্তে তারা শুনতে পেল ক্রমবর্ধমান চিৎকার আর 
গোলমালের আওয়াজ জঙ্গলময় বিগুলতাঁর মধ্য থেকে ভেসে 
আসছে। 

'নৌসেনাপতিভাই, কষাইরা আসছে, হেসে বলল সেই বিরাটাকার 
পুরুব, 'তবে বলিদানের পক্ষে অনেক বিলম্বে এসেছে । 

তার নিজের কর্মচারীদের আদেশ দেওয়ার বেশী আন্কা কোন কথা 


৯৬ 


আযডমিরাল বলছিল না। সকলের ওপরের পাল আর সেই সঙ্গে 
মাস্ভুলের শীর্ষের পালও বিছিয়ে দেওয়া হল-_জাহাজ পিছলে 
বেরিয়ে এলো খাড়ির ভিতর থেকে । নগ্ন ডেকে সেই বিরাটকায় পুরুষ 
আর তার সঙ্গী ছুজন নিজেদের সাধ্যমত আরামে বসে ছিল। 
সম্ভবত তাদের মনে এই বিপদ সংকুল তীর থেকে কত শীত্র এবং 
কীভাবে পালানে। যায় সেই চিস্তাই ছিল প্রধান। এখন সেই বিপদ 
দূরে সরে যাওয়ায় মুক্তির পরবর্তী ধাপগুলি ভেবে দেখার অবসর 
মিলেছিল । যখন তারা দেখল জাহাজ ঘুরেছে আর তীরের সমাস্তরাল 
চলেছে তখন তাদের উৎকণ্ঠা কমে গেল, আযাডমিরাল যে পথে 
জাহাজটি পরিচালন। করছে তাতে তারা সন্তষ্ঠ হল। 

বৃহদাকার ব্যক্তি আরাম করে বসলেন-তার উদ্দীপ্ত চোখ নৌবহরের 
অধিনায়ককে লক্ষ করার কাজে নিযুক্ত হল। তিনি ওজন করে 
দেখছিলেন এই গম্ভীর আজব ছোকরাকে, যার ছুর্ভেদ্য ভাবলেশহীনতা 
তাকে ভাবিয়ে তুলছিল। তিনি নিজে একজন পলাতক, প্রাণ নেবার 
জন্য জল্লাদ ঘুরে বেড়াচ্ছে, পরাজয় আর বিফলতার জ্বালায় মনপ্রাণ 
ছটফট করছে তথাপি তার চরিত্রের এটাই বৈশিষ্ট্য যে নিজের মনঃ 
সংযোগ ইতিমধ্যেই সামনের নতুন বস্তুটির অধ্যয়নে বাপুত করে 
ফেলেছেন। তারই পক্ষে মানানসই এই বাতুলের মতো মতলবটি 
স্থির করা হয়েছিল এবং সকল ঝু"কি নিয়ে কার্ধকরী কর! হয়েছিল, 
বেপরোয়া ভাবে সেই টেলিগ্রাম পাঠনো হয়েছিল এক উন্মাদ 
দেশপ্রেনীকে যে উপকূলে ভেসে বেড়ায় জবড়জং পোশাক আর 
হাস্কর পদবী নিয়ে । কিন্তু তার সঙ্গীরা ভাবনায় চিন্তায় দিশাহারা 
হয়েছিল। পলায়ন অসম্ভব মনে হয়েছিল। এখন তিনি খুশী, কেনন। 
যে প্ল্যান তার! বলেছিল পাগলামি আর সর্বনাশা, সেটা সফল হয়েছে। 
ক্রান্তীয় দেশের হৃম্ব গোধূলির ত্বরিত উত্তরণ হল মুক্তা ঝলোমল 
জ্যোতস্াময়ী রাত্রিতে ৷ এখন তাদের দক্ষিণে ঘনায়মান অন্ধকারের 
ভিতর থেকে কোরালিওর উপকূলের বাতিগুলি একে একে দেখা যেতে 
লাগল । নৌসেনাপতি হালের কছে দাঁড়িয়েছিল, নিবাক। ক্যারিবেরা! 
কালে। চিতাবাঘের মতো পালগুলি নিয়ন্ত্রণ করছে অধিনায়কের ছোট 
ছোট নির্দেশ অনুসারে । তিনজন যাত্রী নিবিষ্টভাবে তাদের সামনের 
সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিল। 


৭ ৯৭ 


যখন শহর থেকে এক মাইলের মধ্যে একটি স্টামারের আকৃতি দেখা 
গেল,যার বাতিগুলি জলের মধ্যে গভীরে নেমে গেছে তখন তাদের 
তিনটি মাথা একত্র হয়ে সরবে আলোচনা শুরু হল। জাহাজটি ছুটছিল 
এমনভাবে যেন তীর ও স্টামারের মাঝামাঝি পথ কেটে সে অতিক্রান্ত 
হবে। 

বুহদাকার সহসা সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হালের ধারে 
কাকাতুয়ার কাছে এলেন। 

তিনি বললেন, পপ্রিয় আডমিরাল, সরকার অত্যন্ত অকর্ণণ্য । এই 
সরকারের জন্য আমি লজ্জা অনুভব করছি যে তোমার এই তন্নিষ্ঠ 
সেবার খবর তারা রাখে না । একট। অত্যন্ত ভূল কর! হয়েছে শীঘ্রই 
তোমাকে তোমার যোগা জাহাজ, নাবিকদল আর পোশাক দেওয়া 
হবে? কিন্ত এখনই অত্যন্ত দরকারী কাজ রয়েছে । ওই স্টামারটি 
দাড়িয়ে আছে দেখছ ওর নাম সালভাদর। আমি আর আমার বন্ধুর! 
চাই ওখানে আমাদের নিয়ে যাওয়া হোক। সরকারের কাজে ওখানে 
আমাদের পাঠানো হয়েছে । তোমার জাহাজের নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে 
করো যেন আমরা ওখানে পৌছাই | 

কোন উত্তর না দিয়ে আডমিরাল একটি হৃম্ব আদেশ দিল আর হালটি 
ঘুরিয়ে দিল শহরের দ্রিকে। জাহাজটি ঘুরে গেল আর সোজা তীরের 
দিকে বেগে চলতে লাগল । 

কিঞ্চিৎ অসহিষ্ণণভাবে বৃহদাকার বললেন, “অনুগ্রহ করে এটুকু বুঝতে 
দাও যে আমার কথাগুলির আওয়াজ তোমার কানে পৌছেচে। তার 
মনে হল যেমন বুদ্ধি-শুদ্ধি তেমনি হয়ত ওর জ্ঞানেক্দ্রিয়গুলিরও ঘাটতি 
আছে। 

নৌসেনাপতি ব্যাঙের মতো কর্কশ হাসির সঙ্গে বললে, এরা 
তোমাদের দাড় করাবে দেয়ালের দিকে মুখ করে আর তারপর গুলি 
করে শেষ করবে । ওইভাবে দেশপ্রোহীদের গুলি করা হয়। যখনি 
তুমি আমার জাহাজে পা দিয়েছে তখনি আমি তোমাকে চিনেছি। 
তোমার ছৰি আমি দেখেছি একটা বই-এ। তুমি সাবাস প্লাসিডো, 
দেশের প্রতি বিশ্বাসহস্তা। তোমার মুখ থাকবে দেওয়ালের দিকে 
ফেরানো । ওইভাবে তুমি মরবে । আমি নৌসেনাপতি, আমি তোমাকে 
নিয়ে যাব ওদের কাছে। হা, মুখ থাকবে দেয়ালের দিকে ফেরানো |, 


৮ 


ডন সাবাস মুখ ফেরালেন, হাত নেড়ে ঘণ্টার মতো! আওয়াজে হেসে 
তার সঙ্গীদের বললেন, 'যোদ্ধগণ, তোমাদের আমি সেই বৈঠকের 
ইতিহাস বলেছি, যখন আমর সেই কৌতুককর সনদটি তৈরী করি। 
সতাই আমাদের ঠাট্টা আজ আমাদের বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হচ্ছে। 
ফ্াঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য কেমন আমরাই স্থত্টি করেছি দেখ ॥ 

ডন সাবাল তীরের দিকে তাকালেন । কোঁরালিওর বাতিগুলি ক্রমশ 
কাছে আসছে। তীরের বালুবেলা দেখা যাচ্ছে। বোদেগ! 
নাঁশিওনালের মাল গুদামের ঘরগুলি, সৈন্যদের দীর্ঘ নীটু ব্যারাক আর 
তার পিছনে ট।দের আলোয় প্রকাশ পাচ্ছে একটি দীর্ঘ উঁচু দেয়াল; 
কাচ! ইটের তৈরী । তিনি দেখেছেন সেই দেয়ালের দিকে মুখ ফেরানো 
লোককে গুলি করে হত্যা করা। 

হালের কাছে সেই অমিত ব্যক্তিত্বের দিকে চেয়ে আবার বললেন, 
“সত্য বটে আমি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছি। কিন্তু নিশ্চিত জানবে আমি 
সেজন্ত বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই ৷ রাজদরবার, রণভূমি সাবাস প্লাসিডোর 
জন্য সবত্র উন্মুক্ত । ছিঃ, এই ঈঁছুরের গর্তের জড়ে। করা মাটির টিপির 
মতো প্রজাতন্ত্র, শুয়োরের মাথার মতো! দেশ, আমার মতো ব্যক্তিত্বের 
কাছে এর দাম কি? আমি সর্বত্র আদূত হই, রোমে, লগ্নে, প্যারিসে 
ভিয়েনাতে সবত্র শুনবে, স্বাগতম ডন সাবাস। এবার শোনো, তোনতো 
আমার, বেবুনবাবু, আযডমিরাল, যে নাম তোমার পছন্দ, জাহাজ 
ফেরাও ! সালভাদরে আমাদেব তুলে দাও আর এই তোমার 
পারিশ্রনেক, পাঁচশ পেসো, এসতাদোস উনিদোসের টাকা, তোমার 
ধাপ্পাবাজ সরকার বিশ বছরেও এত টাকা তোমাকে দেবে না?” ডন 
সাবাস একটি মোট'সোট! থলি আডমিরালের হাতে চেপে ধরলেন, 
নৌ-সেনাপতি তার কথায় বা নড়াচড়ার প্রতি ভ্রক্ষেপও করল না। 
হালের সঙ্গে তার দেহ সন্নধ্য। জাহাজ সে তীরের দিকে স্থির 
গতিতে নিয়ে চলেছে। তাঁর বৃদ্ধিহীন মুখ যেন জ্ঞানের 
আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল । যেন কোন চিন্তা তাকে বেশ আনন্দ 
দিচ্ছে আর সেই সঙ্গে তোতাপাখির হাসির মতে! তার মুখে শব্দ 
জোগাচ্ছে। 

“সেইজন্যই ওরা করে", সে বললে, “যাতে তুমি বন্দুকটা দেখতে না 
পাও। ওর! গুলি করবে বুম আর তুমি ধুপ করে পড়বে । হ্যা, মুখ 


৪১৪১ 


দেয়ালের দিকে ফেরানো । নৌসেনাপতি হঠাৎ একটি আদেশ দেয় 
তার কমীদের। ছিপছিপে নির্বাক ক্যারিবেরা তাদের হাতে ধরা 
পালের দড়াদড়িগুলি বেঁধে রেখে জাহাজের খোলের ঢাকন। তুলে 
ভিতরে নেমে গেল। শেষের জন নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডন সাবাস 
বাদামী রঙের চিতাবাঘের মতো মস্ত লাফ দিয়ে সামনে এলেন । 
জাহাজের খোলের ঢাকনা বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলেন সেখানে 
সহান্তে। 

ভাই আডমিরাঁল, রাইফেল না আনাই বোধহয় ভালো । আমার 
খামখেয়ালিপনা একদ] আমাকে প্রবুদ্ধ করেছিল ক্যারিব ভাষায় 
একটি অভিধান"রচন! করতে । তোমার আদেশের অর্থ আসি বুঝি। 
এখন হয়ত তুমি__+ 

কথা থামাতে হল, কেননা তিনি একটি ভৌতা “্নুইশ' শব্ধ শুনলেন 
টিনের ওপর ইম্পাতের ঘর্ষণের । পেড়ো লাফিও-এর তরবারি 
কোবমুক্ত করে আডমিরাল লাফিয়ে তার দিকে আসছিল। তরবারি 
নামল আর অত্যন্ত আশ্র্ষজনক তৎপরতার সঙ্গে সেই বুহদাকার 
ব্যক্তি নিজেকে রক্ষা করলেন, কাধে সামান্ত আচড় লাগল, অস্ত্রটি ছু'য়ে 
গেছে সেখানে । ওর লাফানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পিস্তলে হাত 
দিয়েছিলেন, পরমূহ্র্তেই তিনি আযাডমিরালকে গুলি করে ভূপাতিত 
করলেন। তার দিকে ঝুঁকে দেখলেন, তারপরে সংক্ষেপে বললেন, 
“সোজা হৃৎপিণ্ডে লেগেছে, বন্ধুগণ, নৌবহর বাতিল হল” 

কর্ণেল র্যাফেল লাফিয়ে গিয়ে হাল ধরল মার অন্ত অফিসারটি প্রধান 
পালটির দড়িগুলি আলগ! করে দিল। মাম্তুল ঘুরে গেল, আর এল 
নাশিওনাল দিক পরিবর্তন করতে লাগল, ধীরে ধীরে যেতে লীগল 
সালভাদরের দিকে । 

'ফ্ল্যাগটা নামিয়ে ফেলুন, সেনিওর” চেচিয়ে ৰললে কর্ণেল র্যাফেল, 
“টামারে আমাদের বন্ধুরা ভাববে আমরা কেন ওই ফ্ল্যাগের অধীনে 
তরী ভাসিয়েছি।, 

'ঠিক বলেছ? বললেন ডন সাবাস। মাস্তলের দিকে এগিয়ে এসে ফ্র্যাগটা 
নামিয়ে ডেকের ওপর রাখলেন, যেখানে ওই ফ্ল্যাগের অনুগত সেবক 
শুয়েছিল। এইভাবে শেষ হল যুদ্ধ মন্ত্রীর ভোজ শেষের কৌতুক 
আর সেই হাত দিয়েই যে হাতে হয়েছিল শুরু। 


১০৩ 


আচমকা ডন সাবাস উল্লাসে চিৎকার করে উঠলেন, একদিকে ঢালু 
ডেক ববাবর দৌড়ে গেলেন কর্ণেল র্যাফেলের কাছে। হাতে তার 
নিরবাপিত নৌবহরের পতাকা । “মিরে ! মিরে ! সেনিওর আ। দিওস | 
আমি যেন এখনই শুনতে পাচ্ছি সেই ভালুক সদৃশ ওষ্িখের 
চিৎকার-_ছ্য হাত মেইন হেরতস্‌ গে ব্রোচেন। মিরে । ওই লোকটি 
একটি অক্কিডের জন্য সিংহল গিয়েছে, প্যাটাগোনিয়াতে গিয়েছে 
একটি শিরস্ত্রানের জন্য, চপ্পলের জন্য বারানসীতে, বশীর ফলার জন্ত 
মোজামবিকস, তার সংগ্রহশালা! সম্পূর্ণ করতে । আমার বন্ধু হের 
গ্রথনিতসএর কথা আমাকে বলতে শুনেছে । আর আমার প্রির র্াফেল 
তুমি এটাও জানে যে আমিও কিউরিও সংগ্রহ করি। গত বছর পযন্ত 
বিশ্বের বিভিন্ন নৌবহরের নৌধুদ্ধের ফ্র্যাগের সংগ্রহ সবার সের। ছিল 
আমারই । আর তারপরে হের গ্র.নিতস ছুটি দুশ্রাপ্য নমুনা সংগ্রহ 
করল। একটি বারবার অঞ্চলের এক রাজ্যের, অপরটি ম্যাকারুরুর, 
পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের এক প্রজাতির । ওইগুলি আমার নেই 
কিন্ত যোগাড় করা অসম্ভব হবে না। কিন্ত এই ফ্র্যাগ? সেনিওর 
তুমি কি জানো এট কি? ঈশ্বরের শপথ তুমি কি জানো? দেখ এই 
লাল ক্রস চি, নীল আর সাদ! জমির ওপর । তুমি কখনো এটা দেখ 
নি, নয়কি? সেগুয়ারমেনতে, না। এট] হচ্ছে তোমার দেশের 
নৌবহরের ফ্ল্যাগ, এই পচা কাঠের টবটি যার ওপর আমর৷ দীড়িয়ে 
আছি এটি ছিল তার নৌবহর-_ধরাশায়ী ওই মৃত কাকাতুয়াটি ছিল 
তার সর্বাধিনায়ক, তলোয়ারের এই একটি আচড় আর পিস্তলের একটি 
গুলি_-একটি জলযুদ্ধ। অবাস্তব আহাম্মকির অংশ, মানছি, কিন্ত 
নির্ভেজাল খাঁটি। এইরকম ফ্র্যাগ আর হয়নি, আর হবেও না; 
পৃথিবীতে এটি একমাত্র, এর জোড়া নেই । ভেবে দেখ, একজন ফ্ল্যাগ 
সংগ্রাহকের কাছে এর কি অর্থ, ভাবতে পারো কর্ণেল আমার, হের 
গ্রনিতস কতগুলি সোনার ক্রাউন এর জন্য খরচ করতে প্রস্তত ; 
অন্তত দশহাজার। কিন্তু লক্ষ মুদ্রায়ও এটা পাওয়া যাবে না। অপূর্ব 
ফ্ল্যাগ, একমাত্র ফ্ল্যাগ, স্বর্গ থেকে খসে পড়া স্থষ্টিছাড়া ফ্ল্যাগ ৷ ওহে। 
সাগরপারের খু'তখুতে বুড়ো । সবুর করো, ডন সাবাসকে আসতে 
দাও কনিগিন স্ট্াসে। তোমাকে নতজানু হয়ে একবারটি এই ফ্ল্যাগে 
আঙ্ল ছৌয়াতে দেওয়া! হবে। ওহে ! চশম! পরা বিশ্ব তোলপাড় করা 


৯৬১৯ 


বুড়ো।” বিস্বৃত হল বিফল বিপ্লব, ভূলে গেলেন বিপদ, ক্ষতি আর পরা- 
জয়ের গ্লানি । সংগ্রাহকের অপরিসীম মোহে আচ্ছন্ন হয়ে তিনি হেঁটে 
বেড়াতে লাগলেন ছোট্ট ডেকে, এক হাতে সেই অনিন্দ্যস্ুন্র ফ্ল্যাগ 
বুকে আকড়ে ধরে। পুরিকে লক্ষ করে বিজয়োল্লাসে হাতের আঙ্ল 
মটকালেন। তার অমূল্য প্রাইজের প্রশস্তি চিৎকার করে ভেরীর নাদে 
গাইতে লাগলেন যেন সমুদ্রের ওপারে তার বিবর্ণ আবাসস্থলে বুদ্ধ 
গ্রনিতসের কানে পৌছে দিতে চাইছেন। সালভাদরের লোকেরা 
ওদের আবাহন করার জন্ত আমন্ত্রণ করছিল । পালতোল। জাহাজটি 
স্টামারের পাশাপাশি এসে পডল। ফল বোঝাই করার নিচু ডেকে 
প্রায় ঠোকাঠকি হয় আর কি। নাবিকেরা অনেক কষ্টে তাঁকে 
সেখানেই থামাতে সক্ষম হল । 

ক্যাপটেন ম্যাকলাউড একপাশে ঝুঁকে বলল, এক খবর, সেনিওর, 
খেল খতম শুনছি 1? 

খ্লে খতম ? ডন সাবাস অল্পক্ষণের জন্ত হতচকিত ! “ও হ্যা! বিপ্লবের 
কথা বলছেন ? কাধ ঝাঁকিয়ে ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেললেন । 

ক্যাপটেন শুনলেন, পলায়ন আর বন্দী নাবিকদের কথা । 

“্যারিব ? তিনি বললেন, “ওদের, ভয় করার কিছু নেই।” পালতোল৷ 
জাহাঁজটিতে তিনি এলেন। জাহাজের খোলের ঢাকনিটি লাথি মেরে 
খুলে দিলেন। কৃষ্ণবর্ণের ছেলেগুলি ঘর্নাপ্রত গায়ে বেরিয়ে এলো, মুখে 
হাসি। 

“হে! কালো ছোকরার দল ! ক্যাপটেন বললেন তার নিজেরই একটি 
চলিত ভাষায়, “ইউ সাবি, ক্ণাচি কোট এ্যাণ্ড ভামোস ব্যাক সেম প্লেস 
কুইক।” ওরা দেখল, ক্যাপটেন দেখাচ্ছেন ওদের দিকে, পালতোলা 
জাহাজটির দিকে আর কোরালিওর দিকে | “ইয়াস, ইয়ীস” ওরা বলল, 
ওদের দম্ভ আরে। বিকশিত হল, অনেকগুলি মাথা নশুল । চারজনে, 
ডন সাবাস, দুজন অফিসার আর ক্যাপটেন জাহাজটি ছেড়ে যাবার 
জন্য তৈরী হল। ডন সাবাস একটু পিছনে ছিলেন, তাঁকিয়েছিলেন 
গত্তান্্র আডমিরালের আড় দেহটার দিকে, হাত-পা! ছড়িয়ে পড়ে 
আছে তার দীনহীন বেশবাস সমেত। মৃছুস্বরে তিনি বললেন 
পত্রেসিটো লোকো। 

তিনি ছিলেন একজন ভাম্বর বিশ্ব নাগরিক; উচ্চপদের সঙ্গে ভার 


১৩২ 


মেলামেশা । তৎসত্বেও এই দেশের লোক তারই স্বজাতি, একই রক্ত 
তারই ধমনীতে, একই স্বভাবও। কোরালিওর সরল চাষীর! যেমন 
বলেছিল তেমনি বললেন ডন সাবাস, মুখে তার হাসি নেই, সেদিকে 
তাঁকিয়ে বললেন, “হতভাগ্য পাগল বেচার। |” 

ঝুঁকে পড়ে তিনি তার অবশ কীঁধ ছুটি ওঠাঁলেন, সেই অমূলা ফ্র্যাগের 
কিছুটা গুজে দিলেন কাধের নিচে, বিছিয়ে দিলেন বুকের ওপর, 
নিজের কোট থেকে খুলে নিলেন হীরের তারকা খচিত অদ্ডার অফ 
সে্টকালস আর সেখানে স্টো৷ আটকে দিলেন । 

অন্যদের পিছনে তিনি গেলেন, তাদের সঙ্গে সালভাদরের ডেকে গিয়ে 
দাড়ালেন । নাবিকেরা এল নাশিওনালকে ঠেল! দিয়ে সরিয়ে দিল। 
কল্কল্‌ করে কথ। বলতে বলতে ক্যারবেরা পালের দড়াদ়ি টানতে 
লাঁগল। জাহাজটি চলল তীরের দিকে । আর হের গ্রনিএসের 
নৌধুদ্ধের ফ্ল্যাগের সংগ্রহ এখনও বজায় রইল সবার সের! । 


দশ 


শাসক আর তোভাপত্ত 





একদিন রাত্রে যখন বাতাস বইছিল না আর মনে হচ্ছিল কোরালিও 
এভারনসের * গারদের খুব কাছাকাছি পৌছেচে, পাঁচজন ব্যক্তি কেওগ 
আর র্ল্যান্সির ফোটো গ্রাফের দোকানের দরোজার পাশে জড়ো 
হয়েছিল। এইভাবে বিশ্বের সকল রৌদ্রতপ্ত বিদেশ বিভূ"ই-এ 
ককেশায়রা জড়েো। হয়ে থাকে দিনের কাজকর্মের শেষে, নিজেদের 
জাতিকূল গৌরব অক্ষয় রাখার জন্ত, বিদেশী বন্তর নিন্দায় মুখর হয়ে। 

জনি আাটউড ক্যারিবদের ঘরোয়া পোশাকে ঘাসের ওপর শুয়েছিল, 
মিনমিনে গলায় সে বলছিল ডেলসবার্গের কাকুডক্ষেতের পাশের 
পাম্পের ঠাণ্ডা জলের কথা। ডাঃ গ্রেগ তার শুভ্র দাড়ির গৌরবে আর 


** লরকের 


তার ডাক্তারীর গল্পগুলি ন৷ বলার অঙ্গীকারের ধুষ হিসেবে দোলনায় 
আসীন, দরোজায় খুঁটি আর ক্যালাবাশ গাছের ডালে বাঁধা ছিল 
দোলন1। কেওগ ঘাসের ওপর একটা টেবিল টেনে এনেছে, তৈরী 
হয়ে যাওয়া ফোটোগ্রাফ বািশ করার যন্্ব সমেত। বাণিশারের 
রোলারের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল কোরালিওর 
বাসিন্দাদের মুখাবরব। দলের মধ্যে একমাত্র সে-ই কাজ করছিল। 
বানচার্ড, ফরাসী মাইনিং ইঞ্জিনিয়র, শাতল লিনেনের পোশাক পরনে, 
চশমার ভিতর দিয়ে দেখছিল তার সিগারেটের ধোয়া, গরমের ব্যাপারে 
উদ্াপীন। ক্ল্যানসি সিঁড়িতে বসেছিল, তার ছোট পাইপে ধূমপান 
করছিল । মেজাজ তার গল্প বলিযেব, গরমে আর ভ্যাপসানিতে 
অন্থদের অবস্থা অকর্রণ্য শ্রোতাদের পর্যায়ের । 

ক্লযানসি একজন আমেরিকান, চরিত্রে আইরিশ আর প্রবণতায় বিশ্ব 
নাগরিক। বহু পেশ। তাকে নিজের বলে দাবি করেছিল কিন্তু 
কোনোটাই বেশদিনের জন্তে নয়। ভবঘুরের রক্ত তার শিরায় শিরায় 
ছিল প্রবহমান । টিনের পটচিত্র শিল্প অনেকগুলি পেশার একটি 
যাদের আহ্বানে তাকে নান। রাস্তায় ভ্রাম)মান করে রেখেছে । কখনো! 
কখনো তাকে প্রবুদ্ধ করা যেত তার বিচিত্র এবং চাঞ্চল্যকর ভ্রমণপঞ্জীর 
অংশবিশেষের বর্ণনা করতে । আজ রাত্রিতে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সে 
কিছু বলবে। 

নিজে থেকেই সে বলল, “চমৎকার আবহাওয়া, গেরিলা যুদ্ধের পক্ষে । 
আমার মনে পড়ছে সেই সময়ের কথা যখন আমি একটি জাতির মুক্তি 
যুদ্ধে লড়েছিলাম, অত্যাচারীর বিষাক্ত বাতাসময় বদ্ধ সুষ্টি থেকে। 
কাজট1 ছিল অত্যন্ত কঠিন। পিঠে ব্যথা আর হাতে কড়া পড়ে 
গিয়েছিল ।” 

ঘাসের থেকে ফিসফিস করে আযাটউড বলল, “আমি জানতাম না তে। 
তুমি অত্যাচারিত জনগণের পক্ষে কোথাও কখনো তরবারি ধরেছ।' 
“আমি ধরেছিলাম+ ক্ল্যানসি বলল, “আর সেই তরবারি ওরা পালটে 
করে দিল লাঙওলের ফাল ।' 

“কোন সেই ভাগ্যবান দেশ যেটা তোমার সাহায্য পেয়ে ধন্য হয়েছিল?” 
ব্রানচার্ড জিগগেস করে উপেক্ষার মেজাজে । 

“কামচাটকা কোথায় ? ক্্যানসি হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করল | 


১৩৪ 


“কেন, সাইবেরিয়ার কাছে কোথাও, উত্তরের হিমমগণ্ডলে” কোন একজন 
আবছ! উত্তর দিল। 

“ও, তার মানে সেই ঠাণ্ডা জায়গাটা”, ক্ল্যানসি বলল খুশীতে মাথা 
নেড়ে। ছুটে! নাম আমি বরাবর গোলমাল করে ফেলি। তাহলে 
সেট। ছিল গুয়াতেমালা, গরম জায়গাটা যেখানে আমি লড়াই করে- 
ছিলাম । ম্যাপে ওই দেশ তোমরা দেখতে পাবে। দেশটা সেই 
জেলায় যাকে বলে ক্রান্তীয় অঞ্চল। ঈশ্বরের দূরদৃষ্টির ফলে দেশটি 
সমুদ্রের ধারে, যার ফলে ভূগোলের লোকেরা সে দেশের শহরগুলির 
নাম লিখেছে জলের মধ্যে । নামগুলি -ছাট টাইপে এক ইঞ্চি করে 
লম্বা, স্প্যানিশ ভাষায় লেখা । হ্যা) এই সেই দেশ যে দেশের 
অত্যাচারী সরকারের বিপক্ষে এক] হাতে একটি একনলা! গাইতি নিয়ে 
তাও গুলি না ভরা, আমি মুক্ত করার জন্ত পাড়ি দিয়েছিলাম । 
তোমরা বুঝতে পারছ ন। তো ? যা বললাম সেট? ব্যাখ্যা করার আর 
মাফ চাইবার অপেক্ষা রাখে। 


জুন মাসের পয়ল। নাগাত নিউ অঙ্গিয়নসের এক সকালবেলা । জেটিতে 
আ1ম দ্রাড়িয়ে দাড়িয়ে নদীর ওপর জাহাজ দেখছিলাম । আমার সিকি 
সামনে একটা ছোট স্টামার বাঁধা ছিল, ছেড়ে যাবার জন্য প্রায় 
তৈরী। চোড। দিয়ে ধোয়া বেরুচ্ছে, একদল ষণ্ডা চেহারার লোক 
কতকগুলি বাকস বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল স্টীমারে, জেটিতে বাকসগুলি 
সাজানো ছিল। বাকসগুলি ছিল ছু ফুট বাই ছু ফুট আর ফুট 
চারেক লম্বা আর মনে হচ্ছিল খুব ভারি । 

আম বেড়াতে বেড়াতে বাকসের গাদার দিকে গেলাম । দেখলাম 
নাড়াচাড়ায় একট বাকস ভেঙে গেছে। কৌতুহলের বশে আলগ৷ 
ডালাটি তুলে ভিতরে দেখলাম। বাকসটি ভতি ছিল উইনচেস্টার 
রাইফেলে। বেশ, বেশ, আমি বললাম নিজের মনে ; তার মানে কেউ 
বুঝি নিবিরোধিতার আইনটির অন্য অর্থ করছে। কেউ বুঝি যুদ্ধান্ত্ 
দিয়ে সাহায্য করছে। কোন্‌ সেই দেশ যেখানে গুলতিগুলি যাচ্ছে ? 
আমি কারুর কাশির আওয়াজ পেলাম, ঘুরে দেখলাম । একজন 
গোলাকৃতি মোটা ব্যক্তি দাড়িয়েছিল, বাদামী মুখ সাদা পোশাক, 
উঁচুদরের লোক, হাতে চার রতি হীরের আংটি, চোখে জিজ্ঞাসা ও 


১০৫ 


সম্রম। আমি ভেবে ঠিক করলাম লোকটি বিদেশী, রাশিয়ান ব। 
জাপানী বা দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসী । 

“হিসট্‌ বলল সেই গোল ব্যক্তিটি, যেন খুব সংগোপনে । “সেনিওর য৷ 
আবিষ্কার করে ফেলেছেন জাহাজের লোকেরা যেন না জানতে পারে। 
সেনিওর ভদ্রব্যক্তি, আকম্মিক যা ঘটেছে যেন দয়া করে প্রকাশ ন৷ 
করেন।” 

“ম*সিয়ে, আমি বললাম, কেননা আমি তাকে এক ধরণের ফ্রেন৮- 
ম্যান মনে করেছিলাম, “আপনার গোপন খবর জেমস ক্ল্যানসির কাছে 
নিরাপদ গোপনতায় থাকবে । এ ছাড়া, আমি আরে জানাচ্ছি, 
ভিভ লা! লিবা্টি__স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক । দীর্ঘজীবাহোক শবাটি 
জোরালে। গলায় বলছি। যদি কোনদিন কোন ক্ল্যানসিকে দেখেন 
চলতি সরকারের উচ্ছেদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধতা করছে তাহলে পরবতী 
ডাকে সেই খবরটি আমাকে জানিয়ে দেবেন) “সেনিওর ভালো 
লোক+ সেই কালে। মোটালোকটি বলল, তার কালে গৌফের নিচে 
হাঁসি দেখিয়ে, “আমার জাহাজে দয়! করে যদি আসেন এক গ্রাস 
আঁডুরের মদ পান করার জন্য ? 

একজন ক্ল্যানসি হবার স্বাদে ছু মিনিটের মধ্যে আমি আর সেই 
বিদেশী ব্যক্তিটি স্টামারের ক্যাঁবিনে একটি টেবিলে মুখোমুখী বসে- 
ছিলাম, মাঝখানে একট বোতল রেখে । ভারী বাকসগুলি টেনে এনে 
জাহাজের খোলে রাখার আওয়াজ কানে আসছিল । আন্দাজে 
বুঝলাম প্রায় হাজার ছুই উইনচেস্টার ভতি করা হল। আমি আর 
মোটা লোকটি বোতলট। শেষ করলাম, মে স্টুয়াডকে আর একটা 
বোতল আনতে দিল। একজন ক্লানসির সঙ্গে একটি বোতলের 
ভিতরের দ্রব্য একত্রে রাখা আর বিদ্রোহ ঘোষণায় উস্কানি দেওয়। 
একই কথা । উষ্ণমগ্ডলের দেশগুলিতে বিপ্লব হামেশ! লেগে থাকে, 
সে সম্বন্ধে অনেক কথ। শুনেছিলাম তার একটাতে অংশ গ্রহণের ইচ্ছে 
হতে লাগল। “আপনার দেশে আপনি চাঞ্চল্যের স্থগ্টি করতে যাচ্ছেন 
ম'সিয়ে, বললাম আমি একটু চোখ টিপে, তাকে বুঝতে দিলাম যে 
আমি বুঝতে পেরেছি। হ্যা, হ্যা” বেঁটে লোকটি বলল, টেবিলে ঘুষি 
মেরে। “বিরাট পরিবর্তন আসছে । বছুদিন ধরে জনগণকে কেবল 
আশ্বাস দেওয়। হয়েছে আর তাদের গীড়ন করা হয়েছে যা কোনদিনই 


১০৬ 


ঘটবে না সেই সব স্তোকবাক্য দ্রিয়ে। বিরাট কাজ করতে হবে। 
হ্যা, শীঘ্রই আমাদের শক্তি রাজধানী গিয়ে পৌছবে, ক্যারামবস্‌ 
ক্যারামবস্ই হচ্ছে সেই শব্দ আমি বললাম, আমার উৎসাহ বাড়ছিল 
মগ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে, «তমনি ভিভা, যা আমি আগেও বলেছি। 
অতীতের মতো শামরক-_ আমি বলতে চাইছি কলাপাতা বাঁ অন্ত কিছু 
প্রতীক যা আপনাদের নিপীড়িত দেশের স্বাধীনতার চিহ্ু, চিরকাল 
উড্ডীন থাকুক ।, 

হাজারে ধন্যবাদ” গোলগাল লোকটি বলল, “আপনার প্রীতিপূর্ণ কথা- 
বাতার জন্ত। আমাদের মহান আদর্শ সিদ্ধির জন্য প্রধানত চাই 
সবল লোক যার্দের অনেক কাজ করতে হবে, দেশকে তুলতে হবে 
উন্নতির শিখরে । হায় যদি এক হাজার সবল, সংলোক পেতাম, 
জেনারেল দে ভেগার সাহাবোর জন্য যাতে তিনি দেশকে সাফল্য ও 
মহিমায় ভূষিত করতে পারেন। সত্যিই কঠিন এই কাজ । এ কাজে 
সাহায্যের জন্ত স্ংলোক পাওয়া ॥ 

“ম সিয়ে” আমি বলি, টেবিল থেকে ঝুঁকে তার হাত ধরে, আমি জানি 
না আপনার দেশ কোথায়। কিন্তু আমার হৃদয় থেকে রক্ত ঝরছে । 
ক্ল্যানসির হৃদয় কখনো বধির নয় নিপীড়িত জনগণের দৃশ্ঠ দেখতে 
পেলে। এই বংশ জন্মন্ত্রেই বিপ্রবী আর ব্যবসাগত দিক দিয়ে 
বিদেশী। জেমস্‌ ক্ল্যানসির বাহুবল আর বুকের রক্ত যদি 
আপনারা দেশকে অত্যাচারীর জোয়াল থেকে মুক্ত করার কাজে 
লাগাতে পারেন তাহলে তারা আপনার অধীন । 

জেনারেল দে ভেগ। তার ছবিপাকে আমার সহানুভূতি পেয়ে আনন্দে 
অধীর হলেন। টেবিলের ওপর দিয়েই আমাকে আলিঙ্গন করার 
চেষ্টা করলেন, কিন্তু মোটা দেহ, মাঝখানে টেবিল, মদের বোতল বাধা 
দিল। এইভাবে বিপ্লবীদলে সানন্দে আমার ভতি হওয়। হয়ে গেল। 
এরপর জেনারেল আমাকে বললেন তার দেশের নাম গুয়াতেমালা, 
বিশ্বের সেরা দেশ, যার তট ছুয়ে যাচ্ছে মহাসাগর । কথা বলতে 
বলতে তার চোখে জল আমে আমার দিকে তাকানোর সময় । মাঝে 
মাঝে এই মন্তব্য করেন, আঃ শক্তিশালী সাহসী লোক চাই । আমার 
দেশ এখন চায় শক্তিশালী লোক । 

জেনারেল দে ভেগাঃ এই নামেই তিনি নিজেকে ঘোষণ। করছিলেন, 


১০৭ 


একটা দলিল বের করে আমাকে সই করতে বললেন, আমি সই 
করলাম, ক্ল্যানসির ওয়াই অক্ষরটির লেজটি খুব আঁড়ম্বরে লম্বা করে 
পাকিয়ে লিখলাম । 

ব্যবসায়ীর গলায় জেনারেল বললেন, আপনার স্টামার ভাড়। পরে 
আপনার মাইনে থেকে কেটে নেওয়। হবে । 

“তা হবে না» তেজের সঙ্গে আমি বললাম । “আমি আমার ভাড় 
নিজেই দেব। আমার ভিতরের পকেটে ছিল একশ আশি ডলার 
আর সাধারণ ভাড়াটে গেরিলা আমি হতে চাই নি, যে অন্ন বস্ত্রের জন 
আমাকে লড়াই করতে হবে । 

স্টীমার ছাড়বে ঘন্টা ছুই-এর মধ্যে । আমি গেলাম দরকারী ছু-একট 
জিনিস কিনতে । ফিরে এসে জেনারেলকে দেখালাম আমার পোশাক 
চমতকার চিনচিলার ওভার কোট, হিমমগ্ডলের ওভার সু, ফার-এর 
টুপি, কান-টাকাঁ, চমতকার পশমের লাইনিং দেওয়া দস্তানা, পশমের 
মাফলার। 

“ক্যারামবস্ঠ) জেনারেল বললে, 'এই পোশাকে উষ্ণমণ্ডলে যাবেন ? 
আর তারপর &েই বেঁটে শয়তান হাসতে লাগল, ক্যাপটেনকে ডেকে 
আনল, ক্যাপটেন ডেকে আনল ভাগ্তারীকে, তারা ডেকে আনল; 
চীফইঞ্জিনিয়রকে আর এই পুরো দলট ক্যাবিনের দেয়ালে হেলান 
দিয়ে হানতে লাগল ক্ল্যানসির গুয়াতেমালার জন্য সংগ্রহ করা পোষাক 
দেখে। 

আমি গন্ভতীরভাবে একটু চিন্তা করি, জেনারেলকে তার দেশের নাম 
আর একবার উচ্চারণ করতে বলি। উনি আমাকে বললেন, আর 
আমি বুঝলাম, আমার মনে মনে ছিল সেই অন্ত জায়গাটা, কাঁম- 
চাঁটকা। সেই থেকে এই ছুটি জায়গার নাম, আবহাওয়া আর 
ভৌগোলিক অবস্থান গোলমাল হয়ে যায়। 

আমি ভাড়া! দিলাম-_ফাসট ক্লাস ক্যাবিনের জন্ক চবিবশ ডলার, 
খাওয়। অফিসারদের টেবিলে । নিচের ডেকে জন চল্লিশ সেকেও্ 
ক্লাসের যাত্রী ছিল, নিগ্রো কুলি জাতের। আমি ভাবলাম এতজন 
'কুলি কোথায় যাচ্ছে! 

যাইহোক, তিনদিনের মধ্যে গুয়াতেমালার উপকূলে আমর! এসে 
পড়লাম । দেশট। ছিল নীল, হলদে নয়, ম্যাপে যেমন ভুল করে 


১০৮ 


দেখানো আছে। উপকূলের একটি শহরে আমরা নাঁমল'ম। সংকীর্ণ 
একটি রেললাইনের ওপর দীাড়িয়েছিল কতকগুলি রেলের কামরা । 
বাকসগুলি স্টীমার থেকে নামিয়ে রেলগাড়িতে ভি করা হল। 
কুলির দলও চড়ল, আমি আর জেনারেল দে ভেগ! চড়লাম প্রথম 
কামবায়। 

হ্যা, সেই বিপ্লবের শীর্ষে চললাম আমি আর জেনারেল দে ভেগা, 
উপকূলের শহর ছাড়িয়ে । ট্রেনের গতি ছিল দাঙ্গার জায়গায় পুলিশের 
গতিবেগের সমান । গাড়ি যেতে লাগল যে সব অঞ্চল দিয়ে তাদের 
এমনই প্রাকৃতিক শোভা যা ভূগোলের বইয়ের বাইরে দেখা যায় না। 
সাত ঘণ্টায় মাইল চল্লিশ আমরা গেলাম, তারপর ট্রেন থামল। 
রেলের রাস্তা আর ছিল না । জায়গাটা যেন একটা ক্যাম্প, স্যাত- 
স্তাতে একটা পাহাড়ী ঝরণার ধারে, চারিদিক নির্জন, বিষগ্রতায় ভরা । 
সামনের দিকে বন কাট। আর রাস্তা তৈরী চলছিল, রেললাইন আরো 
এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ৷ এইখানে, আমি নিজের মনে বলি, 
বিপ্রবের রোমানটিক জগৎ। এইখানে ক্র্যানসি, মহান জাতির 
বংশোদ্ভব হওয়ার গুণে আর তার আইরিশ কৌশলে, স্বাধীনতার জন্য 
প্রচণ্ড আঘাত হানবে । 

ওর' বাকসগুলি ট্রেন থেকে নামাচ্ছিল আর ওপরের ঢাকনাগুলি 
ভাঙছিল। প্রথম বাকসর ডাল! খোলাই ছিল। আমি দেখলাম 
জেনারেল দে ভেগ! একটি একটি করে উইনচেস্টার রাইফেল নিয়ে 
একদঙ্গ গম্ভীর আকৃতির সৈম্তদের দিলেন | তারপরে অন্য বাকসগুলি 
খোল! হল আর তোমরা বিশ্বাস করবে না, একটা বন্দুকও যদি তাদের 
মধ্যে পাওয়া! গেল । আর সব বাকস বোঝাই করা ছিল কোদাল 
আর গাঁইতিতে । 

আর তখন, হুঃখের পরে ছৃঃখের কথা, কি আর বলব সেই গরম দেশের 
কথা, গৰ্ধিত ক্ল্যানসি আর সেই হতভাগ। কুলিদের প্রত্যেকের হাতে 
দেওয়া হল একটি গাঁইতি বা কোদাল, আর মার্চ করিয়ে নিয়ে যায়! 
হল সেই ছোট্ট নোংর৷ রেল রাস্তায়। হ্যা এই কারণেই কুলির দলকে 
জাহাজে নিয়ে আসা হয়েছে আর এই কাজের জন্যই মুক্তিযোদ্ধ! 
ক্লযানসি কনট্রাকট, সই করেছে যদিও লে সময় সে তা জানতে না। 
পরে আমি ক্রমশ সব জাঁনতে পারি । আসলে এই রেল রাস্তায় 


১০৯ 


কাজ করার লোক পাওয়া যায় না। সে দেশের বুদ্ধিমান বাসিন্দারা 
কায়িক পরিশ্রমের ব্যাপারে অত্যন্ত অলস। প্রকৃতই, খধিরা জানেন, 
তার কোন প্রয়োজন ছিল না। এক হাত বাড়ালে বিশ্বের সবচেয়ে 
স্বশ্বাু আর দামী ফল ছি'ড়ে আনা যায় আর অন্ত হাতটি ছড়িয়ে 
দিনের পর দিন নিদ্রা দেওয়া যায়, সাতটার বাঁশি বা সিডিতে বাড়ি- 
ভাড়ার তাগাদাদারের পায়ের শব্দ শুনতে হয় না। অতএব নিয়মিত- 
ভাবে স্টীমার নিয়ে আদে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে শ্রমিক। 
সাধারণত, আমদানী কবা কোদাল চালাই-এর দল ছু-তিন মাসের 
মধো পচাজল খেয়ে আর প্রচণ্ড উষ্ণমগ্ডলের বাতাসের ভ্রাণ নিয়ে মরে 
যেত। সেজন্য ওর! এক বছরের কনট্রাকট করে নিত ভাঁড় করে নিয়ে 
আসার সময়ঃ আর সশন্ত্র পাহারা রাখত যাতে হতভাগা কুলির 
পালিয়ে না যায়। এইভাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলে আমাঁকে বুদ্ধ, বানানো! 
হয়েছিল, যেহেতু বংশগতির প্রভাবে খুজে খুজে যেখানে গোলমাল 
সেখানেই আমার যাওয়া চাই । 

ওরা আমাকে একটা গাইতি দিল, হাতে নিয়ে ভাবলাম তৎক্ষণাৎ 
একটা বিদ্রোহ সুরু করি। কিন্তু পাহারাদারেরা উইনচেস্টারগুলি 
নাড়াচাড়া করছিল বেয়াড়াভাবে, আমি ভেবে দেখলাম স্থির বুদ্ধি 
গেরিল৷ যুদ্ধের প্রধান অংশ। আমাদের দলে প্রায় একশজন কাজ 
সুরু করার জন্য তৈরী হচ্ছিল, আমাদের এগিয়ে যাবার আদেশ দেওয়া 
হল। আমি সারি থেকে বাইরে এসে সেই জেনারেল দে ভেগ৷ 
নামে ব্যক্তির সামনে গেলাম । সে তখন একটি চুরুট টানছিল আর 
খুধীতে ডগমগ হয়ে গৌরবের দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাচ্ছিল। আমার 
দিকে চেয়ে শয়তানী হাসি হাসল, বেশ ভালোমানুষের মতো । বলল, 
গুয়াতেমালাতে লম্বা চগড়। বলশালী লোকের অনেক কাজ রয়েছে। 
হ্যা, মাসে ত্রিশ ডলার, মাইনে ভালো । আহা, হ্যা, তুমি শক্তিমান 
সাহসী ছোকরা । রেল রাস্তাটা ঝটপট আমরা রাজধানী পর্যস্ত ঠেলে 
নিয়ে যাবো । ওরা তোমাকে কাজ করতে ডাকছে এখন, কাজে যাও 
তাগড়া ছোকরা ।: 

“ম'সিয়ে*, আমি তথাপি দাঁড়িয়ে থেকে বললাম, “আপনি কি একজন 
বোকা আইরিশম্যানকে এইটুকু বুঝিয়ে বলবেন, যখন আমি আপনার 
আরশুলাভরা স্টামারে পদার্পণ করেছিলাম আর বিপ্লব আর মুক্তির 


১১৪ 


বাণী শোনাচ্ছিলাম আপনার টক দ্রাক্ষাসবের ওপর, তখন কি আপনি 
ভেবেছিলেন এই ও্চা রেলরাস্তায় গাঁইতি চালাবার জন্ত আপনার 
সঙ্গে বড়্যন্ত্র করছিলাম ? আর আপনি যখন দেশপ্রেমের উদ্ৃতি দিয়ে 
আমার কথার জবাব দিচ্ছিলেন আর তারকাখচিত স্বীধানতার 
সংগ্রামকে উচ্‌তে তুলছিলেন তখন কি মনে মনে আমাকে আপনার 
হতচ্ছাড়া দেশের ছাতৃখোর গণ্া কুলির দলের পর্যায়ে ফেলেছিলেন ?' 
সেই জেনারেল ব্যক্তি হাসির চোটে ফেঁপে ফুলে আরো গোল 
হয়ে গেল। হ্থ্যা, খুব জোরে উঁচু গলায় অনেকক্ষণ সে হাসল আর 
আমি ক্র্যানসি চুপ করে দাড়িয়ে অপেক্ষা করলাম । 

“রগড়ের লৌক তো তুমি হে” অবশেষে সে চিৎকার করে বলল। 
“আমাকে হাসিয়ে মেরে ফেলবে দেখছি । হ্যাঁ, বলশালী, সাহসী লোক 
যে পাইনা আমার দেশকে সাহাধ্য করার কাজে । বিপ্রব+ আমি 
বিপ্লবের কথা বলেছিলাম? একটি শব্দও নয়। আমি বললাম, 
বড়ে। চেহারার লোক চাই গুয়াতেমালায়।- অতএব ভূলট। তোমারই । 
তুমি একটা বাকসে দেখলে পাহারাদারদের জন্যে বন্দুক। ভুমি 
ভাবলে সব বাকসে আছে বন্দুক । কই, না তো, না, গুয়াতেমালাতে 
যুদ্ধ বিবাদ নেই। হ্যা তবে কাজ আছে, ভাল কাজ, ত্রিশ ডলার 
মাসে । সেনিওর কাধে নাও একটা গাইতি আর গুয়াতেমালার 
স্বাধীনতা আর সমৃদ্ধির জন্য খুড়ে যাঁও। যাঁও কাজে যাও, পাহারা 
দার তোমার জন্য অপেক্ষা করছে । 

“বেটে, মোটা, কেলে কুত্তা, আমি বললাম আস্তে আস্তে কিন্তু 
অত্যন্ত বাগে ও দুঃখে, *তামায় আমি দেখাব। হয়ত এখনি কিছু 
করতে পারছি ন! কিন্ত সবুর করো জে. ক্ল্যানসি মাথা খাটিয়ে বদল! 
নেবার পথ বার করবেই 1, 

গ্যাংএর সরদার আমাদের কাজে লাগতে বলে। আমি নিগ্রো 
কুলিদের সঙ্গে এগিয়ে যাই আর শুনতে পাই সেই বিশিষ্ট তোতা- 
পাখিটা ফুতিতে হাসছে। 

এ হচ্ছে বেদনাময় সত্য যে সেই ছুব্যবহারকারী দেশে আট 
সপ্তাহ ধরে আমি রেলের রাস্তা তৈরী করেছিলাম । বারো ঘণ্ট। ধরে 
আমার সংগ্রাম চলত একটা গাইতি আর কোদাল হাতে প্রাচুর্ষময় 
বৃক্ষলতা দৃশ্যপট থেকে ছেটে ফেলার কাজে, যেগুলি রেলপথের 


১১১ 


অন্তরায় হচ্ছিল। আমর জলার মধ্যে কাজ করতাম যেখানে গন্ধ 
পেতাম যেন গ্যাসের পাইপে লিক রয়েছে, ছুত্্রাপ্য সব মহামূল্যবান 
কাচ ঘরে রাখার যোগ্য ফুললতা শাক সবজি পায়ে মাড়িয়ে যেতাম । 
ভূগোলের লেখক কল্পনাই করতে পারেনি এমনি সমৃদ্ধ সেই উষ্ণ- 
মণ্ডলের দৃশ্য । গাছগুলি এক একটি স্কাইস ক্র্যাপার। নিচের ঝোপে 
কাটা আর স্থৃচীমুখ লতাগ্লস। চারিদিকে বাঁদর লাফাচ্ছে, কুমির 
আর লম্বা লেজের মকিংবার্ড আর তুমি হাটু পর্যন্ত পচা! জলে দাড়িয়ে 
আছে গাছের শেকড় ধরে আর গুয়াতেমালার মুক্তির লডাই এর 
কাজে ' রাত্রে মশা তাড়াবার জন্য ধূনী জ্বেলে, ধেশায়ার মধ্যে আমরা 
বসে থাকতাম, পাহারাদারেরা আমাদের চারপাশে পায়চারি করত । 
এই বেল রাস্তার কাজে প্রায় ছুশজন কাজ করত, বেশীর ভাগ 
নিশ্সো, স্প্যানিশ, কিছু সুইডিশ আর তিন চার জন ছিল, 
আইরিশ । 

একজন বুড়ো মতো, নাম হ্যালোরান, জাতিতে ও চরিত্রে আইরিশ 
আমাকে ব্যাপারট। বুঝিয়ে বলল। সে প্রায় বছর খানেক কাজ 
করছে । বেশীরভাগ মরে যেত ছমাসের ভিতর । তার চেহারা, 
হাড় আর চুল দাড়ি লোমে এসে ঠেকেছিল। প্রতি তৃতীয় রাত্রিতে 
কাপুনি দিয়ে ওর জ্বর আসত । 

“এসে পৌছেই তুমি ভাববে এক্ষুণি চলে যাবো» হালোরান 
বললে । “কিন্ত তোমার প্রথম মাসের মাইনে ওরা গাড়িভাড বাবদ. 
কেটে রেখে দেয় আর ততদিনে উষ্ণমগ্ুল তোমাকে কবজ! করে 
নিয়েছে । তোমার চতুদ্দিকে ঢুস্তর জঙ্গল, অতি ছ্যাঁচড়া সব জীব- 
জন্ততে ভরা, সিংহ আছে, বেবুন আছে, আছে অজগর ওৎ পেতে 
তোমাকে গিলে খাবার জন্ত । রোদের তাপে তোমার হাড়ের ভিতরের 
মজ্জা গলে যাবে । কবিতার বইয়ের লোটাস ইটারদের অবস্থা 
তোমার হয়ে যায়। জীবনের উচ্চতর ভাব-অন্ুুভূতিগ্চলি তুমি ভুলে 
যাঁও, যেমন দেশপ্রেম, প্রতিশোধ, শান্তিভঙ্গ করা বা ফরস। একটা 
সার্ট পরার আরামের অনুভূতি । তুমি কাজ করে যাও আর খাও 
কেরোসিন তেল আর রাবার পাইপের টুকরো খাগ্চ বলে নিগ্রে। 
রাঁধুনি যা তোমাকে দেয়। পাইপে তামাক ভরে তুমি সেটা ধরাও 
আর নিজের মনে বলো সামনের সন্তাহে পালাবো, তারপরে শুয়ে 


৯১৭. 


ঘুমোও আর নিজেকে মিথ্যাবাদী বলতে পারো যেহেতু তুমি জানে 
কোনদিনই তুমি পালাতে পারবে না।" 

“এই জেনারেল লোকট1 কে? আমি জিগগেস করি, “যে নিজেকে 
দে ভেগ। বলে? 

“এই লোকট।! চাইছে রেলরাস্তাট! সম্পূর্ণ করতে” হ্যালোরান বলল। 
“এই প্রকল্পটা প্রথমে ছিল একটা প্রাইভেট করপোরেশন, কিন্তু সেটা 
উঠে যায়, আর তারপরে গভর্ণমেন্ট কাজটা হাতে নেয়। দে ভেগা 
একজন বড়ো রাজনৈতিক নেতা, নিজে প্রেসিডেন্ট হতে চায় । জনগণ 
চায় রেলপথট! সম্পূর্ণ হোক কারণ এর জন্যে তাদের ট্যাকস দিতে 
হয়। দে ভেগা তার নির্বাচনের প্রচারের একটি চাল হিসেবে এই 
রেলপথ তৈরীর কাঁজটা নিয়েছে ।, 

“আমার স্বভাব নয় কোন ব্যক্তিকে ভয় দেখানো” আমি বললাম, 
“কিন্ত একটা হিসেব-নিকেশবাঁকি রইল এই রেলরাস্তার লোকটি আর 
জেমস ওডাউড ক্ল্যানসির মধ্যে 1 

“আমিও ওইরকম ভেবেছিলাম, প্রথম প্রথম” হালোরান বলল দীর্ঘ 
নিশ্বাস ফেলে, যতদিন না আমি লোটাস ইটারে পরিণত হই। দোষ 
এই উঞ্ণমণ্ডলের আবহাওয়ার। শরীরের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। 
এট একটা দেশ, কবি যেমন বলেন, “এখানে সকল সময়ই যেন 
ভোজত্নর পরের কাল।” আমি আমার কাঁজ করি, পাইপ টানি আর 
ঘুমাই । জীবনের আর আছেই বা কি করার। তুমিও শীঘ্রই এমনি 
হয়ে যাবে। কোন ভাবপ্রবণতা মনে মনে পুষে রেখে! না 
র্যানসি ।? 

“না রেখে পারছি না, আমি বললাম, “আমি ভাবাবেগে পূর্ণ হয়ে 
আছি। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশের বিপ্লবী সেনাদলে আমি ভন্তি 
হলাম সরল বিশ্বীসে, এর মুক্তি, সম্মান ও রূপোর বাতিদানের জন্য 
যুদ্ধ করতে । আর তার বদলে এর দৃশ্ঠ পটের অঙ্গচ্ছেদ করছি আর 
শেকড় খাচ্ছি! এই জেনারেল লোকটাকে এর খেসারত দিতে হবে ।” 
ছুমাস আমি সেই রেলরাস্তার কাজ করি পালাবার প্রথম সুযোগ 
পাওয়ার আগে। একদিন আমাদের একটি দলকে পাঠানো হয়েছিল 
সম্পূর্ণ হয়ে আসা রেলপথের শেবপ্রান্তে, পোর্ট ব্যারিওস থেকে কতক- 
গুলি ভেশত। গাইতি ধারাল করে আনার জন্য । সেগুলি নিয়ে আস! 


৮ ১১৩ 


হয়েছিল একটা হাত-গাড়িতে। আমি লক্ষ করলাম হাঁতগাঁড়িটি 
রেল লাইনের ওপর রাখা ছিল। 

সে রাত্রে বারোটো! নাগাত আমি হ্যালোরানকে জাগিয়ে তুললাম 
আর আমর মতলাবর কথা বললাম । 

পালাবো % হে ভগবান, হ্যালোরান বলল, ক্লযানসি তুমি সত্যি 
বলছ ! আমার দাহসে কুলোঁবে ন।, বাইরে বড় ঠাণ্ডা আর ঘুমটাঁও 
পুরো হয়নি । পালাবো! ক্লানসি আমি তোঁনাকে আগেই বলেছি, 
কমল আনার খাওয়া হয়ে গেছে । আমার নিজের ওপর আস্থ। আর 
নেই ! এই উষ্ণনগুপই এট। করেছে। কবি যেমন বলেন, “ভূলে 
গেছি বন্ধুদের দূরে ফেলে এসেছি যাদের, শুন্তগর্ভ কমলের দেশে, 
আরামে বাঁচব শুয়ে বসে।” তুমি বরং যাও ক্রল্যানসি, আমাকে 
থাকতেই হবে দেখছি । এখন সবে মাঝরাত্রি, বাইরে ঠাণ্ডা আর চোখ 
আমার ঘুমে জড়িয়ে আলছে 1, 

তাই হ্যালোরানকে ফেখেই যেতে হল। চুপি চুপি জামাকাপড় 
পরে নিলাম, তাবুর বাইরে বেরিয়ে এলাম ! পাহারাদার কাছে এলে 
একটা ডাবের বাড়ি মেরে তাকে কাত কনে দিলাম, তারপর রেল- 
লাইনের ধারে ছুটলাম। হাতগাঁড়ীট। চড়ে সেট। চালিয়ে দিলাম । 
ভোরের কিছু আগে পোর্ট ব্যারিওসের আলোগুলি দেখতে পেলাম 
মাইলখানেক দূরে ৷ হাতগাড়িটা সেখানে থামিয়ে রেখে হেটে শহরের 
বড়ো বড়ো সংস্থাগুলির চৌহদ্দি আমি সন্তর্পণে এড়িয়ে গেলাম । 
গুয়াতেমালার সেন্তদলকে আমি ভয় করতাম না কিন্ত ওদের কর্ম 
স্ংস্থনের অফিসের সঙ্রে হাতাহাতি লড়াই এর কথা চিন্তা করলেই 
আমার অন্তরাত্মা কেঁপে ওনে। এই দেশ সহজেই চাকরিতে লোক 
নিয়োগ করে আর তারপর তাদের ধরে রেখে দিতে পারে । আমি বেশ 
কল্পনা করতে পারি মিসেস আমেরিকা আর মিসেস গুয়াতেমাল। গল্প 
করছে একটি চমৎকার রাত্রিতে, পাহাড়েব ছুইদ্রিকে জন, “কি বলব 
ভাই, সেনিওরা মাদাম, ঝি চাকর নিয়ে আবার আমি পড়েছি 
মুক্ষিলে ।” “তাই নাকি? আশ্চধ! আমারটা তো কোনদিন চলে 
যাবার নামও করেনা”? হেসে বলে মিসেস গুয়াতেমালা । 

আমি শুধু ভাবছিলাম কেমন করে এই ক্রান্তীয় দেশ থেকে 
পালাবে আবার কোন চাকরির ফাদে না পড়ে। তখনও অন্ধকার 


১১৪ 


রয়েছে, তবুও আমি দেখতে পেলাম বন্দরে রয়েছে একট। স্টামার, 
চিমনি থেকে ধেঁয়া বেরুচ্ছে । সরু একট! ঘাসে ছাঁওয়। গলি দিয়ে 
এলাম জলের ধারে । তীরে এসে দেখলাম একজন বাদামী রঙের 
চাটখাটো নিশ্লো ঠেলে ঠেলে একটা ডিডি নানাচ্ছে। 

'চ্যামবো, একটু দাড়াও, আমি বললাম, “সাভে ইংলিশ ?? 

১গৎকার হাসি মুখে দে বলল, "হা, প্রচুর, অনেক । 

'এটা কোন স্টাণার ? আমি শুধাই, “যাচ্ছেই বা কোথায়, খবর কিছু 
আছে কি ভালো মন্দ, আর বেজেছেই বা কট]? 

“ওই স্টামার্টা, দি কনচিট!, ছোট বাদামী লোকটি বন্ধুভাবে বলল, 
একট] সিগারেট পাকাতে পাকাঁতে। এএসেছে নিউ অলিয়নস থেকে 
কলা নিয়ে যাবে । কাল রাতে ফল বোঝাই শেষ হরেছে। বোধহয় 
এক বা ছু ঘণ্টার ভিতর ছাড়বে । চমৎকার দিনট1 যাবে আজ। 
শডাইয়ের খবর কিছু রাখো নিশ্চয়? তোমার কি মনে হয়, জেনারেল 
'দ ভেগা ধরা পড়বে? হাাকি না? 

“ক ব্যাপার স্যামবো! ভারি লড়াই ? কোথায়? কারা ধরতে চায় 
জেনারেল দে ভেগাকে ? আমি আমার পুরোন সোনার খানতে ছিলাম 
গাস তুই; একেবারে ভিতবে, খবর কিছুই পাইনি । 

ওঃ, সেই নিগ্রো লোকটি বন্পল,ইংরেজি বলতে পেরে গৰ বোধ 
করছে । “বিরাট বিপ্লব হয়ে গেছে গুয়াতেগালায় এক সন্তাহ আগে। 
জনারেল দে ভেগ' প্রেসিডেন্ট হতে চায় । ওর দলে, এক, পাচ, দশ 
হাজার সৈম্ত লড়ছে সরকারের বিরুদ্ধে, সরকার পাঠালে। পাচ, চাল্লশ, 
একশ হাজার ফৌজ বিদ্রোহ থামাতে । গতকাল লোমা গ্রানদে বিরাট 
যুদ্ধ হয়ে গেছে, উনিশ ব। পঞ্চাশ মাইল দূর এখান থেকে পাহাড় 
অঞ্চলে । সেই সরকারা ফৌজ জেনারেল দে -ভগাকে খুব ধোলাই 
দিয়েছে । পাঁচশ) ন'শঃ ছুহাজার, লোক তাঁব মারা গেছে। বিপ্লব 
চুরমার হয়ে গেছে, খুবই তাড়াভাড়। জেনারেল দে ভেগা পালিয়েছে 
একটা বড়ো খচ্চরের পিঠে চড়ে। হ) ক্যারামবস্ত জেনারেল 
পালিয়েছে আর তার সৈম্তরা মরে গেছে । সরকারী সৈশ্ঠরা জেনারেল 
দে ভেগাকে ধরতে চায়। তাকে গুলি করে মারার জন্য । তুমি কি 
মনে করো, জেনারেল ধর পড়বে ?” 

'মহাপুরুষেরা তাই করুন”, আমি বলি, ঈশ্বরের ন্তাঁয় বিধানে তাই হওয়া 


১১৫ 


উচিত, একজন ক্ল্যানসির যো'দ্ধ বি্ার প্রতিভার অপব্যয় করা হল 
কিন কোদাল গাঁইতি দিয়ে ক্রান্তীয় জঙ্গল সমতল করার কাজে ! 
কিন্তু এখন বিদ্রোহের থেকে আমার কাছে ভাড়াটে কুলির সমস্তাটা 
বড়ো । আমি ব্যগ্র হয়েছি দায়িত্বশীল একটি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে 
তোমাদের মহান ও হতশ্রী দেশের সাদা ডানার বিভাগের শরণাপন্ন 
হতে। তোমার ছোট্ট ভিডিটা চালিয়ে আমাকে ওই স্টীমারটাতে নিয়ে 
চলো, আমি তোমাকে পাঁচডলার দেবো- সিঙ্কার পেসারস্‌, লিঙ্কীর 
পেলারস্--' আমি বলি, প্রস্তাবটি ক্রান্তীয় চলিত ভাষায় ভাষাম্তরিত 
করার চেষ্টা করি। “সিষ্কে। পেসোস্? ছোট খাটো! লৌকটি বলল” পাঁচ 
ডলার তুমি দেবে ? 

লোকটা মন্দ ছিল না। প্রথমে আপত্তি করছিল, বলছিল দেশ ছেড়ে 
যেতে কাগজপত্র, পাসপোর্ট, এইসব লাগে, কিন্তু শেষ পধন্ত নিয়ে 
গেল জ্টীমীরের ধারে। সকাল হচ্ছিল, ডিডিট1 যখন স্টীমারে এসে 
ঠেকল, কোন জনমানব দেখা গেল না স্টীমারে । জল ছিল শান্ত, 
নিগ্রো লোকটি আমাকে খানিকটা তুলে ধরল ডিডি থেকে, আমি 
স্টামারের ফল বোঝাই করার ডেকে উঠে পড়লাম যেখানে ডিডিট! 
লেগেছিল। খোলের ঢাকনাগুলি খোলাই ছিল। ভিতরে তাকিয়ে 
দেখলাম ভিতরটা কলাঁতে বোঝাই, ডেক থেকে মাত্র ছফুট নীচে 
পর্যন্ত। নিজেকে আমি বুঝিয়ে বলি, ক্ল্যানসি তুমি এবার লুকিয়ে 
জাহাজে চড়ে পালাও। এটা নিরাপদ । স্টীমারের লোকেরা! এখন 
তোমাকে দেখতে পেলে আবার হয়ত কর্মখালি অফিসে ভরি করে 
দেবে । উষ্ণমণ্ডল আবার তোমাকে পাকড়াবে, বদি তুমি হু"শিয়ার ন 
থাকে । 

আমি তাই সহজেই কলার ওপর লাফিয়ে পড়লাম ভার কলার কাদির 
মধ্যে একট গত করে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকলাম । ঘন্টা খানেকের 
মধ্যে ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনতে পেলাম । স্টামার ছুলছে, বুঝল 
আমাদের সমুদ্রযাত্রা শুরু হল! হাওয়া লাগবার জন্ত খোলের 
ঢাকনাগুলি খোল। রেখেছিল, তাঁই যা আলে। আসছিল তাতে খোলের 
ভিতরট]1 মোটামুটি দেখা যাচ্ছিল । একটু একটু খিদে পাচ্ছিল তাই 
ভাবলাম ফল দিয়ে হালকা লাঞ্চ করে নেওয়া যাক। গত থেকে 
বেরিয়ে সৌজ। হয়ে দাড়ালাম । ঠিক তক্ষুণি দেখতে পেলাম দশ 


১১৬ 


ফুট দুরে আর একটি লোক হামা দিয়ে বেরুল কলার গাদা 
থেকে, তার পর একটা কলা টেনে ছিড়ে খোসা ছাড়িয়ে 
পুরলো ৷ লোকটা নোংরা, মুখ কালো, জাম। কাপড় ছেড়া, আকৃতিতে 
অত্যন্ত কদাকার। খবরের কাগজের মজার পাতার মোট] সোট। 
উয়্েরি উইলির ছবির ভ্বহু নকল তার চেহারা । ভালো করে 
দেখলাম, তাই তো, এইতো! আমার জেনারেল বাক্তি, দে ভেগা, মহান 
বিপ্রবধাদী, খচ্চর চালক, আর গাঁইতি আমদানীকারী। আমাকে 
দেখে ঘাবড়েছে, মুখ ভি কলা, কথা বলতে পারেনা, চোখের সাইজ 
হয়েছে নারকেলের মতো । 

“হিমট” আমি বলি, “একটি কথা নয়, তাহলেই ওরা আমাদের নানিয়ে 
দেবে আর হাটতে বাধ্য করবে। ভিভলা লিবার্টি স্বাধীনতা 
দীর্ঘগীবি হোক", এই আবেগ দমন করতে তার উৎসমুখে একটি কল৷ 
চালান করে দিই। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম জেনারেল আমাকে চিনতে 
পারবে না। উঞ্জমগুলের জঙ্গলের জঘন্য কাজের ফলে আমার চেহারা 
অনেক পালটে গিয়েছিল। মুখে আমার আধ ইঞ্চি পাঁচমিশেলি 
দাঁড়ি, পবনে নীল ওভার অল আর লাল সাট। যখন কথা সরলো 
মুখে জেনারেল জিগগেস করল, “কমন করে জাহাজে এলে, সেনিওর ? 
'পিছনের দরজ। দিয়ে__হুইসট্‌ !? আমি বলি, স্বাধীনতার জন্য মহান 
আঘাত আমর! হেনেছিলাম। আম বলে চলি, কিন্ত সংখ্যায় আমর 
হেরে গেলাম। আনুন, পরাজয় আমরা মেনে নিই কীরত্বের সঙ্গে, 
সেইসঙ্গে আরো একট। কলা খাওয়া যাক ।, 

'ঠূমিও কি স্বাধীনতার জন্ত সংগ্রাম করেছিলে, সেনিওর” জেনারেল 
কলার কাদির ওপর চোখের জল ফেলে । আগাগোড়া” আমি বলি, 
“শেষের বেপরোয়। আক্রমণ আমিই প্রিচালন। করেছিলাম, অত্যাঁচারীর 
ভৃত্যদের বিপক্ষে । কিন্তু এর ফলে তারা উত্মাদের মতো লড়ল আর 
আমরা হেরে গেলাম । আমিই, জেনারেল আপনার জন্য খচ্চরটি 
জোগাড় করে দিই যেটি চড়ে আপনি পালিয়ে গেলেন। ওই পাকা 
কাদিট। একটু এপ্দিকে ঠেলে দেবেন, জেনারেল? আমার নাগালের 
বাইরে ওটা । ধন্যবাদ ।, 

'সত্যি নাকি, সাহসী দেশ প্রেমিক !” জেনারেল জিজ্ছেস করল, আবার 
সে কেঁদে ফেলল, “| দিওস, তোমার ভক্তির প্রতিদানে আমি কিছুই 


১১৭ 


[দিতে পারছিনা । কোন রকমে প্রাণটি নিয়ে আসতে পেরেছি । 
ক্যারামবস্, ওঃ কি শয়তান জানোয়ার সেই খচ্চরটি ছিল সেনিওর 
ঝড়ের মধ্যে জাহাজ্জের মতো আমি ধাকা খেয়েছি । চামড়া সব ছিড়ে 
টুকরে! হল, কাটায় আর লতায় ঘসা খেয়ে। অন্তত একশোট। 
গাছের ছালে ওই নরকের জন্তট। ধাক্কা খেয়েছে, আর আমার পা! ছুটির 
দফ| সারা হয়েছে। রাঁতে পোর্ট ব্যারিওস-এ এসে গৌছলাদ। 
পাহাড়ের মতো খচ্চরটাকে ছেড়ে পায়ে হেঁটে আমি এলাম জলের 
দিকে। ছোট একটা ডিভি বাধ। রয়েছে দেখলাম । সেটায় চঞ্ডে 
বৈঠা বেয়ে স্টানীরের কাছে এলাম। কোন লোকজন দেখতে 
পেলাম নাঁ। একটা দড়ি বেয়ে উঠে এলাম । তার পরে এই কল।ং 
মধ্যে লুকিয়ে রইলাম। নিজের মনে মনে বললাম, জাহাজে" 
ক্যাপটেন যদি আমাকে দেখে তাহলে আবার ওই গুরাতিমালাত 
মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেবে আমাকে । সে সব ভাল নয়। গুয়াতেমাজ' 
জেন'ধেল দে ভেগাকে গুলি করে মারনে । তাই আমি লুকিয়ে আহি 
চুপটি করে। জীবন বড়ে। গৌরবের | স্বাধীনতা! বেশ ভালো, কি” 
বেঁচে থাকার চেয়ে ভালো বোধহয় নয় ॥ 

আগেই আমি বলেছি তিনদিনের পাড়ি ছিল নিউ অলিয়নস পধন্ত। 
তাই জেনারেল আর আমাকে পাকা রঙের বন্ধু হতে হল। কলাই আমর; 
খেতে থাকলাম, ক্রমশ এমন অবস্থা হল যে কল! দেখলে চোখ জ্বাল! 
করে, তথাপি কলা ছাড়া খাবার আর কিছুই ছিলন]। রাত্রি হলে সাবধানে 
বাইরে আসি নীচের ডেক থেকে এক বালতি স্বাছু জল জোগাড় করি । 
জেনারেল দে ভেগ! ছিল সেই ধরণের লোক যাঁরা অনর্গল কথা বলছে 
পারে। যাত্রার একঘেয়েমি তার বকৃবকৃ করার জ্বালায় আরে' 
বেড়ে গিয়েছিল। সে বিশ্বাস করে নিয়েছিল আমি তাঁরই দলেরৎ 
একজন বিপ্লবী । কেননা, সে বলল, ওর দলে অনেক আমেরিকান 
আর অন্য বিদেশী ছিল: বক্তা হিসেবে সে ছিল যেমনি হামবড়। 
তেমনি অহঙ্কারী, নিজেকে একজন কীর বলে মনে করত। তা 
যত কিছু ছুঃখ আক্ষেপ কেবল হিজের জন্য, তার প্লট ভেস্তে বাবা 
বিষয়ের থেদো।ক্ত। এই ছোট্ট বেলুনটার একট। কথাও বলার ছিলন; 
তার সঙ্গী হুরাতআ্াদের বিষয়ে, যারা হয়ত গুলি খেয়ে কিংবা পালাতে 
গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে তার এই বিপর্বস্ত বিপ্লবে। 


১১৮ 


দ্বিতীয় দিনে তার আতত্মস্তরতি আর অহসঙ্কারের গলপ বড় বাড়াবাড়ি মনে 
হল একজন পলাতক চক্রান্তকারীর পক্ষে যার প্রাণ টিকে আছে একটি 
খচ্চরের দয়ায় আর চুরি কর! কলার কল্যাণে । মে আমকে বলছিল 
তার বিরাট রেললাইন তভরীর কীত্তির কথা! আর সেই স্বত্রে একটা 
মজার ঘটনা । একজন মজাদার আইরিশমানের কথা যাকে নিউ 
অলিংনস থেকে ফুসলে আন! হয়েছিল ভার মর্গের মতো রেল পথে 
গাইতি চালাবার জন্য । শুনতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল সেই শোংরা বেটে 
জেনারেল যখন বলছিল কি ভাবে সে সেই বেপরোয়। বুদ্ধ, রলানাপির 
লেজে লবণ দিয়েছিল, দেই অপমানকর কাঠিনী। হাসতে লাগল সে 
প্রাণখুলে, দীর্ঘ সনম পুলে 1 ভেসে গাড়য় পড়ল সেই কালোমুখ। 
ছন্নছাড়া বিজোহা, গল। পধন্ত ডুবে আছে কলার মর্ষো, না আছে দেল, 
কোন বন্ধু । 

“আাহ, সেনণিও৪ঃ হেতস বললে, এিসই বোকা আইরিশের কথা শুনলে 
তুমি হাসতে হাসতে মরে যাবে । আমি বললাম, লম্বা চগ্ড়া লোক 
চাই গচয়াতেমাগায়। “আমি আঘাত হানবো তোমাদদর শিপীড়িত 
দেশে সে বলে। হা, তা তো করতে হবে, আমি বালি কা 
মক্জার, সেই আইরিশ লোকটা । জেটিতে ,দখেছিল একটা বাকসে 
প্রহ্রীদের জন্য বন্দুক। সে মনে করল সদ বাকস বন্দুকে বোঝাই । 
কিন্থ সেগুলি সব গাইতি । আহ, সেনিওর, তার মুখের চেহারা যদি 
একবার দেখতে যখন তাকে কাজে লাগানো হল ।' 

এইভাবে সেই কর্মসংস্থানের প্রাক্তন কতী যাত্রার একঘেয়েমি বজায় 
রেখে গেল, হালকা রসিকতা আর গল্প শুনিয়ে । মাঝে মাঝে কলার 
ওপর অশ্রু বিস্র্জন করে স্বাধীনতা ব। সেই খচ্চরের বিষয়ে কথ। 
উঠলে । 

নিউ অলিয়নস-এর জেটিতে যখন স্টামারটা ধাক্ক। খেল তখন সেই 
আওয়াজ কানে বড় মিঠে লাগল অল্লক্ষণ পরেই নিগ্রে। কুলির 
দলের শত শত পায়ের চটপট, শব শোন। গেল ডেকের ওপর, 
জাহাঙ্গের খোলের ভিতর থেকে । আমি আর জেনারেল এদেণ সঙ্গে 
কিছুক্ষণ কাদি গুলি উঠিয়ে দিতে লাগলাম, যাতে ওরা ভাবে আমরা 
ওদের দলেরই । ঘণ্টাখানেক পরে স্টানীর থেকে বেরিয়ে জেটিতে 
এসে পড়লাম । একজন নগণ্য ক্ল্যানসির পক্ষে এটা মহাভাগ্য ও 


১১৪৯ 


সম্মানের কথা যে একটি মহান দেশের বিদ্রোহীদলের একজন 
প্রতিনিধিকে আপ্যায়ন করার সৌভাগ্য তার হয়েছে । -আমি প্রথমেই 
জেনারেল আর আমার জন্ত অনেকগুলি বড়ো সাইজের গ্লাসে 
পানীয় আর কল। নয় এমন খাছ্ঠি বস্তু কিন্লাম। জেনারেল আমার 
সাথে সাথেই চলতে থাকল, যেন তার সব ভার আমারই ওপর ছেড়ে 
দিয়েছে। আমি তাঁকে লাফায়েৎ স্ষোয়ারে নিয়ে গেলাম, পাকে 
একটা বেন্চে বসালাম । নিগারেট আমি কিনে এনেছিলাম, সে 
বেনচে ঝুঁকে পড়ে বসল, পরিতৃপ্ত, গোলগাল একটি বাউগ্ুলের মতো । 
ওই ভাবে বসা অবস্থায় তাকে আমি ভালো করে দেখলাম, আর যা 
দেখলাম তাতে খুশী হলাম। প্র্কৃতিদত্ত বাদামী রং এখন ধুলোয় 
নোংরায় আরো মলিন । হ্যা, সেই জেনারেল ব্যক্তির আকৃতি দেখে 
ক্লযানসির ভারি ভালে! লাগল । 

আমি ওকে অনেক দ্বিধায় জিজ্ঞেস করলাম তার নিজের বা অন্ত 
কারুর কোন টাকা পয়সা সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছে কিনা । সে 
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, বেনচে কাধ ঠোকে। না, এক সেন্টও নয়। বেশ 
বেশ। সে বলে, হয়ত, তার বন্ধুরা সেই উষ্ণমণ্ডলের দেশ থেকে টাকা 
পাঠাবে পরে। জেনারেল একটি নিভূল কেস, জীবন ধারণের 
জন্ত কোন প্রকার দৃশ্ঠমান উপায় বিহীন ব্যক্তি হিসেবে, আমার 
মনে হল। 

আমি তাকে বেনচ থেকে না নড়তে বললাম । তারপর আমি গেলাম 
পয়দ্রাস ও কারনডেলেটের কৌণে। ওইখানে ওহারার বিট। পাঁচ 
মিনিটের মধ্যে ওহারাকে দেখ। গেল । লম্বা চওড়া, চমতকার ব্যক্তি, 
মুখ লাল, জামার বোতাম ঝকৃমক্‌ করছে, ডাগ্ডা দোলাতে দোলাতে 
এসে হাজির | গুয়াতেমালাকে এখন ও"হারার মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করতে 
পারলে বেশ হয়। ড্যানির পক্ষে বেশ মনোরঞ্জক হবে মাঝে মাঝে ডাণ্ডা 
দিয়ে সপ্তাহে হ'একবার বিপ্লব থামাতে হলে । 

45046 এখনো চালু আছে ড্যানি ? আমি জিজ্ঞেস করি, তাঁর কাছে 
গিয়ে। 

“ওভারটাইম খাটছে? ড্যানি বলল, আমার দিকে চাইল সন্দেহের 
দৃষ্টিতে । খানিকটা চাই নাকি ৮ 

পঞ্চাশ ছেচল্লিশ হচ্ছে শহরের সেই বিখ্যাত আইন যার বলে আটক, সাজা 


১২৩ 


ও জেল হয় সেই সব ব্যক্তির যারা তাদের অপরাধ পুলিশের কাছে 
গোপন করতে সক্ষম হয়েছে। 
“জিমি ক্ল্যানসিকে কি তুই চিনতে পারছিস না! আমি বললাম, “ওরে 
গোলাপী গলার দানব।” এবার ও'হারা আমাকে চিনতে পারে, কারণ 
উঞ্ণমণ্ডলের কল্যাণে আমার বাইরের আকৃতি হয়েছিল লজ্জাকর। 
আমি তাকে একটি কোণে নিয়ে গেলাম আর বুঝিয়ে বললাম, আমি 
কি চাই আর কেন চাই। “ঠিক আছে, জিম” ও'হারা বলল, “ফিরে 
গিয়ে ওই বেনচেই থাকো । দশ মিনিটের মধ্যে আমি আসছি।” 
সেই দশ মিনিটে ও'হারা লাফায়েৎ স্কোয়ারে বেড়াতে বেড়াতে ছুটি 
উয়েরি উইলিকে আবিষ্কার করে, দেখে তারা একটি বেনচ নোংরা 
করছে । আরে দশমিনিটের মধ্যে জে রলযানসি আর জেনারেল দে 
ভেগা গুয়াতেমালার প্রাক্তন প্রেমিডেন্ট পদপ্রাথী থানায় হাজির 
হয়েছে । জেনারেল খুব ভয় পেয়েছে, আমাকে তাব পদমধাদা। আর 
বিশিষ্টতার কথা বলতে বলল । 
আমি পুলিশকে বললাম, “এই লোকটি রেললাইনে কাজ করত, এখন 
বেকার। চাকরী যাবার পরে ও এখন প্রায় উন্মাদ |” 
ক্যারামব্ন্‌ ৮ সোডা ফাউনটেনের মতো! ফোস করে ওঠে জেনারেল, 
তুমি সেনিওর, আমার দলের হয়ে লড়াই করলে আমার দেশে । 
এখন তুমি মিথ্যে বলছ কেন? বলো আমি জেনারেল দে ভেগা, 
একজন সৈনিক, একজন অশ্বারোহী ।” “রেলের লোক» আমি আবার 
লি, এখন বেকার । কোন কাজের নয়। চুরি করা কল! খেয়ে গত 
তিন দিন' কাটিয়েছে। দেখুন স্তর একবার ওর দিকে, দেখলেই 
বোঝা যায় । 
“পঁচিশ ডলার ব! ষাট দিন? ম্যাঁজিসট্রেট জেনারেলের সাজ। ঘোষণ। 
করল। ওর কাছে একটি পয়সাও ছিল না) তাই জেলেই গেল। 
আমাকে ওরা ছেড়ে দিল, আমি জানতাগ ছাড়। পাবো কেন না 
আমার কাছে টাকা ছিল আর ওহারা আমার হয়ে বলল । হ্যা, 
ষাঁটদিন সাজা সে পেল। ঠিক ওই কয়দিন আমি গাইতি চালিয়ে- 
ছিলাম সেই মহান দেশ কামাস-গুয়াতেমালায়। 
ক্ল্যানসি থামল। উজ্জল তারার আলোয় তার পোড় খাওয়া মুখে এনে 
দিয়েছিল সুখস্মৃতি জনিত তৃপ্তির হ্যন্তি। চেয়ারে হেলান দিয়ে কেওগ 


১২১ 


তার পার্টনারের হালক। পোশাক পর পিঠে একটি চাপড় মারলো, 
শব্ধ হল যেন বালির ওপর একট ঢেউ আছড়ে পড়ল। 

হেসে বলল, তারপরে বলে! কেমন করে ৰদল। নিলে জেনারেলের 
সঙ্গে সেই কৃষিকর্মের ব্যাপারে । 

টাকা না থাকায়, ক্র/ানসি বহুল, খুনঈভরা গলায়, “সেই অঞ্চলের 
জেলের একদল কয়েদীদের সঙ্গে ওকে কাজ করতে দিয়েছিল ওর 
জরিমানার টাকাট। রোজগার করার জন্ত, উরস্্লাইনস্‌ ড্রীট রাস্তাটি 
নেরামতের কাজে । কাচ্গাকাছি ডিল একট! বার চমতকার সাজানো, 
ইলেকট্রিক পাখ। আর ভালো ভালে! ঠাণ্ডা পানীয় । ওই বারটাকে 
আমার হেড কোয়।টার করলাম । শ্রভি পনেরে। সিনেট অন্তর সেই 
ছোটখাটো লোকটির বেলচা-কোদাঁল হাতে সংগ্রাম কেমন চলছে 
দেখতে যেতাম। নিউ অলিয়নসে তখন আজকের মতোই ভাঁপস' 
গরম । আমি ওকে ডাকতাম, “হে মগাসয়ে ও তাকাতো, মুখ যেন 
কালো হাড়ি, সার্টের ওপর ঘাম ফুটে বেরিয়েছে জাগায় জায়গায় । 
“মোটা তাগড়া লোক” আমি বলি জেনারেল দে ভেগাকে, “এখন 
দরকার নিউ অলিয়নসে। হা, ভালো করে কাজ চালিয়ে যেতে 
হবে। “ক্যারামবস্! এরিন, কতৃক ফুলিয়ে বলো, 


এগার 


আচার সংহত্তার ভগ্নাংশ 


কোরালিওতে প্রাতরাশের সময় বেল! এগারোটা । তাই সেখানকার 
লোকে বাজারে খুব সকালে যায় না। ছোট একটি কাঠের বাড়িতে 
বাজার বসে, চারপাশে ছোট করে ছাটা ঘাস, মাঝখানে সবুজ পাতায় 
ঘেরা একটি ব্রেডফ্ুট গাছ তার ছায়া দিচ্ছে বাজার কুঠির 'ওপর । 

সেইখানে একদিন সকাছে বাজারে ব্যাপারীরা এসে জম হয় ধীরে 
সুস্থ, সঙ্গে তাঁদের .বসাতি ! বাড়ির চতুদিক ক্ড়ে দিয়ে আছে ফুট 
ছয়েঞ্ বারান্দা । তক্তার পর তারা তাদের সামগ্রী সাজিয়ে রাখে, 


* 'আয়ার্নযাণ। 


১২২ 


সগ্ভ কাটা গোমাংস, মাছ, কাকড়া, দেশীয় ফল) শকরকন্দ, ডিম, মিষ্টা, 
উঁচু করে গাদা দেওয়া মকাইএর রুটি, ম্পানিশ মালীর মাথার 
সমব্রেরে। টুপির বেড়ের মত বড়ে। বড়ো । 

আজ কিন্তু যাঁরা দোকান দিত বাজার কুঠির সথুদ্রের দিকে তার 
তাদের জিনিসপত্র সাজানোর পরিবর্তে ছোট দলে জড়ে! হয়ে হাত প। 
নেড়ে মৃছু স্বরে কথা বলছিল । কেন না প্ল্যাটফরুমর ঘে জায়গায় 
তার! দোকান দেয় সেখানে কীলজিবাঁৰ ব্রাইদের তহুন্দর নিদ্রিত অবয়ব 
ছন্ডানো ছিল। সে শুয়েছিল ভেড়া এক টককো ছোবাড়াদ মাছুব্র 
ওপর, আকৃতি তার পতিত দেবদূতের মতে, এই অবস্থায় সেই সাদৃস্ 
আরো লক্ষণীয় । তার মোটা শনের পোশাক ময়ল। স্লোই খুলে 
গেছে, হাজারো জায়গায় ছুমড়ে কুঁচকে গেছে, তাকে আবুত করেছি হলে 
অস্বাভাবিক ভাবে, ঠিক যেন একটি কুশপুন্তলী মজার সন্ত খড় ভার 
তাঁর পরে সব রকমের হেনম্থা করার পরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে । 
কিন্তু, দৃভাঁবে তার উচু নাকের মধাস্থলে সোনার ফ্রেমের চশম। রাখ 
আছে, তার প্রাচীন গৌরবের অবশিষ্ট তকমা! 

সুর্ধের রশ্মি সমুদ্রের ছোট ছোট তরঙ্গ থেকে কিচ্ছুব্িত হয়ে কেপে 
কেঁপে এসে পড়ছিল তার মুখে, সেই সঙ্গে বাজারের ব্যাপারীদের 
গলার আওয়াজে বীলজিবাব ব্লাইদের ঘুম ভেঙে গেল। উঠে বসল 
সে দেয়ালে পিঠ ঠেসান দিয়ে, তার চোখ পিট্‌পিট করছিল । পকেট 
থেকে সিলকের একট নোংরা রুমাল বের করে চশমার কাচ পালিশ 
করল । আর তখন সে লক্ষ করল ঘেতার শয়নকক্ষ আক্রান্ত হয়েছে 
এবং ভগ্জ, বাদামী আর হলুদ গাত্র বর্ণের লোকের তাকে অনুরোধ 
করছে জায়গাট। ছেড়ে দিতে বাজারের দ্রব্যসামগ্রী রাখবার জন্তা | 
সেনির যদি দয়! করেন, তাকে কষ্ট দেবার জন্য হাজারবার ক্ষমা চাঁওয় 
হচ্ছে কিন্ত শীত্রই খদ্দেররা আসবে সওদ1 করতে, তার অন্ুবিধা করার 
জন্ত দশ হাজারবার ছুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে । 

এইভাবে বিবৃত করে তারা জানায় যে তাকে ওই জায়গা ছেড়ে চলে 
যেতে হবে, ব্যবসার ঢাকা আটকে রাখ চলবে না। 

রাইদ তক্তা থেকে নামলো যেন এক রাজকুমার তার ছাত্রাচ্ছা দিত 
আসন পরিত্যাগ করলেন। পতনের শেষ ধাপে পৌছেও সে গার 
পুরনে। আদব কায়দা! ছাড়তে পারেনি। এর থেকে বোঝা যায় ভদ্র 


১২৩ 


আচরণের কলেজের পাঠ্যক্রমে নীতিশিক্ষার কোন পাঠ দেওয়া 
হয় না। 

বাইদ তার ছুমড়ানেো পোশাক ঝেড়ে ঝুড়ে নেমে পড়ল রাস্তায়, তপ্ত 
বালুর ওপর দিয়ে কালে গ্রান্দে ধরে চলল, কোথায় যাবে কিছু স্থির 
ছিল না। ছোট্র শহর অলসভাবে তাঁর দেনন্দিন জীধনে নড়ে চড়ে 
উঠছিল। সোনালী গাত্রবর্ণের শিশুরা ঘাসের ওপর একজন অন্যের 
গায়ে ঢলে পড়ছিল। সমুদ্রের বাতাস গায়ে লেগে তার খিদে 
পেয়েছিল কিন্তু খিদে মেটাবার জন্য কিছুই ছিল না। সারা কোরালিও 
তার প্রাত্ঃকালের স্ুুবাসে ভরপুর ছিল, ক্রাস্তীয় অঞ্চলের ফুলের তাব্র 
স্থগন্ধ, বাইরের মাটির উনুনে সেঁকা রুটীর ভ্রাণ, আর সেই উন্নুনের 
ধোয়ার গন্ধ । ধেশয়। ছিল না যে সব জায়গায় সেখানকার স্বচ্ছ 
বাতাস কিছুট! বিশ্বাসের নিশ্চয়তার সহায়তায় পাহাডকে তুলে এনে 
ফেলেছে সমুদ্রের পাশে এত কাছে যে পাহাড়ের গায়ে বৃক্ষের সারর 
ফাঁকে ফাকে উষর প্রান্তরগুলি এক এক করে গোনা যায়। জলের 
ধারে ক্যারিবেরা লঘু পায়ে দ্রেত তাদের কাজের তৎপরতায় যেন 
পিছলে পিছলে চলা ফেরা করছে । কলার বাগান থেকে বেরিয়ে ঘন 
বনপথ দিয়ে ঘোড়ার সারি চলেছে, কেবল মাথা আর পা নড়ছে 
দেখা যাঁয়। তাঁদের শরীর ঢাকা সবুজ সোনালী কলার কাদির বোঝায়। 
জানলার চৌকাঠে মেয়ের বসে বসে লম্বা কালো চুলে চিরুণী চালাচ্ছে, 
সরু রাস্তার এক পার থেকে অন্ত পারে নাম ধরে ডাকছে একে 
অন্তকে । কোরালিওতে শান্তি বিরাজ করছিল, শুক্ষ, বৈচিত্রহীন, 
কিন্তু শান্তি। 

সেই উজ্জল প্রভাতে প্রকৃতি যখন উধষার সোনার পাত্রে কমলের অর্থ 
সাজিয়েছিল, বীলজিবাব ব্লাইদ তার পতনের শেষ ধাপে এসে পৌছে- 
ছিল। আর নীচে নামা অসম্ভব। গত রাত্রের রাস্তায় শোয়া ছিল 
সেই শেষ ধাপ। যতক্ষণ মাথার ওপর একটি ছাদের আচ্ছাদন ছিল 
ততক্ষণ ছিল সেইটুকু ব্যবধান যা একজন ভদ্রলোককে স্বতন্ত্র রাখে 
বনের পশু বা বাতাসে ওড়া পাখি থেকে । কিন্তু এখন তার দশা 
হয়েছে একটি ক্রন্দনরত শুক্তির মতো, দক্ষিণের সমুদ্রের বালুর ওপর 
যাকে ভক্ষণ করবে চতুর ওয়ালরাসের মতে। “অবস্থা আর নাছোড়- 
বান্দা ছুতোরের মতো “নিয়তি ॥ 


১২৪ 


ব্লাইদের কাছে টাকা এখন স্মৃতি মাত্র। সে তার বন্ধুদের সজ্জনোচিত 
সাহায্যের সবটুকু নিঃশেষ করে নিয়েছিল, তারপরে তাঁদের দানশীলতার 
শেষ বিন্দুটি নিংড়ে নিয়েছিল, সব শেষে আযারনের মতে! ভাদের কঠিন 
হযে আসা বুকের পাষাণে আঘাত করেছিল অপমাঁনকর ছিটেঞ্োট' 
ভিক্ষার জন্য । 

শেষ রেয়াল পর্যন্ত তার বাকির খাত! পূরণ হয়েছিল। নির্লজ্জ 
পরভোজীর তীক্ষ বিচক্ষণতায় সে সচেতন ছিল কোরালিওতে তার 
উৎসগুলি সম্বন্ধে, কোথ! থেকে এক গ্রাস রাম, একবারের আহার ব। 
একটি বূপোর টাকা আদায় করা যাবে। মনে মনে সেই উৎসগুলি একের 
পাশে একটি সাঙ্গিয়ে সে বিবেচনা করছিল, ক্ষুধা আর তৃষ্ণা তাঁকে 
এই [বিবেচনার কাজ আন্তরিক নিপুণতা ও গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে 
করতে সাহায্য করছিল। তার সমস্ত আশাবাদ ব্যর্থ হয়েছিল আশার 
একটি কণ। আলাদ1 করতে তার চিস্তার জঞ্জাল থেকে । তার খেল 
শেষ হয়েছে । খোলা আকাশের নীচে এক রাত্রি সীযুগুলিকে আলগা 
করে দিয়েছে । এখনে পর্ষস্ত তার হাতে ছিল ছু একটি ভরসার স্থল 
যেখানে প্রতিবেশীর সঞ্চয় থেকে লজ্জা না পেয়ে দাবি চলত । এখন 
খেকে ধারের বদলে তাকে ভিক্ষা চাইতে হবে । আর কোন কত্রিমতার 
আববণ দিয়ে আখা। দেওয়া যাঁবে না সেই দ্বণার সঙ্গে ছুড়ে দেওয়। 
মুদ্রাটিকে খণ বলে, যখন সেটি দেওয়া হচ্ছে সমুদ্রতটের উদ্বৃত্তি 
করে বেডানে। মানুষটিকে যে সরকারী বাজারে কাঠের তক্তার ওপর 
রাত কাটায়। 

কিন্তু এই প্রভাতে কোন ভিক্ষুক তার মতে? তত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দান 
করা মুদ্রোটি নিত না, কেন না৷ রাক্ষসের মতো তৃষা তাঁর গঙগ। টিপে 
ধরেছে, মগ্যপের প্রাতঃকালীন ভূষণ নরকের পথে প্রত্যেক প্রভাতের 
স্টেশনে যা প্রশমিত করতে হয় । 

ধীর পদক্ষেপে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ব্লাইদ, লক্ষা তার কোন 
অঘটন যদি ঘটে যার ফলে তার ছুঃমময়ে অমৃতলভ হয় । মাদাম। 
ভাসকুইজের নাম করা৷ খাবারের দোকানের পাশ দিয়ে ঘেতে যেতে 
সে দেখল নাদাঁমার খর্দেররা খেতে বসেছে, টাটকা পাউরুটি, 'আঙর, 
আনারস আর কফি, বাতাসে ভেসে আসা সুগন্ধ ঘোষণ!] করেছে 
খাবারগুলির সু-আম্বাদ। মাদাম! পরিবেশন করছিলেন। তিনি 


১২৫ 


তার লাজুক, বিষণ্ণ, নিধিকার দৃষ্টি জানলার বাইরে একবার মেললেন। 
বাইদকে দেখে তার দৃষ্টি আরো লাজুক, আরো বিড়ম্বিত হয়ে গেল। 
বীলজিবাবের কাছে তিনি কুড়ি পেসো। পাবেন। ব্রাইদ মাথ। নামিয়ে 
অভিবাদন করল, অতীতে যেমন সে অন্ত অনেক স্ীলাককে করেছে 
যাঁরা সংকুচিত ছিল না বা যাদের কাছে ভার খণ ছিল না। তারপরে 
সে এগিয়ে চলল । 

ব্যবসায়ীরা বা তাঁদের কর্মচারীরা তাদের দোকানের ভারি কাঠের 
দরজাগুলি খুলছিল। ভদ্র কিন্তু শীতল তাদের দৃষ্টি, ব্রাইদ যখন 
তাঁর পূর্বতন খুশীর চালের অবশিষ্টাংশটুকু সম্বল করে তাদের সামনে 
দিয়ে গেল। এদের প্রত্যেকে তার পাওনাদার। 

প্লাজার ফোয়ারায় এসে রুমাল ভিজিয়ে হাত মুখ ধোয়া সারলো৷ অতি 
সংক্ষেপে । উন্মুক্ত চত্বরের ওপারে জেলের কয়েদীদের জন্ত তাঁদের 
আত্মীয় বঞ্ধুরা সকালের খাবার হাতে নিয়ে সারি দিয়ে দীড়িয়ে 
আছে। খাবার দেখে ব্রাইদের বাসনার উদ্রেক হল না। তার আত্ম! 
কামনা করছিল পানীয়ের বা সেই বন্ত্র কেনার জন্য অর্থ । 

রাস্তীয় তার অনেকের সঙ্গে দেখ। হল, একদা যার! তার বন্ধু আর 
সমকক্ষ ছিল, আর তার প্রতি যাদের ধের্য আর বদাম্ততা একটু 
একট করে নিঃশেষ হয়েছে । উইলার্ড গেডি আর পল তার পাশ 
দিয়ে দ্রুত চলে গেল অতি শীতল ও হৃম্ব মাথা নেড়ে, ওরা ফিরছিল 
পুরনে! ইন্ডিয়ান রাস্তায় ঘোড়ায় চড়া শেষ করে। বিলি কেওগ শিস্‌ 
দিতে দিতে যাচ্ছিল হাতে নিয়ে কতকগুলি টাউক। ডিম, তার আর 
ক্্যানসির প্রাতরাশের জন্য । এই হাসি খুশী ভাগ্যদেরীর বালসেন। 
বাইদের একজন শিকার। তাকে সাহায্য করতে পকেটে হাত 
ঢুকিয়েছে বোধ করি সে-ই সব/চয়ে বেশী বার। কি্ত মনে হল কে ওগও 
নিজেকে সুরক্ষিত করেছে আরো আক্রমণের বিরুদ্ধে। তার ছোট্র 
এাভিবাদন আর ধূসর চোখের ভীতিজনক পূর্ণ দৃষ্টি রাইদের পদক্ষেপ 
দ্রুততর করল, কারণ বেপরোয়া ভাবে আবার একটি ছোট্ট খণের 
কথা। ছুলবে সে সবেমাত্র ভীবছিল। 

এই নিঃসঙ্গ ব্যক্তি এর পর একে একে তিনটি পানশালায় গেল। এর 
সব গুলিতেই বহুদিন তার অর্থ, বাকির খাতা বা সমাদর শেষ হয়েছে । 
কিন্তু এই প্রভাতে ব্রাইদের মনে হচ্ছিল শত্রুর পায়ের ওলায় লুটিয়ে 


১২৬ 


পড়তে সে পারে একফোটা আগুয়ারদিয়স্তের জন্য । ছুটি বার-এ 
সাহস করে পানীয় চাইবার প্রত্যুত্তরে এমন ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যাত হল 
যে গালির চেয়ে তার জালা অনেক বেশী। তৃত'য় দোকানটি আধুনিক 
আমেরিকান পদ্ধতিতে আরো বিশ্বানী। এখানে তাকে ঘাড় ধরে 
ধারা দেওয়া হল। হুমড়ি খেয়ে সে পড়ল রাস্তায় মুখ থুবড়ে। 
এই শারীরিক অবমাননা! লোকটির অন্তরে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এনে 
দিল। আপ্তে আস্তে যখন সে নিজেকে উঠিয়ে নিয়ে হেঁটে চলে গেল, 
তার মুখমগ্ুলে সম্পূর্ণ নিশ্চিশ্তত1র ভাব ফুটে উঠল । যে সসংকোচ 
কৃত্রিম হাঁসির ভাব তাঁর মুখে প্রায় মুদ্রিত হয়ে গিয়েছিল সেটা মিলিয়ে 
গেল, শান্ত এবং শয়তানী দৃট প্রতিজ্ঞার ভাব সেখানে দেখা গেল। 
ব্দমায়েশির সমুদ্রে বীলজিবাঁব হাবুডুবু খাচ্ছিল, ভদ্রজগতের একটি 
ক্গীণ-শুত্র কোন রকমে আকড়ে ধরে । সে জগৎ তাকে ধাক। দিয়ে ফেলে 
দিয়েছে । তার মনে হয়েছিল যে এই চুড়ান্ত ধাক্কায় সেই সুত্রটি ছিড়ে 
গেল আর ডুবন্ত মানুষ বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দেবার পরে যেমন হয় 
তেমনি প্রশান্তি সে অনুভব করল। 

রাস্তা থেকে উঠে ব্রাইদ গেল এক কোণে, দাড়িয়ে দঈীড়িয়ে জামা- 
কাপড়ের ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলল, চশম! পরিক্ষার করে নিল । 
“আমাকে করতেই হবে, এ আমাকে করতেই হবে", নিজেকে সে বলল, 
টেঁচিয়েই। “যদি এক কোয়া রাম পেতাম তাহলে আমি ঠেকিয়ে 
রাখতে পারতাম আরো কিছুকাল । কিন্তু আর রাম নেই বীলজি- 
বাবের জন্য, যে নামে ওরা আমাকে ডাকে । পাতালের আগুনের 
দোহাই, শয়তানের ভান হাতে যদি আমাকে বসতেই হয় তাহলে 
কোট খরচ, কাউকে দিতেই হবে। মিঃ গুড়উইন তোমাকে এবার কিছু 
খসাতে হবে । তুমি ভালো লোক কিন্ত লাখির ধাক্কায় নর্দমায় পড়ার 
পরে কোন ভদ্দলৌক আর ভদ্রতার সীমায় থাকতে পারে না। 
ব্যাকমেল শব্দটা শুনতে ভালো নয় কিন্তু জামি যে রাস্তায় চলেছি 
তার পরবতী স্টেশনের নাম ওই শবটি 1, 

পদক্ষেপে স্থির উদ্দেশ্য নিয়ে রাইদ এবার পা চালালো শহরের মধ্য 
দিয়ে সমুদ্র তীরের বিপরীতের পাড়ার দিকে । নিগ্রোদের নোংরা ঝোপড়ি- 
গুলি পেরিয়ে, গরীব মেসতিজোদের ছবির মতো কুটিরগুলি ছাড়িয়ে । 
রাস্তার অনেকগুলি কোণ থেকে সে দেখতে পাচ্ছিল গাছের ছায়ার 


১২৭ 


ফাঁকে জঙ্গলে ভরা টিলার ওপরে গুডউইনের বাড়ি। ছোট হুদের 
পুলটি পেরিয়ে যেতে যেতে সে দেখতে পেল সেই বুদ্ধ ইনডিয়াঁন 
গালভেজ কাঠের ফলকটি পরিষ্কার করছে যাতে মিরাফ্লোরেসের নাম 
খোদাই করা আছে। হুদের পরেই গুডউইনের জমি আস্তে আস্তে 
উচু হয়ে গেছে। একটি ঘাসে ছাঁওয়! সড়ক, ছু-পাশে বদান্ত ক্রান্তীয় 
অঞ্চলের বহুবিধ ছায়াঘেরা ফুলগাছের শোভা, ঘুরে ঘুরে গিয়েছে 
কলার বাগানের পাশ দিয়ে, শেষ হয়েছে সেই আবাসস্থলে । লঙ্ব। 
লম্বা! দৃঢ় পা ফেলে ব্লাইদ চলল এই রাস্তা ধরে। 

গুডউইন তাঁর শীতল বারান্দায় বসেছিল, তার সেক্রেটারীকে চিঠির 
জবাব মুখে মুখে বলছিল, সেক্রেটারী পাতল। চেহারার একজন স্থানীয় 
যুবক। এই গৃহস্থালীতে আমেরিকান নিয়মে প্রাতরাশের ব্যবস্থা, 
তাই খাওয়া দাওয়া চুকে গেছে ঘণ্টাখানেক আগে। 

ধাকা খাওয়া লোকটি সিড়ি পর্যন্ত এসে একটি হাত বাড়ালে । 
গুড মরনিং ব্লাইদ+ গুডটইন বলল, “উঠে এসো, চেয়ার নাও, বলো 
আমি কি করতে পারি।, 

“আমি তোমার সঙ্গে একান্তে কিছু বলতে চাই | 

গুঁডউইন তার সেক্রেটারীকে ইঙ্গিত করল, সে হেঁটে চলে গেল দূরে 
আমগাছের নীচে, একটা মিগারেট ধরালো । তার খালি করা চেয়ারে 
রাইদ বসলো । 

“আমার কিছু টাকা চাই” বলে ফেলল একগ্ু য়ের মতো । 

“আম ছুঃখিত', গুডউইনও তেমনি সৌজা সুজি উত্তর দিল, “কিন্তু তুমি 
পাবে না। মদ খেতে খেতে এবার তুমি মরবে ব্লাইদ । তোমার বন্ধুর! 
যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে যাতে তৃমি আবার উঠে দাড়াতে পারো । কিন্ত 
তুমি নিজে ভাল হবার চেষ্টা করলে না। তোমার ধবংসের পথে টাকা! 
যুগিয়ে আর কোন লাভ হবে ন1 1, 

“আরে ভাই” ব্রাইদ বলল চেয়ারটা পিছন দিকে হেলিয়ে, (প্রশ্নটা এখন 
আর সামাজিক অর্থনীতির নয়। সে পালা চুকে গেছে। আদি 
তোমাকে ভালবাসি গুডউইন। আজ আমি তোমার পীঁজরে ছুরি 
চালাতে এসেছি । আজ সকালে এসপাদার সেলুন থেকে আমাকে 
লাথি মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। সমাজ আমার আহত 
অনুভূতির খেসারত দিতে বাধ্য ।, 


১২৮ 


আমি তো তোমাকে লাথি মারিনি। 

“না, কিন্ত সাধারণভাবে তুমি সমাজের প্রতিনিধি । একটি বিশেষ 
অর্থে তুমি আমার শেষ আশা । শেষ পর্ধস্ত আমাকে এট করতে 
হচ্ছে। মাসখানেক আগে আমি একবার চেষ্টা করেছিলাম যখন 
লোলসাদার লোকের! এসে এখানে সব তোলপাড় করছিল। তখন 
আঙ্ি এট। করতে পারিনি । কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন । আমি 
এক হাজার ডলার চাই, গুডউইন। আর তুমি এই টাক আমাকে 
দেবে ।, 

“কেবল গত সপ্তাহে” গুডউইন হেসে বঙগল, “একটি মাত্র রপোর ডলার 
তুমি চাইছিলে ।' 

'এট| প্রমাণ করে, ব্লাইদ বলল লঘু স্বরে, যে তখনো আমি সং ছিলাম, 
যদিও চাপ বাড়ছিল। পাপের বেতন এক পেসো বা! আটচল্লিশ 
সেন্টের কিছু বেশী হওয়া উচিত। এসো কাঁজের কথায় আসা যাক। 
আমি তৃতীয় অঙ্কের খল নায়ক। আমার স্বল্পকালের খেটে খুটে 
পাওয়। হাততালি আমাকে পেতে দাও । আমি দেখেছিলাম তোমাকে 
প্রেসিডেন্টের ব্যাগভন্তি টাকা সরাতে । আমি জানি এটা ব্র্যাকমেল 
কর! হচ্ছে কিন্ত মূল্যের ব্যাপারে আমি খুব উদার। আমি জানি আমি 
একজন সম্ত। খলনায়ক -করাতিকলের যাত্র। দলের মতো-কিন্তু তুমি 
আমার একজন বিশিষ্ট বন্ধু, তোমাকে আমি বেশী চাপ দিতে চাইনা ।, 
“একটু খুলেই না হয় বললে", গুডউইন বলল, শান্তভাবে চিঠিগুলি 
গুছাতে গুছোতে। 

“ঠিক আছে” বীলজিবাব বলল, “আমার ভাল লাগছে যে ব্যাপারটা 
তুমি সহজভাবে নিচ্ছ! আমি থিয়েটার পছন্দ করিনা। অতএব 
তুমি ঘটনাগুলি জানার জন্বা তৈরী হতে পারে" লাল আগুন, চুন আর 
জগঝম্পের বাছ ছাড়াই ।' 

'যে রাত্রে হিস্‌ ফ্রাই বাই নাইট পলায়নপর মহাঁমহিম শহরে এলেন, 
সে রাত্রে আমি অত্যন্ত মাতাল হয়েছিলাম । তুমি মাপ করবে এই 
উক্তিতে আমি গর্ব প্রকাশ করে থাকলে । কিন্ত সেই আকাজ্ষত 
অবস্থায় পৌঁছান আমার পক্ষে কঠিন আয়াস সাধ্য ব্যাপার ছিল। 
কেউ একটা চৌকি রেখেছিল মাদাম! ওরতিজের হোটেলের বাইরে 
কমলালেবু গাছের নীচে। আমি পাঁচিল ডিডিয়ে এসে তার ওপর 


৪ ১২৪১ 


শুয়ে ঘুমোচ্ছিলাম । আমার ঘুম ভেঙে যায় যখন একট কমলালেবু 
গাছ থেকে পড়ে ঠিক আমার নাকে এসে লাগে । আমি কিছুক্ষণ 
শুয়ে শুয়ে স্তর আইজাক নিউটনকে গালি দিলাম--যিনি মহাকর্ষ 
আবিষ্কীর করেছেন, ভার থিয়োরী আপেলেই সীমাবদ্ধ না রাখার জন্য । 
আর তারপরে এলেন মিরাফ্লোরেস আর তার প্রেরসী, সঙ্গে ট্রেজারির 
ব্যাগ, তারা হোটেলে গেলেন। এর পর তোমাকে দেখা গেল সেই 
কেশবিন্তাশের শিল্পীর সঙ্গে কথা বলতে যে দোকানের গল্প করতে 
চাইল দোকান বন্ধ হবার পরেও । আমি আবার ঘুমোতে চেষ্টা 
করলাম-_ কিন্ত আবার আমার বিশ্রাম বিদ্বিত হল, এবার সেই খেলার 
পিস্তলের আওয়াজ দোতলা থেকে । তারপরে আমার ঠিক মাথার ওপর 
কমলালেবু গাছের ডালের ওপর পড়ল দেই চামড়ার ব্যাগট।। 
আমি উঠে পন্ভলাম, বুঝতে পারলাম না এর পরে কিসের বুষ্টি হবে। 
সেনারা, পুলিশের আসতে আরম্ত করেছিল, তাদের পাজাম। স্যটের 
ওপর মেডেল, ব্যাজ সব লাগাতে লাগাতে আর তলোয়ার খুলে__আমি 
তখন হামাগুড়ি দিয়ে কলাগাছের ঝোপের মধ্যে গিয়ে অপেক্ষা করতে 
থাকলাম। ঘণ্টাখানেক সেখানে ছিলাম যার মধ্যে উত্তেজনা থিতিয়ে 
এলো, লোকেরা চলে গেল। আর তার পরে প্রিয় গুডউইন মাপ করো 
আমাকে-আমি দেখলাম তুমি চুপি চুপি ফিরে এলে আর সেই পাক 
রসভর! ব্যাগটি কমলালেবু গাছ থেকে ভুলে নিলে । আমি তোমাকে 
অনুসরণ করেছিলাম আর দেখলাম তুমি সেই বাগ নিয়ে নিজের 
বাড়িতে টুকলে। একটা কমালেবুর গাছ থেকে এক মরশুমে লক্ষ 
ডলারের ফসল বোধহয় ফলের ব্যবসার রেকড়। 

তখন আমি একজন ভদ্রলোক, তাই এই ঘটনার কথ কাউকে বলিনি । 
কিন্ত মাজ আমাকে লেলুন থেকে লাথি ঘেরে বের করে দিয়েছে, 
আমার আচার সংহিতা কনুইএর ধাক্কায় ছিটকে পড়েছে, আর 
আমি আমার মায়ের দেওয়া উপাসনার বই বিক্রি করতে পারি তিন 
আঙল আথয়ারদিয়ন্তের জন্য । আমি জ্ু-এর প্যাচ বেশী করে কষব না। 
তোমার কাছে এট! ।নশ্চয়ই এক হাজার ডলার মুল্যের হবে যে সেই 
চৌকিতে সারাক্ষণ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম একবারও না জেগে উঠে আর 
কিছু না দেখে ।; 

গুডউইন আরে! ছুটি চিঠি খুলল, পেন্সিলে কিছু নোট করল চিঠিগুলির 


১৩০ 


ওপর। তারপর সে ডাঁকলো, ঘ্যানুয়েল” তার সেক্রেটারী তৎক্ষণাৎ 
সপ্রতিভ ভাবে এসে হাজির । 

£এরিয়েল, কখন ছাড়বে? গুডউইন জিগগেস করল। যুবকটি 
উত্তর দিল, “তিনটের সময়, সেনিওর। তীর বরাবর নীচের দিকে পুন! 
সলেদাদ পর্যন্ত যাবে ফল বোঝাই সম্পূর্ণ করতে । সেখান থেকে সোজা 
নিউ অলিয়নসে যাবে দেরী না করে । 

“বিউয়েনো, বেশ 1? গ্ুডউইন বলল, 'এই চিঠিগুলি কিছুক্ষণ অপেক্ষা 
করতে পারে।, 

সেক্রেটারী আবার আমগাছের নীচে সিগারেটে মন দিল । 

“মোট সংখ্যায় কত টাকা তোমার ধার আছে এই শহরের বিভিন্ন 
লোকের কাছে, আমার কাছে তুমি য। ধার করেছ তা ছাড়া ? 

'পাচশ আন্দাজ” ব্রাইদ হাঁলক। গলায় বলল। 

যাও শহরে কোন জায়গায় গিয়ে তোমার ধারের একটা লিস্ট করে 
আনো” গুডউইন বলল | “ছু ঘণ্টার মধ্যে ফিরে এসো) তোমার সঙ্গে 
গানুয়েলের হাতে টাক! দিয়ে আমি পাঠাবো । আর তোমার জন্য 
ভদ্র এক জোড়া পোশাক জোগাড় করে রাখব। তিনটের সময় তুমি 
এরিয়েল-এ চড়ছ। ম্যানুয়েল তোমাকে স্টসমারের ডেক পর্যন্ত পৌছে 
দেবে। সেখানে সে নগদ এক হাজার ডলার তোমার হাতে দেবে। 
ননে হয় আমাদের আলোচনা করার দরকার নেই এর পরিবর্তে 
তোমাকে কি করতে হবে)? 

যা, আমি জানি, খুশী গলার বাইদ বলল। আমি সারাক্ষণ মাদাঁম। 
9রতিজের কমলালেবু গাছের নীচে ঘুমিয়ে ছিলাম । আর, কোরালিও 
আমাকে চিরকালের জন্ত ছেড়ে যেতে হবে । তাই হবে, আমার পাট 
আমি করব। কমলে আমার আর কাঁজ নেই। তোমার প্রস্তাব 
উত্তম । তুমি ভালো লোক গুডউইন, আর তোমাকে আমি অল্নেই 
ছেড়ে দিলাম । কিন্তু ততক্ষণ, আমার অত্যন্ত তেষ্ট। পেয়েছে ভাই, 
আমার... 

«এক সেনটোভোওঞ্নয়।” গুডউইন দৃঢ়স্বরে বলল। “যতক্ষণ না তুমি 
এরিয়েল-এ চড়ছ। এখন টাকা হাতে পেলে আধঘণ্টার মধ্যে তুমি 
মাতাল হবে ॥ 

কিন্ত সে দেখল বীলজিবাবের চোখের শিরাগুলিতে রক্ত জমে আছে, 


১৩১ 


তার দেহ শিথিল, হাত কাপছে। নীচু জানল! ডিঙিয়ে সে গেল 
খাওয়ার ঘরে, একটি গ্রাস আর ডিকানটারে ব্রাণ্ডি নিয়ে এলো । 

“যাই হোক, যাবার আগে এক চুমুক খেয়ে যাও, সে বলল, যেন 
বন্ধুকে আপ্যায়ন করছে এমনি স্বরে । 

বীলজিবাবের চোখ জ্বল জ্বল করতে থাকলে, আকাজিক্ষিত তৃপ্তি তার 
চোখের সামনে দেখে । তার সমস্ত অন্তরাত্মা যে জন্ত পুড়ে যাচ্ছিল। 
কেবল আজই তার বিষাক্ত স্নায়ুগুলি তাদের স্থের্যের জন্য প্রয়োজনীয় 
মাত্র পায় নি। সে কারণে তাদের প্রতিশোধ ছিল বড় যন্ত্রণাদায়ক। 
ডিকানটারটা আকড়ে ধরল, গ্রাসের সঙ্গে তার মুখটা ঠোকাঠুকি হতে 
লাগল তার হাতের কীপুনিতে। গ্লাঁসটি সে পুর্ণ করে ভরল, সোজা 
হয়ে দাড়ালো, এক হাতে উঁচু করে তুলে ধরল সেই গ্লাম। পতনের 
অতল তল থেকে একবারের জন্য মাথা উচু করে দাড়ালো । সহজ- 
ভাঁবে গুডউইনকে মাথ। নেড়ে অভিবাঁদন করল, পূর্ণ গ্লাস উঁচু করে 
ধরে মৃছ্‌ স্বরে। স্বাস্থ্য কামনা করল তার হৃত স্বর্গের দিনে যেমন 
লোকেরা করত তেমনিতাবে। আর তার পরে হঠাৎ, এত দ্রুত যে 
ব্রা্তি চলকে তার হাতে পড়ল, গ্লাসটি সে নামিয়ে রাখল না ছু'য়ে। 
ছু ঘণ্টার মধ্যে? শুকনে ঠোটে এই শব্দগুলি উচ্চারণ করে সে সিডি 
দিয়ে নেমে গেল, শহরের দিকে মুখ করে চলতে লাগল । কলাবাগানের 
শীতল কোণে এসে বীলজিবাব দাড়ালো, বেলটের বাঁকল্‌ টেনে আর 
একটি গর্তে তার জিব্টি পরিয়ে দিল । 

বাতাসে আন্দোলিত কলাগাছের পাতা লক্ষ করে জ্রতপ্ত রোগীর 
মতো বলতে লাগল, “আমি পারলাম না, আমি চেয়েছিলাম কিন্ত 
পারলাম না। একজন ভদ্রলোক কেমন করে তার সঙ্গে পাণ করবে 
যাঁকে সে ব্যাকমেল করছে !; 


বারে। 
জুতো 


জন ডি গ্রাফনারড আাটউড কমলের ফুল, ডাটা, শেকড় সমেত খেয়ে 
ফেলগল। উষ্ণমণ্ডল তাকে আত্মসাৎ করে ফেলেছে। সে তার 


১৩২ 


কাজের মধ্যে মহ! উৎসাহে ডুবে গেল। কাজ ছিল রোজিনকে তুলবার 
চেষ্টা করা । 

কমল যারা খেয়ে থাকে কখনো তার! সেট। শুধু খায় না। তার সঙ্গে 
থাকে কোন ঝাঝালেো চাটনি । চোলাইকারীরা এই চাটনির 
রাধুনি। জনির মেনু কার্ডে এই চাটনির নাম লেখা ছিল ব্রাণ্ডি। 
দু জনের মাঝখানে একটি বোতল, মে আর বালি কেওগ কনন্থুলেটের 
বারান্দায় রাত্রিতে বমে বসে তারম্বরে অভব্য গান গাইত, আর 
স্থানীর লোকেরা দ্রুত পায়ে রাস্তা দিয়ে চলে যেত, নিজেদের মনে 
বড় বিড় করে মন্তব্য করত ডায়াবলোস আমেরিকানোসদের সম্বন্ধে । 
একদিন জনির ছোকরা চাকর ডাক নিয়ে এসে টেবিলে ঢেলে দিয়ে 
গেল। জনি তার দোলনা থেকে ঝুঁকে বিষণভাবে চার পাঁচখানি 
চিঠি নেডে চেড়ে দেখল। কেওগ বসেছিল টেবিলের এক প্রান্তে, 
কাগজ কাঁটা ছুরি দিয়ে মলসভাবে একটা তেঁতুল বিছের পাগলি 
কাটছিল, বিছেট। কাগজপত্ত্রের মধ্যে এসে পড়েছিল। জনি কমল 
ভগ্ষণের সেই পধায়ে এসে পৌছেছিল যখন সাঁরা বিশ্ব মুখে বিহ্বাদ 
ঠকে। সহ পুরোন 1জ।পস” সে নালিশ করল । “বোকা সব লোক 
এই লিখে জানতে চায় এই দেশের সব খবর। সবাই জানতে চায় 
কলের চাষ কী ভাবে করতে হয় আর কেমন করে ধনী হওয়। যায় কাজ 
নাকরে। এদের মধ্যে অর্ধেক লোক জবাবের জন্য স্ট্যাম্পও পাঠায় 
211 ওরা ভাবে কনসালের আর কোন কাজ নেই ওদের চিঠি লেখ! 
চাড়া। ওই খামগুল খেলো আমার হয়ে আর দেখ তো ওর! কি 
ায়। আমি এত ছুলহি যে নড়তে ইচ্ছে করছে ন1।' 

.কণগুগ, যার খ্বভাবে বিএক্তির কোন স্থান ছিল ন!) একটা চেয়ার টেনে 
গানলো! টেবিলের পাশে, তার গোল।পী মুখে আদেশ পালনের হাসি, 
ঢঠিগুলি খুলতে স্বর করল। চারটি চিঠি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন 
আঞ্চল থেকে নাগরিকদের লেখ! যারা মনে করে কোরালিওর কনসাল 
খবরের একজন বিশ্বকোব। তারা লম্বা লম্বা প্রশ্ন তালিকা 
পাঠিয়েছে সংখ্যানুক্রমে সাজানো, জলবায়ু উৎপন্ন দ্রব্য, সুযোগ 
সুবিধা, আইনকানুন, ব্যবসার সুবিধা, আরও অন্থান্ত পরিসংখ্যান 
জানতে চেয়েছে সেই দেশের যে দেশে কনসাল তাদের রাষ্ট্রের 
প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান লাভ করেছে। 


১৩৩ 


“ওদের এক লাইন লিখে দাও বিলি” সেই অচঞ্চল সরকারী কর্মচারী 
বলল, “সাম্প্রতিক কনম্থলার রিপোর্টটি পড়ে দেখবাঁর জন্ত | বলে দাও 
সেই সাহিত্যিক সণিমুক্তাুলি স্টেট ডিপার্টমেন্ট সানন্দে পাঠিয়ে দেবে । 
আমার নামটাঁও তুমি সই করে দাও। তোমার কলমের খচ. খচ, শব 
যেন আমার কানে না আসে, তাহলে আমার ধুম ভেঙে যাবে) 
নাক ডাকিও না” বিলি বলল হাসিমুখে, তালে তোনার কাজ আমি 
করে দেব। তোমার একদল সহকারী দরকার। জান না তু 
তোমার রিপোর্ট কি করে তৈরী করবে। আরে, জেগে গুঠ এক 
মিনিটের জন্য! এই যে আর একটা চিঠি, এট! এসেছে তোমার নিজের 
শহর থেকে, ডেলসবার্গ ।; 
“তাই নাকি” মৃদু স্বরে জনি বলল, সামান্য একট নিবন্ধতা জনিত 
আগ্রহ দেখিয়ে, “কি ব্যাপার 1, 
“পোস্টমাস্টার লিখেছে” ব্যাখ্যা করে কেওগ, বলছে শহরের একজন 
বান্দা লিখেছে তোমার দেশে একটি জুতোর দোকান খোলার 
মতলব। জানতে চায় তুমি কি মনে করে! এই ব্যবসায় লাভ হবে ? 
বলছে সে শুনেছে এখন এই উপকূলে বাসার বাজারে তেজীভাব 
চলছে আর তাই সেই সুযোগটা সে সুরু থেকেই নিতে চায় । 
গরম আর তার বদমেজাজ সত্বেও জনির দোলন! ছুলতে লাগল তার 
হাসিতে । কেওগও হাসল । বইয়ের তাক থেকে পৌষ! বীদরটাও 
কিচ্‌ কিচ. করে উঠল ডেলপবার্গের চিঠিখানির ওপর শ্রেষাক্মক টিপ্নন্ি 
শুনে। 
“গণ্ুমূর্খ সব” কনসাল টেঁচিয়ে বলল, “জুভোর দোকান, এর পরে ন 
জানি এরা কি জানতে চাইবে, ওভারকোট ফ্যাকটরি আমীর বো, 
হয়। বল তে! বিলি, আমাদের তিন হাজার নগরবাসীর মধ্যে ক 
জনের পায়ে তুমি জুতো দেখেছ ? 
কেগুগ ভেবে চিন্তে হিসেব শুরু করল, "দেখা যাক, তুমি আর আমি 
আর-_-, 
“আমি নই” জনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, উক্তিটি যদিও সত্য নয়, একটি 
1 তুলে দেখালো! যে পা ঢাক ছিল হরিণের চামড়ার জাপাতে| দিয়ে 
'জুতোর শিকার আমি হইনি বেশ কয়েক মাঁস।, 
“কিত্ত তোমার আছে তো, কেওগ বলে চলে, 'আর আছে গুডউই? 


১৩৪ 


আর ব্রানচার্ড আর গেডি আর লুটস্‌ আর ভঃ গ্রেগ আর সেই 
ইটালিয়ান যে কলার কোস্পানীর দালাল; আর আছে দেলগাদের, না, 
ও খড়ন পায়ে দেয়। ও, হ্যা আরে? আছেন মাদাম ওরতিজ, যিনি 
হোটেল চালান, সেদিন রাত্রে দেখলাম তার পায়ে লাল একজোড়া 
জুতো, আর পাসা, তার মেয়ে যে যুক্তরাষ্ট্রে কুলে পড়তে গিয়েছিল 
আর পদশোভার আধুনিক চিন্তাধারা সঙ্গে নিয়ে এসেছে । আরো 
আছে, কমানডানটের বোন যিনি উৎসবের দিনে পা সাজান, আর 
মিসেস গেডি ছু-নম্বরের জুতো পরে, স্প্যানিশ গড়নের মেয়েদের মধ্যে 
এই মোটামুটি । দেখ। যাক, আচ্ছ। সৈম্তাদের মধ্যে কেউ জুতো পায়ে 
দেয় কি, ছাউনিতে! না, তার! কেবল মার্চ করে যাবার সময়ে জুতো 
পরতে পায়। ব্যারাকে তাদের ছোট ছোট পায়ের আন্কুলগুলি তার! 
ঘাসের ওপরই ফেলে ।, 

“প্রায় ঠিক” কনসাল একমত হল। তিন হাজারের মধে। বিশজনের 
বেশী নেই যাঁরা তাদের হাটার ব্যবস্থায় চামড়া কখনো অন্ুভৰ 
করেছে। ও, নিশ্চর, কোরালিও হচ্ছে আদর্শ জায়গা একটি উদ্ভোগ- 
শীল ভুতোর দোকানের পক্ষে-যে দোকান তার সহ্দ। হাতছাড়। 
করতে চায় না। ভাবি বুড়ে! প্যাটারসন কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা 
করে লিখেছে! ওর মাথায় অনেক মঞ্জার জিনিস থাকতো যাদের ও 
বলত ঠাট্টা । ওকে একটা চিঠি লেখ বিলি। আমি বলে যাচ্ছি, 
আমরাও ওকে কিছু ফিরতি ঠাট্। করি ।? 

কেওগ কলম ডুবিয়ে জনির বলে যাওয়া চিঠি লিখল। অনেকবার থেমে, 
ধোয়া ছেড়ে, বোতল আর গ্রামের চলাফেরার পরে ডেলসবার্গের চিঠি 
খানির জবাৰটি এই রকম দাড়ালো । 

মিঃ ওবেদিয়। প্যাটারসন, 

ডেলসবার্গ, আলাবামা। 

প্রিয় মহাশয়, আপনার ২র জুলাইয়ের পত্রের উত্তরে আমার বিনীত 
নিবেদন এই ঘে আমার মতে এই জনবহুল পৃথিবীতে এমন জায়গ! 
চোখে পড়ছে ন। যেখানে সকল তথ্য ইঙ্গিত করছে প্রথম শ্রেণীর একটি 
জ্রুতোর দোকানের প্রয়োজনীয়তার, কোরালিও শহর ব্যতীত । এখানে 
তিন হাজার বাসিন্দা অথচ একটিও জুতোর দোকান নেই। এই 
পরিস্থিতিই আপনাকে বুঝিয়ে বলে দিচ্ছে । এই উপকূল খুব দ্রুত 


১৩৫ 


উদ্যোগশীল ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যস্থল হয়ে উঠছে কিন্তু জুতোর ব্যবস! 
করুণভাবে উপেক্ষিত বা বিস্মুত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের শহরের 
অনেকেরই জুতো! নেই বর্তমানে । 
এই অভাব, যা! উপরে বিবৃত হল, তা ছাড়া এখানে প্রয়োজন আছে 
একটি ভাটিখানা, উচ্চতর গণিতের কলেজ, কয়লার আড়ং আর 
পরিচ্ছন্ন পাঞ্চ এণ্ড জুডি শো-এর। 
নিবেদনান্তে ইতি, 

আপনার বিশ্বস্ত ভৃত্য, জন ডি গ্রাফনরিড আ্যটউড। 
ইউ এস কনসাল, কোরালিওতে নিযুক্ত। 


পুনশ্৮:-_হ্যালো ওবেদিয়। কাকা, পুরোন বার্গ শহর কেমন চালিয়ে 
যাচ্ছে। তুমি আর আমি না থাকলে সরকার চনত কি করে বলতো | 
শস্রই একটি সবুজ মাথা টিয়া পাখি আর এক কাদি কলার প্রত্যাশ! 
করতে পারো । তোমার পুরোন বন্ধু | 
জনি 
“পুনশ্চটা দিলাম” কনসাল ব্যাখ্যা করল, “ঘাঁডে €বেদিয়। কাক! 
চিঠিটার সরকারী সুরের জন্ত দোষ ধরতে না পারে। বিলি তুমি এই 
চিঠি এবার জুড়ে দিয়ে পাঞ্চোকে পাঠাও পোস্টাপিশে । আহিয়াদনে 
জাহাজ কাল ডাক নিরে যাবে আজ যদি তার ফল বোঝাই শেষ হয় ।, 
কোরালিওর দিনলিপিতে রাত্রের অনুষ্ঠানগুলিতে কোন পরিবর্তন 
ছিল না। নগরবাসীদের আমোদ-প্রমোদ ছিল সাদামাট। আর 
নিদ্রাতুর। তারা খালি পারে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতো, মৃছু স্বরে কথ। 
বলত, সিগার বা সিগারেট টানতে] । 
রাস্তার মিনিটে আলোর দিকে তাকালে দেখা যেত বাদামী ভৌতিক 
আকৃতির একটি চলন্ত স্ুত্রজাল জড়িয়ে গেছে জোনাকির উন্ন্ত 
মিছিলের সঙ্গে । 
কয়েকটি বাড়ী থেকে করুণ গীটারের টুং-টাং রাত্রির বিষপ্নতা বাড়িয়ে 
দিত। বড়ো বড়ো গেছো ব্যাড ঝোপের মধ্যে তারম্বরে কট, কট, 
আওয়াজ তুলতো৷ যেন বাউল দলের শেষের লোকটির রামতালের 
আওয়াজ । রাত্রি নটার মধ্যে রাস্তাগুলি জনশৃন্ত হয়ে যেত। 
কনম্থুলেটের অনুষ্ঠান লিপিতেও কোন বৈচিত্র্য ছিল না! কেওগ 


১৩৬ 


প্রতি রাত্রে আসত কনসালের বাসস্থানের পিছনের সমুদ্রসংলগ্ন 
ৰারান্দায়, কোরালিওর একমাত্র শীতল জায়গায়। 

ব্রাণ্তড সচল থাকতো, আর মধ্যরাত্রের পুবেই স্বেচ্ছানিবীসিত 
কনসালের হৃদয়াবেগ উলে উঠত । তখন সে কেওগকে বলত তার 
ছে টেনে দেওয়া প্রেনপর্বের কথা। প্রতি রাত্রিতে কেওগ ধেধের 
সে শুনত সেই কাহিনী, অক্লান্ত সহানুভূতি তার মজুদ থাকতো] | 
“কিন্ত মুতের জন্যও মনে কোরো না', জান প্রতিবার এইভাবে সেই 
বর্ণনা শেষ করত, “যে আমি সেই মেয়েটির জন্ত কষ্ট পাচ্ছি। আমি 
তাকে ভুলে গেছি। আমার মনেও আসে নাওর কথা । এই দর্জা 
দিয়ে ও যদি এখন ঢোকে আমার নাড়ীর একটি স্পন্দনও বাড়বে ন।। 
সে সব অনেকদিন চুকে গেছে।, 

তা কি আর জানি না! কেওগ উত্তর দিত, 'ভুলে গেছই তো। ঠিকই 
করেছ। তার কি উচিত ছিল সেই কি যেন নাম- ডিস্ক পসনের কথা 
শোনা-- তোমার নামে যে সব বানিয়ে বলত !' 

“পিঙ্ক ডসন !, জনির গলার স্বরে বিশ্বের ঘণা। হতভাগ। সাদ। 
হাই) ও ছা তাই পাঁচশ একর চাষের জাঁমর মালিক ছিল যদিও 
আর সেটাই বড়ো হল। একদিন নী একদিন আমি বদলা নেবা" 
স্বযোগ পাবো । ডসনরা কেউ না) কিন্ত আলাবামার আটউডদেব 
সবাই চেনে। জানো বিলি, আমার মা ছিলেন একজন ডি 
গ্রাফনারড !, 

“তাই না কি, জানতাম না তো? কেওগ বলত, সে অন্তত তিনশ বার 
শুনেছে যদিও | 

“সত্যি! হ্াঠনকক কাঁউনটির ডি গ্রাফনরিড | কিন্তু €ই মেয়ের কথা 
আমি একেবারেই চিন্তা করি না, করি কি বিলি? 

“এক মিনিটের জন্ও নয়, সেই প্রেমজিৎ যুধক এই শেঘ বাক্যঠি 
শুনতে পেতো । 

এর পরে জনি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ত আর কেওগ ফিরে আদতো৷ 
তাঁর নিজের বাসায়, প্লাজার এক কোণে, ক্যালাবাশ গাছের নীচে। 
ছু-এক দিনের মধ্যে ডেলসবার্গের পোস্টমাস্টারের লেখ! চিঠি ও তাঁর 
উত্তরের কথা ভূলে গেল কোরালিওর নির্বাসিতরা। কিন্তু ২৬শে 
জুলাই ঘটনার বৃক্ষে সেই উত্তরের ফল দেখা দিল। 


১৩৭ 


আনদেদর নামের ফলের জাহাজটি কোরালিওতে নিয়মিত যাওয়া 
'আসা করত, সেটা দুরে দেখা গেল নোঙর করতে । তীরভূমিতে লাইন 
দিয়ে দর্শকের! ফ্াড়িয়ে পড়েছে । কোয়ারানটিনের ডাক্তার আর 
কাসটম হাউসের কর্মীরা বৈঠ৷ বেয়ে গেল তাঁদের কর্তব্য পালন 
কলাত | 

ঘণ্টাখানেক পরে বিলি কেওগ বেড়াতে বেড়াতে কনসুলেটে এসে 
হাজির, পরিচ্ছন্ন সাদা লিনেনের পোশাক, মুখে ভাসি যেন একটি তৃপ্ত 
হাওর । 

“মান্দাজ করো, কি হতে পারে” দোলায় বিশ্রামরত জনিকে সে বলল । 
“এই গরমে আন্দাজ করা যাঁয় নী", অলসভাবে জনি উত্তর দিল। 
“তোমার জুতোর দোকানের লোকটি এসে গেছে। জুদ্তোর স্টক হা 
এনেছে, সারা মহাদেশ, টেরা ডেল ফুয়েগে। পরধস্ত বিতরণ করা যেতে 
পারে। কাসটম হাউসে বাকসগুলি এখন রাঁখছে। ছটা বজরা 
ভরতি একবার এসেছে, আবার আনতে গেছে। মহাপুরুষদের জয় 
হোক, কিরকম মজার ব্যাপার হনে যখন ঠাট্রাট। বুঝতে পারবে আর 
মিসটার কনসালের সঙ্গে একটা ইনটারভিউ কেঘন জমবে! এই 
উঞ্ণমগ্ডলে নয় বছর থাঁকা যায় সেই মজার মুহুর্তটি উপভোগ করার 
জন) । . 

হাসি পেলে কেওগ সহজ মনে প্রাণ খুলে হাসতে ভালবাশত। 
মাছুর পাতা মেঝেতে একটি পরিষ্কার জারগা বেছে নিয়ে সে সেখানে 
শুষে পড়ল । তার উল্লাসে দেয়ালগুলি কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল । 
জনি পাশ ফিরল, চোখ তার পিট পিট করছিল। 

সে বলল, “আমাকে বোলে! না এমন বোকা কেউ ছিল যে ওই 
চিঠিটাকে সত্যি মনে করেছে ।, 

“চার হাজার ডলারের স্টক হাসতে হাসতে ইফিয়ে উঠে কেওগ 
বলল । এনউ ক্যাসেলে কয়লা নিয়ে যাবার কথ! আছে না? 
বাবসাই যদি করতে চায় এক জাহাজ তাল পাতার পাখা কেন নিয়ে 
এল না স্পিটস বার্গেনে। বুড়ো গর্দভটাকে দেখলান সমুদ্র তীরে । 
ওর গুখখান! যদি একবার দেখতে যখন চশমার মধ্যে চোখ ট্যারা 
করে দেখছিল, ঘিরে থাক। শ পাচেক নাগরিক খালি পায়ে দাড়িয়ে 


আছে ।, 


১৩৮ 


“সত্যি কথা বলছ বিলি' কনসাল জিগগেস করল হুবল গলায়! 
“আমি! তোমার দেখা উচিত মেয়েটিকে ষে ভদ্রলোকের সঙ্গে এসেছে । 
এখানকার সুরকী রঙের সেনিওরিটাদের তার পাশে মনে হচ্ছে 
আলকাতরার শিশু ।' 

'বলে যাও” জনি বলল, 'তবে গাধার মঞ্ডো! হাসিটা থামাও | তোমাৰ 
মতো একজন ধাঁড়ি লোক নিজেকে হাস্তময় হায়েনায় পরিণত করছে 
দেখলে আমার ঘবণ! হয় ।? 

নাম হচ্ছে হ্েমস্টেটের, কেওগ বলে চলে, ডনি উনি একজন্‌--* 
হাঁলো, কি হল এবার ।, 

জনির মৌকাসিন পরা পায়ের শব্দ হল ঠক্‌, দোলনা থেকে লাফিয়ে 
সে নামল । 

'উঠে পড় গাধা” চড়া গলায় সে বলল, 'না হলে ওই কলনদানি দিয়ে 
তোমার মাথা ভাঙব। ওরা হচ্ছে রোজিন আর তার বাবা, হে ঈশ্বর ! 
কী উন্মাদ বোক। প্যাটারসন। উঠে পড়ে। বিলি কেগগ আমাকে 
সাহায্য .করো। হায় ভগবান, এখন আমরা কি করি। সার 
পথিবী কি পাগল হয়ে গেছে ? 

কেওগ উঠে গায়ের ধুলো ঝাড়ল। মুখ চোখে ভধ্য অভিব্যক্তি 
ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। 

“পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, জনি 1 কিছুটা গম্ভীর হয়ে 
বলল । “আমার মনেই আসেনি থে এই মেয়েটি তোমার সেই মেয়ে 
তুমি ব্লবার পুরে । এখন প্রথম কাজ হল ওদের থাকার ভাল 
জায়গ1 ঠিক করে দেওয়া । তুমি যাও, পরিস্থিতির মুখোমুখি তোমাকে 
হতে হবে। আমি গুডউইনের কাছে গিয়ে দেখি, মিসেস গুডউইন 
ওদের থাকতে দেন কিনা, শহরে ওদেরটাই সবচেয়ে ভাল বাড়ি ॥ 
“জিতা রহোঃ বিলি” কনসাল বলল, “সানি জানতাম তুমি আমাকে 
ছেড়ে পালাবে না। পুথিবী ধ্বংস হতে চলেছে, কিন্ত আমরা হয়ত 
সেট। ছু*একদিন ঠেকিয়ে রাখতে পারবো ) 

ছাতা খুলে কেওগ চলল গুডউইনের় বাড়ির দিকে । জনি কোট 
গায়ে দিল, টুপি হাতে নিল। ব্রার্ডির বোতলটা তুলে নিল। কিন্তু 
রেখে দিল পান ন1 করে, তারপর সাহসে ভর করে কদম কদম এগিয়ে 
গেল সমুদ্রতীরের দিকে । 


১৩৯ 


কাস্টম হাউসের দেয়ালের ছায়ায় দেখতে পেল মিঃ হেমস্টেটের আর 
রোজিনকে একদল চোখ-কপালে ওঠা নাগরিকবুন্দ পরিবৃত অবস্থায় । 
কাস্টমসের কর্মকর্তারা খানা-তল্লাস করছিল আর আনদেদরের 
ক্যাপটেন আগন্তকদের আগমনের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে বলছিল। 
রোঁজিনকে দেখাচ্ছিল স্বাস্থোজ্খল, প্রাণবস্ত। চারপাশের অপরিচিত 
পরিবেশ ও বেশ সকৌতুক আগ্রহে দেখছিল। ওর স্ুগোল গণুদেশ 
লঙ্জায় সামান্য রাঁডা হয়ে উঠল তার পূর্বতন উপাঁসককে অভিবাদন 
করতে গিয়ে । ছিঃ হেমস্টেটের জনির করমর্দন করলেন ন্ৃগ্ভভাবে। 
তিনি ছিলেন বৃদ্ধ, বাস্তব বুদ্ধি বিরহিত ব্যক্তি, অগণিত বেহিসেবী 
ব্যবসায়ীদলের একজন, যার। কোন ব্যাপারেই খুশী হতে পারে না, 
তাঁই কেবল খোঁজে নতুন ব্যবসা । 

“তোমাকে দেখে ভারি আনন্দ হল, জন--তোমাঁকে জন বলে ডাকতে 
পারি তো, তিনি বললেন । “তোমাকে ধন্তবাদ জানাই আমাদের 
পোস্টমাস্টারের লেখা চিঠির তৎক্ষণাৎ জবাব দেবার জন্ত। আমার 
হয়ে চিঠিটা উাঁন তোমাকে লিখতে রাজি হয়েছিলেন। আমি সন্ধান 
করছিলাম নতুন কোন ব্যবসার যেটা অগ্ঠ ধরনের আর যাতে লাভও 
বেশী। কাগজে পরেছিলাম 'এই উপকূল আজকাল অর্থ লগ্লীকারীদের 
দৃষ্টি আকষণ করছে। তোমার উপদেশের জন্য আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ 
আর তাই তে! আসতে পারলাম । আনার যা কিছু ছিল সব বিক্রি 
করে সেই টাকায় উত্তর 'অঞ্চল থেকে সব চেয়ে ভালো সব জুতোর স্টক 
কিনে এনেছি। ছবির মত সুন্দর তোমাদের শহর, জন। আশ। 
করি ব্যবসাও ভত ভালে হবে তোমার চিঠি পড়ে যেমন আন্দাজ 
করেছি।, 

জনির যন্ত্রণা কমলো কেওগের আবির্ভাবে। কেওগ খবর দিল, 
মিসেস গুডউইন বাধিত হবেন মিঃ হেমসটেটের ও তীর কন্তার 
ব্যবহারের জন্তা ঘর ছেড়ে দিতে । সুতরাং এখনি মিঃ হেমস্টেটের ও 
রোজিনকে সেখানে নিরে যাঁওয়। হল সমুদ্রযাত্রার ক্লান্তি অপনোদনের 
জন্য । জনি দেখতে গেল কান্টমসের গুদামে জুতোর বাকৃসগুলি 
নিবিদ্বে রাখা হয়েছে কিনা । সরকারী পরীক্ষার জন্য ওগুলো এখন 
সেখানে থাকবে । কেওগ হাউরের মতো হাসতে হাসতে গুডউইনকে 
খুজতে গেল, তাকে বুঝিয়ে বলবে কোরালিওতে জুতোর ব্যবসাঁতে 


১6৩ 


লাভ লোকসানের প্রকৃত অবস্থাটা মিঃ হেমসটেটেরকে যেন খুলে না 

বলে। অন্তত জনিকে একটা সুযোগ না দেওয়া পর্ষস্ত অবস্থা সামলে 

নেবার, যদিও ত' কেমন করে সম্ভব হবে কে জানে । 

সেই রাত্রে কনসাল আর কেওগ কনসুলেটের বারান্দার ঠাণ্ডা বাতাসে 

বেপরোয়। আলোচনায় বসেছিল । 

জনির মনের চিন্তা আন্দাজ করে কেওগ বলল, “ওদের দেশে পাঠিয়ে 

দাও।? 

“তাই দিতাম” একটু থেমে জনি বলল, “কিন্ত বিলি আমি তোমাকে 
মিথ্যে বলে আসছি ।” 

“ঠিক আছে, তাতে কি হয়েছে” বিলি বলল '্রীতির সঙ্গেই। 

“আমি তোমাকে শতবার অন্তত বলেছি” জনি আস্তে আস্তে বলল, 

“যে, সেই মেয়েটিকে আমি ভূলে গেছি, কি বলিনি? 

“অন্তত তিনশ পঁচাত্তর বার» সাঁয় দিল সেই ধৈধের প্রস্তরমূতি। আমি 

মিথ্যে বলেছিলাম", কনসাল দ্বিরুত্তি করল, প্রত্যেকবার । আমি 

তাঁকে এক মিনিটের জন্যও ভুলিনি । গোয়ার গোঁবিন্দর মতে। 

রেগেমেগে আমি চলে এসেছিলাম একবার সে “না” বলেছিল বলে। 

আর গাধার মতে। আমার গর্বও ছিল খুব বেশী আবার ফিরেও তাই 

'যতে পারিনি । আজ সন্ধ্যায় গুডউইনদের ওখানে রৌজিনের সঙ্গে 

কছুক্ষণ কথাধার্ত হল। একট জিনিস আমি জানতে পারলাম । 

তোমার মনে পড়ে সেই চাষা ছোকরার কথা যে গর পেছনে 

লেগেছিল ? 

ডঙ্ক পসন ! কেওগ শুধায়। 

“পিঙ্ক ডলন, রোজিনের কাছে লে গাদ। দেওয়া সিমের তুলাও ছিল না! 

ও বলল, আমার সম্বন্ধে মে ছোকরা ওকে যা বলত ও কোনোদিনই 

সে সব বিশ্বাস করে নি। এখন আমার মনে হচ্ছে বস্তায় পুরে 
:সলাই করে দেওয়া হয়েছে আমাকে । আমার যেটকু সুযোগ ছিল 

সেই আহাম্মকির চিঠিখানা সেটা বরবাদ করেছে । এখন সে আঁদাকে 

ঘণা করবে যখন জানতে পারবে তার.বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এমন ধরণের 
ঠাট্টা করা হয়েছে যে অন্তায় একটি ভদ্র স্কুলের ছেলেও করবে না। 
জুতে।? কি বলব, এখানে কুড়ি বছর বসে থাকলেও কুড়ি জোড়! 
জুতো বিক্রি হবে না। স্প্যানিশ বা ক্যারি বাদামী ছেলেদের, 


১৪১ 


একজনকে ধরে জুতো পরিয়ে দাঁওতো। ওরা কি করবে জানো, 
শীর্যামন করে টেচাতে থাকবে, যতক্ষণ না পা ছুড়ে ছুড়ে সেগুলি 
খুলে ফেলতে পারছে । ওরা কোনদিন জুতো! পরেনি আর পরবেও 
না। ওদের যদি দেশে ফিরে যেতে বলি তাহলে সব আমাকে খুলে 
বলতে হবে আর তখন সে আমাকে কি ভাববে । মেয়েটিকে আমি 
ফাই আগের চেয়ে অনেক নিবিড়ভাবে, আর এখন ও আামার 
নাগালের মধ্যে আসার পরে আমি ওকে চিরকালের জন্য হারাবো, 
কেন না! আমি একট রগড় করতে গিয়েছিলাম থারমোমিটার বখন 
একশ ছু ডিগ্রির দাগে ছিল ।, 

আশাবাদী কেওগ বলল, 'মনে ফুতি রাখো, ওদের দোকান খুলতে দাও। 
মাজ সার বিকেল আমি খেটেছি। জুতোর বাজারে সাময়িক 
তেজীভাব আমরা জাগিয়ে তুলতে পারি। দোকান খোল! হলেই 
আঁমি কিনছি ছ' জোড়া । আমি ঘুরে ঘুরে সকলের অঙ্গে দেখ। 
করেছি জার ছুধিপাকের কথা সবাইকে বুঝিয়ে বলেছি । ওরা সবাই 
স্টূতে। কিনবে কেন্নোর মতো ওদের পায়ের সংখ্যা ভেবে নিয়ে। ফ্রাঙ্ক 
গুডউইন তো কেস ভ্তি কিনবে একজোড়া ছঃজোড়ার বদলে । বন্ধ 
সপ্তাহের সঞ্চয় লগ্লী করবে বলেছে ক্ল্যানসি। এমন কি ডাঃ গ্রেনও 
বলেছেন তিনজোড়া কুমিরের চামড়ার চটী তার চাই, অবশ্য দশ নম্বর 
যদি থাঁকে। ব্রীনচা্ড মিস হেমসটেটেরকে একবার দেখেছে । ও 
একজন ফ্রেন্চশ্লানঃ অন্তত বারো জোড়া না হলে ওর কুলোৰে না। 
চার হাজার ডলারের জুতে! আর বারে! জন খদ্দের” জনি বলল, 'ওসব 
মতলব খা্টবে না। মস্ত একটা সগস্তা, আর সঙগগাঙগান খুজে বের 
করতেই হবে। তুমি বাড়ি যাঞ্চ বিলি, আমাকে একল। থাকতে দাও । 
এট ভামীকে একলাই ভেবে বের করতে হবে। ওই থি স্টারের 
বোত্লট। নিয়ে যাওতে! 1 না, হে, আমেরিকার কনসালের জন্য আর 
এক আউন্লও মদ নয়। আমি সারা রাত্রি চিন্তার পর্দায় সুর 
চড়িয়ে বসে থাকবো এই সমস্যার কোন জায়গায় যদি একটি কোমল 
স্থান থাকে আমি সেটা খুঁজে বের করবোই। যদি না থাকে 
তাহলে শোৌভাময়ী উষ্ণমগ্ডল কৃতিত্ব পাবে আরো একটি লোকের 


সবনাশের ।, 
(কেওগ চলে গেল, বুঝতে পারলে। যে সে থেকে কোন কাজেই আসবে 


১৪২ 


না। জনি টেবিলের ওপর কয়েকটি চুরুট রাখলো, একটি ডেক্ষ চেয়ারে 
নিজেকে বিছিয়ে দিল। হঠাৎ যখন দিনের আলে। ফুটে উঠল, বন্দরেব 
তরঙ্গগুলি একে দিল রূপোলি রেখার তখনে। সে সেখানে বসেছিল । 
তাঁর পরে সে উঠল, শিস্‌ দিয়ে একটি নুর বাঁজালে।, চান করল । 

নটার সময় সে হে'টে গেল ছোট্ট নোংরা টেলিগ্রাফ অফিসে, একটা 
খালি ফরম নিয়ে আধঘণ্ট। বসে রইল । এই মনঃসংযোগের ফলে এই 
বার্তাটি তৈরী হুল, যেটা সে সই বঃল আর তেত্রিশ ডলার খরচ করে 
পাঠিয়ে দিল। 

পিক্কনি ডসন, 

ডেলসবার্গ, আলাবামা । 

একশ ডলারের ডাঁফট যাচ্ছে পরবর্তী ডাকে । জাহাজে পাঠাও 
আমাকে এখনি পাঁচশ পাউগু শক্ত, শুকনো আলকুশীর ফল। শিল্পে 
এখানে কাজে লাগছে। ৰাজ্তারের দাম পাউণ্ড পিছু বিশ সেপ্ট। 
আরো"অর্ডারের সম্ভাবনা । জলদি করে৷ । 


তের 
2০7 


পঞ্চাহ খানেকের মধ্যে গছন্দলই বাড পাওয়া গেল কালে গ্রানদে 
লরণীতে, মিঃ হেমসটেটেহের জুতোর স্টক সাজানো হল শেলফে। 
দে।কানের ভাঁড়! এব বেশ নয়, শেলফেই শপর ঝকঝকে সাদা বাঁকসে 
ভুভোগুলি মনোরম সাজানো হয়েছিল । 

ভনির ব্রা বিশ্বস্তুতার সঙ্গে তার পাশে এসে দ্রাড়ালো। প্রথম দিন 
কেওগ আনমনে বুরতে ঘুরতে এক ঘণ্টা অন্তর দোঁকানে ঢুকছিল আর 
্রুতে৷ কিনছিল। একজোঁড়। করে চওড়া সোল, কংগ্রেস গেটার, বোতাম 
দেওয়া কিডক্কিন, শীচু হিলের কাফস্কিন, নাচের পাম সু, রাবারের বুট, 
নানা রঙের ট্যান, টেনিস সু, ফুলতোল। চটী কেনার পরে সে জনিকে 
এক পাশে ডেকে জিগগেস করল আর কোন্‌ কোন্‌ ডিজাইনের খোজ 
নেবে । অন্তান্ত ইংরেজী ভাষীর! মহান্ুভবতার সঙ্গে পালন করে গেল 
ভাদের ভূমিক।, দরাজ হাতে বাঁর বার জুতো৷ কিনে । সেনাপতির মতো 


১৪৩ 


কেওগ তাদের চালনা করল যাতে তাদের বদান্থতা এমন ভাবে বিতর; 
করা হল যে বেশ কয়েকজন খদ্দের কয়েকদিন ধরে দোকানে পাঠানে 
হল। 

মিঃ হেমসটেটের খুশী এই কয়দিনের বিক্রিতে, কিন্ত তিনি বিন্ 
প্রকাশ করলেন স্থানীয় লোকেরা কেন পিছিয়ে আছে জুতো কেনা: 
ব্যাপারে । 

“ওর! অত্যন্ত লাক", জনি বুঝিয়ে বলে, ভয়ে ভয়ে কপালের ঘাম মুছে 
শিগগিরই ওদের অভ্যেস হয়ে যাবে । আসবে যখন একেবা 
বাঁকে বাঁকে আসবে দেখবেন ।? 

একদিন বিকেলে কেওগ ঢুকলো! কনসালের অফিসে চিন্তাকুল মুখে 
ন। ধরানো! একটা! চুরুট চিবোঁতে চিবোতে। 

“মতলব কিছু ঠিক করেছ কি, জনিকে শুধোয়, ভেবে থাকো যদি কিছু 
তাহলে সময় এসেছে সেটি দেখাবার । যদি তুমি দর্শকদের থেবে 
একটা! টুগী চেয়ে নিয়ে তার ভিতর থেকে অগুনতি খদ্দের বের "করবে 
পারো অনড় জুতোর স্টকের জন্য তাঁহলে কায়দ।টা এবার দেখিয়ে 
ফ্যালে।। দলের সকলেই জুতো যা! কিনেছে দশ বছরের পক্ষে যথেষ্ট 
কিন্ত দোকানের অবস্থা প্রসন্ন অলসতা । আমি ওখান থেকে আসছি 
তোমার পৃজ্যপাদ বুদ্ধ্শায় দরজায় দাড়িয়ে আছেন। চশমার 
ভিতর দিয়ে দেখছেন খালি পায়ে লোকে চলেছে তার দোকানের 
সামনে দিয়ে । মেজাজে এ দেশের লোকেরা শিল্পী! আমি আর ক্ল্যানদি 
আজ ছু ঘণ্টায় আঠারোট। ফোটে। তুলেছি । আর আজ জুতো বিক্র 
হয়েছে মোটে এক জ্োডা। ব্রাণ্গার্ড একজোভা পশমের লাইনি। 
দেওয়া বাড়িতে পরার চটা কিনেছে, তাও, ও দেখেছিল মিস হেনসটেটে। 
দোকানে রয়েছে, তাই । আমি দেখলাম একট পরে চ্টাজোড়া ছুড়ে 
হাদের জলে ফেলে দিল 1, 

“মবিল থেকে একট! কলর স্টাঙ্গার আসছে, কাল বা পরশু» জনি বলল, 
“তার আগে আমরা কিছুই করতে পান্গাছি না)? 

“কি তুনি করতে চাইছ, চাহিদ। স্থষ্টি করবে ? 

ররাহীয় অর্থনীতি তোমার মাথায় কোনদিনই ভাল ঢোকে না” জনি 
বলল রূঢ় ভাবে। “চাহিদ। স্থষ্টি করা যায় না। তবে তুমি চাহিদার 
প্রয়োজন স্থষ্টি করতে পারো । আমি তাই করতে চাইছি।, 


১৪৪ 


কনসালের টেলিগ্রাম পাঠাবার ছু সপ্তাহ পরে একটি ফলের জাহাজে 
তার নামে এলো একট প্রকাণ্ড বাদামী রঙের গাঠরি কোন অজ্ঞাত 
বস্ত্র । কাসটম হাঁউিসে নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে পরিদর্শন ছাড়াই জনি 
বন্তটি খালাস করে আনলো । গীঠরিটি কনমুলেটে নিয়ে গিয়ে 
ভিতরের ঘরে যত্ব করে রাখলে। ৷ 

সে রাত্রে জনি সেই গাঁঠরির এক কোণ ছি'ডে ফেলে একমুঠে 
আলকুশীর ফল বের করল । যোদ্ধা যেমন যুদ্ধে যাবার আগে অস্ত্র 
পরীক্ষা! করে-_ যুদ্ধ প্রাণের জন্য বা! প্রিয়তমার জন্য যে জন্তই হোক-_ 
তেমনি যত্বে জনি কাটাফলগ্লি পরীক্ষা করে দেখল। ফলগুলি 
আগস্ট মাসে পেকেছে, হেজেল বাদামের মতে! শক্ত, সারা গায়ে তাক্ষ 
সুচের মতো কাটায ভরা । জনি শিস্‌ দিয়ে একটি সুর বাজালে, 
পেরিয়ে পড়ল কেওগকে ডাকতে । 

রাত্র গভীর হলে, কোরালিও যখন নিদ্রামগ্র, মে আর বিলি নির্জন 
রাস্তায় নেমে গেল, তাদের কোটের পকেটগুলি বেলুনের মতো ফুলো! 
ফুলো। কালে গ্রানদের ছ্ধার দিয়ে তারা এলো, গেল, বালির মধ্যে, 
সরু সক গলির রাস্তায় বাঁড়িগুলির মাঝখানের ঘাসের মধ্যে মুঠো 
মুঠো আলকুমীর ফল ছিটিয়ে দিল। প্রতিটি পার্খবসড়কে তারা গেল, 
একাটও বাদ না দিয়ে। অনেকবীর যাওয়া আপা তারা করল রাস্ত। 
আর সেই কণ্টক ভাগারের মধ্যে । তারপরে প্রায় ভোর নাগাত তার! 
শন্তভাবে বিশ্রাম নিতে গেল, মহান সেনাধ্যক্ষেরা যেমন রণজয়ের জন্ক 
যুদ্ধনীতির পরিবর্তন করার পরে বিশ্রাম নের। তারা জানতো 
শয়তানের মতো নির্ভুল ভাবে আর সেন্ট পলের মতো একনিষ্ঠতার 
সঙ্গে সেই ফল তারা ছিটিয়েছে। 

সুর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফল আর মাংসের ব্যাপারীরা এসে বাজার 
কুটার ভিতরে ও চারি পাশে তাদের বেসাতি সাজিয়ে রাখলো । 
শহরের একপ্রান্তে সমুদ্রের ধারে বাজার কুগী। কাটাফলগুলি 
অতদূরে পৌছায় নি। ব্যাপারীরা অপেক্ষা করতে থাকে, কেনা বেচা 
সুরু হয় যে সময়ে তার অনেক পরেও খদ্দের আসেনা । “কিহে!, 
একে অন্যকে জিগগেস করে চিৎকার করে । 

নির্ধারিত সময়ে প্রতিটি কাচা ইটের, তাঁলপাতা৷ বা খড়ে ছাঁওয়। বাড়ি 
থেকে বেরিয়েছিল মেয়েরা কালো মেয়ে, বাদামী মেয়ে, লেবু রঙের 


ও ১৪৫ 


মেয়ে, ধুসর, গীত, খয়েরী মেয়ে। তারা ছিল বাজার যাত্রিণী, 
পরিবারের জন্য শকরকন্দ, কলা, মাংস, মুরগী, মকাইএর পীউরুটা 
কিনে আনতে যাচ্ছিল। ঘরোয়া পোশাক ওদের পরণে, হাত 
খোলা, খালি পা, হাঁটুর নীচে স্কার্ট ঝুলছে, বোকা বোকা মুখ, গরুর 
মতো| চোখ, বাড়ির দরজা থেকে নেমে সরু রাস্ত। বা নরম ঘাসে 
প1 দিল। 

প্রথম যারা বেরুল, বিহ্বল, চিৎকারে এক পা! তুলল সঙ্গে সঙ্গে। আর 
এক পা ফেলল আর বসে পড়ল, ভয়ে মর্মীস্তিক আর্তনাদ করে উঠে, টেনে 
বের করতে গেল যন্ত্রনাদায়ক পোঁকাগুলি য। তাঁদের পায়ে কামড়েছে। 
“কে পিকাডোরেস ডায়াব্রস্*, চিৎকার করে একজন অন্যকে জানায়, 
রাস্তার এপার থেকে গুপারে। কেউ বা রাস্তার পরিবত্তে ঘাসের 
ওপর দিয়ে চলার চেষ্ট। করল, কিন্তু সেখানেও তার খেল কামড় এই 
অজান' ছোট ছোট বলের মতো পোকার । ঘাসে ওরা বসে পড়ে, 
বালির ওপর বসে থাকা ভগিনীদের আতনাদে সবুর মেলায়। শহরে 
সর্বত্র শোনা যেতে থাকে স্ত্রীকণ্ে করুণ বিলাপ । বাজারের ব্যাপারীরা 
অবাক হয়ে ভাবে খদ্দের আসেনা কেন ! 

তারপরে পুরুষেরা» পৃথিবীর অধিপতি যারা, অবতীর্ণ হল। তারাও 
প্রথমে লাফ, তারপরে নাচ, তারপরে খুঁড়িয়ে হাটা আর গালি দেওয়া 
শুর করল। ঘাবড়ে গিয়ে তারা দাড়িয়ে ছিল, ঝুকে পড়ে তুলে 
নিল সেই অভিশাপ য৷ তাদের পায়ের পাতা আর গোছে আক্রমণ 
করেছিল। কেউ কেউ উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণ। করল এগুলি এক অজানা 
ধরণের বিষাক্ত মাকড়সা । 

এবার শিশুর! বেরুল তাদের প্রাতঃকালীন ছুটোছুটিতে। গোলমালের 
সঙ্গে এবার যুক্ত হণ পায়ে-কাটা-ফোটা শিশু কণ্ঠের কান্না। বেল 
বাড়ার সাথে সাথে প্রতি মিনিটে নতুন শিকারের সংখ্যা বাড়তে 
থাকলে ৷ 

ডনিয়! মারিয়া কাস্তিলাস ই বেনভেনতুর! ৷ ল। কাস! তার সম্মানিত 
বাড়ির দরোজা থেকে নামলেন নিত্যকার অভ্যাস মতে। রাস্তার 
ওপারের দোকান থেকে রুটা নিয়ে আসার জন্য । তার স্কার্ট ফুল 
কাটা হলদে সাটিনের, লিনেনের কুঁচি দেওয়! শেমিজ আর বেগুনি 
ওড়ন। স্প্যানিশ হ্যাগুলুমের। তার পাতিলেবু রডের পা কিন্তু হায়, 


১৪৬ 


খালি ছিল। চলার ভঙ্গি রাজেন্দ্রাণীর মতো, হবে নাই বা কেন, ওঁর 
পূর্ব পুরুষের! ছিলেন আরাগনের অভিজাত বংশ । ভেলভেটের মতো 
ঘাসের ওপর মাত্র তিন পা এগিয়েছিলেন, ওঁর উচ্চ বংশীয় পায়ের 
পাতা পড়ল জনির ছড়ানো কয়েকটি আলকুশীর ওপর। ডনিয়া 
মারিয়। কাসতিল। ই বেনভেনতুর! গ্ভ লা কাস ছাড়লেন বন বেড়ালের 
মতো চিৎকার । ঘুরে তিনি পড়লেন হাত আর হাটুর ওপর, জঙ্গলের 
পশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে উনি ফিরলেন ওর সম্মানিত গৃহের 
চৌকাঠে। 

ডন দিনিওর ইলদেফেনসে। ফেদারিকে। ভালদাজার হুয়েজ ঘ্ভ লা পাজ, 
ওজন বিশ স্টোন, চেষ্টা করছিলেন তার বিপুল দেহ প্লাজার কোণে 
বারে নিয়ে গিয়ে প্রাতঃকালীন তৃষ্ণা নিবারণ করবেন। ঠাণ্ডা ঘাসে 
তার খালি পায়ের প্রথম পদক্ষেপ যেন একট লুকানো মাইনে আঘাত 
করল। ডন ইলদেফেনসে। পড়লেন একটি ভেঙে পড়া ক্যাথিড্রালের 
মতো, চিৎকার করে বললেন বিষাক্ত কাকড় বিহার কামড়ে ভিনি 
মৃতপ্রায় । সবত্র নগ্ন পায়ে নাগরিকের লাফাচ্ছিল, পড়ে যাচ্ছিল, 
খোড়াচ্ছিল আর পা থেকে টেনে তুলছিল সেই বিধাক্ত পোকাগ্লি, 
কোথা থেকে একরাত্রে এসে যারা তাদের বিপন্ন করে তুলেছে। 

প্রথম যে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ দেখতে পেল সে এসতেবান 
দ্রেলগাদো, নাপিত, বিদ্বান ও অনেক দেশ ঘুরেছে। একটি পাথরের 
ওপর বসে পায়ের আডল থেকে কীাটাগুলি তুলে এনে এই ৰ্বিবৃতি 
দিল £ 

'বন্ধুগণ দেখ এই সেই শয়তানী পোকা । আমি এদের চিনি । পায়রার 
ঝাঁকের মতো এরা আকাশে অনেক উঁচুতে ওড়ে। এগুলি মরা, কাল 
রাত্রিতে পড়েছে । ইয়ুকুটানে আমি এদের দেখেছি, এক একটা! 
কমলা লেবুর মতে! বড়ো বড়ো । হ্যা, এরা সাপের মতো হিস্‌ হিস্‌ 
শব্ধ করে, বাছুড়ের মতো! এদের ডানা আছে। দরকার জুতোর, 
জুতোর দরকার । জাপাতোস্‌ জাপাঁতোস্‌ পার! মি ।? 

এসতেবান খোড়াতে খোড়াতে মিঃ হেমসটেটেরের দোকানে গিয়ে 
জুতো কিনল। দোকান থেকে বেরিয়ে বীরদর্পে নিরাপদে রাস্তা দিয়ে 
চলতে লাগল, শয়তান পোকাগুলিকে অনেক গালি দিল। যন্ত্রণায় 
যারা শুয়ে বসে কাতরাচ্ছিল তারা এক পায়ে উঠে দাড়াল, দেখল 


১৪৭ 


সুরক্ষিত নাপিতকে | স্ত্রী, পুরুষ, বালক, সবাই চিৎকার করতে শুরু 
করল, 'জাপাতোস্‌ জাপাতোস্‌। 

চাহিদার প্রয়োজনের স্থষ্টি হল। চাহিদা এলো! তার পরেই । সেইদিন 
মিঃ হেমসটেটের বিক্রি করলেন তিনশ জোড়া জুতো । 

“আশ্চর্যের বাপার তোঁঃ তিনি বললেন জনিকে, সন্ধ্যার সময়ে সে 
এসেছিল জুতোর স্টকের খবর নিতে, “কিভাবে বিক্রি বেড়ে গেল। 
গতকাল মামি কেবল তিন জোড়া বিক্রি করেছিলাম ।” 

“আমি আপনাকে বলেছিলাম, ওরা যখন আসবে তখন সব লগ্ুভগ্ 
করে দেবে কনসাল বলল । 

“মাল তে! রাখতে হবে দোকানে, আরো ছয় বাকস অর্ডার করে দিই, 
তুমি কি বলো? চশমার মধ্য দিয়ে চোখের আলে। ঠিকরে মিঃ 
হেমসটেটের জিগগেস করলেন। 

“আমি এখনি অর্ডার দিতে বলতে পারি না” জনি উপদেশ দিল, “দেখুন 
বিক্রিকোথায় স্থির হয়ে দাড়ায় ।, 

প্রত্যেক রাত্রিতে জনি আর কেওগ সেই বীজ ছড়ায়ঃ দিনে যাঁর থেকে 
ডলারের ফসল তোল। হয়। দশ দিনে জুতোর স্টকের ছুই-তৃতীয়াংশ 
বিক্রি হয়ে গেল, আলকুণী ফুরিয়ে গেল। জনি পিঙ্ক ডসনকে আরো 
পাঁচশ পাউণ্ড পাগানোর জন্য কেবল্‌ করে দিল। আগের মতোই 
পাউগড পিছু কুড়ি সেণ্ট দাম দিল। মিঃ হেমসটেটর অনেক হিসেব 
করে দেড় হাজার ডলারের একটা অর্ডার লিখলেন উত্তরের জুতোর 
ফার্দের। জনি দোকানে বসে রইল অর্ডারটি ডাকে পাঠানোর জন্তু) 
তৈরী হওয়। পর্যস্ত, তারপরে পোস্টাপিসে পৌছানর আগেই স্টো নষ্ট 
করে ফেলতে সক্ষম হল । 

সে রাত্রে সে গুডউইনের বারান্দার পাশে আমগাছের নিচে রোজিনকে 
নিয়ে গেল, আর অকপটে সব খুলে বলল । ও তার চোখের দিকে 
তাঁকালো, বলল, “তুমি অত্তাস্ত বদলোক। বাবা আর আমি বাড়ি 
ফিরে যাবো । তুমি বলছ ওটা ছিল ঠাট্টা। আমিমনে করি এটা! 
খুব গুরুতর বিষয় 1, 

অবশ্য, আধঘন্টা তক বচসার পরে কথাবার্তা চলছিল অন্য বিষয়ে। 
ছুজনে তর্ক করছিল দেয়ালের কাগজ হালক] নীল রঙের হবে না কি 
গোলাপী, বিয়ের পরে আযাটউডদের বাড়িটি যখন সাজানো হবে। 


১৪৮ 


পরের দিন সকালে জনি মিঃ হেমসটেটেরকে সব খুলে বলল । 

সেই জুতোর ব্যবসায়ী চশমা পরলেন, তার ভিতর দিয়ে জনির দিকে 
তাকালেন, বললেন, “তুমি দেখছি একটি অদ্ভূত হুষ্ট ছেলে। আমি 
যদি সমস্ত ব্যাপারটা বিচক্ষণ ব্যবসা বুদ্ধি দিয়ে পরিচালন। না করতাম 
তাহলে এই সব মালের স্টক তো লোকসান যেত ! এখন ৰাকি মাল 
কি ভাবে কাটাতে চাও? 

আলকুশীর পরের চালান এসে পৌছালে জনি সেইগুলি আর বাকি 
জুতো নিয়ে একটি নৌকায় বোঝাই করল। সে সব নিয়ে শেল 
আলাজানে, তার বরাবর আরো দক্ষিণে । সেখানে সেই একই 
শয়তানী উপায়ে সে সকল হল। এক থলে টাকা আর একটি জুতোর 
লেস মাত্র না নিয়ে ফিরে এলো।। 

তারপর সে ছাগলদাড়ি ভূষিত মহান আঙ্কলের কাছে আবেদন 
জানালো তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণের জন্য, কেন না কমল আর তাকে 
প্রলুর্ধ করছিল না। সে ভেলসবাগের পালংশাক আর কলমালতার 
জন্ত কাতর হয়েছিল। 

সাময়িক কাজ চালানোর জন্ত কোরালিওর কণসাঁলের পদ্দে মিঃ 
উইলিয়াম টেরেনস্‌ কেওগের নাম প্রস্তাবিত ও গৃহীত হল। জনি 
হেমসটেটরদের সঙ্গে দেশে ফিরে গেল । 

আমেরিকার কনসালাশপের বিনা কাজের উচ্চপদের চাকরাতে কেওগ 
অভ্যস্ত স্বাচ্ছন্দ্যে মানিয়ে নল । টিন টাইপের দোকানটি অল্পকালের 
মধোই উঠে যাবে যদিও এই সাংঘাতিক ব্যবসা নিঁখিরোধ। িরাশ্রয় 
স্পা(নশ সমুদ্রেধ উপকূলে তার পরেও চলতে থাকবে। চঞ্চল 
অংশীদারেরা বেরিয়ে পড়ার জন্ত ব্যগ্র হয়েছিল ভাগ্যের সন্ধানী 
ধীরগতি পদাতিকদের আগে আগে, অন্বেষার কাজে । কিন্ত এখন 
তাদের যাত্রা হবে ভিন্নমুখা । পেরুতে বিদ্রোহের সুচনার গুজব শোনা! 
যাচ্ছিল, ক্ল্যণনাঁস তার আডভেঞ্ধার অন্ুুমারা পদক্ষেপ বাড়াবে দেই 
দিকে । কেওগের কথা বলতে গেলে, সে মনে মনে এবং দিস্তে 1দস্তে 
সরকারী চিঠির কাগজের ওপর এক পরিকল্পনার খসড়া করছিল, 
টিনের ওপর মানবের মুখাবয়বের অপটু অন্ুকরণের থেকে যা ছিল 
আরো সাংঘাতিক। কেওগ বলত, “ব্যবসার ব্যাপারে আমার পোবায় 
সেই সব প্রকল্প যাতে অভিনবত্ধব আর বেশ কিছুটা ঝুঁকি আছে। 


১৪৯ 


যেদিকে এত লোকের ভিড় নেই যে ভদ্রগোছের লোক ঠকানে। 
ডাকযোগে চিঠিপত্রের সাহায্যে শেখানো। হয়। আমি সর্বদ৷ দূরের 
প্রাস্তটিতে থাকি । কিন্তু আমি চাই সাফল্যের জন্য ততটুকু সুযোগ 
যেন পাই, খোলা স্টামারে পোকার খেলায় বা রিপাবলিকান 
পার্টির টিকিটে টেকসাসের গভর্ণর হবার জন্য যেটুকু দরকার। 
আর, আমি দেখতে চাই না আমার উপাজিত টাকার বাগ্ডিলের 
ভিতর বিধবা বা অনাঁথের টাকা 1” 

ঘাসে ঢাকা পৃথিবী ছিল তার সবুজ টেবিল যার ওপর কেওগ জুয়া 
খেলত। যে খেলাঞ্ুলি সে খেলত সেগুলি ছিল তারই উদ্ভাবন। 
ছিধাগ্রস্ত লাজুক ডলার সে পেতে চাইত না। তুরী ভেরী আর 
কুকুর দিয়ে তাড়া করেও সে তাদের শিকার করত না। বরঞ্চ সে 
চাইত অভিনব, উজ্জ্বল মাছির টোপ ফেলে অজানা নদীর জল থেকে 
তাদের গেঁথে তুলতে । তথাপি কেওগ ছিল' একজন ব্যবসাফী আর 
তার পরিকল্পনাগুলি অন্ভুত হলেও এমনই নিভূ্লি ছকে বাঁধা যেন 
মনে হবে বাড়ির ঠিকাদারের ব্যবসা । আর্থারের কাল হলে স্তর 
উইলিয়াম টেরেন্স কেওগ হতে। রাঁউণ্ড টেবিলের একজন অশ্বারোহী । 
আধুনিক যুগে সে পবিত্র পাত্রের বদলে সঞ্লান করে বেড়াচ্ছে প্রকৃষ্ট 
ফেরেববাজি । 

জনি চলে যাবার তিন দিন পরে ছুটি ছোট পালতোল। জাহাজ 
কোরালিওর কৃলের অদূরে এসে হাজির হল। কিছু বিলম্বে তার 
একটি থেকে একটা ডিঙ্গি নামানো হল, যেট। তীরে নিয়ে এল একজন 
রোদে রাঙা যুবককে । এই যুবকের চোখ ছাট ছিলঃ হিসেবী, ধুর্ত | 
বিন্রয়ের দৃষ্টিতে সে চারি্ধারে দেখছিল । সমুদ্র তীরে নে একজনকে 
পেল যে তাকে কনসালের অফিস দেখিয়ে দিল। সেদিকেই সে 
রওন৷ দিল দিধাগ্রস্ত পদক্ষেপে । 

কেওগ তাঁর সরকারী আসনে হাত-পা ছড়িয়ে বসে সরকারী 
চিঠির প্যাডে আস্কলের মুখের ক্যারিকেচার আকছিল। আগন্তকের 
দিকে মুখ তুলে তাকালো । 

জনি আটউড কোথায়, জিগগেস করল সেই রোদে রাঙা যুবক, কাজের 
কথার সুরে। 


১৫০ 


চলে গেছে» কেওগ উত্তর দিল, আঙ্কল স্যামের নেকটাইট। যত্ব করে 
আকতে আকতে। 

“ঠিক ওরই মতো সেই বাদামী ব্যক্তি মন্তব্য করল টেবিলের গায়ে 
ঝুকে দ্াড়িয়ে। বিরাবরই সে সবত্র ঘুরেই বেড়িয়েছে কাজে মন 
দেবার বদলে । শীঘ্র ফিরবে কি? 

“মনে হয় না, কেওগ বলল, অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে । 

“আমার মনে হয় সে গেছে তার কোন আজে বাজে কাজে, আগন্তক তার 
সিদ্ধান্ত জানার, 'জনি কখনোই কোন কাজে বেশীদিন লেগে থাকতে 
পাঁরে না সাফল্যের জন্তা। আমার অবাক লাগছে এখানকার কাজকর্ম 
সে চালায় কি করে নিজে দেখাশোনা না করে 1; 

“কাজকর্ণ এখন আমিই দেখছি» অস্থায়ী কনসাল বলল । 

“তাই নাকি! তাহলে বলুন তো, ফাকটবিট! কোথায় ? 

“কোন ফাকটরি ? কেওগ জিগগেন করল, সামান্য উসুক্যের সঙ্গে । 
কেন? যেফ্যাকটরিতে আলকুণার ফলগুলি কাজে লাগানো হয়। 
ঈশ্বর জানেন অবশ্য, ওই ফলগুলি কোন কাজে লাগে। ওই ছুটি 
জাহাজের খোল ভি করে আম এনেছি ই ফল। এগুলি আমি 
আপনাদের সস্তার দেব? ডেলসবার্গের ছেলে বুডে। মেয়ে পুরুষ 
সকলকে আদি গত এক মাস ধরে লাগিয়ে ছিলাম ওই কাট ফলগুলি 
সংগ্রহের কাজে । আ্বাই বল্ল আমার মাথা খারাপ হয়েছে। 
আপনাব। এগুলি পাও পিছু পনেরো সেন্ট দামে পাবেন, ডাঙায় 
এনে দেওয়া হবে! আরে যদি দরকার থাকে আমার ধনে হয় 
আলবাম। পেছপ! হবেন! জোগান দিতে । দেশ ছেড়ে যাঁবাব সময় জনি 
আমাকে বলেছিল. এ দেশে যদি ভার চোখে পড়ে এনন কোন কারবার 
যাতে টাকা মামদানীর সম্তাবন। তাহলে আমাকে জানাবে । জাহাজ 
ছুটি কি আমি আরো! এশিয়ে নিয়ে আসব শর মাল খালাস করব? 
কেওগের লাল খুখে অপরিলীম, প্রায় আশ্থাস্ত আনন্দের ভাবের 
উদয় হতে লাগল । সে পেনসিল ফেলে দ্িল। সেই রোদে রাড! 
যুবকের মুখের দিকে চোখ ছুটি ফেরালো, যে চোখে উল্লাসের সঙ্গে 
মিশে আছে ভয়, পাছে এই আনন্দের উন্মাদন! স্বপ্নে পরিণত হয়। 
ঈশ্বরের দোহাই, বলো আমাকে, আস্তরিক ব্যগ্রতার সঙ্গে শুধোয়, 
তুমি কি ডিঙ্ক পসন ? 


১৫৬ 


“আমার নাম পিঙ্কনি ডসন” বলল সেই আলকুশীর বাজারের একচেটিয়। 
আড়তদার। 

উন্মত্ত আবেগে ৰিলি কেওগ আস্তে আস্তে নেমে এলো তার চেয়ার 
ছেড়ে, শুয়ে পড়ল মেঝেতে তার প্রিয় এক চিলতে ম্যাটিং-এর ওপর । 
সেই উত্তপ্ত বিকেলে কোরালিওতে বেশী শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। 
বলবার মতে যে শব্দগুলি তার মধ্যে ছিল মাটির ওপর লুটিয়ে পড় 
একজন আইরিশ আমেরিকানের উন্মত্ত আবেগে অভব্য হাসির 
আওয়াজ, যার সামনে একজন রোদে রাঁডা যুবক ধৃত চোখে 
অবাক বিম্ময়ে তাকিয়ে ছিল। এর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে জুতো পায়ে 
লোকে হেঁটে যাওয়ার মচ্‌ মচ. মচ শব্দ ছিল। আর ছিল 
এতিহাসিক স্প্যানিশ সমুদ্রের জনশূন্ত তটরেখা ধুয়ে যাওয়! 
তরঙ্গের ধ্বনি । 


1] 856215 01 4১1 
কল। বিদ্যার দুই বিশারদ 


ছুই ইঞ্চি একট] প্নেসিলের টুকরো ছিল সেং জাছুদণ্ড যা 1দয়ে কেওগ 
তাঁর জাছুবিগ্ঠার প্রাথমিক খেলাগুলি দেখাত। বনে বসে পেনসিল 
দিয়ে সে কাগজের ওপর কতকগুলি রেখা ও সংখ্যা লিখত যতাদিন না 
আমেরিক! যুক্তরাষ্ট্র কোরালিওতে পাগালো জনি আযাটউডের 
ত্যাগ করা পদের জণ্ত নতুন কনসাল । 
এই নতুন প্রকল্পটি, যা তার মন উদ্ভাবন করেছে, মহৎ হৃদয় সায় 
দিয়েছে আর তার নীল পেনসিল খসড়া করেছে--সেট। ছিল 
আঞ্চুরিয়ার নতুন প্রেসিঙেনটের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ও হূর্লতার ওপর 
ভিত্তি করে। এই বেশিষ্ট্যগুলি আর সেই পারিপান্বিক অবস্থা যা 
থেকে কেওগ ক্ুুবর্ণময় উপঢৌকন আদায় করতে চায় এখন বিকৃত করা 
বাঞ্ছনীয়, ঘটনার পারম্পর্য রক্মার জন্ত। 

প্রেসিডেনট লোসাদা-_-অনেকেই তাকে বলত একনায়ক--ছিলেন 


১৫৩ 


এমন এক ব্যক্তি ধার প্রতিভা তাকে আংলো স্তাকসনদের মধ্যেও 
বিশিষ্ট করে তুলতে যদিন। সেই প্রতিভার সঙ্গে মিশ্রিত থাকতো অন্ত 
কয়েকটি লক্ষণ যা ছিল হীন ও ক্ষতিকর। তার মধ্যে ছিল 
ওয়াশিংটনের দেশভক্তি (যে ব্যক্তিকে তিনি সবাধিক শ্রদ্ধা করতেন ), 
নেপোলিয়নের তেজ আর খবিদের জ্ঞান। এই গুণগুলির জন্য হয়ত 
তার “প্রোজল ত্রাণকতা” খেতাব গ্রহণ সঙ্গত বোধ হত যদিনা1 সেই 
সঙ্গে তার থাকতো অত্যগ্র আত্মন্তরিতা যা তাকে নিম্ন মানের 
একনায়কদের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। 

দেশের অনেক উন্নতি তিনি করেছিলেন । কঠোর হাতে তিনি 
তাকে প্রায় মুক্ত করে এনেছিলেন অজ্ঞতা আর আলম্ত থেকে, সেই 
সব পরজাবী থেকে, যারা তাকে শোষণ করছিল । বিশ্বের দেশ সমূহে 
তিনি তার দেশের স্থান করে নিরেছিলেন। স্কুল, হাসপাতাল স্থাপন 
করেছিলেন, রাস্তা, সেতু, রেললাইন, প্রাসাদ গড়োছলেন, কল। ও 
ও বিজ্ঞানের প্রসারের জন্য সরকারী অর্থ দান করেছিলেন। তিনি 
ছিলেন সবাত্ুক শাসক এবং জনগণের উপাস্য দেবমূতি। দেশের 
সঞ্প্দ তার হাতে মুঠোয় এসেছিল । অন্তান্ত প্রেসিডেনটরা ছিল 
লোতা, অধিবেচক-লোসাদা অনেক অর্থের মালিক হয়েছিলেন কিন্তু 
জনগণ পেয়েছিল উন্নতির অংশ । 
তার বশে যেখানে ফাটল ছিল সেট! হচ্ছে, স্মৃতিস্তস্ত ও তাঁর নিজের 
মহিমা টিরায়ত কবার পিদর্শনের প্রতি মোহ । প্রত্যেক শহরে তিনি 
স্থাপনা করেছিলেন ভার প্রাতিমূতি, তার মহত্বের প্রশস্তি সহ। 
প্রত্যেক বরকারা ভবনের “দয়ীলে খোদিত হল তার মহিমা আর 
কৃতজ্ঞ প্রজাদের স্তবকীতন। ছোট ছোট মতি আর ছবি ছড়িয়ে 
দেওয়! হল সারা দেশে, প্রাতি গুহে, কুটিরে। তার সভার একজন 
স্তাবক তাকে চিাত্রত করেছিল সেন্ট জন রূপে, মাথার ওপর 
জ্যোতির্ম গুল, পিছনে একদল ভক্ত অনুসরণ করছে। লোসাদা এই 
চিত্রে অসঙ্গত কিছু দেখেননি উপরম্ত রাজধানীর একটি চাঁে 
সেট টাঙাবার ব্যবস্থা করেছিলেন । একজন ফরামী ভাস্করকে তিনি 
অর্ডার দিয়েছিলেন মার্বেলের কয়েকটি মৃতি, তার, নেপোলিয়ানের, 
আলেকজাপগ্ার দি গ্রেট এবং অনুরূপ বরণীয় আরে ছু-একজনের। 
সারা যুরোপ টুড়ে কোথাও কূটনীতি, কোথাও অর্থ কোথাও বা 


১৫৩ 


যড়যন্ত্রের সাহায্যে শাসক ব! রাজাদের প্ররোচিত করেছিলেন তাকে 
খেতাব দানের জন্ত। রাষ্ীয় অনুষ্ঠানে কীধ থেকে কীধ পর্যন্ত তার 
ঢাকা থাকতো ক্রসে, তারকায়, সোনার গোলাপে, মেডেল, রিবনে। 
বলা হত যে ব্যক্তি তার জন্য নতুন একটি খেতাব বা তার মহত 
কীত্তনের নতুন উপাঁয় উদ্ভাবন করতে পারতো রাঁজকোষের গভীরে 
সে পারত অবাধে হাত ডোবাতে। 

এই সেই ব্যক্তি ধার দিকে বিলি কেওগ নজর দিয়েছে । ভদ্র জল- 
দন্থ্যুটি লক্ষ করেছিল যে প্রেসিডনটের বৃথাগর্ব পুষ্ট করতে যারা 
সাহায্য করছে তাদের প্রতি হচ্ছে তার কৃপাবৃষ্টি এবং তার মনেও 
হয়নিযে এই তরল সৌভাগ্য বর্ণের বিরুদ্ধে তাকে ছাত। ধরে 
বাঁচতে হবে। 

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন কনসাল এসে গেল, কেওগকে তার 
অস্থায়ী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিল। সদ্য কলেজ ছেড়েছে সেই 
যুবক। উদ্ভিদ বিদ্য। ছিল তার প্রাণ। কোরালিওর কনসালের পদ 
তাকে সুযোগ দিয়েছে উষ্ণমগুলের গাছপাল। নিয়ে গরেষণ। করার । 
চোখে অস্বচ্ছ চশমা সবুজ ছাতা হাতে নিয়ে সে অনুসন্ধান সুরু করল, 
কনস্থলেটের শীতল বারান্দা ভরে গেল নান। জাতের উদ্ভিদের নখুনায়, 
বোতল আর চেয়ার রাখার স্থান সেখানে আর রইল না। কেও% 
তার দিকে বিষপ্ন দৃষ্টিতে তাকাল, কিন্তু সে দৃষ্টিতে ক্ষোভ ছিল ন 
সে তার তল্লি বাধতে বসল । স্প্যানিশ সমুদ্রে একছ্ধেয়েমির ডর 
তার নতুন প্রটের প্রয়োজনে তাকে সমুদ্র যাত্র। করতে হবে। 

শীঘ্রই কার্পপফিন আবার এলো, সেই জাহাজটি ভবঘুরে খবভাবের, 
নারিকেলের বোঝ] কুড়িয়ে নিয়ে নামীনে নিউইয়র্কের বাজারে । ভার 
ফিরতি ট্রিপে কেওগ একটি আসন ভাড়া করল। হ্যা, আমি যাচ্ছি 
নিউইয়র্ক” সমুদ্রতীরে যারা তাকে বিদায় দিতে এসেছিল তাদের দে 
বললে । “কিন্ত ফিরে আসব আমি নেই বোঝবার আগেই । এই 
নান! রঙের দেশে আমি কলাবিগ্ঠ। শেখাবার ভার নিয়েছি। তাই 
আমি এদেশ ছেড়ে চলে যেতে পারিনা টিনটাইপ শেখানোর প্রথম 
কষ্টকর দিনগুলির মধ্যে 1 নিজে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এই রহস্যময় উক্তি 
করে কেওগ কার্লপসফিন চডল। 

দশদিন পরে তার পাতলা কোটের কলার উচু করে কাপতে কাপতে 


১৫৪ 


সে এসে হাজির হল ক্যারোলাস হোয়াইটের স্টুডিওতে, নিউইয়র্কের 
দশ নম্বর সড়কের একটি উঁচু বাড়ির ওপর তলায়। 

ক্যারোলাস হোয়াইট সিগারেট টানছিল আর সসেজ ভজছিল 
ফ্রাইং প্যানে, তেলের স্টোভের ওপর । বয়স তেইশ, কলাবিষ্া। সম্বন্ধে 
মহান থিয়োরীতে বিশ্বাসী । “বিলি কেওগ” হোয়াইট চেঁচিয়ে উঠল, 
খালি হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে, 'অসভ্য জগতের কোন প্রান্ত থেকে জানতে 
পারি কি?” 

হালে ক্যারি” কেওগ বলল । একটি টুল টেনে সে বসল স্টোনের 
দিকে আঙ্লগুলি ৰাড়িয়ে দিয়ে । “আমি খুশী হয়েছি তোমাকে এত 
াড়াতাড়ি খুঁজে পেয়ে। এই কয়দিন ডাইরেকটরি আর আট 
গ্যালারিতে তোমাকে খুঁজছিলাম। মোড়ের অন্নসত্রের লোকটি 
চটপট বলে দিল তোমাব্ম ৰাসন্থানের খবর । তখন বুঝলাম তুমি 
এখনে! ছবি একে চলেছ। 

কেওগ স্টডিওর চারিদিক এই লাইনের বোদ্ধার তীক্ষ চোখ দিয়ে 
দেখছিল । হ্যা, তৃমি পারবে” সে ঘোষণ। করল মৃছ শব্ধ অনেক 
গুলি মাথা নাড়ার সঙ্গে । “কোণের ওই বড়োটি, দেবদূত, সবুজ মেঘ 
আর বাগ্বুন্দ ঠিক ওই পকম আমাদের চাই। টার নান কি দিয়েছ 
ক্যারি কোনি আইল্যাগ্ডের দৃশ্, ফি বলে? 

ওটার নাম আমি দিতে চেয়েছিলাম» হোয়াইট বলল, “ইলাইজার 
উত্তরণ, কিন্তু তোমার নামটাই হয়ত আরে জুৎসই 7, 

“নামে কিছু যায় আসে না, কেওগ উদার হয়ে বলল । “ফ্রেমট। কত 
বড়ো আর কতগুলি রং কতটা তুমি ব্যবহার করেহ সেটাই হচ্ছে 
আসল কায়দা । আমি দুহাজার মাইল সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছি 
তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে আমার একটা পরিকঞ্জনার জন্য | 
স্বীমটা আমার মাথায় আসা মাত্র তোমার কথা মনে প্ড়েছে। 
আমার সঙ্গে যাবে একটা ছবি আকতে। ট্রিপট! নববুই দিনের 
আর কাজটার জন্য পাবে পঁচ হাজার ডলার ।, 

“কর্ণ ফ্লেকস না হেয়ার টনিক ? হোয়াইট জিজ্ঞেস করল । 

“এট। বিজ্ঞাপনের কাজ নয় ।; 

“কী ধরনের ছবি হবে? 

“তাহলে অনেক কথা বলতে হবে» কেওগ বলল । 


১৫৫ 


বলে যাও। কিছু মনে যদি না করো, যতক্ষণ তুমি বলে যাৰে আমার 
চোখ কিন্ত থাকবে এই সসেজগুলির দিকে । একটু বেশ বাদামা 
ভাজ হলেই এগুলি বরবাদ হয়ে যাবে । 

কেওগ তার পরিকল্পনাটি বুঝিয়ে বলল । তারা কোরালিওতে ফিরে 
যাবে যেখানে হোয়াইট ভাণ করবে সে একজন বিশিষ্ট শিল্পী, উ্ণমণ্ডলে 
বিশ্রাম নিতে এসেছে তার শ্রমসাধ্য ও অর্থকরী কর্মজীবন থেকে। 
আশা করা অযৌক্তিক নয় এমন কি ষারা ব্যবসার চিরাচরিত রাস্তায় 
চলাফেরা করে তাদের পক্ষেও যে একজন কীতিমান শিল্পী একটি কাজ 
পাবেন প্রেসিডেনটের মুখাবয়ব ক্যানভাসের ওপর চিরন্তন করবার 
আর তার ছুবলতার উপকরণের আপুতির সহায়কদের ওপর যে পেসো 
বৃষ্টি হচ্ছিল তার একট বৃহত্ভাগ আদায় হবে। 

কেওগ তার মূল্য স্থির করেছিল দশ হাজার ডলার । চিত্রশিল্পারা 
পোট্রেটের জন্ত এর চেয়ে বেশ টাক। পেয়েছে । সে আর হোয়াইট 
যাওয়া আসার ভাড়াটা নিজেরা দেবে আর সম্ভাব্য লাভের টাক। 
সমান ভাগে পাবে । এই প্রস্তাব সে হোয়াইটের সামনে রাখল। 
দূর অতীতে পশ্চিমাঞ্চলে তাদের চেনাশোনা হয়োছল, একজন |শল্পী 
ও অন্থজন বেছুইন হয়ে যাবার অনেক আগের কথা । 

ছজন চক্রান্তকারী কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বতল স্ট.ডিয়ো ছেড়ে কাফের 
গরম কোণে গিয়ে বসল । অনেক রাত্রি পধন্ত তারা বসেছিল, সামনে 
ছিল পুরোন খাম আর কেওগের নীল পেনসিল। 

রাত্র বারোট। নাগাত হোয়াইট চেয়ারে ছু-ভাজ হয়ে বসল, হাতের ওপর 
থুতনি রেখে, দেয়ালের অসুন্দর কাগজের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে । 
“আমি তোমার সঙ্গে যাবে! বিলি” সে বললে, সিদ্ধান্ত নেবার শান্ত 
গলায়। “আমার ছু তিনশ জমা আছে সসেজ আর গাড়ী ভাড়ার 
জন্য | আম তোমার সঙ্গে এই স্থযোগটা নেব। পাঁচ হাজার, তার 
মানে ছু বছর ফানসে আর এক বছর হটালিতে কাটাতে পারব। 
আমি কাল থেকে প্যাকিং সুরু করব । 

“ভুমি দশ মিনিটে সুর করবে। এখনই তে কাল হয়ে গেছে। বিকেল 
চারটেয় কার্পসফিন ছাড়বে । এসো তোমার স্টখডিওতে আম 
তোমাকে সাহায্য করব।, 

বছরে পাঁচমাস কোরালিও আঞ্চুরিয়ার নিউপো্ট । তখনই শহরটিতে 


১৫৬ 


প্রাণের সাড়া জাগে । নভেম্বর থেকে মার্চমাস পর্যন্ত এই শহর 
সরকারের প্রধান দণ্তর। প্পেসিডেনট তার পরিবার সহ এখানে 
থাকেন এবং উচ্চতর সমাজ তার অন্ুগমন করে । আমোদশ্রিয় জনগণ 
মবন্রমটি লম্বা ছুটী, আর প্রমোদ উৎসবে পরিণত করে; ফিয়েসতা, 
বলনাচ, খেলাধুলা, সমুদ্রযোন, মিছিল, ছোট ছোট নাট্যান্ুষ্ঠান এই 
আমোদ প্রমোদের অঙ্গ । রাজধানী থেকে আসে বিখ্যাত শুইশ 
ব্যাপ্ত, প্রতি সন্ধায় প্লাজায় ব্যাণ্ড বাজে। শহরের গোউ চৌদি 
গাড়ি শহর পরিক্রমা করে শোঁকযাত্রার মিছিলের মতো! কিন্তু 
আত্মত্প্ত। পবত অঞ্চল থেকে প্রত্রতত্বের পাথরের মুতির মতে। 
ইনডযানর1! আসে তাদের হস্তশিল্ের পসরা নিয়ে । সরু বাস্তায় 
ভিড় জমায় মুখর, নুখী, বেপরোয়া উদ্বেল মানবতরঙ্গ । অভূতপূর্ব 
ছোট্র সালের স্কার্ট পরা শিশুর দল সোনালি পাখা মেলে উচ্ড্রসিত 
ভিড়ের নীচে উল্লাসে চিৎকার করে! বিশেষ করে প্রেসিডেনট ও 
তার দলবলের শুভাগমন মরস্্রমের শুরুতে খুব জাক জমক, দেশ- 
প্রেনে প্রদর্শনী উৎসাহ ও স্ফৃতির সঙ্গে পালন কর! হয়। 

কেওগ মার হোয়াইট যখন ক্কার্লসফিনের ফিরতি দ্রিপে এসে পৌছাল 
তখন শীতের আনন্দের মরশ্থম সুরু হয়ে গেছে। সমুদ্রতীরে প। দিতেই 
তার। প্লাজাতে ব্যাগ্ড বাজছে শুনতে পেল। গায়ের দেয়েরা, কালো 
চুলে জোনাকি আটকে খালি পায়ে চুল চাহনি হেনে পথে পথে 
ঘূরছিল। সাদা লিনেনের পোশাকে ফুলবাবুর! ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছিল 
প্রেমের সন্ধানে । বাতাস পুর্ণ ছিল মানুষের দেহের গন্ধে, কুর্িম 
প্রলোভন,ভালম্ত, প্রমোদ, বাসন'-_মানুষের তৈরী অস্তিত্বের অন্রভূতিতে ! 
তাদের আগমনের পরের ছুই তিন দিন কাটল তোড়জোডে । কেওগ 
শিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে শহর ঘুরে দেখাল, পরিচয় করে দিল ইংরেজিভাষী 
ছোট সামাজিক বৃত্তে, শিল্পী হিসেবে হোৌয়াইটের খ্যাতি ছড়াবার জন্য 
যেটুকু কল কাঠি নাড়ার ছিল তা করা হল। তারপরে কেওগ মতলব 
করল আরে দৃশ্ঠনান ভাবে শিল্পীকে জনসমক্ষে উপস্থাপনা করতে, 
সেই ধারণা যাতে দৃঢ় হয়। সে আর হোয়াইট হোটেল দে লস 
এসত্রানজারোস-এ ঘর ভাড়া নিল। দুজনের সাদা ডাক্‌ এর নিখুত 
পোশাক, আমেরিকান ঘাসের টুগী, সরু ছড়ি। স্থাচ্ছন্দ্য ও. 
দর্শনীয়তাঁর প্রতীক কেওগ বা তার বন্ধু মহান আমেরিকান শিল্পী 


১৫৭ 


বেশভুষায় কোরালিওর ষে কোন সৈনিক বা অফিসারকে হার 
মানালো । 

হোয়াইট তার ইজেল নিয়ে গেল সমুদ্রতীরে এবং পাহাড় ও সমুদ্রের 
চমৎকার স্কেচ আঁকল। স্থানীয় জনসমষ্টি তার পিছনে অর্ধবৃত্তাকার 
একটি মুখর পরিমগুল স্য্টি করল তাঁর কাজ দেখার জন্ত | কেওগের 
খু'টিনাটির দিকে লক্ষ্য ছিল, তার নিজের ভূমিকা ছিল মহান শিল্পীর 
বন্ধু। এই ভূমিকার দৃশ্যমান চিহ্ব ছিল তার কীধ থেকে ঝোলানো 
ক্যামেরা । কেও্গ বলে, ভদ্র, উন্নতিশীল কোন ব্যক্তিকে ব্যাঙ্কের 
টাকা আর সহজ বিবেকের মালিক রূপে চিহ্নিত করতে একটি বাষ্প 
চালিত প্রমোদতরীও ততট। কাধকরী নয় যতট। ক্যামেরা । কোন 
লোককে যদি দেখ কাজকর্ম নেই, ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ছবি তুলছে, 
তখনি তোমার মনে হবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম ওপরের 
দিকেই আছে। বুড়ো বুড়ো কোটিপতিদের দেখা যায় যে মুহূর্তে 
তার! চারিদিক ভালে করে দেখে তখনি ছবি তুলে নেয়। সাধারণ 
লোক হীবের টাইপিন বা খেতাবের চেয়ে কোডাক দেখলে সহজে 
প্রভাবিত হয়। স্ৃুতরাং কেওগ সবত্র সহজভাবে তুলতে লাগল 
দৃশ্যের ছবি, সসঙ্কৌচ সেনিওরিটাদের ছবি আর হোয়াইট কলাবিগ্ঠার 
উচ্চতর মহলে দৃশ্যমান ভাবে উদ্দিত হল। 

তাদের আসার ছু-সন্তাহ পরে এই পরিকল্পনার ফল দেখা দিল। 
প্রেসিডেনটের একজন এডি কং ঝকঝকে একটি ভিকটোরিয়া চড়ে 
হোটেলে উপস্থিত। প্রেসিডেনটের বানন। সেনিওর হোয়াইট যদি 
কাসা মোরেনাতে একবার ঘরোয়া ভাবে তার সঙ্গে দেখা করেন। 
পাঁইপটা দাতে জোরসে চেপে কেওগ বললে, “দশ হাজারের এক সেনট্‌ 
কম নয়, দামটা মনে রেখো আর সোনি কিন্ব। তার তুল্য অর্থে-- 
তোমাকে যেন সস্তার কাউন্টার থেকে গছিয়ে না দেয় সেই কাঁগজের 
তাঁড়। যাকে এরা টাকা বলে । 

হয়ত অন্য কোন ব্যাপার” হোয়াইট বললে । 

“গিয়েই দেখ কেওগ বললে অসীম বিশ্বাসে, িনি চাইছেন ওনার 
একটা ছবি আকিয়ে নিতে বিখ্যাত তরুণ আমেরিকান শিল্পী ও ষড়যন্ত্র- 
কারীকে দিয়ে যে তার নিপীড়িত দেশে এখন বাস করছে । বেরিয়ে 
পড়ো । ভিকটোরিয়া আর্টিস্টকে নিয়ে চলে গেল। অপেক্ষমান 


১৫৮ 


কেওগ পায়চারী করতে থাকলো, পাইপ থেকে ধেশয়ার তুফান উঠতে 
লাগল । 

ঘন্টা! খাঁনেকের মধ্যে ভিকটোরিয়া৷ আবার ফিরে এলো । হোয়াইটকে 
নামিয়ে দিয়ে অদৃশ্য হল। ধুমপান থামিয়ে কে€্গ দ্রীড়িয়ে রইল 
নীরব জিজ্ঞাসার চিহ্ন হয়ে । 

'বাগিয়েছি” চেচিয়ে বলল হোয়াইট তার বালকের মতো মুখে আনন্দে 
রক্কোচ্ছাস দেখ। দিল । “বিলি তুমি একটি আশ্চর্য মানুষ, উনি একটি ছবি 
চাঁন। আম খুলে বলছি। স্বর্গের দোহাই, এই ডিকটেটর ,লাকটি কিন্তু 
খাসা। উনি একজন একনায়ক, মাথার চুল থেকে আঙলের ডগ 
পর্ষস্ত । চেহারায় জুলিয়াস লীজার, শয়তান, আর চানসি ডি পিওকে 
একসঙ্গে মাশয়ে যেন সিপিয়া টোনে আকা। ভদ্র, গম্ভীর তার 
ব্যবহার । যে ঘরটায় আমি বসেছিলাম সেট। প্রায় দশ একর লহ্বায় 
চওড়ায় আর তার সাজসজ্জা মিসিসিপির স্টীমারের মতো, সোনালি 
আয়না আর সাদা পেনটু করা! তার মতো। ইংরেজি বলতে আমি 
জীবনভোর চেষ্টা করেও পারব না। দামের কথা উঠল। আমি 
বললাম দশ হাজার। আশা করেছিলাম পাহারা ডেকে আমাকে 
বাইরে নিয়ে গিয়ে গাল করে মারতে বলবেন । কিন্তু চোখের পাতাও 
পড়ল না, তার বাদামা হাতের একটি উপেক্ষার ভঙ্গিতে নেড়ে 
বললেন, আপনি য! বলেন। আমি কাল আবার যাচ্ছি ওর সঙ্গে 
খুটিনাটি আলোচনা করতে ।, 

কেওগ মাথা নিচু করল! ভার হেঁট মুখে আত নিগীড়নের ভাব 
সহজেই পড়া যায়। 

“আমি হেরে যাচ্ষি, ক্যণারি। দুঃখের সঙ্গে সে বললে। “আমি আর এই 
সব পুরো মানুষ সাইজের মামলাগুলি ভাতে নেবার যোগ্য নই। 
ঠেলাগাড়িতে কমলালেবু বেচাই বোধ হয় আমার উপযুক্ত ধান্দা । 
যখন আমি দশ হাঁজার বলেছিলাম তখন আমি ভেবেছিলাম ওই 
বাদামী লোকটির চূড়ান্ত দর আন্দাজ করেছি ছ সেনট, কম বেশীর 
ভিতর । পনের হাজার চাহলেও সহজেই ও গলে যেত। বলো ক্যারি, 
এর পরে এমন ভুল করলে কেওগকে কোন জড়বুদ্ধিদের আশ্রমে ভন্তি 
করে দেবে তো? 

কাসা মোরেন! উচ্চতায় একতলা হলেও খয়েরী পাথরে তৈরী, ভিতরটা 


১৫৯ 


অত্যন্জ স্ুসজ্দিত। উষ্ণমগুলের ঝলমলে গাছপালায় ছাওয়া, পীঁচিল 
ঘেরা বাগানের মধ্যে কোরালিওর এক প্রান্তে একটি নিচু টিলার ওপর 
অবস্থিত। পরের দিন প্রেমিডেনটের গাড়ী আবার এল শিল্পীকে 
নিয়ে যেতে । কেওগ সমুদ্র তীরে বেড়াতে গেল, সে ও তার ছবি 
তোলার বাকৃস আজকাল একটি পরিচিত দৃশ্য । যখন সে হোটেলে 
ফিরল, হোয়াইট একটা ডেক চেয়ারে বসেছিল ব্যালকনিতে। 

“কি খবর ! তুমি মার হিস নিবস্‌ কিছু স্থির করলে কি ধরনের ছবিটা 
হবে ? হোয়াইট উঠে ছাড়াল, ব্যালকনিতে কয়েকবার পায়চারী 
করল । তাবপর সে থামল আর হাসল । মুখ তার লাল, চোখ জল 
জ্বল করছে, এক ধরনের রাগত খুশীর ভাব সে চোখে । 

“শোন বিলি” সে অখরন্ত করল একটু কর্কশভাবে । “যখন তুমি আমার 
স্টুডিওতে এলে আর একট! ছবির কথা বললে, আমি ভাবলাম তুমি 
চাইছ চ্যাপট। কয়া ওটস বা হেয়ার টনিকের জন্য একট পোসটার, 
পাহাড় বা মহাসমুদ্রের পটভূমিতে । তা এই ছুটির যে কোনটিকে উচু 
দরের শিল্প বলে আমি মনে করতে পারি যখন তুলন! করি যে কাজে 
তুমি আমাকে টেনে এনেছ তার সঙ্গে । তোমাকে বলছি ওই পাষণ্ড কি 
চায়। সমস্ত তার প্রান করা হয়ে গেছে এমনকি একটা স্কেচও করে 
রেখেছে | বুড়োর আকার হাত কিন্ত চমৎকার 1 কিন্তু হে ম। সরম্বতী, 
শোন কি কিস্তুত সে আমাকে দিয়ে আকিয়ে নিতে চায়। ওকে 
আকতে হবে জুঁপটারের জায়গায় অলিমপাঁস পাহাড়ের ওপর বসে 
আছে। এক পাশে দাড়িয়ে আছেন জর্জ ওয়াশিংটন পুরণ সামরিক 
পোশাকে, এক হাত প্রেসিডেনটের কাধে । মাথার ওপর ডান! মেলে 
একজন দেবদূত, প্রেসিডেনটের মাথায় লরেলের একটি মাল পরিয়ে 
দিচ্ছে সম্ভবত ওকে কুইন অফ মে খেতাঁবে ভূষিত করতে । পশ্চাদপটে 
থাকবে কামান, আরো দেবদূত আর সেন্ত। যে এ ছবি আকভে 
পারবে তার আত্মা মানুষের নয় কুকৃবের এবং সে বিস্বৃতির গ্ডে 
বিলীন হবে । লেজে টিনের কৌটোও ধেঁপে দেওয়া হবে না বিস্বৃতিতে 
তলিয়ে যাবার আওয়াজ শোনার জন্তা |? 

বিলি কেগগের কপালে বিন্দু বিন্দুঘাম দেখা দিল। তাঁর নীল 
পেনসিলের টুকরে। এই সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে নি। তার প্ল্যানের 
সকল খুটিনাটি অবিশ্বান্ত স্বচ্ছন্দে সফল হয়ে জলেছিল এতক্ষণ । 


১৬০ 


ব্যালকনিতে আর একটি চেয়ার নিয়ে এলো, হোয়াইটকে বসতে 
বলে। আপাত প্রশান্তির সঙ্গে পাইপ ধরালে। | 

“শোন ছোকরা» সে বলল কোমল গাম্তীর্ষের সঙ্গে, তোমার আর 
আমার মধো আর্ট টু আর্ট আলোচন। দরকার । তোমার আর্ট তোমার 
কাছে আর আমারট1 আমার কাছে । তোমার আট তোমাকে শেখায় 
বিয়ারের বিজ্ঞাপন বা গওলড মিলের অয়েল পেনটিং দেখলে নাক উঁচু 
করতে । আমার আর্ট হচ্ছে বাবসা । এই প্লানটি আমার, আমি এটা 
নাথ। খাটিয়ে বের করেছি ছুই আর ছুইয়ে যোগ করে । এই প্রেমিডেনট 
বাক্তির পোট্টেট আকতে হবে তোমাকে ওলড কিং কোলের মতো ব! 
একটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের মতো, ফ্রেসকো, লিলি ফুলের তোড়া যেমন 
উনি বলবেন ওঁকে দেখতে, তেমনি করে। তুমি ক্যানভাসে পেনট 
লাগাও আর টাক! পকেটে পুরে চলে এসো । খেলার এই পর্যায়ে 
এসে আমাকে ধাক। দিয়ে ফেলে দিও নাক্যারি। ভেবে দেখ দশ 
হাজারের কথা ।' 

'আমি সেটা ভুলতে পাঁরছি না” হোয়াইট বলল, 'আর সেটাই আমাকে 
কষ্ট দিচ্ছে। আমার লোভ হচ্ছে সমস্ত আদর্শ জলাঞ্লি দিয়ে 
আমার আত্মাকে নিন্দার সাগরে ডুবিয়ে দিই ওই ছবিটা একে । 
ওই পাঁচ হাজার পেলে তিন বছর বিদেশে আমি শেখার সুযোগ 
পাবো আর সেজন্য আমার আত্মাকেও সম্ভবত আমি বিক্রি করতে 
পারি । 

“ভেবে দেখ, এত খারাপ লাগবে না” সান্তবন1 দিয়ে কেওগ বলে। “এটা 
একটা ব্যবসার প্রস্তাব । এতটা রঙের পরিবর্তে এতট! সময় আর 
এতগুলি টাকা । আর আমি এও মনে করি না যে ছবিটা শিল্প 
রূচিকেও তেমন সাংঘাতিক ধাককা! দেবে । দেখ জর্জ ওয়াশিংটন তো 
ভাল লোক ছিলেন, আর দেবদূতেই বা আপত্তি কিসের । আমি ওই 
গ্রপে খারাপ তো বিশেষ কিছু দেখছি না। জুপিটারের কাধে ছুটো 
ফ্যাপ দিয়ে দাও, মেঘগুলি ব্র্যাকবেরি গাছের ঝোপের মতো করে 
দাও, খুব একটা খারাপ হবে না যুদ্ধের দৃশ্য হিসেবে । দামটা আগে 
পাকা না হয়ে থাকলে ওয়াশিংটনের জন্য আরো এক হাজার ডলার 
দেওয়! উচিত আর দেবদূতের জন্য অন্তত পাঁচশ । 

'তুমি বুঝছ না বিলি, অস্বস্তির সঙ্গে হেসে হোয়াইট বলঙলগ। “আমরা 


১০ ১৬১ 


যাঁর ছবি আঁকি, আমাদের মধ্যে অনেকের শিল্প বোধ অত্যন্ত তীব্র । 
আমি চাই কোনদিন এমন একটি ছৰি আকতে যে লোকে 
সামনে দাড়িয়ে দেখবে এবং ভুলে যাবে যে রং দিয়ে আকা। সেই ছবি। 
আমি চাই যে সঙ্গীতের একটি মুছ্ছনার মতো সেটা তাদের মর্মে চলে 
যাঁবে নরম বুলেটের মতো! আর সেখানে ব্যাঙের ছাতা হয়ে ফুটে উঠবে। 
এবং আমি চাই তারা যাবার সময় জিগগেস করবে, আর কি কি কাজ 
ইনি করেছেন। আর আমি চাই না তারা খুঁজে পাবে আমার অন্য 
কোন কাজ। কোন পোট্রেট নয়, কোন ম্যাগাজিন কভার ব৷ 
ইলাসন্ট্রেশন, বা! কোন মেয়ের ড্রয়িং আর কোন কিছুই নয় কেবল 
সেই ছবিটি। সেজন্যই আমি সসেজভাজা! খেয়ে বেঁচে আছি যাতে 
নিজের সত্যের থেকে আমার চ্যুতি না হয়। আমি নিজেকে রাজি 
করেছিলাম এই ছবিটা আকতে কেন না এট! আমাকে বিদেশে শিক্ষার 
একটা স্থযোগ দিত । কিন্তু এই ক্যারিকেচার, শুনলে ডাক ছেড়ে কাদতে 
ইচ্ছে করে, হে ঈশ্বর! তুমি কি বুঝতে পারছ না মামি কি বলছি? 
“নিশ্চয়” কেওগ বললে, এত কোমলভাবে যেন একটি শিশুকে 
বলছে। হোয়াইটের হাঁটুতে তার দীর্ঘ তর্জনী রাখল। “বুঝলাম, 
তোমার শিলপবোধ এমনভাবে মার খাবে এটা ঠিক নয়। তুমি 
চেয়েছিলে বিরাট একটা ছবি আঁকতে যেমন ব্যাটল অফ গেটিসবার্গ- 
এর সবাত্বক ছবি। কিন্তু তোমাকে মনে মনে একটা ছোট্র স্কেচ 
করতে অনুরোধ করছি । এই স্কীমে আজ পধন্ত খরচ হয়েছে তিনশ 
পঁচাশি ডলার পঞ্চাশ সেন্ট । আমাদের মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছিল 
আমাদের সঞ্চয়ের শেষ সেনট্টি দিয়ে । বাকি যা আছে কোন রকমে 
নিউ ইয়র্কে ফিরে যাওয়া চলতে পারে। আমি দশ হাজারের 
আমার অংশটি চাই । ইডাহোতে তামার খনিতে লগ্মী করে লক্ষ ডলার 
আমাকে রোজগার করতেই হবে । তোমার আটের দাড় থেকে নেমে 
এসে ক্যারি, আর এসো আমর টুপি ভর্তি করি ডলারে । 

“বিলি” অতি আয়াসে হোয়াইট বললে, “আমি চেষ্টা করব। বলছি 
না আমি করব, কিস্ত আমি চেষ্টা করব । আমি ওটা ধরব আর যদি 
পারি শেষও করব ।” 

“এই তো কাজের কথা” কেওগ খুশীর সঙ্গে বলল । “লক্ষ্মী ছেলে । এখন 
আর একট কথ!-_খুব তাড়াতাড়ি ছবিট। শেষ করতে হবে, যত শী 


১৬৭ 


সম্তব। তোমার রং মেশাবার জন্য ছুজন ছোকরাকে লাগাও, যদি 
দরকার হয়। আমি কিছু ইঙ্গিত পেলাম শহরে । এখানকার জনগণ 
মিঃ প্রেসিডেন্টের ওপর অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। সবাই বলছে তিনি 
বাণিজ্যিক সুবিধার ব্যাপারে বড় দরাজ। ওরা অন্ভিযোগ করছে 
ইংল্যাণ্ডের সঙ্গে তিনি গোপনে চুক্তি করেছেন দেশটাকে বেচে দেবার। 
আমর! চাই ছবিট। শেষ করে টাকাট। আদায় করে নিতে কোন 
গোলমাল শুরু হবার আগেই ॥ 

কাস! মোরেনার প্রকাণ্ড দালানে প্রেসিডেন্ট একটা বড় ক্যানভাস 
টাডিয়েছিলেন। এর নীচে হোয়াইট তার অস্থায়ী স্টুডিও সাজিয়েছে 
প্রতিদিন মহান ব্যক্তি ছু'ঘণ্টা বসেন। 

হোয়াইট বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করে যেতে লাগল। কিন্তু যতই 
অগ্রসর হয় তাঁর জালা, আত্মধিক্কার, থমথমে গাস্তীর্য আর শ্রেষাত্মক 
উল্লাস বাড়তে থাকে । কেওগ বিচক্ষণ সেনাধ্যক্ষের মতো। কখনো! 
বুঝিয়ে কখনো সান্ত্বনা দিয়ে তাকে ছবির কাজে ব্যস্ত রাখল । 

মাস খানেক পরে হোয়াইট ঘোষণা করল ছবি সম্পূর্ণ হয়েছে, জুপিটার, 
ওয়াশিংটন, দেবদূত, মেঘ, কামান সবকিছু । তার মুখমণ্ডল ফ্যাকাসে, 
কেওগকে বলবার সময় মুখ তার সোজা, টানটান। সে বলল 
প্রেসিডেন্ট খুব খুশী । জাতীয় গ্যালারিতে ছবিট। রাখা হবে রাজপুরুষ 
ও দেশনায়কদের মধ্যে । শিল্পীকে পরের দিন কাসা মোরেনাতে যেতে 
বল। হয়েছে দাম নিতে । নির্ধারিত সময়ে সে হোটেল থেকে বেরুল। 
নিবাক কেওগ পাশে পাশে চলেছে, মহা উৎসাহে, বলছে তার প্ল্যানের 
সাফলোর কথা । 

এক ঘণ্টা পরে সে ফিরল, যে ঘরে কেওগ তার জন্য অপেক্ষা করছিল, 
টৃপিটা ছু'ড়ে ফেলল মেঝেতে, বসে পড়ল টেবিলের ওপর । 

বিলি” সে বলল বাধ বাঁধ গলায়, “কিছু টাকা আমার আছে পশ্চিমে 
একট ব্যবসাতে লগ্নী করা-_ব্যবসাটা আমার ভাই চালায়। তারই 
আয় থেকে আমি নিজের খরচ চালাই আর চিত্র বিছা শিখছি। 
আমার অংশ আমি উঠিয়ে নিচ্ছি আর তোমাকে এই স্কবীমে আমাদের 
যা লোকসান হুল ভার অংশ দিয়ে দিচ্ছি।” 

“লোকসান ? চিৎকার করে কেওগ লাফিয়ে ওঠে । “তুমি কি ছবিটার 
জন্য টাকা পাওনি ? 


১৬৩ 


হ্যা টাকা পেয়েছিলাম, হোয়াইট বললে । “কিন্ত এখন আর সেই 
ছবিও নেই, আর টাকাও নেই । শুনতে যদি তোমার বাসন থাকে 
তাহলে এই হচ্ছে সেই খুটিনাটি । প্রেসিডেন্ট আর আমি ছবিট! 
দেখছিলাম । তার সেক্রেটারী নিউ ইয়র্ক-এর এক ব্যাঙ্কের একটা 
ড্রাফট নিয়ে এলো, আমার হাতে দিল। যেমুহুর্ঠে সেটাতে আমি 
হাত দিলাম আমি পাগল হয়ে গেলাম। আমি কাগজখানা ছিড়ে 
টুকরে! টুকরো! করে ফেললাম মেঝের ওপর । একজন মজুর দালানের 
থামগুলিতে নতুন করে রং লাগাচ্ছিল। এক বালতি রং কাছেই ছিল। 
আমি তার তুলিট। নিয়ে এক কোয়ার্ট নীল রং সেই দশহাজার ডলারের 
বিভীষিকার সবত্র চাপড়ে দিলাম। তারপর নমস্কার করে আমি ফিরে 
এলাম । প্রেসিডেন্ট নড়েননি, কথাও বলেননি । এই একবার তিনি 
অত্ন্ত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । বিলি, তোমার ওপর অবিচার করা 
হল কিন্তু আমি পারলাম না।, 

কোরালিওতে উত্তেজন। বাড়তে থাকে । বাইরে অস্পষ্ট গুঞ্জন শোন 
যায়, মাঝে মাঝে তীক্ষ ধ্বনি, আবাজে। এল ত্রেদর, মুযুয়েরতো। আল 
ত্রেদর, কানে আসে। 

“ওই শোন, হোয়াইট টেচিয়ে ওঠে ভিক্তন্বরে, “আমি ওইটুকু স্প্যানিশ 
জানি। ওর! চিৎকার করছে বিশ্বাসঘাতক নিপাত যাক। আমি 
আগেও এই ধ্বনি শুনেছি । আমার মনে হচ্ছিল ওই ধ্বনির আমিই 
লক্ষ্য । আমি আর্টের কাছে বিশ্বাসহস্তা, ছবিট। তাই গেল ।” 
“তোমার ক্ষেত্রে “নিরেট বোক। নিপাত যাক” হত জুৎসই,, কেওগ বলল 
অগ্নিময় তেজের সঙ্গে । "তুমি দশ হাজার ছিডে ফেল যেন ছেঁড়। 
ন্যাকড়া কেন না! পাঁচ ডলার দামের রং কিভাবে তুমি লেপেছ তাই 
নিয়ে তোমার বিবেক আঘাত পায়। এর পরে কোন পরিকল্পনায় 
আমার যদি সহকারী দরকার হয় তাহলে সে ব্যক্তিকে নোটারির সামনে 
প্রতিজ্ঞ করে বলতে হবে “আদর্শ” শবাঁটি সে কখনে। কানেও শোনেনি 1, 
কেওগ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল রাগে জ্বলতে জ্বলতে । হোয়াইট তার 
ক্ষোভের জন্য ব্যস্ত হল না । বিলি কেওগের হাহুতাস তুচ্ছ, যে আত্মগ্লানি 
থেকে সে রক্ষা পেয়েছে তার কাছে। 

কোরা'লিওতে উত্তেজনা! বাড়তে থাকে । একটা বিস্ফোরণ আসন্ন । 
এই অসস্ভোষ প্রদর্শনের কারণ ছিল শহরে একজন লম্বাচওড়া গোলালী 


৯৬৪ 


মুখমণ্ডল ইংরেজের উপস্থিতি, যে ব্যক্তি শোনা যায় তার সরকারের 
একজন প্রতিনিধি হিসেবে এসেছে সেই চুক্তিটি সহি করতে যাঁর ৰলে 
প্রেসিডেণ্ট তার দেশের জনগণকে বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। 
অভিষোগ করা হচ্ছিল যে কেবল মহামূল্যবান ব্যবসায়িক সুবিধাই 
ছেড়ে দেওয়। হচ্ছে তাই নয়, জাতীয় ধণ ইংরেজদের হাতে হস্তাস্তর 
করা হবে আর কাস্টম হাউস তাদের দিয়ে দেওয়া হবে প্রত্যাভৃতি 
হিসেবে । দীর্ঘকাল ছূর্ঘশায় পয়ুদস্ত জনগণ দৃঢ়মনা হয়েছে তাদের 
প্রতিবাদ জোরালোভাবে জানাতে । 

সেই রাত্রে কোরালিও আর অন্ত শহরে তাদের উম্মার উদগীরণ হল। 
সঘোষ জনতা, পারদ ধর্মী কিন্তু বিপদজনক, রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। 
প্লাজার মাঝখানে প্রেসিডেন্টের ব্রোঞ্জের মৃত তারা ভূপাতিত করেছিল, 
ভেঙ্গে সেটা নিরবয়ব পিগ্ডে পরিণত হয়েছিল । সরকারী প্রাসাদগচলি 
থেকে সেই ফলকগুলি টেনে এনে খান্‌ খান্‌ করল যেগুলিতে প্রোজ্বল 
মুক্তিদাতার মহিমা কীতিত ছিল। সরকারী অফিসে ভার ছবি ছিড়ে 
ফেলা হল। জনতা এমন কি কাস মোরেনাও আক্রমণ করেছিল 
কিন্ত সৈন্তর! তাদের তাড়িয়ে দেয়, সৈম্তর! সরকারের অনুগত ছিল। 
লোসাদার বিরাটত্ব অনুভূত হল যখন দেখা গেল পবদিন ছিপ্রহরের 
মৃধ্যই আবার শাস্তি ফিরে এলো, তিনি আবার সবাধিনায়ক ! তিনি 
ঘোষণাপত্র প্রকাশ করলেন, অস্বীকার করলেন দৃঢ়ভাবে ইংলগ্ডের 
সঙ্গে কোন আলাপ মালে।চনার কথা । স্যার স্টাফোড্ড ভহান, সেই 
গোলাগী গগুদেশ ইংরেজও প্রচার করলেন যে তার উপস্থিতির কোন 
আসন্তর্জীতিক তাৎপর্য নেই । তিনি ভ্রাম্যমান, অন্য কোন উদ্দেশ্য তার 
নেই । প্রকৃতপক্ষে (অন্তত তাই তিনি বিবৃতি দিলেন) তিনি 
আসার পরে প্রেসিডেনটের সঙ্গে একবার দেখাও করেন নি, কথাও 
বলেন নি। 

এই গোলমালের মধ্যে হোয়াইট দেশে ফিরে যাবার তোড়জোড় 
করছিল একটি স্টীমারে যেটি ছুই ব। তিন দিন পরে ছাড়বে । ছুপুরে, 
চঞ্চল কেওগ ক্যামেরা নিয়ে বেরুল সময় কাটাতে । শহর এমনি 
প্রশীস্ত যে মনে হবে শাস্তি তার লাল টালির ছাদের দাড় থেকে 
কখনোই চলে যায় নি। 

অপরাহের মাঝামাঝি কেওগ হোটেলে কিরে এলো হস্তদস্ত হয়ে, 


১৬৫ 


হাবভাবে বিশেষত্ব রয়েছে। সে ঢুকল ছোট্ট এক কামরায় যেখানে 
সে ফোটো! ডেভলপ করে। পরে সে ব্যালকনিতে এলে৷ হোয়াইটের 
কাছে, দৃষ্টি উজ্জ্বল, গম্ভীর, মুখে নিষ্ঠুর হাসি। 

“এটা কি জানো? কার্ডবোর্ডে মাউন্ট কর। চার বাই পাঁচ একটি 
ফোটে। দেখিয়ে বললে । 

“সেনিওরিটার সুযাপশট, সৈকতে শয়ান, অনুপ্রাস চেষ্টাকৃত নয়, 
হোয়াইট বললে 'অলস ভাবে । 

ভূল হল» কেওগ বঙ্গলে উজ্জল চোখে । “এটা একটা গুলতি, এট 
ডাইনামাইট হতে পারে । এটা একটা সোনার খনি। এটা দেখিয়ে 
তোমার প্রেমিডেনটের কাছে বিশহাজার ডলার আদায় করব, হ্যা 
বিশ হাজার ডলার, আর ছবি নষ্ট করা হবে না। শিল্পকলার কোন 
নীতিবোধ বাধা দেবার নেই। আর্ট! তুমি আর তোমার দুর্গন্ধ 
যুক্ত টিউবগুলি। আমি তোমার ছাল ছাড়িয়ে তোমাকে শেষ করব 
একটি কোডাক দিয়ে, একবার দেখে নাও ।? 

হোয়াইট ছবিট! হাতে নিয়ে লম্ব। শিস্‌ দিয়ে উঠল । 

“জোভ» সে চিৎকার করে ভঠল, “এট একবার দেখলে শহরে লোকজন 
খেপে উঠবে । কেমন করে তুমি এটা পেলে, বিলি? 

'প্রেসিডেনটের বাগানের চারপাশের উচু পাঁচিল আছে জানো তে1। 
আমি সেই পাঁচিলে উঠেছিলাম সারা শহরের একটা বার্ডস আই নেব 
বলে। দেয়ালের এক জায়গায় দেখলাম একট। ফাটল যেখান থেকে 
একট! পাথর আর খানিকটা প্লাসটার খসে পড়ে গেছে । আমি 
ভাবলাম দেখি তে। প্রেসিডেনটের বাঁধাকপিগুলি কেমন বড়ো হচ্ছে। 
প্রথম আমার নজরে পড়ল তিনি আর এই স্ভার ইংলিশম্যান একটি 
ছোট টেবিলে বসে আছেন প্রায় বিশ ফুট তফাতে। বাগানের এক 
নিভৃত কোণে ছায়ায় ঢাক! তালগাছ, কমলালেবুর গাছ, হাতের কাছে 
ঘাসের ওপর এক বালতি শ্যামপেন রাখা আছে। আমি দেখলাম 
তক্ষুণি আমাকে আমার আটের সবচেয়ে বড় আঘাতটি হানতে হবে। 
তাই আমি গর্ভের মধ্যে ক্যামেরাটি বসিয়ে বোতাম টিপে দিলাম। 
ঠিক সেই সময়ে ওই ছুই বুড়ে। হাত ঝাঁকানি দিচ্ছিল চুক্তি সই হবার 
পরে, দেখছ ছবিতে তাই এসেছে ॥ 

কেওগ কোট পরল, টুপী নিল হাতে । 


১৬৬ 


“ট] নিয়ে তুমি কি করবে ? হোয়াইট শুধোয়। 
“আমি!” আহত স্বরে কেওগ বলল, “কেন, গোলাপী রিবন বেঁধে 
হোয়াটনটের ওপর টাডিয়ে রাখব । আমি অবাক হচ্ফি তোমার 
প্রশ্নে। যতক্ষণ আমি বাইরে থাকব ভেবে ঠিক করে রাখো তে। 
কোন, জিঞ্জারকেক রাষ্ট্রপতি এটা কিনতে চাইতে পারে তার ব্যক্তিগত 
গ্রহের জন্তা। প্রচারিত না হয় যাতে ? 
তালগাছের মাথায় সূর্যাস্তের লালিমা ছড়িয়ে পড়েছে যখন বিলি 
কেওগ ফিরে এলো! কাসা মোরেনা থেকে । চিত্রশিল্পীর জিজ্ঞান্ু দৃষ্টির 
উত্তরে মাথা নাড়ল | ছুই হাতের ওপর মাথ। রেখে খাটে শুয়ে পড়ল । 
“আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম । টাকাও সে দিল একজন ছোট্ট 
ব্যক্তির মতো । প্রথমে আমাকে ভিতরে যেতে দেয় নি। আমি 
বললাঙষ জরুরী | হ্যা, প্রেসিডেনট ব্যক্তিটি সববিষ্ভা বিশারদদের 
দলে। মগজের ব্যবহারের বেশ ব্যবসায়িক ধারা আছে গুর। আমি 
শুধু ফোটো গ্রাফটি তুলে ধরলাম যাতে তিনি দেখতে পান এবং দামট। 
বললাম । উনি হাসলেন, কাছেই ছিল একট। সিন্দুক, সেখান থেকে 
নগদ কুড়িখানি আমেরিকান ষ্টেট ট্রেজারির হাজার ডলারের নোট 
টেবিলে রাখলেন, ঠিক যেমন এক ডলার পঁচিশ সেনটের বিল আমি 
শোধ করি। চমৎকার নোটগুলি, খড় খড় শব করে উঠলো ঠিক যেন 
ঢু একর বাগানের জড়ো কর। পাতা আালানোর আওয়াজ ।' 
'দেখি একটা, ছু'তে কেমন লাগে” হোয়াইট কৌতুহলী হয়ে বললে, 
“আমি হাজার ডলার নোট কখনো ছুই নি” কেওগ তৎক্ষণাৎ জবাব 
দিল না। “ক্যারি” গে বললে একটু আত্মভোলা স্থুরে, "তুমি তোমার 
আর্ট খুব বড়ে। করে দেখ, নয় কি? 
হোয়াইট আন্তরিক ভাবে বললে, “আমার নিজের ও আমার বন্ধুদের 
আধথিক মঙ্গলের সেটা পরিপন্থী হয়েছে। 
'আমি তোমাকে বোকা ভেবেছিলাম সেদিন, কেওগ বলে চলে শান্ত 
ভাবে। “আর, আমি নির্ভুল জানি না যে তুমি বোকা কিনা। কিন্তু 
তুমি বোকা হয়ে থাকলে আমিও বোকা । আমি অনেক মজার 
ব্যবসা করেছি ক্যারি, কিন্তু সব সময় আমি চেষ্টা করেছি সৎ থাকতে 
আর আমার বুদ্ধি ও মূলধন প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমান পাল্লায় রাখার 
চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন, মানে প্রতিপক্ষকে যখন তুমি কোণঠাসা 


১৬৭ 


করেছ আর ফ্তুয়ের প্যাচ তুমি ছ্বুরিয়েই চলেছ আর তাঁকে টাকা বের 
করতেই হবে তখন আমার মনে হয় খেলাটা আর পুরুষের খেলা 
থাকে না। এর একটা নাম আছে, নয় কি? তুমি জানো এটা 
হল, কি বলব তুমি বুঝতে পারছ না কি? আমার মনে হয় এটা 
অনেকট। তোমার ওই শিল্পকলার মতো ব্যাপার আর কি। তিনি, 
মানে আমি ফোটোগ্রাফটি ছি'ডে ফেললাম । টুকরোগুলি নোটের 
তাড়ার ওপর রাখলাম আর সমস্তট! তার দিকে ঠেলে দিয়ে বল্লাম! 
মাপ করবেন মি: লোসাদা, দামের ব্যাপারে আমার একটু তুল 
হয়েছিল। আপনি ফোটোটা পাচ্ছেন বিনামূল্যে । এখন ক্যারি 
পেনসিলটা নাও, আবার আমাদের কিছু হিসেব করতে হবে। 
আমাদের মূলধনের যা বাকি আছে তার থেকে তোমাকে আরো! কিন 
বাঁচাতে হবে । আমার জন্তে হু একটা সসেজভাজ। রাখবে, তোমার 
বাসায়, যখন তুমি নিউইয়র্ক কিরে যাবে ।, 


পদ 
ভিডি 


স্প্াানিশ মেন বরাবর পারম্পর্ধ বলে কিছু নেই। ঘটনা সেখানে 
ঘটে কখনে। কখনো । এমন কি মহাকাল তার হানুয়া মাঝে মাঝে 
ঝুলিয়ে রাখে কমলালেবু গাছের ডালে এবং কিঞ্চিৎ [দবানিদ্রা দেবে 
বা একটি সিগারেট পান করে সেই অবসরে । 

প্রেসিডেনট লোসাদার বিরুদ্ধে নিক্ষল বিদ্রোহের পরে দেশ আবার 
থিতিয়ে গেল শান্তভাবে সা করতে দেই সব অনাচার যার বিরুদ্ধে 
তার! অভিযোগ করেছিল। কোরালিওতে রাজনৈতিক বৈরীর৷ হাত 
ধরাধরি করে চলতে লাগল, হালকাভাবে দূরে রেখে সকল মতানৈক্য । 
শিল্প অভিযানের বিফলতায় কেওগ ভার মার্জীর পদক্ষেপ ত্যাগ করে 
পিঠে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়েনি। নীল পেনসিলের টুকরো নিয়ে 
আবার সে হিসেব করতে বসেছিল হোয়াইট যে স্টীমারে চলে গেল 
তার ধোয়া আকাশে মিলিয়ে যাবার আগেই। গেডিকে একবার 


১৬৮ 


বলতেই ত্রানিগান এণ্ড কোম্পানি থেকে যত খুশী মাল সে বাকিতে 
পেয়ে গেল। হোয়াইট যেদিন নিউ ইয়র্ক পৌছাল সেইদিন কেওগ 
পাঁচটি খচ্চরের পিঠে লোহালকড় আর ছুরি কী'চির বোঝ। চাঁপিয়ে 
রওনা হল দেশের ভিতরের দিকে দুর্গম পাহাড়ের রাস্তায় । সেখানে 
রেড ইনডিয়ান প্রজাতির লোকে বালু ধুয়ে ব্বর্ণরেণু সংগ্রহ করে সুবর্ণ 
বাহী নদী থেকে । যখন বাজার তাদের কাছে এসে উপস্থিত 
হয় কেনা বেচা চটপট এবং লাভজনক হয় কডিলিয়েরা পৰত অঞ্চলে । 


কোরালিওতে মহাকাল ডান! যুড়ে নিদ্রাতুর রাস্তায় ক্রীস্ত পদক্ষেপে 
চলছিল। তার উষ্ণ প্রহরগুলিতে যারা সবাধিক উল্লাসত হয়েছিল 
তারা সব চলে গেছে । ক্ল্যানসি একটি স্প্যানিশ জাহাজে চড়ে কলনের 
দিকে রওনা হয়েছে তার ইচ্ছে আছে যোজকটি অতিক্রম করে আবার 
পাড়ি দেবে কালাও পর্যন্ত যেখানে লড়াই চলছে শোন। যায়। গেডি, 
যার নম্র স্বভাব একদ। কমলের ফল খাওয়ার বিরস প্রতিক্রিয়া দূর 
করত অতাঁতে বহুবার, মে এখন গুহবাসী, তার উজ্জ্বল অফ্ড পলাকে 
নিয়ে সখী, বপ্রেও কখনো চিন্তা বা ছুঃখ করো না সেই সীল 
করা সমাধান খুঁজে না পাওয়া ্নোগ্রাম করা বোঙলটির জন্য, যার 
মধ্যস্থিত রহন্ত সমুদ্রের গর্ভেই নিরাপদে ন্যস্ত রইল । বুদ্ধিমান, 
বিচক্ষণ ওয়ালরাস তার প্রোগ্রামের মাঝামাঝি শালমোহরের ছাপ 
লাগাতে থাকুক সেইসব ঘটনার ওপর যেগুলি প্রাসঙ্গিক এবং শুনতে 
মন চাঁয়। আটউড চলে গেছে, যার পিছনের বারান্দায় ছিল দরাজ 
আতিথেয়তা আর যার হষ্ট বুদ্ধি ছিল অদ্ভুত । ডাঃ গ্রেগ, তার অন্তরে 
ট্রপ্যানিং-এর কাহিনী ধুমায়িত, তিনি ছিলেন একটি দাঁড়িওয়ালা 
আগ্নেয়গিরি সর্বদা উদ্গীরণের লক্ষণে আক্রান্ত, তাকে অবশ্য সেই 
দলে ফেলা যায় না আলম্ত বাঝিমু্ন অপনোদনে যারা সাহায্য 
করেছিল। নতুন কনসালের বটানির নোট লেখ সমুদ্রের ঢেউ-এর 
সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিল, তার মধ্যে শেহরাজাদ বা রাউণ্ড টেবিলের 
কোন সংঅ্রব ছিল না। গুডউইন বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকত, 
যেটুকু সময় পেত সে বাড়িতে থাকতে ভালবাসত। অতএব দেখ! 
যাচ্ছে কোরালিওতে বিদেশী বাসিন্দাদের মধ্যে সখ্যতা বা আনন্দ 
উপভোগের বিষয়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। 


১৬৪৯ 


আর এই সময় ডিকি ম্যালোনি শহরে এসে উপস্থিত হল, ঠিক যেন 
মেঘের মধ্য থেকে উদয় হল এবং আনন্দ ছড়িয়ে দিল । 

কেউ জানত না ডিকি ম্যালোনি কোথা থেকে এল বা! কিভাৰে 
কোরালিও পৌছাল। একদিন তাকে দেখা গেল, ব্যস। পরে সে 
বলত যে ফলের জাহাজ থর-এ এসেছে। কিন্তু থরের সেই 
তারিখের যাত্রী তালিক। লক্ষ করলে ম্যালোনির নাম পাওয়া যাবে 
না। কৌতূহল যদিও কয়েকদিনেই প্রশমিত হল। এবং ডিকি তার 
জায়গা করে নিল ক্যারিবিয়ান থেকে উৎক্ষিপ্ত কোন অজানা জীব 
হিসেবে । সে ছিল অত্যন্ত কর্ণঠ, বেপরোয়। হাসিখুশিতে ভরা যুবক, 
ধূসর আকর্ষণী চোখ, ভূবন ভোলান হাসি, বেশ কালো রোদে পোড়া 
গায়ের র১ আর মাথায় টকটকে লাল চুল যা এই অঞ্চলে ইতিপূর্বে 
দেখা যায় নি। স্প্যানিশ এবং ইংরেজি সমান অনায়াসে বলে, আর 
পকেটে সর্বদা প্রচুর টাকা । অল্পদিনেই যেখানে সে যায় সেখানেই 
সে একজন আকাজিক্ষিত সঙ্গী। ভিনে। ব্রাংকোর প্রতি তার মোহ 
প্রগাট এবং তার খ্যাতি শম্ই ছড়ালে৷ বেশী মদ খেতে পারে এমন 
তিনজন যুবকের একজন হিসেবে । সবাই তাকে ডিকি নামে ডাকে । 
প্রত্যেকেই তাকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে বিশেষত স্থানীয় লোকের 
যাদের কাছে তার লাল চুল আর সহজ আন্তরিক ব্যবহার অত্যন্ত 
আনন্দের আর অনুকরণীয় স্টাইল রূপে গণ্য হয়। শহরে যেখানেই যাও 
দেখতে পাবে ডিকিকে ৰা শুনতে পাবে তার উৎফুল্ল হাসির আওয়াজ, 
চারপাশে একদল স্তাবক যার! তার মিষ্ি স্বভাব আর সাদ! দ্রাক্ষার 
মদ্র খুবই পছন্দ করত এবং সেও যা কিনতে সবদাই প্রস্তুত ছিল । 

তার উদয় এবং অবস্থানের বিষয়ে অনেক জল্নার স্ুষ্টি হয়েছিল 
যতদিন না দে সব থামিয়ে দিল একটি দোকান খুলে। 
তামাক, মিষ্টান্ন, রেড ইগ্ডিয়ানদের হস্ত শিল্প সামগ্রী তন্ত বা সিল্‌কে 
বোন! বন্ত, হরিণের চামড়ার জাপাতো, বেতের ঝুড়ি । তার অভ্যাসের 
তথাপি কোন পরিবর্তন হল না! দিবারাত্রির প্রায় অর্ধেক ব্যয় হত 
তাস খেলে আর মগ্ পানে, কমানডানটের সঙ্গে, কাস্টমের কালেক- 
টরের সঙ্গে, জেফে পোলিসিও এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকারী 
কর্মচারীদের সঙ্গে । একদিন ডিকি দেখল মাদাম1 ওরতিজের কন্তা। 
পাসাকে হোটেল দে লোস এসত্রানজারস-এর পাশেই দরজার ভিতরে: 


১৭৩ 


বসে আছে। কোরালিওতে চলার পথে সে এই প্রথম দ্রাড়াল স্থির 
হয়ে, তারপর হরিণের মত ছুটল, ভাসকুইথকে খুঁজে আনল, যে ছিল 
একজন রংদার দেশীয় যুবক, নিজেকে পরিচয় করে দেবার জন্য । 
যুবকেরা পাসার নামকরণ করেছিল ল। সানতিতা নারানজাদিত। | নারান 
জাদিতা একটি স্প্যানিশ শব্দ, একটি রঙের বর্ণনা যা অন্য 
ভাষায় ব্যাথা করতে অস্থবিধায় পড়তে হয়। ছোট্ট দেবী, অপূর্ব 
আন্দর-সুস্ম-সামান্ত-কমলাসোনালি রডে রঞ্জিতা বললে মাদাম। 
ওরতিজের কন্ঠার বর্ণনার কাছাকাছি পৌছানো যাঁয়। 

মাদামা ওরতিজ রাম বেচতেন অন্য পানীয়ের সঙ্গে । রাম আন্থান্ 
পানীয় বেচার অপরাধ স্থালন করে। যেহেতু রাম উৎপাদিত হয় 
সরকারী উদ্যোগে এবং একটি সরকারী বিতরণ কেন্দ্রের মালিক হওয়ার 
অর্থ হল সম্মান প্রতিপত্তি, বিশিষ্টতা যদি নাও হয়। তাছাড়া বিধি 
নিষেধের কড়াকড়িও দোকানটি পরিচালনে কোন দোষ পায় নাখুঁজে। 
খদ্দেররা ভয়ে ভয়ে সেখানে মগ পান করত । মাদামার স্ুপ্রাীন এবং 
বিখ্যাত বংশগৌরবের জন্ত রাম পান করেও হুল্লোড়ের সাধ্য কারো 
হত না। কেন না তিনি ছিলেন ইগনেশিয়াস-এর বংশান্ভবা, যিনি 
পিংসারের সঙ্গে এসেছিলেন এই দেশে । আর তার লোকান্তরিত স্বামী 
ছিলেন কমিশনিও দে ক্যামিনস ই পুয়েনতে, সেই জেলার সড়ক ও 
সেতু বিভাগের কমিশনার । 

সন্ধ্যায় পাস! জানলায় বসে গিটারের তারে আঙ্খল ছোরাত, পাশের 
ঘরে তার] পান করত। জোড়ায় জোড়ায় বা তিনজনের দলে যুবক 
সেনার! দেয়ালের ধারে ফিটফাট সাজানে। চেয়ারে এসে বসত। ওর! 
ওখানে নসে থাকতো ল। সানতিতার হৃদয় হরণের জন্ত। তাদের 
পদ্ধতি ছিল (বুদ্ধিযুক্ত প্রতিযোগিতার পক্ষে যা যথেষ্ট ছিল না) বুক 
ফোলানো, সাহসীভাব মুখে ফুটিয়ে তোল এবং এক থেকে ছুগ্রোশ 
সিগারেট টানা । এমনকি সুক্ষ সোনালী রঙের দেবীও চাইত অন্ত 
ধরনের আরাধনা । নিকোটিনের পাথরের দেয়ালের মতো! নীরবতা 
ভঙ্গ করত পাসা গিটারের সঙ্গীতে আর মনে মনে ভাবত 
কাহিনীতে পড়া বীর ও ঘনিষ্ঠ অশ্বারোহীদের কথা কি তবে 
মিথ্যা! 

নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে মাদামা আসতেন, চোখে তার আলোর 


১৭১ 


ইসারা । আর তখন কড়া করে মাঞ্জ দেওয়। ট্রাউজারের খসখস শব্দ 
করে এক একজন সৈন্য যুবক উঠে যেত বারে । 

ডিক মালোনি যে শীঘ্রই এই প্রান্তরের পরিচয় নেবে তা সহজেই 
অনুমান করা যায়। কোরালিওতে খুব অল্প কয়েকটি দরোজ। ছিল 
যার ভিতরে সে তার লাল মাথা গলায় নি। 

প্রথম দর্শনের অবিশ্বান্ত কম ব্যবধানে তাকে দেখা গেল পাসার দোলন 
চেয়ারের খুব নিকটে বসে থাকতে । ডিকির আরাধনার থিয়োরিতে 
দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়াই-এর কোন স্থান ছিল না। ছূর্গ জয়ের 
জন্ত একটিমাত্র প্রবল, গভীর আন্তরিক, উন্মুখর, অপ্রতিরোধ্য 
এসকালাদ বা তুঙ্গ যাত্রা-_এই ছিল ডিকির নিয়ম । 

পাসা জন্মেছিল দেশের সবাধিক গধিত স্প্যানিশ বংশে । তাছাড়া 
আরে! অসাধারণ স্বযোগ ও পেয়েছিল। নিউ অলিয়নসের একটি 
স্কুলে ও ছু'বছর পড়েছিল যার ফলে দেশীয় অন্তান্থ কুমারী মেয়েদের 
থেকে ওর উচ্চাশ! ভিন্নতর ভাগ্যের আশা করত। অথচ দেখ! গেল 
প্রথম লাল মাথা ছোকরা মোহন হাসি আর মধুর বুলি দিয়ে যথাযথ 
প্রেম নিবেদন করতেই ও কাবু হয়ে গেছে॥ 

শীত্রই প্লাজার এক কোণে ছোট্ট একটি চার্ঠে ডিকি তাকে নিয়ে গেল 
এবং তার অনেকগুলি বি।শষ্ট নামের সঙ্গে মিসেস মালোনি নামও যুক্ত 
হল। এবং ভাগ্যের চালনায় ওকে স্থির চোখ আপ মুন্ময়ী মহামায়ার 
মতে] মুত্তি নিয়ে ছোট্ট দৌকানের কাউপ্টারে বসে থাকতে দেখা গেল। 
ওদিকে ডিকি মছ্য পানে আর তার বাচাল বন্ধুুদর নিয়ে রইল মগ্ন। 
স্্রীলোকেরা তাঁদের স্বভাব সিদ্ধ অনুসন্ধান নিয়ে এবার স্থযোগ পেল 
ওকে আঘাত করবার, ৩]র। ডিকির স্বভাবের ব্যাপারে সুক্মগাবে 
বিদ্রেপ করতে ছাড়ল না। 

“তোরা মাংসের উপযুক্ত গাই গরু, পাস৷ তার স্থির, স্পষ্ট গলায় বলত। 
“মানুষ চিনতে তোর! জানিস না। তোদের পুরুষেরা তো মেনিমুখো, 
তারা পারে শুধু ছায়ার বসে সিগারেট টানতে, রোদ উঠে তাদের 
গা যতক্ষণ ন। পুড়িয়ে দেয়। তোদের দোলনায় কুঁড়েমি করে তার! 
শুয়ে থাকে আর তোর তাদের চুল আঁচড়ে দিস আর টাটকা ফল 
এনে খাওয়াস । আমার মরদের গায়ে সে রক্ত নেই। স্মদ খায়, 
তাতে কি? যখন তোদের পেটরোগা মরদর1 ডুবে যাবে এমন 


১পহ২ 


পরিমাণ মদ খেয়ে সে বাড়ি আসে তখন তোদের হাজারটা পোবরে- 
সিটোসদের থেকেও অনেকঞ্চণ মরদ হিসেবে আমার কাছে আসে সে। 
আমার কেশ সে সমান করে দেয়, আমাকে গান শোনায় । আমার 
জুতো নিজের হাতে খুলে দেয় আর প্রত্যেক পাঁয়ে একটি চুম্বন রেখে 
দেয়। সে আমাকে তুলে ধরে, ওঃ ! তোরা বুঝতেই পারবি না। তোর! 
অন্ধ, পুরুষ কাকে বলে তোর জানবি কি করে ।? 
মাঝে মাঝে ডিকির দোকানে রাত্রে কি সব ব্যাপার ঘটে । বাইরে 
যখন অন্ধকার, দোকানের পিছনের ছোট্ট কামরায় ডিকি আর তার 
কয়েকজন বন্ধু চুপি চুপি ঘনিষ্ঠ আলোচনা করে গভীর রাত্রি পরযস্ত। 
অনেক পরে সাবধানে সামনের দরজ! খুলে সে তাদের বিদায় দেয় আর 
তারপর ওপর তলায় তাঁর দেবীর কাছে আসে । এইসব আগন্তকের! 
আকৃতিতে চক্রান্তকারাদের মতো, কালে! পোশাক, টুপী পরা । কিছু 
দিনের মধ্যেই এই ব্যাপার গোপন থাকে না এবং এনিয়ে সুরু হয় 
জল্ল”। কল্পনা । 
ডিকি শহরের বিদেশী বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচিত হবার দিকেও 
যায়নি । গুডউইনকে সে এড়িয়ে চলত আর ডাঃ গ্রেগ-এর ট্রিপ্যানিং 
এর গল্প থেকে যে ভড়িৎ-গতি কুটনীতির সাহায্যে রেহাই পেয়েছিল 
সেই অনবদ্য নিপুণতার কথ! লোকে এখনো বলে থাকে । 
অনেক চিঠিপত্র তার আসত মিঃ ডিকি ম্যালোনি বা সেনিওর ডিকী 
ম্যালোনি নামে । পাসার গৰ তাতে বাড়তে। । এতলোক যখন তাকে 
চিঠি লিখতে চায় এ থেকেই বোঝা যায় যে তার লাল মাথা থেকে 
আলো ছড়িয়েছিল বিশ্বময় । ওইসব চিঠিতে কি লেখা থাকত সে 
বিষয়ে পাসার কোন কৌতুহল ছিল না। এমন না হলে স্ত্রী। 
একটি ভূল ডিকির হয়েছিল, বড় অসময়ে তার টাকা ঘুরিয়ে গেল। 
টাক। কোথা থেকে আসত সেটা একটা ধাধা! কেননা দোকানে বিক্রি 
প্রায় কিছুই হত না কিন্তু সেই উৎস হঠাৎ শুকালো৷ এবং একটা অদ্ভূত 
খারাপ সময়ে । সেট! হয়েছিল যখন তাঁর ছোট্র দেবী মৃত্তিকে দোকানে 
বসে থাকতে দেখে কমানডান্ট ডন সেনিওর এল করোনেল এনকার- 
নেসিওন রিওর চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটল। 
কমানডান্ট শৌর্ধ-বীর্ধ জাহির করার জটিল কায়দাগুলি ভালভাবে রপ্ত 
করেছিল, তাই মনের ভাব প্রকাশের জন্থ প্রথমে তার পুর্ণ সামরিক 
১৭৩ 


পোশাক পরে জানালার সামনে গটমট করে যাওয়া আসা করতে 
থাকে । পাসা তার দেবীর মতো চোখ দিয়ে গম্ভীরভাবে বাইরে 
তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখেছিল। মনে পড়ে যায় তার পোষ! টিয়া পাখি 
ছিছির কথা সঙ্গে সঙ্গে ও হেসে ফেলে । কমানডান্ট হাসিটি লক্ষ 
করে যদিও হাসি তার জন্য ছিল না। আশাননরূপ ধারণার স্থি করা 
হয়েছে মনে করে দোকানে ঢোকে এবং আস্থার সঙ্গে খোলাখুলি 
স্ততিগান স্বর করে। পাসা কঠিন হয়, সে পেখম মেলে, পাসা রেগে 
আগুন হয়, সে মুগ্ধ হয়ে অবিবেচকের মতো জোর করে, পাসা তাকে 
দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে বলে, সে তাঁর হাত ধরে টানতে যায়-_ 
এমন সময় ডিকি দোকানে ঢোকে, মুখে আকণ বিস্তৃত হাসি পেটভন্তি 
সাদা মদ আর শরীরে দৈত্যের শক্তি । 

পুরো পাচ মিনিট সে ব্যয় করল কমানডাণ্টকে শাস্তি দিতে, বেশ 
বৈজ্ঞানিক প্রথায়, যন্ত্রণা যতটা সম্ভব দীর্ঘস্থায়ী হয় সেদিকে যত 
নিয়ে। তারপর সে সেই মুঢ় প্রেমপ্রার্াকে দরজার বাইরে ছুড়ে 
ফেলে দিল পাথরের ওপর অজ্ঞান অবস্থায় । 

একজন নগ্নপদ পুলিশ দূর থেকে ব্যাপারটা দেখছিল। সে বাজাল 
হুইসিল। ব্যারাক থেকে চারজন সৈন্ত ছুটে এলো । তারা যখন 
দেখল অপরাধী ডিকি, তারা থামলো, আরে। হুইসিল বাজাল যার 
ফলে মারে! আটজন এসে হাজির হল। বারোর বিপক্ষে এক, 
নিরাপত্তার পক্ষে যথেষ্ট মনে করে তারা গোলমালকারীর বিরুদ্ধে 
অগ্রসর হল। 

ডিকি তখন যোদ্ধভাবে চুর হয়ে আছে। কমানডান্টের কোমরে বাঁধ! 
তরবারি উঠিয়ে নিয়ে সে আক্রমণ করল | সে সেনাদলকে চারটি ব্রক 
পর্যস্ত তাড়। করল, খেলাচ্ছলে তাদের পশ্চাদদেশে তরবারির খোচ। 
দিল আর তাঁদের আদ রঙের গোড়ালির ওপর কাটাকুটি করল। 
নাগরিক শাসকদের কাছে কিন্তু সে ততট! সাফল্য লাভ করতে পারল 
না। ছয়জন পেশীবহুল তৎপর পুলিশ তাকে বাহুবলে পরাস্ত করল এবং 
সোল্লাসে কিন্ত সাবধানতার সঙ্গে জেলে নিয়ে গেল। তার! তার নাম 
দিল ডায়াবলো। কোলোরাডে। এবং মিলিটারিরা হেরে যাওয়ায় তাদের 
ছুয়ে দিল। 

ডিকি অন্ঠান্ত কয়েদীদের মতো গরাদ দেওয়া দরজ। থেকে দেখতে 


২৭৪ 


পেত প্লাজার ঘাস, এক সারি কমল! লেবুর গাছ, লাল টালির ছাদ 
এবং কয়েকটি নগণ্য দোকানের কাঁচ! ইটের দেয়াল। 

ক্র্যান্তের সময়ে এই চত্বরের মাঝামাঝি একটা পথ দিয়ে আসত 
স্ত্রীলোকদের একটি বিষপ্ন মিছিল, করুণ মুখে তারা বহে আনত কলা, 
শকরকন্দ, রুটা আর ফল, প্রত্যেকে খাবার আনত ফাটকের ভিতরের 
এক এক হতভাগ্যের জন্ যার প্রতি সেই স্ত্রীলোকের আনুগত্য এখনো 
অচ্ছেগ্য রয়েছে এবং যাদের জন্য জীবনধারণের সামগ্রী ওরা সরবরাহ 
করছে। দিনে ছুবার, সকালে ও বিকালে তাদের আসতে দেওয়া 
হয়। এই গণরাজ্য তার অনিবাধ অতিথিদের জল দেয় কিন্তু খাদ্য 
নয়। 

সেই সন্ধ্যায় ডিকির নাম ধরে প্রহরী ডাকল। সে দরোজার 
শিকের সামনে এসে দাড়াল। সামনে দাড়িয়ে তার ছোট্ট দেবী, 
একটি কালো স্কার্ফ মাথায় ও কাধে বেড় দিয়ে জড়ানো । ওর মুখে 
মহিমাদীপ্ত বিষাদ, ছুটি চোখের দৃষ্টিতে বাসনা, যেন তার। ডিকিকে 
গারদের ভিতর থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসবে । ও এনেছিল 
একটা! মুরগী, ছু” একটা কমলা, মিষ্টান্ন এবং সাদ। ময়দার রুটা। একজন 
সৈনিক খাগ্ঠটা পরীক্ষা করে দেখল এবং ডিকির কাছে পৌছে দ্িল। 
পাসা তার স্বভাব মতো! শাস্তভাঁবে সংক্ষেপে বলল, বাশির মতে। 
রিণরিণে গলায়, 'জীবনদেবতা আমার, তোমাকে ছেড়ে যেন আমায় 
বেশীদিন থাকতে না হয়। তুমি জানে ভুমি আমার পাশে না থাকলে 
আমার কাছে জীবন ছুবিষহ । আমাকে বলো এই ব্যাপারে আমি 
কিছু করতে পারি কিনা । যদি ন। হয়ঃ কিছু সময় আমাকে অপেক্ষা 
করতেই হবে ! আমি কাল সকালে আবার আসব । 

ডিকি জুতো খুলে রেখে, অন্ত কয়েদীদের বিরক্ত না করে, জেলের 
মেঝের ওপর অর্ধেক রাত পায়চারী করল। নিজের অর্থের অভাবকে 
ধিকার দিল, যে কারণে অর্থ নেই তাঁকেও, ত! সে কারণ যাই হোক। 
সে স্থির জানত হাতে টাকা থাকলে সে অবিলম্বে মুক্তি পেত। 

পরের ছুদিন পাস নির্ধারিত সময়ে এসেছিল এবং তাকে খাবার 
দিয়ে গিয়েছিল। প্রতিবার সে উদ্গ্রীব হয়ে জিগগেস করেছে তার নামে 
কোন চিঠি বা প্যাকেট এসেছে কি ন' প্রতিবারেই পাসা নেতিবাচক 
ঘাড় নেড়েছে। 


১৭৫ 


ভৃতীয়দিন সকালে পাস শুধু ছোট্ট একটি রুটি এনেছে । চোখের নীচে 
তার বৃন্তাকার কালো দাগ, পূর্বের মতোই সে শান্ত। 

“বাই জিঙ্ো” ডিকি বলল সে ইংরেজি বা স্প্ানিশ বলত যখন যেমন 
খেয়াল হত। “এই শুকনো খাবার, মুচীচিটা। তুমি শুধু এইটুকু 
আনতে পারলে একজন জোয়ান লোকের জন্য |; 

পাঁসা ওর দিকে তাকাল, মা যেমন তাকায় বায়নাদার ছেলের দিকে। 
নিচু গলায় ও বলল, “ওই খাও ভাল মনে করে কেননা পরের খাবার 
কিছুই আসছে না। শেষ সেনটাভো। খরচ হয়ে গেছে ।” গারদের 
শিকে নিজেকে তার দিকে আরো ছেপে দাডিয়ে রইল পাস । 
দোকানের জিনিপগুলি বেচে দাও, যে কোন দামে । 

- «আমি কি চেষ্টা করিনি? কেনা দামের দশভাগের একভাগ দামে 
দিতে চেয়েছি। কেট এক পেসো দেবে না। এই শহরে ডিকি 
মালোনির জন্য এক রেয়ালও কেউ দেবে না।; 

ডিণির দাত কড়মড় করে উঠল! এ সেই কমানডানট', সে গর্জন 
করল, “এর জন্ত সেই দায়ী। সবুর করো, হাতের সব তাস আগে 
দেখা হোক । 

পাঁসা তার স্বর খুব নিচু করে প্রায় ফিসফিস শবে বলল, “এখন শোন 
আমার হৃদয়ের হৃদয়, আমি খুব সাহস করে আছি, কিন্ত তোমাকে 
ছেড়ে আমি থাকতে পারছিনা । ভি-ন দি-ন হল।, 

ডিকি দেখল ওড়নার আড়াল থেকে ইম্পাতের ফলার মতো 
বিলিক দিল ওর (চাখের দৃষ্টি। পাসার মুখের দিকে সে তাকাল, 
মুখে হাসি নেই, গম্ভীর, কঠোর, দৃঢ প্রতিজ্ঞ । তার পরে হঠাৎ সে 
হাত তুলল, এবং তার মুখে হাসি ফিরে এলো স্থর্যালোকের মতো 
একটি ধরাগলার লাইরেণের ধ্বনি ঘোষণা! করল বন্দরে একটি 
স্টামারের আগমন। ডিকি প্রহরীকে ডাকল, দরজার বাইরে থে 
পাঁয়চারী করছিল । 

“কোন স্টীমার এলো! ?? 

“দি ক্যাটারিনা”। 

“ভিসুভিয়স লাইনের ? 

“নিঃসন্দেহে ওই লাইনের ।' 

থুশীমনে পাসাকে সে বলল, “ছৰি আমার, যাওতো। আমেরিকার 


১৭৬ 


কনসালের কাছে । তাকে বলো আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই, 
এখনি যেন সে আসে। আর, মামার দিকে তাকাও । আমি 
তোমার ওই চোখে অন্ত রকম দুষ্গি দেখতে চাই, আমি কথা দিচ্ছি 
আজ রাতে তোমার মাথাটি আমার বাহুর মধো বিশ্রাম করবে ।' 
কনসাল এলো ঘন্টা খানেক পরে হাতের নীচে সবুজ ছাতা, অধৈর্ধ- 
ভাবে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে । 

“দেখ 'ম্যালোনি” সে স্তর করে রাগতভাবে, “তোমরা মনে করো যেমন 
খুশী ঝগডা তোমরা বাধাতে পারো আর আশা করো! আমি তোমাদের 
ছাড়িয়ে নিয়ে আসব । মামি যুদ্ধ বিভাগ নই আর সোনার খনিও 
নই। এদেশের আইন কানন আছে, তুমি জানে! যার একটি হল 
সেনাবাহিনীকে মেরে অজ্ঞান করে দেবার বিরুদ্ধে। তোমর। 
আইরিশরা সর্বদা গোলমাল বাধাও। আমি জানিনা আমি কি 
করতে পারি। যদি তামাক চাও, আর একটু স্বাচ্ছন্দ্য বা খবরের 
কাগজ"? 

“এলির পুত্র” ডিকি বাধা দেয় গম্ভীর ভাবে, তুমি এক বর্ণও ব্দলাওনি। 
এই বক্তৃভাটি সেইটির প্রায় হুব নকল যেট। তুমি দিয়েছিলে যখন 
কোয়েনেব গাধা আর রাজহংসেরা চাঁপেলের ছাদে উঠেছিল আর 
অপরাধীর! তোমার ঘরে লুকোতে ছেয়েছিল ।” 

“কি আশ্চর্য” কনসাল চিৎকার কবে, ভাডাতাডি চশমাঠিক করে নেয় ! 
“তুমি ইয়েলের ছেলে নাকি? সেই দলে তুমি ছিলে? আমার তো 
মনে পড়ছে নী কোন লাল-ম্যালোনি নামে কাউকে । কলেজের কত 
ছেলেই তে। ভেমে বেড়াচ্ছে । একানববই সালের একজন, খুব 
ভালো ছিল অস্কে, দেখলাম বেলিজে লটারির টিকিট বিক্রি করছে। 
গতমাসে করনেলের এক ছোঁকর। এখানে এসেছিল । একটা গুয়ানোর 
স্টামারে সেকেণড সয়ার্ড সে। ম্যালোনি, আমি ডিপার্টমেনটে লিখব । 
বা তোমার যদি তামাক, খবরের"* 

“কিছু করতে হবে না, ডিকি বাধ! দিল, “কেবল এইটুকু ছাঁড়।। তুমি 
গিয়ে ক্যাটারিনার ক্যাপটেনকে বলে। ডিকি ম্যালোনি তার সঙ্গে দেখা 
করতে চায়, যতশীদ্র সম্ভব সে যেন আসে । তাকে বোলো আমি 
কোথায় আছি। একটু তাড়াতাড়ি, শুধু এইট্রকু ॥ 

কনসাল খুশী হল, সহজে ছাড়া পেয়ে, তাড়াতাড়ি সে ফিরে গেল । 


১২ ১৭৭ 


ক্যাটারিনার ক্যাপটেন, মোট লোটা, সিনসিলির লোক, শান্তর দেখা 
দিল, বিনা বাতলে, জেলের শ্রহপাদের হাত দয়ে সরিয়ে দিয়ে। 
আঞ্চুগ্সিয়াতে ভিন শঞ়াশ ফল কোম্পানর কাজকর্ধের ধারাই ওই রকম। 
“আম তন্তু ছুঃ এত, আমি অনন্ত হুঃখিত” ক্যাপটেন বলল, “এটা! 
ঘটতে দেখে। ভান আপনার এবার ক নিঃম্যালোনি। 


আপনি যা চাইলেন তাই করা হবে, আপনার যা দরকার এখনি আনা 
হবে ।' 
ডিকি 


তার দিকে তাকাল গম্তার ভাবে। হাবভাব তার কঠিন 

বাকজিত্বপুণ : শাথার লাল চুল সত্তেও । সে দ্রাড়িনেডিল, দীর্ঘদেত, শান্ত, 
তার গম্ভীর মুখে শুষ্ঠের "দখা স্যান্তরাল। 

ক্যাপটেন গ লুচ্চো আগার বিশ্বীস গাপনাদের কোম্পানির হাতে 
আমার টাঁক। এখনো জনেক ভাজে, শ্রুচল এর তার হাতির অর্থ । 
গত সপ্তা জামি কপ্চ টাকা চোর পঠিয়োইলাম। সেটাকা আসে 
নি। আপনি জানেন এউ তথলাহ় »ব চেত্ টানি কসের। টাকা, 
টাক, আরে। টাকা সে টাকা পালানো হয় নি কেন ॥ 


হাত পা নেড়ে ছা ৪ জবাঁক দিল, 'ক্রসটাবল জাহাজে পাঠানো? 
হয়েছিল । প্রিসটাবল এখন কোথায়! কেপ আনটে টোনি ওতে আমি 


আমি তার দেখা পাই, একটা ম্যাফট ভেঙ্গে গেছে । একটা! ভবঘুরে 
জাহাজ ভাকে টেনে নিয়ে দন নিউ অলিয়নসএ। আদি টাকা 
এনেছি তারে, বিলম্বে আপনার অন্ুবিধে হব বলে । এই পেপাফায় 
আছে হাজার ডলার । আরে! তাছে যদি আপনার দরকার হয়, 


এ টে ০০০ পক পপ এ [স্পা ৯ পাশ 
বেতচশানির জনা ওসতই হকে? ছিকি বলল, ভাজ ভার নরম হয়ে 


৬, 
টি 5৮০ “হ:16 (চিস্কাচে বগি এনে 9 নয 
এসেছিল । খামটান এক কোন ছিড়ে আধ হঞ্চি পুরু মক্ণ ভিজে 
৯ তাপ তিমির 
ভিজে নোটগুলি সে অন্ভব করল । 


লম্বা সবুজ" মুছু হরে সে বলল, চোখে স্গছের দট, কত নাং কেনা 
যায় টাকায়, কি বলেন কাপটেন !? 

“আমার তিনজন বন্ধু ছিল.) ছা লুচ্চো বলল, সে ছিল দার্শনিক, 'বাদের 
টাকা ছিল। একজন সেই টাঁকা শেয়ার মার্কেটে ফাটকায় ল'গিয়ে 
লক্ষ লক্ষ টাঁকা কামায়, আর একজন স্বর্গে গেছে, তৃতীয়জন একটি 
গরীব মেয়েকে বিবাহ করেছে ভালবেসে । 


১৭৮ 


উত্তরটা ভাহলে', ডিকি বলল, "ঈশ্বর, ওয়াল গ্ীট এবং অতনুর হাতে । 
তাই প্রশ্নটা থেকেই ঘাঁস্ছে 1১ 
“এট কি” ক্যাপটেন ।জচ্ছেস করল, অর্থপূর্ণ ভবে ডিকিএ পারি- 
পাঁশ্বকের দিকে চোখ বুলিয়ে, বিটা কি আপনার ছে।উ দোকানের 
ব্যবসার সঙ্গে কোন ভাবে মুক্ত? আপনার প্র্যাংন কান গোলমাল 
হয়নি তে? 
“না, না, ডিকি নলল, “এট হচ্ছে আমার একান্ত বান্তিদত একটা 
ব্যাপার । ব্যবসার সিধে বাস্তাব বাইরে কটু বিণ কথা আছে 
সম্পর্ণ জীব্ণ পেতে হলে দান্তিযণক ী হবে দা'€ন্রা, ধা" এ যুদ্ধ । 
কিন্ত ভিন কখনো একত্রে মেলে না, ক্যাপটেল আমার । না, 
বাসার কোন বিফলত। আসে নি ছোট্র জোক্ানটি ভালই 
চলতে |? 
ক্যাপ:টন চলে গেলে ডিক জেলে সারজেনটকে ডা দে আর *জজ্স 
কষ্ল, “আমি কাদে বননী, টা হা তে না পুলিশে &৮ 
'এগন তে! কৌন শানারুক লাইন কারী নেই, সেছি ডর ও 
তা খব৮ পা লাদক লদকেক্ য়েদ দে না দাখকক্ষ জার 
জেে ছেল পোলানজকক কে তানের 'গয়ে জলা আংটি আইন 
অনুসারে ফাইন দিতে প্রস্তুত ” 
ভীজ কর! একটি লম্ব। এ নোট সারুজনটেন হাতে সে ৬ দিল। 
ডিকির মুখে হাসি ফিকে এলো, কেন না সে জানতো ভান শা শে 
আর কেক ঘটা হার জে হত? পায়ের হাছয়াজের ভালে 
তালে গু” গুন কাল তভ5 লগ, 


রত সি 
নত বাক্য বি হালি টির খা ৫ পিছ এ টপ ২ ১ প্রন 
ক্র খত ৩ শট 6, ঠি। টি 1 ছা বা, 


সেই রাত্রে তা? দোকাছেছ ওপরতলার ঘরে জশনালার ধাছে ডিকি 
বসেছিল, তার ছোট দেবা কাছেই বসে সিলঞ্ের অ্ুক্ম কোম সেলাই 
এর কাজ তুলছিল। ডিকি গম্ভীর, চিন্তামগ্র। তাঁর লাল চুল 
এলোমেলো! পালার আঙ্লঞ্চলি নিসশিস করছিল ঢুলগুলি সমান 
করে দেবার জন্য, ডিকি কখনো তার মাথায় হাত দিতে দিত না । 


* 1 আলকাল্দ- জেলর ₹**। হয়েদদেল! পাথ-জাসটিস অফ দ গীস 
*$*( জেফে দে লা পৌঁপিসিও » চীফ অফ পুলিস 


১৭৯ 


আজ রাত্রিতে কতকগুলি ম্যাপ, কাগজের তাড়া, বই পত্তরের ওপর 
ঝুঁকে দেখছিল, দেখতে দেখতে তার ছুই জর মাঝখানে লম্ব হয়ে একটি 
রেখ! দেখা যায়, যেট। দেখলে পাসার কষ্ট হত। তাই ও ডিকির 
টুপী নিয়ে তার সামনে এসে দাড়াল। ডিকি সপ্রন্ন মুখ তুলে 
1কায় । 
“তোমার এখানে কষ্ট হচ্ছে” পাসা বলল । “বাইরে যাও ভিনো ব্রাহ্থো। 
খেয়ে এসো । আমার কাছে তখন ফিরে এসো তোমার হাসি মুখ 
নিয় । আমি তোমার হাসি মুখ দেখতে চাই 1, 
ডিকি হেসে উঠল, কাগজপাত্র ছেড়ে উঠে পড়ল। ভিনে 
রাঙ্কোর পর্ব শেষ হয়েছে । একট সময় ছিল যখন সেটা কাজে 
লেগেছে । লোকে যতটা বলে তার থেকে অনেক কম আমার মুখে 
টুকত, কানে কথ ঢুকত অনেক বেশী । কিন্তু আজ রাত্রে আর ম্যাপ 
নয়, গোমড়া মুখ নয়। তোমাকে কথা দিচ্ছি, এসো ।, 
জানালার ধারে নীচু আসনে ওরা বসল, দেখতে লাগল ক্যাটারিন! 
জাহাজ থেকে বন্দরে প্রাতিফলিত আলোর রশ্বি। 
শীঘ্রই তরঙ্গিত হল পাখির কাকলির মতে হাঁস, পালা কদাচিৎ উচ্চ 
কে হাসত। 
“আমি ভাবছিলাম? ডিকি প্রশ্ন করার আগেই ও সুরু করল, "মেয়েদের 
মনে আজঞ্চাব কত কি আমে । আমোরকায় আম স্কুলে গিয়ে- 
ছিলাম। তাই আমার মনে অনেক উচ্চাশার উদ্ভব হয়েছিল। 
প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর কাঁটকে বিবাহ করব এমন চিস্াধ আমার মন 
উঠত না। আর দেখ, লাল দন, আনাকে চুপ্ধি করে এনেছ কোন 
অজ্ঞাত ভবিতব্যতাঁয় |; 
ডিকি হেসে বলল, “আশ! ছেড়োনা, সাউথ আমেরিকার রাষ্ট্রে 
একাধিক আইরিশম্যান প্রেসিডেন্ট হয়েছে, চিলিতে একজন 
একনায়ক ছিল ও হিগিনস্‌ নামে । আনছুরিয়াতে কেন হবে না 
প্রেসিডেন্ট ম্যালোনি ॥ 
“না, নাঃ না, ওগো আমার লাল চুলের দামাল মানুষ” পাসা দীর্ঘশ্বাস 
ফেলল, “আমি সুখী”, তার বাহুতে মাথা রেখে বলে, এখানে ॥? 


ক্রজ এ 'লায়। 
লাল এককালে 





সাত অরগনহরজার | সিজারের হা 


নর ই চিনি ঘ হিতে ভি 4 চি চস না 
ই ৩৮ ব্জা ত2 সাদ। তপ্রাপতডগও পদাহঠণের পার্কে 


১০১১4-8 টা সব নখ 
572 ১5 মং বানা ওযা ৪2171 টি ডি 2 টি 
পেটা হাদি বেল কটা উ৪ নাফাব। এক কি তি ক ১৮ ৮ তি পা 


পার ।ন। ভন উক্ত এইস আমদানী শিক্ষ আবি ভব পর 
পেন কলে তকখা গাঠুশে দে সাপং পাব লী না এ্য়াহ ৮৮? শর কাত এল 
হুশ স।ল.ফাদানের পচ ক নাত প্রেসিডেনট রূপে অথ। তি 
পোনা ভাব মন ১ পদশ্যাদর মতন সি কেকহ ভার গ্রাতত 
কৌন সংবনডত ছল 51 ৮ 5 তত সি: এস প্রন তি জন্গণাকে 
5776৮765585 8 এত বাত পর পাপ ভা 


৬ 


৬ টিন হি ম ৮ পা ॥ স্ল? শি খ। ৯6 সা 
গস কাবা শাতি জি এ ৮০-পরি। ভিত হত নহলী বথন ভাবা 
সখ 


রা বেরোতে সি 
সত তাবেহ (৬, শাত5 সততা এল লা আআতিষ্ত ৩ পানি ।(বরক্ 


্ ১ 2 ও টা ৮ লা বউ ও শি ও আন ০ ৮ সিল 

ভব যখন তাকে চা দিত চীতত৭ একা তাও এশা রাষ্ট্র বার কোন 
ি 

ৃ 1 গ্রক।সরা নৃখন এাঃবিদন করল ভরভুকার 

হ্ এএহী 

তখন তাব। পেল একটি ভদ্র এন্ধাকৃতি। প্রেসিডেন্ট প্রতিশোধ 


নিন 


এ 


নিলেন, প্রত কীদি কলার €পঃ এক এয়াল রপ্তানি শুক চাপিয়ে, য। 
ফল উৎপাদক দেশগুলিতে কেউ এর আগে শোনে নি! ভিম্ুভিয়াস 
কোমপানি আঞ্চুরিয়ার উপকূল বরাবর অন্কে অর্থ [বশিয়োগ 
করেছিল জেটি তৈরাতে, ফলের বাগিচায়। তাদের প্রতিনিধিরা শহরে 
অনেকগুলি সুন্দর হর্ম্য তৈরী করেছিল যেখানে তাদের কার্ধালয় ছিল 
এবং এতদিন সরকারের সঙ্গে সদিচ্ছার ভাবনা ও হুপক্ষের সুবিধার 


১৮১ 


ভিত্তিতে কারবার চালাচ্ছিল। চলে যেতে হলে তাদেব প্রভূত 
আধিক ক্ষতি হবে। ভেবাক্রুজ থেকে ্রিনিদাদ পর্যস্ত এক কীদি 
কলার বিক্রয় মূল্য তিন রেয়াল। এক রেয়ালের £ই নতুন শুক্ক 
আঞ্ুররিয়াধ ফল উংপাদকদের লোকসানে !নন্ব কবে দেবে, অন্য পক্ষে 
ভিন্ুশিমাস কোমপানি অতাস্ত অশ্রাবধায় পড়বে যদি এই শু 
দিতে হারা রাজি নাহয়। যে কাণ কারণে ভিম্থা»য়াস চার রা 
দিয়েই গাঞ্চুরিযাতে ফল কিনতে থাক ৯। উৎপ1দকদেব লোকসান 
হতে না দি.য। 

এই আপাত জয়ে মহামতিএ প্রতারিত হলেন। তার ক্ষুধা বাড়তে 
থাকল আবে! খাবার জন্ত । একজন দূত পাঠালেন ফল কোমপানিৰ 
প্রতিনিধির সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হবার অন্বরোধ জানিয়ে । 
ভিনুভিয়াস পাঠাল মিঃ ফ্রানংস'নকে, একজন চছাটখাটো, মোটাসোট। 
হাসিখুশী ব্যক্তি, সবদ। মাথা ঠাণ্ডা, ভেরদিব অপেরার স্থুর শিস্‌ দিয়ে 
থাকেন। অর্থ মন্ত্রকের সেনিওর এসপিরিতিওন আঞ্চুরিয়ার তরফ 
থেকে বালির ব্যাগ সাজাবার জন্ত নিযুক্ত হলেন। বৈঠকের স্কান 
ভিন্ভিয়স লাইনের জাহাজ সালভাদবের ক্যাবিনে । 

সেনিওর এসপিরিতিওন আলোচন। শুক করলেন, তিনি ঘোষণা 
করলেন, সরকার পরিকল্পন। করেছে” পলিমাঁটিখ উপকূল বরাবর একা 
রেললাইন তৈরী করার। এই ফ্লেপথ শতিন্তরতিসসের স্বার্থের পক্ষে 
কত উপযোগী হবে তা উল্লেখ করীর পরে এক নিদিষ্ট প্রস্তাব 
রাখলেন যে কোমপানি য.গুলি স্রবিধা পাবে সে তুলনায় পঞ্চাশ 
হাজার পেসোর অন্ুদ[ন বেশী হবে ন]। 

মিঃ ফ্রানসনি অস্পাকার করলে" যে তার ৮মণাশি প্রপ্তাবিত থেও। 
পথ থেকে কোন্ভ।তে উপকূত হবে । (কোমপাশিব প্রতিনিধি হিসেবে 
পঞ্চাশ হাজার পেসে। দানের অক্ষমতা তার জানাবে কিবা । তবে 
তিনি পঁচিশের দাযত্ব শিচ্ছেন | 

সোঁনওর এসপারাতওন কি বুঝবেন সেনি৫ন ফ্রানৎসনি প1৮শ ভাজ।র 
পেসোর কথা বলছেন! 

কোন ক্রমেই নয়, পচিশিপেসো, তা” রূপোয়, দোনায় শয়। 

“আপনার প্রস্তাব আমার সরকারকে অপমান করছে% চিৎকার করে 
বললেন সেনিওর এসপিরিতিওন, রাগে চেয়ার ছেড়ে উঠে। 


১৮৯ 


“তাহলে” মিঃ ফ্রানৎমনি বললেন উক্ম(র সঙ্গে, তাহলে আমরা সেট। 
বদলাব।* প্রস্তাব আর বদলানো হয় নি। মিঃ ফ্রানতৎসনি কি তথে 
সরকার বদলের কথা বলোছিলেন ? 

আঞুরিয়ার অবস্থা যখন এই রকম তখন শীতের মরমুমের সুরু হল 
কোরালিওতে, লোসাদার শাসনকালের ছ্িতীয় বছরে । সেজন্য যখন 
সরকারী দপ্তর ও গণ্যমান্য সমাজ তাঁর বাষিক নিক্রমণ সুরু করল 
সমুদ্রতীরের দিকে তখন সহজেই অনুমান করা গেল ষে প্রেসিডেনটের 
আগমন অসীম উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপিত হবে না। দশই নভেম্বর 
নির্ধারিত ছিল রাজধানী থেকে ফুত্তির দলবলের কোরালিও 
পদার্পণের দিন হিসেবে । সলিটাস থেকে একটি ছোট 
রেলের রাস্তা কুড়ি মাইল ভিতরে গিয়েছে। রাহ্বীয় দল সানমাটেও 
থেকে ঘোড়ার গাড়িতে আমে এই রেলপথের শেষ স্টেশনে তারপর 
ট্রেনে যায় সলিটাসে। যেখান থেকে তারা পদত্রজে মিছিল করে 
আসে কোরালিও যেখানে আগমনের দিন উৎসবে অনুষ্ঠানে পূর্ণ 
থাকে। কিন্তু এই মরশুমে দশই নভেম্বরের ভোর হল হর্ণক্ষণ নিয়ে। 
যদিও বর্ষা অনেকদিন শেষ হয়েছে, দিনটি যেন বাম্পাচ্ছন্ন জুন মাসের 
কথ। মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সকালে টিপটিপিয়ে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। 
মিছিল শহরে ঢুকলো অদ্ভূত নীরবতার মধ্যে । 

প্রেসিডেনট লোসাদ। বৃদ্ধ, ধুসর দাঁড়ি, তার দারুচিনির মতো। গায়ের 
রঙে যথেষ্ট পরিমাণ রেড ইনডিয়ান রক্তের ইশারা পাওয়া যায়। তার 
গাড়ি মিছিলের পুরোভাগে, তার চারদিক ঘিরে ক্যাপটেন 
ক্রুজ ও বিখ্যাত একশ অশ্বারোহার দল “এল সিয়েনতে! 
উইলানদো।' কর্ণেল রকাস তার পিছনে এক রেজিমেনট নিয়মিত 
সৈন্য নিয়ে। 

প্রেসিডেনটের তাচ্ষ পু তির মতো চোখ চারিদিকে খোজে অভ্যর্থনার 
নিরিখ কিন্তু সামনে দীড়িয়ে নিবাক উদাসীন জনসমষ্ঠি । আুরিয়ানর! 
জন্মস্থত্রে হুজুগ ও জাীকজমকের ভক্ত, তাই সকল লোকই 
রাস্তায় বেরিয়েছে । কিন্তু তার! বজায় রেখেছে নীরব অভিযোগ । 
রাস্তায় তারা ভিড় করে দাড়িয়েছে গাড়ির চাকার দাগ পর্যন্ত । প্রাতটি 
লাল টালির ছাদের কামিশ পর্যস্ত তারা ঝুকে পড়েছে কিন্তু তাদের 
থেকে একটি ভিভা আওয়াজও শোনা যায় নি। তালের বা লেবুর, 


১৮৩ 


পাতার মালা তৈরী হয়নি বা বর্ণমঢ্য কাগজের গোলাপ গুচ্ছ প্রথা মত 
জানালা থেকে বা ব্যালকনি থেকে ঝোলান হয়নি । 
সব্ত্র পরিব্যাপ্ত ছিল এক প্রকারের গুদাস্ত, অনুজ্জল মতবিরোধজনিত 
আপান্ত যা ছিল আরো বিপদন্চক যেহেতু এট ছিল দুবোধ্য ! কেউ 
আশঙ্কা করে নি গোলম।ল বেধে যাওয়ার সম্বন্ধে কেন না, জনগণকে 
পরিচালনা করার মতো! কোন নেতা ছিল না। প্রেসিডেন্ট বা তার 
অনুগতরা অনুচ্চার কোন নামও শোনেন নি-অসন্থোষকে কেলাসিত 
করে প্রতিবাদের পানা বাধাতে সক্ষম এমন কোন ব্যক্তির। না, বিপদের 
কোন সম্ভাবনা ছিল না। কারণ, উপাসনার একটি মতি ভেঙে ফলার 
পুর্বে জনগণ আগে গড়ে নের আর একটি মুতি। 
অবশেষে অশ্ব বিদ্যার অনেক চোখ ধশাধানে। চাতুধ প্রদর্শনের পরে 
লাল বেলট আটা মেজ্মর, সোনালি লেস ভূষিত কণেল এবং স্কন্ধে 
এপালুয়েট চিছিচিত জেনাকেলের দল বলনিয়ে মা [ছল কালে গ্রানদ ধরে 
চলল কাসা মোরেনার দিকে যেখানে প্রোসিডেনটের বাৎসরিক শুভা- 
গমনের অভ্যর্থনা বরাপর করা হত । বিখাত স্থইশ বাণ্ড সবাগ্রে 
মার্চ করে যাচ্ছিল, তার পিছনে স্থানায় কমান্ডানট আর তার বাছাই 
করা একদল সেনানী। তার পিছনে একটি গাডাত মন্ত্রী পারষদের 
চারজন, যাদের মধ্যে বুদ্ধ জেনারেল পিল'র, যুদ্ধ মন্ত্র, তার শুভ্র গুন্ফ- 
মণ্ডিত শুখমণ্ডলে বারোচিত ভঙ্গিমা! লক্ষণীয় । তার পরে প্রেসিডেন্টের 
গাড়ি, তার সঙ্গে অর্থ মন্ত্রী ও গৃহ মন্ত্রী, এদের ঘিরে ক্যাপটেন ক্রুজের 
অশ্বারোহীর দল দুপাশে জোড়ায় জোড়ায় চার সারি: তাদের জনুমরণ 
করছে বাকি সরকারী গণামান্ুরা, কফোটের বিচারকেক্কা, বিশিষ্ট 
সামরিক, সরকারী, বেসরকারী জনজাবনের [শিরোমণির দল। 
ব্যাণ্ড ষখন বেজে উঠল, আর মিছিল চলতে শুরু করল, ঠিক সেই 
সময় কোন লক্ষণের পাখির মতে। ভিস্াভিয়াম ফল কোমপানির সব 
চেয়ে দ্রুতগামী স্টীমার ভালহাল্ল! বন্দরে এসে উপস্থিত হল, 
প্রেসিডেনট আর তার দলবলের চোখের সামনে । এটা ঠিক যে 
তার আগমন বিপদের সুচনা! করে না, একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কোন 
জাতির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে না_কিন্তু সেনিওর এসপিরিতিওন 
এবং,অন্তাস্ত যার। গাড়িগুলিতে বসেছিল, তাদের মনে হল ভিস্ৃভিয়াস 
ফল কোমপানির কোন মতলব আছে। 


১৮৪ 


যতক্ষণে মিছিলের পুরোভাগ সরকারী ভবনটিতে প্রায় পৌছে গেছে 
ততক্ষণে ভালহাল্লার ক্যাপটেন ক্রনিন এবং মিঃ ভিনসেনটি, ভিন্ৃ- 
ভিয়াম কোম্পানির একজন সদস্য নেমে পড়েছে তারে এবং খোস 
মেজাজে ঠেলেঠলে এগিয়ে যাচ্ছিল ভিড়ের প্রতি ভ্রাক্ষেপ না করে। 
সাদ লিনেনের পোশাকে দার্থ, হাগপুষ্ট, প্রফুল্ল, প্রভুত্ব ব্যঞ্রক ক্ষাণদেহ 
আঞ্চুরিনানদের মধ্যে তারা লক্ষণীয়, ভিড় ভেদ করে এগিয়ে উপাস্থৃত 
হল কাসা মোরেনার সোপান শ্রেণীর কয়েকগজের মধ্যে । জনতার 
উধের্ব তাদের মাথা জেগেছিল তাই তারা দেখতে পাচ্ছল আর একটি 
মাথা, হৃনহ্ধ আকু'তর স্থানায় বাসিন্দাদের ছাপয়ে জেগে আছে। সেটা 
হিল (ডিকি ম্যালোনির আগুন রঙের মাথা, সড়র পিছু ধাপগুালর 
পাশে দেওয়ালের ধারে। তার বিস্তৃত দস্তরুচি মোহজাল ছাড়য়ে 
দেখয়ে দিল যে সে তাদের উপস্থিতি লক্ষ করেছে। 

উৎসবের অনুষ্ঠানের জন্য (ডকি নজেকে যথাযোগ্য ভূষণে সাজিয়েছিল 
চমৎকার (ফট ফাট কালে। পোশাকে । পাস। তার পাশে দা [ডয়েছিগ, 
মাথায় ওর 1নত্যসঙ্গা কালো গড়ন] । 

মিঃ (ভিনসেন্টি ওকে মনোযোগের সঙ্গে দেখাছল। 

“বতিচেলির ম।াডোন।» গৃম্র ভাবে সে বললে, “ভাবছি এ খেলায় ও 
কখন এসে ঢুকলো । আম ৮াই নাক্রীলোক নিয়ে ও জড়িয়ে পড়ে। 
আ।ম আশ করোছলাম স্রালোকদের থেকে সে দূরে থাকবে ।? 
ক্যাপটেন ক্রানক্ের হাসির খাওয়াজ প্যারেড থেকে মনযোগ যেন 
সারয়ে আনল । “ই রকম মাথ। কি আর স্ীলোক থেকে আলাদ। 
থাকব? আর, একজন ম্যালে।ন ! ওর লাইসেনস্‌ আছে না? কিন্তু 
ঠাটর। বাদ দিন, ওর সন্তাবন। কি রকম মনে করেন। এই ধরনের 
চক্রান্ত আমার লাইনের বাইরে ।, 

ভিনসেনটি 'ডাকর মাথার দিকে আবার তাকিয়ে হাসল। “লাল 
আর কালো? মে বললে, 'ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের খেলা, আমর! 
বাজি ধরেছি লালের ওপর । 

“খেল! ছোকরার” ক্রুনিন বললে, সি ড়ির ধারে স্বচ্ছন্দ, দীর্ঘ আকৃতির 
দিকে সপ্রশংস তাকিয়ে । “কিন্ত এসব আমার যেন যাত্রা যাত্রা মনে 
হচ্ছে। বক্তৃতা স্টেজের থেকে লম্বা, বাতাসে কেরোসিনের বাণ্তির 
গন্ধ আর যার! দর্শক তারাই দৃশ্টপট সরাচ্ছে ॥ 


১৮৫ 


তার! কথা-বার্তা থামালো, কারণ জেনারেল পিলার প্রথম গাড়িটি থেকে 
নেমে কাসা মোরেনার সোপান শ্রেণীর সব চেয়ে উচু ধাপে গিয়ে 
াড়িয়েছিলেন। ক্যাঁবিনেটের প্রবীণতম সদস্ত হিসেবে প্রথা মতো 
অভ্যর্থনার ভাষণ তাঁরই দেবার কথা যার শেষে প্রেসিডেনটকে রাষ্্ীয 
ভবনের চাবির গোছ। অর্পণ করা হয়। 

জেনারেল পিলার এই প্রজাতন্ত্রের সবাধিক সম্মানিত নাগরিক । 
তিনটি যুদ্ধের এবং অসংখ্য বিপ্বের নায়ক, তিনি যুরোপের রাজসভায় 
সম্মানিত অতিথি। নুললিত বক্তা, জনগণের বন্ধু; তিনি সবৌচ্চ- 
স্তরের আঞ্চুরিয়ানদের প্রতিভূ। 

এক হাতে কাসা মোরেনার সোনালি চাবির গুচ্ছ নিয়ে তিনি তার 
বক্তৃতা সুরু করলেন, প্রতিটি শাসন ব্যবস্থার উল্লেখ করে, তার সঙ্গে 
সভ্যতা-বিস্তার-প্রগতি-উন্নয়নের কথা বললেন, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ 
থেকে বর্তমান কাল পর্ধন্ত এতিহামিক ধারাবাহিকত1 রক্ষা করে। 
লোসাদার শাসনকালে এসে পৌছে, যখন প্রথামত তার বিজ্ঞ রাজ্য- 
পরিচালনা এবং জনগণের সুখ সম্বাদ্ধর প্রশস্তিগানে পঞ্চমুখ হবার 
কথা৷ তখন তিনি থামলেন । চাবির গোছ! মাথার ওপর তুলে ধরলেন, 
স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ তার ওপর । যেরিবণ দিয়ে চাবিগুলি বাঁধা ছিল 
বাতাসে তারা পত্‌ পত্‌ করছিল । «এখনো সেই বাতাস বইছেঃ 
বক্তা বললেন উৎফুল্ল কণ্ঠে, 'আঞ্চুরিয়ার জনগণ, খষিদের ধন্তবাদ দিন 
আজ রাত্রে যে আমাদের দেশের বাতাস এখনো মুক্ত ।' 

এই ভাবে লোসাদার শাসনকালের উল্লেখ শেষ করে তিনি হঠাৎ ফিরে 
গেলেন গওলিভারার প্রসঙ্গে, আঞ্চুরিয়ার সবাধিক জনপ্রিয় প্রাক্তন 
শাসক! ওলিভারা আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন জীবন 
ম্ধ্যান্ছে এবং পুণ কর্মব্যক্ত জীবনের মধ্য থেকে । লিবারেল পার্টির 
একটি খণ্ডিত দল, যার প্রধান ছিল লোসাদা, এই হত্যার জন্য দায়ী 
এ রকম সন্দেহ করা হত। দোষী হোক বা না হোক উচ্চাকাজ্্ষী 
এবং মতলবকারী লোসাদা লক্ষ্যে পৌছুবার অস্তত আট বছর 
আগেকার ঘটনা। 

এই প্রসঙ্গে জেনারেল পিলার তার বাপ্ধিতার রাশ আলগ। করলেন। 
জনদরদী ওলিভারার চিত্র তিনি অঙ্কিত করলেন সপ্রেম বর্ণনায় 
জনুগণের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। যে শান্তি, শিরাপত্বা এবং 


১৮৬ 


হথ সাধারণ মানুষ তার কালে ভোগ করেছে স্হে সব [৮ত্র তুলে 
ধরলেন। তিনি ম্মরণ করলেন প্রেমিডেনট শেষবারের মতো যে 
শীতকালে কোরালিওতে এসেছিলেন যখন উৎসবে ত্বার উপস্থিতি 
মাত্রই প্রেম ভক্তির সঙ্গে বজনাদে ভিভা শোনা যেত এবং ভাঁজকের 
কালের তাৎপর্ধপূর্ণ পার্থক্যের কথা৷ জনগণকে বিবেচনা করতে বললেন । 
সেই দিন জনতার মধ্য থেকে কোন ভাবাবেগ এই প্রথম লক্ষ কর! 
গেল। নিচু গলায় মর্মর ধবনি উঠল তাদের মধ্যে, তারের ওপর দিয়ে 
গড়িয়ে যাওয়া ঢেউয়ের মতো । 

'দশ ডলার বা সেনট, চালস-এ ডিনার?) মিঃ ভিনসেনটি মন্তুবা করল, 
রুজ জিতবে । 

'আমার নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে আমি কখনে। বাজি ধরি না” 
ক্যাপটেন ক্রুনিন বললে, একটি চুরুট ধরিয়ে । “ফাকা বন্তৃতা করছে 
বুড়ো, কি বিষয়ে বলছে !, 

'আমার স্প্যানিশ” ভিনসেনটি উত্তর দিল, “মিনিটে দশটি শব্দ আর 
ওর প্রায় হুশ । যাই বলুক ওদের বেশ তািয়ে তুলছে ।: 

'ভাইগণ, বন্ধুগণ, জেনারেল পিলার বলছিলেন, “আমার এই হাভ 
যদি আমি বাড়িয়ে দিতে পারতাম সমাধির বেদনাময় নীরবত! অতিক্রম 
করে মহান ওলিভারার কাছে, যে শাসক ছিলেন তোমাদেরই একজন, 
যার অশ্রু তোমাদের বেদনার অশ্রুতে মিশত, ধার হাঁসি তোমাদের 
হাসির সঙ্গেই উন্মীলিত হত আমি ওলিভারাকে তোমাদের সামনে 
এনে দিতাম, কিন্তু ওলিভার1 মৃভ-_স্বৃত তিনি কাপুরুষ হত্যাকারা'র 
হাতে ।” 

বক্ত1 তীর দুটি দৃপ্ত ভঙ্গীর সঙ্গে প্রেসিডেনটের গাড়ির দিকে কাখলেন 
তার হাত উর্ধে বাড়ানো যেন তার বক্তৃতার রেশ ধরে রাখতে চান 
স্তম্ভিত প্রেসিডেনট শুনছিলেন এই অভূতপূর্ব বক্তৃ্ছা। াসনের 
মধ্যে তিনি পিছিয়ে বসে ছিলেন, রাগে নীরব এবং হতবু'দ্ধ, তার 
কালো হাত ছুটি আসনের কুশন শক্ত করে ধরেছিল । আসন থেকে 
সামান্য উচু হয়ে তিনি বক্তার দিকে এক হাত বাড়িয়ে ইঙ্গিত করলেন 
এবং একটি কর্কশ আদেশ উচ্চারণ করলেন ক্যাপটেন ক্রু্জকে | 
একশত উড়স্ত অশ্বীরোহীর নেতা ছুই হাত জড়ে। করে অশ্থের পর 
অচল রইল, কিছু শুনতে পেয়েছে এমন কোন লক্ষণ দেখাল ন। 


১৮৭ 


লোসাদা আসনের মধ্যে আবার ডুবে গেলেন, লক্ষ্যনীয়ভাবে তার 
মুখমণ্ডল পাণুর। 
“কে বলে ও লিভার মৃত” হঠাৎ বক্তা গর্জন করে ওঠেন। রণভেরীর 
মতো তার গল।র স্বর,--“দেহ তার সমাধিতে শয়ান, কিন্তু তার অমর 
আত্মা তিনি দান করে গেছেন, শুধু তাই নয় আরো, তার যৌবন, তার 
বিদ্যা, তার ভাবমু্ডি আঞ্চুরিয়াম জনগণ তোমরা কি তুলে গেছ 
রামনকে, দা বার পুত্রকে !: 
ক্রনিন এ৭ং ভিনসেন্টি লক্ষ কর দেখল ভিকি ম্যালোনি হঠাৎ তার 
টুগী খুলে লাল চুলের বোঝা টেনে ছি'ড়ে ফেলল, লাফিয়ে উঠল স।ড়র 
ধাপগু;ল, দাড়াল গিয়ে জেনাপেল পলামের পাশে । যুদ্দমন্ত্রী তার 
বাছ রাখলেন যুবক কাধ বেঃন করে । যারা প্রেসিডেন্ট শুলিভারাকে 
চিনত তাঁর। সবাই পুনবার দেখল সেই রকম সিংহের মতো ভঙ্গী, সেই 
অসন্কোচ নিভিক মুখাকাত, সেই উচ্চললাট, “কাকড়ানো চকচকে 
ই চুলের মাঝখ।নে “সই অদ্ভুত বাঁকা সাথ। 
জেনারেল পলা অভিজ্ঞ বক্তা । ঝড়ের পুর্বেব রুদ্ধশ্বাস নীরবতা 
তিনি কঁজে লাগালেন । 
“তবাধুাপয়ার জণগণত তিনি ভেবিধবাম করলেন, কাপ মোরেনীর 
চাবির গুচ্ছ চু করে তুলে ধকে, "গামা এই চবির গোছ। এখন 
দিতে হবে, এষ্ট চাবে তোমাদের ঘরেই, তোমাদের আধানতার ভাব, 
দিতে হবে তোমাদের নিবাচিত ্রোলডে্টকে । আমি কি এই চাব 
ভুলে দেব এনারকো ওলিভারার হত]াকারার হাতে, ন। ভার পুত্রের 
হাতে ? 
গলিভারা, ওলিভার1- জনগণ চিৎকার করে উঠল। সেই জাছুময় 
নাম সকলে সোচ্চারে বলতে লাগল, পুরুষ, স্ত্রা বালক নিখিশেষে, 
এমন কি ভোতাপাখিরাঁও । 
এবং এই উদ্দীপনা কেবলমাত্র জনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। 
করেল রকাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন, রামন ওলিভারার পদ প্রান্তে 
নাটকীয় ভারে তার তরবারি সমর্পণ করলেন । মন্ত্রী পরিষদের চার 
জন সদস্য তাঁকে আলিঙ্গন করল। কাপটেন ক্রুজ একটি আদেশ দিলেন 
যার ফলে এল সিয়েনতে। উইলানদোর কুড়িজন অশ্বারোহী নেমে এসে 
কাস! মোরেনার সোপান শ্রেণীর চারপাশে বেড়াজাল স্থপতি করল। 


১৮৮ 


এদিকে রামন ওলিভারা পরি স্থৃতি কাজে লাগালো বিধিদন্ত প্রতিভায় 
বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতো! ৷ সে সৈন্যদের হাতের ইশারার সরিয়ে 
দিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। নিজের আত্মমর্ধাদা বজায় 
রেখে, লাল চুল হারানোর ফলে নবল্পন্ধ বিশিষ্ট সৌন্দধের লেশমাত্র 
হানি »1 ঘটিয়ে সে বুকে টেনে নিল সাধারণ মানুষকে, নগ্রপদ, নোংরা, 
রেড ইনডিয়াঁন, ক্যারিব, শিশু, বৃদ্ধ, ভিক্ষুক, যুবক, সাধু; সৈনিক, 
পাপী কাউকে সে বাদ দিল না। 

যখন নাটকের এই দৃশ্যের উপস্থাপনা চলছে ততক্ষণে দৃশ্যপট 
পরিবর্তনকারীর! তাদের নিদিষ্ট কাজ করে চলেছে। ক্রুজের সৈন্যদের 
দুজন লোসাদার ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, অন্টেরা গাড়িটার চারপাশে 
কড়া পাহারায় অবরোধ স্থট করেছে। এর পরে তার! অতাচারীকে 
এবং তার ছুজন কুখ্যাত মন্ত্রীকে নিয়ে জোর কদমে ঘোঁড়। ছুটিয়েছে। 
কোরালিওতে আছে কয়েকটি গরাদ দেয়! সুরক্ষিত পাথরের প্রকোষ্ঠ | 
“রজ জিতল”, শান্তভাবে একটি চুরুট ধরিয়ে ভিনসেনটি বললে । 
ক্যাপটেন ক্রনিন কিছুক্ষণ ধরে সোপানের নিচে চারিধারে লক্ষ করে 
দেখ 'ছলেন। 

বাঃ! খাস! ছেলে, হঠাৎ চিৎকার করে বললে, যেন কতকট। নিশ্চিত 
হয়ে। “আমি ভাবছিল।ম ওকি ভূল গেল ওর ক্যাথলিন 
মাভুরনিনকে |, 

যুবক ওলিভার! সিড়ি বেয়ে আবার নিচে নেমে জেনারেল পিলারকে 
কিছু বলল। সেই প্রবীণ নেত। মাটিতে নেমে এলেন পাসার কাছে । 
পাসা তার নিজের জায়গায় অবাক চোখে স্থির হয়ে দ্াডিয়েছিল ডিকি 
ওকে যেখানে রেখে চলে গিয়েছিল। পালকখচিত টুপী এক হাতে, 
বক্ষদেশে মেডেল এবং অন্যান্য সাহসিকতা ও বীরদের নিদর্শন শোভা 
পাচ্ছে, জেনারেল পিলার পাসাকে কিছু বললেন। নিজের হাত 
বাড়িয়ে দিলেন এবং দুজনে একত্রে কাসা মোরেনার সিড়িগাল 
আরোহণ করলেন । তারপর রামন ওলিভারা এগিয়ে এল এবং 
সর্জন সমক্ষে পাসা'র ছুটি হাত ধরে কাছে টেনে নিল। 

অভিনন্দনের সোল্লাসধ্বনি যখন নতুন করে আবার ধ্বনিত হচ্ছিল।, 
কাপটেন ক্রনিন আর মিঃ ভিনসেনটি ফিরল সমুদ্রতীরের দিকে, 
যেখানে তাদের জন্য ডিঙ্গি অপেক্ষা করছিল । 


১৮৯ 


“আগামী কাল আবার নতুন প্রেসিডেনট নিযুক্তির ঘোষণাবার্তী 
প্রকাশিত হবে, মিঃ ভিনসেনটি চিন্তাকুল ভাবে বললে । দেখা গেছে 
নিখাচিত প্রেসিডেনটদের তুলনায় এদের ওপর ততটা নির্ভর করা 
যায় না, কিন্তু এই ছোকরার ভিতরে কিছু ভাল পদার্থ আছে। সমস্ত 
ব্যাপারটা ওরই পরিকল্পনা মতো হয়েছে । জান তো, ওলিভারার 
বিধব। ধনী ছিল। স্বামীর হত্যার পরে ও চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে, 
সম্ভানকে ইয়েল বিশ্ববধিষ্ঠালয়ে লেখাপড়। শেখায়। ভিম্থভিয়াস 
কোমপানি তাকে খুঁজে বের করে আর এই ছোট্ট খেলায় তার পিছনে 
থেকে সাহাযা করে।? 

“গৌরবের বিষয়”, ক্যাপটেন ক্রনিন বলল ঠাট্রার ছলে, “একটি 
সরকারকে আজকালকার দিনে তাড়াতে পারা আর সেই জায়গায় 
নিজের পছন্দ মতো সরকার বসানো ॥ 

“ও£ এট! ব্যবসারই অঙ্গ", ভিনসেনটি' বলল, “সরবতি লেবুর গাছ থেকে 
একট বাঁদর নেমে এসেছিল, তার হাতে চরুটের টকরোটা। দিল। 
দুনিয়া আজকাল এই ভাবেই তো! চলছে । কলার কাপ্দির ওপর ওই 
এক রেয়াল অতিরিক্ত কর--ওট! হঠানো জরুরী] ছিল। আমরা 
কেবল হুম্বতম রাস্তাটি খু'জে বের করলাম সেটি হঠানোর ।: 


সতেরো 


শিট 1২6০51]19 
দুটি গ্রতযাভিগমন 


এই ভালিমার" কমেডির যবনিকা পতনের পুর্বে তিনটি কর্তব্য বাকি 
রয়েছে । ছুটির ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা কর! হয়েছে । তৃতীয়টিও কম 
আবগ্ঠিক নয়? এই ক্রান্তীয় বিচিত্রানুষ্ঠানের অনুষ্ঠান লিপিতে 
লেখা ছিল যে প্রকাশ কর! হবে কলম্বিয়া ডিটেকটিভ এজেনসির শার্ট 
ও ডে কেন তাঁর চাকরী হারিয়েছিল। আরো বল৷ হয়েছিল স্মিথ 
আবার আসবে বলতে কোন রহস্তের অনুসরণ সে করেছিল 
আধ্ুরিয়ার উপকূলে, যে রাত্রে সমুদ্রতীরে অনেকগুলি চুরুটের টুকরে। 


১৯০ 


সে ছুড়ে ফেলেছিল নারিকেল গাছের তলায় প্রতীক্ষার সময়। এই 
বিষয়গুলি বিবুত করা হবে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল । কিন্তু আরো 
অনেক বড়ো, দরকারী কর্তব্য বাকি বয়েছে, একটি তাপাত অন্যায় 
সম্বন্ধে বুঝিয়ে বলা, ঘটনার বিবরণের ক্রম হিসেবে (সত)কে অনুসরণ 
করে )যা ঈপস্থাপিত হয়েছিল । একজনের উক্তিতে এখন এই তিনটি 
কব স:ধিত হলে । 

নিউইর্ক শহরের উত্তর নদীর জেটিতে তক্তাব ওপর দুই ব্যক্তি 
বসেছিল। ক্রাস্তীয় অঞ্চল থেকে আসা একটি স্টামার থকে জেটির 
ওপর কলা আর কদলালেবু খালাস করা হচ্ভিল। মাঝে মাঝে পেকে 
যাওয়া কাদি থেকে দু-একটা কলা খসে পড়ছিল, দুজনের মধো একজন 
গিয়ে মেটা কুড়িয়ে আনাহুল, সঙ্গীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাচ্ছিল । 
ছুজনের মরে একজন দর্দশার শেষ অবস্থায় পৌছেচে। তার 
পোশাত বু ওপর রৌদ্র, বৃষ্টি ঝড়ের পক্ষে যা জন্তব ততটা 1বপর্ধয় ঘটে 
গেছে। শরারের ওপর মগ্পানের অতদাচারের লক্ষণ স্পষ্ট, তথাপি 
তাদ্র দন্নত লাল নাকের মাঝখানে বসানো আছে নিখুত ঝকঝকে এক 
জোড়া সোনার ফ্রেমের চশমা। 

অন্ত লৌকটি অকর্মগ্তদের চালু রাস্তার ততদুর নিচে নামে নি। প্রকৃতই 
তার জীবন কুসুম বাজে পরিণত হয়ে গেছে, যে বীজ কোন জমিতেই 
পুনবার অস্কুরিত হবে না! তথাপি জীবনের চোরাগলিতে তাৰ গতাষাত 
এখনও অব্যাহত ছিল যার ফলে দৈবের সহায়তা ছাড়াই পুনবধার 
কাধকরী জীবনের রাস্তায় ফিরে আদার সম্ভাবনা ছিল। এই লোকটি 
বেঁটে, হষ্ট পুষ্ট । তিষ্ক চোখে মৃতের চাহনি, সংকর মাছের মতো, 
গৌঁফজোড়া বারে যারা ককটেল মেশায় তাদের মতো।। এই চোখ 
এই গোঁফ আমাদের পরিচিত । আমরা বুঝতে পেরেছি সেই প্রমোদ- 
ভরীর ম্সিথ যার ছিল ঝলমলে পোন্াক, রহস্য জনক গতিবিধি, 
ম্যাঁ্ভকের মতো উধাও হওয়া, আধার সে ফিরে এসেছে যদিও তার 
পুর্বাব বার অনুষ্গগুলি ছে টে ফেলা হয়েছে। 

তীয় কলাটি খেতে খেতে চশমা-নাকে লোকটি গা হাত নাড়া দিয়ে 
ধুঃ থুঃ করে ফেলে দিল। 

শয়তান কলা খাক”” সন্ত্রাস্ত গলায় বিরক্তির স্বরে সে বলল। «এই 
কল! যেখানে জন্মায় সে দেশে আমি ছু-বছর ছিলাম। ওর স্বাদের 


১৯১ 


স্ৃতি জিভে লেগে থাকে । কমলালেবুগুলি তত খারাপ নয় । দেখতো 
ও'ডে ভাঙ! বাকস থেকে গোট। ছুই জোগাড় করতে পারো না কি।, 
“বাদরদের সঙ্গে ভুমি ছিলে নাকি?” রৌন্রে বসে রসান্ত ফলাহ্ছারে 
অল্পবিস্তর বাচালতায় পেয়েছে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে । “আমিও গিয়ে 
ছিলাম একবার যদিও অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্য । সেই যখন আমি 
কলান্থিয়া ডিটেকটিভ এজেনসিতে কাজ করি । ওই বাঁদর দেশের 
লোকেরা আমার দফা নিকেশ করল । তা] না হলে চাকরী আমার 
আজও থাকতো! । বলব তোমাকে সেই গল্প । 

«একদিন বস অফিসে আমাকে একটা চিরকুট পাঠালো । তাতে 
লেখা ছিল ওঃডে কে এখনি পাঠিয়ে দাও, বড়ো! একট কাজের জন্য । 
সে সময় এজেনসির সব চেয়ে বন্ড ডিটেকটিভ আমি । বড়ো বড়ো 
কা*গুলি ওর! আমাকে দিত। যে ঠিকানা থেকে মালিক নোটটি 
পাঠিয়েছিল সেট। ওয়াল গ্রীট অঞ্চলের । 

“পৌছে দেখি একটি প্রাইভেট অফিস ঘরে অনেকজন ডিরেক্টর বসে 
আছে। খুবই বিচলিত । কেসট! ওরা বুঝিয়ে বলল । রিপাবলিক 
ইনন্থ্যর্যানস কোম্পানির প্রেসিডেন্ট পালিয়েছেন লক্ষ ডলার সঙ্গে 
নিয়ে। ডিরেক্টাররা তাকে ফিরে পেতে চায়, তার চেয়ে বেশী 
তারা ফিরে পেতে চায় টাকা । বৃদ্ধ ভদ্রলোকের গতিবিধি নজর করে 
তারা জানতে পেরেছে কোন জায়গা থেকে একট ভবঘুরে ফলের 
জাহাজে সে চড়েছে দক্ষিণ আমেরিকা অভিমুখে সেইদিন সকালে, 
সঙ্গে তার মেয়ে আর একটা বড়ো ব্যাগ, পরিবার বলতে তার য 
ছিল। 

একজন ডিরেক্টারের স্টীমের প্রমোদতরাটি প্রস্তুত, স্টাম তৈরী হয়ে 
গেছে, যাত্রার জন্ত । আমার হাতে তিনি ইয়টটি দিয়ে দিলেন, বিনা 
সর্ভে। চার ঘণ্টার মধ্যে আমাকে ওটায় চড়তে হবে এবং ওই ফলের 
জাহ।জটিকে উধ্বশ্বীসে অনুসরণ করতে হবে। আমাকে বুঝিয়ে 
দেওয়া হর্গ ওয়ারফিল্ড, ভদ্রলোকের নাম জে, চাঁচিল ওয়ারফিল্ড, 
কোথায় কোথায় যেতে পারে । সে সময়ে সব দেশের সঙ্গে আমাদের 
চুক্তি ছিল, কেবল বেলজিয়াম এবং সেই কদলী গণরাজ্য আঞ্চ রিয়া 
ছাড়া । বৃদ্ধ ওয়ারফিল্ডের কোন ফোটে নিউইয়র্কে পাওয়া গেল না, 
সেব্যাপারে সে ধূর্ত ছিল, কিন্ত, তার বর্ণন! পেলাম । তাছাড়া সঙ্গে 


১৯২ 


মেয়ে রয়েছে, যে কোন জায়গায় ধরা পড়ার পক্ষে যথেষ্ট। ও ছিল 
সমাজের উচুস্তরের মেয়ে, রৰিবার কাগজে যাদের ছবি বেরোয় সে 
ধরনের নয়, কিন্ত খাটি জিনিস, যারা ক্রিসানথিমাম শো উদ্বোধন করে 
ৰা যুদ্ধ জাহাজের নামকরণ করে সেই জাতের । 

যাই হোক, পথে কোথাও জাহাজটাকে দেখতে পেলাম না। মহা 
সমুদ্র মস্ত বড়ো জায়গা আর আমার বোধ হয় আমর। ভিন্ন পথে 
পাড়ি দিয়েছিলাম । কিন্ত আমর! আঞ্চ রিয়ার দিকেই যেতে থাকলাম, 
যেখানে ফলের জাহাজটার যাবার কথা। 

“একদিন বিকেল চারটে নাগাত সেই বাদরদের দেশের কূলে ভিড়লাম। 
তীর থেকে কিছুদুরে দেখলাম একট! ধূর্ত গোছের জাহাজে কলা 
বোবাই হচ্ছে। বাঁদরগুলে। বড়ো বড়ো বজরায় এসে কল! তুলছিল 
সেই জাহাজে । বুড়ো এই জাহাজেই এসে থাকতে পারে আবার নাও 
পারে। তীরে এলাম খবর নিতে । দৃশ্য ভারি চমতকার। নিউ- 
ইয়র্কের স্টেজে এর চেয়ে ভাল দৃশ্য আমি দেখিনি । ভীরে এসেই 
পেয়ে গেলাম একজন আমেরিকানকে, লম্বা! চওড়া চেহারা, 
ঠাণ্ড প্রকৃতি, বাদরগুলির সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল। সে বলল ফলের 
জাহাঁজটির নাম কার্পসফিন। সাধারণত নিউঅললিয়নস যাতায়াত 
করে। এর আগেরবার নিউইয়র্কে ফল নিয়ে গিয়েছিল। তখন 
আমি নিঃসন্দেহ হলাম ষে আমার লোকেরা এই জাহাজেই এসেছে 
যদিও সকলে আমাকে বলছে থে কোন বাত্রী নামে নি। আঙি 
জানতাম যে তারা অন্ধকার হবার আগে নামবে না কেন ন। আমার 
ইয়ট দুরে দীড়িয়ে থাকতে দেখে তার! লজ্জা! পেতে পারে। তাই 
আমাকে শুধু অপেক্ষা করতে হবে আর ষেই তার! তীরে নামবে তখনি 
পাকড়াতে হবে। ওয়ারফিল্ডকে আমি গ্রেপ্তার করতে পারি ন৷ 
বিতাড়নের চুক্তির কাগজ পত্র ছাড়া কিন্ত আমার খেল৷ হচ্ছে টাকা 
ফিরে পাওয়ার । সাধারণত ওরা বাধা দিতে পারে না যদি তুমি 
আঘাত হানতে পারো ঠিক তখনই যখন ওরা ক্লান্ত আর ল্লায়ুগুলি 
উত্তেজিত । 

“অন্ধকার হলে আমি বসলাম সমুদ্রতীরে একট! নারকেল গাছের.. 
নীচে । কিছুক্ষণ পরে শহরটা দেখতে বেরুলাম। যা! দেখলাম তাই 
যথেষ্ট । নিউইয়র্কে যর্দি কেউ সংভাবে থাকতে পারে তাহলে সে 


১৩ ১৪৯৩ 


সেখানেই থাকুক, লক্ষটাকার জন্ও যেন সে বাদরের দেশে না যায়। 
নিচু নিচু মাটির বাড়ি, রাস্তায় জুতো ছাপিয়ে ঘাস। মেয়ের নিচু 
গলা, ছোট হাতা জাম। পরে মুখে সিগার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গেছে! 
ব্যাড কটকট করে ডাকছে, যেন গরুর গাড়ির ক্যাচ ক্যাচ শব্দ । 
পিছনের উঠানে বড়ে। বড়ে। পাহাড়, পাথর কুচি এনে জড়ো 
করেছে। সমুদ্র রঙের ওপরের আস্তরণ চেটে তুলে ফেলেছে । যে 
কোন লোক বরং সদাত্রতে খেয়ে ঈশ্বরের দেশে পড়ে থাকবে সেই 
দেশে যাওয়ার বদলে । 

প্রধান রাস্তাটা সমুদ্রের কিনারা বরাবর বিছানো ছিল যার শেষ 
হয়েছিল গলিতে, যেখানে বাড়িগুলি বাশের খু'টি আর খড় দিয়ে 
তৈরী। আমি দেখতে গিয়েছিলাম বাঁদরগুলি কি করে যখন তারা 
ডাবগাছে ওঠে না। প্রথম যে কুটিরটির ভিতরে আমি উকি দিলাম 
সেখানেই পেয়ে গেলাম যাদের আমি খুঁজছিলাম। ওর! নিশ্চয়ই 
তীরে এসেছে যখন আমি বেড়াচ্ছিলাম। এক ব্যক্তি, বয়স পঞ্চাশের 
মতো, মন্থণ মুখমণ্ডল, মোটা ভ্রু, কালো ব্রড ব্লথের পোশাক পরণে, 
দেখে মনে হয় যেন প্রশ্ন করবে, “সানডে স্কুলের কোন বালক জানে। 
কি?” সে আকড়ে ধরে ছিল একটা ব্যাগ যেটার ওজন মনে হচ্ছিল 
এক ডজন সোনার ইটের সমান, সঙ্গে একটি মেয়ে, সুন্দরী, ফিফথ- 
এ্যাভিন্থ্যুর জামা কাপড়ের কাটিং, কাঠের চেয়ারে বসে ছিল। একটি 
বৃদ্ধা টেবিলে কফি আর বাীনস্‌ রাখছিল। দেয়ালে পেরেক 
থেকে ঝোলান একটি বাতি থেকে আলে! আসছিল । আমি ভিতরে 
গিয়ে দরজায় দাড়ালাম, ওরা আমার দিকে তাকালো, আমি বললাম, 
“মিঃ ওয়ারফিলড, আপনি আমার বন্দী। আশা করি মহিলাটির মুখ 
চেয়ে আপনি বুদ্ধিমানের মতো ব্যাপারটা নেবেন। আপনি জানেন 
আমি কি চাই।» 

“কে আপনি £” বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন। 

“ও ডে,” আমি বললাম, “কলামবিয়! ডিটেকটিভ এজেনসির ৷ এখন 
স্যর আপনাকে আমি একটি সৎ পরামর্শ দেবো । আপনি ফিরে যান 
এবং পুরুষের মতো! আপনার ওঁষধ গলাধঃকরণ করুন। টাকা ওদের 
ফিরিয়ে দিন, তাহলে হয়ত ওরা আপনাকে অল্পে ছেড়ে দেবে । নির্ভয়ে 
ফিরে বান, আমি. আপনার হয়ে হুএক কথা ওদের বলে দেবে! । আমি 


১৯৪ 


পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি ভেবে ঠিক করতে । আমি ঘড়ি বের করে 
অপেক্ষা করছি ।” 

'তরুদী মেয়েটি তখন তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। খাটি উচুঘয়ের 
মেয়ে। ওর জামা কাপড়ের ফিটিং আর স্টাইল দেখলে মনে হয় 
ফিফখ এযাভিম্ু এদের জন্তাই | 

“ও বলল, “ভিতরে আনুন, দরজায় আপনার ওই পোশাক পরে 
দাড়িয়ে রাস্তায় গোলমাল বাধাবেন না । বলুন আপনি কি চান ?” 
“তিন মিনিট হয়ে গেছে”, আমি বললাম, “বাকি ছু-মিনিট কেটে 
যাক তারপরে আমি আবার কথা বলব ।” 

“আপনি স্বীকার করেন রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট আপনি ১” বৃদ্ধকে 
আমি জিগগেস করি সময় উত্তীর্ণ হবার পরে । 

“হ্যা আমিই”, তিনি বললেন। 

“তাহলে,” আমি বললাম, “আপনার কাছে অতি সরল ব্যাপার। সন্ধান 
চাই, নিউইয়র্কে, জে, চাচিল ওয়ারফিল্ড, রিপাঁপলিক ইনন্যুর্যানস 
কোম্পানির প্রেসিডেন্ট । আরো আছে, ওই কোম্পানির অর্থ যা 
এখন ওই ব্যাগে বেআইনীভাবে উক্ত জে, চাচিল ওয়ারফিল্ডের 
অধিকারে রয়েছে ।” 

42, ও ও হো” তরুণীটি বলল। ও যেন দ্রেত চিন্তা করছিল। 
“আপনি আমাদের নিউইয়র্কে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান ?” 

“মিঃ ওয়ারফিলডকে । আপনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, মিস। 
অবশ্য আপত্তির কোন কারণ ঘটবে না আপনি যদি আপনার বাবার 
সঙ্গে ফিরে যান।” 

হঠাৎ মেয়েটি ছোট্র একটি আর্তনাদ করে উঠল আর বুড়ো। লোকটির 
গলা জড়িয়ে ধরল । “ওহ ! বাবা, বাবা”, ও বলতে থাকে তারম্বরে । 
«এ কি সত্যি? তুমি কি কোন টাকা নিয়েছ য। তোমার নয়! বলো 
বাবা!” ওর চড়া স্বরের গল! কাপানে। শুনলে গায়ে কাট। দেয়। 
“বুড়ো লোকটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল যখন ও প্রথমে ভার ওপর 
ঝাঁপিয়ে পড়ে কিন্তু মেয়েটি ওই রকম করতেই থাকে! কানে কানে 
ফিনফিস করে কি বলে, ডান দিকের কীধটি চাপড়ায়। অবশেষে 
তিনি উঠে' দাড়ালেন, একটু ঘামছিলেন। 

“মেয়েটি তাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে মিনিট খানেক কি সব বোঝাল। 


১৯৫ 


্ 


ভারপরে তিনি সোনার চশমা টশমা! পরলেন এবং ছু এক পা। হেঁটে 
আমার হাতে ব্যাগটি দিলেন। ্‌ 

“মিঃ ডিটেকটিভ”, তিনি বললেন একটু ভাঙ। গলায় । “আমি আপনার 
সঙ্গে ফিরব স্থির করলাম। আমি আবিষ্কার করেছি যে এই 
অসম্তোষে ভরা জনহীন উপকূলে ধ৫েঁচে থাকার মানে মৃত্যুরও অধিক । 
আমি ফিরে যাবো এবং নিজেকে সমর্পণ করবো রিপাবলিক 
কোম্পানির হাতে । আপনি কি একটি শীপ এনেছেন ?” 

“ভেড়া /; আমি বললাম, “আমি তো একটাও-_-” 

“শিপ”” তরুণীটি বলল, “কৌতুক করতে চেষ্ট। করবেন না । বাব! জন্ম- 
সুত্রে জর্মন, সেজন্য খাঁটি ইংরেজি বলতে পারেন না। আপনি 
কী ভাবে এসেছেন ?” 

“মেয়েটি একেবারে মুষড়ে পড়েছে । মুখে একখানি রুমাল ঢাকা, 
প্রতি মুহুর্তে-_-ওঃ বাবা, বাবা-_-করে কেঁদে ওঠে । ও আমার কাছে 
আসে আর আমার পোশাক, যা! ওর প্রথমে পছন্দ হয়নি, সেই 
পোশাকের ওপর তার লিলির মতে! ধপধপে হাত রাখে । আমি 
জানালাম আমি একট প্রাইভেট ইয়টে এসেছি । 

“মিঃ ও?ডে”, ও বলল, “এই হতচ্ছাড়া দেশ থেকে এক্ষুণি আমাদের 
নিষে চলুন। নিয়ে যাবেন তো, বলুন নিয়ে যাবেন । 

“আমি চেষ্টা করব”, আমি বললাম | ওর। মত বদলাবার আগে লোন 
জলের ওপর ওদের নিয়ে তোলবার জন্ত ষে মরে যাচ্ছিলাম সেকথা 
গোপন রাখলাম । 

“একটা ব্যাপারে ওর! হুজনেই জোরালে। আপত্তি জানাল । সেট! হল 
শহরের মাঝখান দিয়ে নৌকায় চড়ার জায়গায় যাওয়া । ওর! বলল 
হে প্রচারকে ওরা ভয় করে, আর এখন যেহেতু ওর! ফিরে যাচ্ছে 
ওদের আশা আছে সমস্ত ব্যাপারটা গোপন থাকবে এবং খবরের 
কাগজে উঠবে না। ওরা ঈশ্বরের দিব্যি করে বলল যে ইয়টে ওরা 
পা দেবে না যদি না আমি ওদের সেখানে পৌছে দিতে পারি কোন 
প্রাণীকে জানতে ন1 দিয়ে । আমিও ওদের ইচ্ছাপুরণে রাজি হলাম । 
যে নাধিকেরা আমাকে তীরে পৌছে দিয়েছিল তারা জলের ধারে 
একটা বারে বিলিয়ার্ড খেলছিলঃ আদেশের অপেক্ষায়। আমি 
ৰলরাম তাদের খবর পাঠাতে হবে ডিজিটা আধ মাইল দূরে সরিয়ে 


১৯৩ 


নিতে, যেখান থেকে আমরা উঠব । কি করে সেই খবর তাদের 
পাঠানো যায় আমি ভাবছিলাম, কারণ টাকার ব্যাগটি আমি আমার 
ৰন্দীদের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না, সেটা সঙ্গে নিয়েও যেতে 
পারি না। 
“মেয়েটি বলল বৃদ্ধা রেড ইনডিয়ান স্ত্রীলোকটিকে একটি চিঠি লিখে 
দিলে নিয়ে যেতে পারবে । আমি বসে চিঠি লিখে দিলাম, বৃদ্ধাকে 
বলে দ্রিলাম কি করতে হবে, সে বেবুনের মতো দাত বের করে 
মাথা নেড়ে হাসলো । 
“তখন মিঃ ওয়ারফিলড তাকে ঝুড়ি ঝুঁড়ি বিদেশী শব্ষে কি সব বললেন, 
সে মাথা! নেড়ে অন্তত পঞ্চাশবার বলল “সে সনিওর” এবং চিঠিটা 
নিয়ে চঙ্গে গেল । 
“বৃদ্ধা আগস্তা কেবল জার্মান বুঝতে পারে”” মিস ওয়ারফিলড বললে, 
আমার দিকে চেয়ে হেসে । “ওর বাড়িতে আমরা এসেছিলাম থাকার 
জায়গ! খু'জতে, আমাদের ও কফি খাবার অনুরোধ করল।. ও বলল, 
সান ডমিনিগোতে এক জার্মান পরিবারে ও মানুষ হয়েছিল ।” 
“সম্ভবত”, আমি বললাম, “আমাকে খুঁজে দেখতে পারেন “মিকস্‌ 
ভেরস্তে, আর “নখ আইসত,, ছাড়া কোন জার্মান শব্দ যদি খুজে পান। 
বাজি ধরলে অবশ্য ওই “সে সেনিওর" শব্দটিকে আমি ফ্রেনচ বলতাম ।” 
“ষাইহোক, শহরের কিনারা দিয়ে আমরা চুপিসাড়ে বেরিয়ে পড়লাম 
যাতে কেউ আমাদের দেখতে না পায়। লতায়, ফার্ণে, কলাগাছের 
ঝোপে আর উষ্ণমণ্ডলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে আমরা হারিয়ে গিয়ে- 
ছিলাম । ওই বাঁদর দেশের মফংম্বলগুলিতে জায়গায় জায়গায় জঙ্গল 
এত ঘন ষেন সেনট্রাল পারের মতো । , 
“আমর! তটরেখার ধারে এসে পড়লাম। একজন বাদামী রঙের লোক 
দশফুট লঙ্ব। বন্দুক পাশে রেখে নারকেল গাছের নীচে ঘুমোচ্ছিল। 
মিঃ ওয়ারফিলড বন্বুকটা উঠিয়ে জলে ফেলে দিলেন। “তটরেখ! 
প্রহরায় স্তস্ত”, তিনি বললেন, “বিদ্রোহ আর চক্রান্ত পেকে ওঠ! 
ফলের মতো” তিনি ঘুমস্ত লোকটিকে দেখালেন; যে মোটেই 
নড়ল না। “এইভাবে এর! দায়িত্ব পালন করে” তিনি বলঙ্েন, 
“শুর দজ।” | 
“আমাদের ডিডি আসছিল, আমি একটি দেশলাই কাঠি হেলে ভার 


১৯৭ 


থেকে একটুকরো খবরের কাগজ ধরালাম, আমরা কোথায় আছি 
জানাতে । আধ ঘণ্টার মধ্যে আমর! ইয়টে পৌছলাম। 

সর্বাগ্রে মিঃ ওয়ারফিলড, তার কন্ত। আর আমি মালিকের ক্যাবিনে 
গিয়ে সেই ব্যাগটা খুললাম এবং ভিতরের জিনিসগুলির তালিক। তৈরী 
করলাম। এক লক্ষ পাচ হাজার ডলার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির 
নোটে, এ ছাড়া হীরে জহরতের অনেক অলঙ্কার এবং শ ছুই হাভানার 
চুরট। আমি চুরুটগুলি বৃদ্ধকে দিলাম, বাকি মালের একটি রমিদ 
কোমপানির তরফ থেকে এবং ব্যাগটি তালাচাবির ভিতর রাখলাম 


আমার থাকার জায়গায় । 

তেমন আনন্দের সমুদ্রযাত্রা আর কখনো! আমার হয় নি। সমুত্রে 
ভাসবার পর থেকেই সেই তরুণী মেয়েটি খুব খুশী হয়ে উঠেছিল । 
প্রথম আমরা যখন ডিনার খেতে বসলাম এবং সট,য়ার্ড তার গ্লাসে 
শ্যামপেন ভরে দিল-_ডিরেকটারের ইয়টটা একট। ভাসমান ওয়াল- 
ডর্ফ আসটোরিয়া ছিল--ও আমাকে চোখে ইসারা করে বলল, 
“ডিটেকটিভ মশাই, গোলমাল ধার করার কি প্রয়োজন। আস্ুন 
পান করি এই কামন। করে, যে মুরগীটি আপনার সমাধির ওপর চরে 
বেড়াবে আপনি সেটি খাওয়ার জন্ত জীৰিত থাকবেন 1১; 

ইয্সটে একট! পিয়ানে। ছিল, ও সেখানে বসল আর গান গাইল, 
এমন গান যে যা শোনার জন্য ছটো। বড়ে বড়ো! কেস ছেড়ে দিয়ে বার 
বার শুনতে ইচ্ছে করে। অন্তত নয়টি অপেরা ওর কস্থ ছিল। 
অত্যন্ত উচ্চাঙ্সের শিল্পী, বড় ঘরানার আদব কায়দা । ওর পরিচিতি 
প্রধান শিল্পী হিসেবে, বাকী যার উপস্থিত ছিলেন সেই সাধারণের 
দলে নয়। 


'বৃদ্ধও যেতে যেতে অদ্ভুত সামলে উঠলেন। চুরুট বিনিময় করলেন, 
ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বেশ খুশী মনে একবার আমাকে বললেন, 
“মিঃ ওঃডে, আমার যেন মনে হচ্ছে রিপাবলিক কোমপানি আমাকে 
বিশেষ কষ্ট দেবে না। টাকার ব্যাগট! খুব সাবধানে রাখবেন, কেন 
ন1 এই যাত্রার শেষে ওটা ফেরৎ দিতে হবে যাদের টাকা তাদের ।” 

“নিউইয়র্ক পৌছে আমি মালিককে ফোন করলাম, ডিরেকটারের 
অফিসে আমাদের সঙ্গে দেখা করার জগ্ত । আমরা একট! ভাড়া- 


৯ 


গাড়িতে চড়ে সেখানে গেলাম । ব্যাগটা আমার হাতে ?ছল) আমরা? 
ভিতরে গেলাম, দেখলাম মালিক আমার আগেই এসেছে, “আর 
'এসেছে গোলাগীমুখ আর সাদ ওয়েসট কোট পরা টাকার কুমিরদের 
পুরে! দলটাই। 

ব্যাগটা আমি টেবিলের ওপর রাখলাম । বললাম, “এই সেই টাকা 1% 
“আর তোমার বন্দী? মালিক জিগগেস করল । 

“আমি মিঃ ওয়ারফিলডকে দেখালাম। তিনি তখন এগিয়ে এসে 
বললেন, “আপনার সঙ্গে কয়েকটি কথ৷ বলার সুযোগ দিয়ে বাধিত, 
করুন।” 

তিনি আর আমার মালিক আর একটি ঘরে গেলেন, সেখানে তার! 
ছিলেন মিনিট দশেক । যখন তারা ফিরে এলেন, বসের মুখ একটন 
কয়লার মতো কালো । আমাকে জিগগেন করল, “এই ভদ্রলোকের 
সঙ্গে যখন তোমার দেখা হয় তখন এই ব্যাগ তুর কাছে ছিল ?” 

“হ্যা! ওর কাছেই ছিল, আমি বললাম ।” | 


“ব্যাগটা তুলে নিয়ে বস সেটা দিল বন্দীর হাতে, মাথ। নত করে তাকে 
অভিবাদন করল। তারপরে সেই ডিরেকটরের দলকে বললে, 
“আপনার কেউ এই ভদ্রলোককে চেনেন ?” 

তার৷ সবাই তাদের গোলাপীমুখ নেড়ে “না” জানালে । 

“আমাকে সুযোগ দিন”, বস বলে চলে, “আপনাদের কাছে পেশ করতে 
সেনিওর মিরাফ্লোরেসকে, আঞ্চুরিয়ার রাষ্ট্রপতি । এই লঙ্জাকর 
প্রমান্ণ সেনিওর উপেক্ষা করতে রাজি হয়েছেন একটি শর্তে, আর সেটা 
হচ্ছে, ঘটনাটি জনসাধারণের মন্তব্যের বিষয় যেন ন! হুয়। এটা তার 
মহাম্থভবতা, যে ব্যাপারে তিনি আন্তর্জাতিক খেসারত চাইতে পারতেন, 
সেই ব্যাপারটা! তিনি উপেক্ষা করলেন। আমার মনে হয় কৃতজ্ঞতার 
সঙ্গে এই গোপনত।৷ রক্ষার প্রতিশ্রুতি আমর! দিতে পারি ।” 
“একযোগে সম্মতির ভঙ্গীতে নড়ে উঠল গোলাপী মুখগুলি। 

“ডে” বস আমাকে বলল, “প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবেতুমি এখানে 
নিজেকে অপচয় করছ। যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে সরকারকে চুরি কবরে 
আনা বিধি নিয়মের ভিতরে পড়ে, সেখানে তুমি হবে 'অথুল্য ॥ 
ছমকফিসে দেখা কোরো এগারটার সময় ।% 

আমি জানতাম ওই উক্তির অর্থ। 


1১৯৯ 


“তাহলে ওই লোকট। ছিল বাঁদরদের প্রেলিডেনট”, আমি ভাবলাম, 
“বেশ, কিস্ত;আমাকে বললেই পারতো |» 
“ বললে তুমি ধাক্কা! খেতে নাকি 1” 


আঠার 


ভিটাগ্রাফোক্ফোপ 
জীবন্ত চিত্রের দৃশ্যাবলী 


বিচিত্রানুষ্ঠান মূলত কাহিনী আশ্রিত এবং যোগসূত্র রহিত। এর 
দর্শকবৃন্দ রহস্যজালের উন্মোচন আশ করে না। প্রতিটি দৃশ্যের 
পরিসমাপ্তির অতিরিক্ত কিছু চাওয়। পাপ। কেউ জানতে চায় ন! 
কমেডির গায়িকা কতবার প্রেমে পড়েছিল, ষদি পাদপ্রদীপের সামনে 
থাকা কালে ছু একবার উঁচু পর্দায় ও কণ্ঠস্বর ধরে রাখতে পেরে 
থাকে । দর্শক মাথা! ঘামায় না খেল। দেখানোর কুকুরটা আগুনের 
শেষ রিংট। লাফ দেবার পরে মরলে কি খোয়াড়ে গেল। সাইকেলে 
যে ব্যক্তি মজার খেল। দেখায় সে যখন স্টেজের ওপর একরাশ চিনে 
মাটির বাসনের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে তখন কেউ ডাক্তারের ইস্তাহার 
আশ। করে না। তেমনি তারা বিবেচনা করে না দাম দিয়ে টিকিট 
কিনেছে বলে তাদের জানবার অধিকার আছে আইরিশ একক 
অভিনেতা আর মহিলা ব্যার্জো শিল্পীর মধ্যে হৃদয় দেওয়া নেওয়ার 
সম্পর্ক আছে কি নেই। 

অতএব যবনিক1 শেষবারের মতো! সেই চিরপরিচিত দৃশ্ট নিয়ে 
উত্তোলিত হবে ন। যাতে মিলিত প্রেমিকযুগল, পশ্চাৎপটে খলনায়ক, 
একপার্থ্থে কৌতুকময় ভূত্য ও দাসীর সশব চুম্বন॥ আটআনার 
দর্শকদের হস্তে-কুকুর স্বরূপ লোলুপতার মুখে মাংসের টুকরোর মতো! 
ছুড়ে দেওয়া.হয়ে থাকে । 

এই অনুষ্ঠান শেষ হবে হু একটি ছোট্ট দৃশ্যের পরে । তারপর প্রস্থান 
পর্ব। যারা শো-এর শেষ পর্যস্ত বসে থাকবে তার। হয়ত চেষ্টা করলে 
সেই ক্ষীণ সুত্রটি ধরতে পারবে বা বেঁধে রেখেছে ( যদিও খুবই আলগা 
ভাবে ) এই কাহিনী যেটা ফোধহয় একমাত্র ওয়ালরাসেরই কাছে 
বোধগন্য । 


৪৬ 


একটি পত্রের উদ্ধৃতি, লেখক প্রথম ভাইস প্রো্সডেনট রিপাবলিক 
ইনস্থ্যর্যানস কোমপানি, নিউইয়ক সিটি, পক্ষে মিঃ ফ্রাঙ্ক গুডউইন, 
কোরালিও, আঞ্চুরিয়। প্রজাতন্ত্র : 
প্রিয় মিঃ গুডউইন, 

নিউ অলিয়নসের হাউল্যাণ্ড আযাণ্ড কুরসেট এর মাধ্যমে আপনার 
লেখা পত্র আমাদের হস্তগত হয়েছে । সেই সঙ্গে তাদের ড্রাফট 
এন. ওয়াই-এর ওপর একলক্ষ ডলারের, ষে অঙ্কের অর্থ কোমপানির 
তহবিল থেকে প্রাক্তন প্রেসিডেনট প্রয়াত জে. চাচিল. ওয়ার ফিলড 
সরিয়ে ছিলেন ।**.কোমপানির অফিসার ও ডিরেকটর গণের সম্মিলিত 
অনুরোধে তাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি-_হারানে! 
অঙ্কের সমস্ত টাক! ত্বরিত এবং প্রশংসনীয় প্রত্যার্পণের জন্য, হারানোর 
হু সপ্তাহের মধো । আপনি আশ্বস্ত থাকবেন এই বিষয়টি সবপ্রযত্তে 
পোপন রাখ! হবে । অত্যন্ত হুঃখিত হলাম মিঃ ওয়ারফিলডের শ্বহস্তে 
বেদনাদায়ক মৃত্যুর কথা জেনে, কিন্তু" -অভিনন্দন গ্রহণ করুন । 

আপনার ও মিস ওয়ারফিলডের বিবাহের-**প্রভৃত সৌন্দর্য, 
সবজয়ী স্ু-স্বভাব, মহিয়সী নারীস্থলভ প্রকৃতি এবং উচ্চতম নগর 
সমাজে শ্রাদ্বনীয় সুখ্যাতি-_ 

আন্তরিকভাবে আপনার, 
লুসিয়াদ ই আযাপলগেট, 
প্রথম ভাইস প্রেসিডেনট, রিপাবলিক ইনন্যুর্যানস কোমপানি। 


শেষ অধ্যায় 
চতচন্ভা্ি 





৬-ন্ব শ্শব্স 


ৃশ্ত £ আর্টিস্টের স্টুডিও, শিল্পী এক যুবক, মরমী, অন্ৃভাব 
আকৃতি, বিষ ভঙ্গিতে ভূগীকৃত স্কেচের মধ্যে বসে আছে, মাথা রেখেছে 
নিজের হাত ছুটির মধ্যে । স্টুডিওর মধ্যস্থলে একটি কেরোল্সি, 
স্টোভ, পাইন কাঠের বাকসের ওপর । শিল্পী উঠে দাড়ায়, কোমরে 
বেলট টেদে বাকলস-এর জিব লাগায় আর একটি গর্তে, স্টোে 


৬ ৬ ছি 


আগুন ধরায়। সে উঠে যাঁয়, একটি পর্দার অর্ধেক আড়ালে দেখা 
যায় একটি টিনের কটির বাকস, যার থেকে সে বের করে সমেজের 
একটি মাত্র গাঁট, বাকসটি উলটে দেখায় আর নেই, সসেজটি ক্রাইং 
প্যানে রেখে স্টোভে চাপায়। স্টোভের আগুন নিবে যায়, বোবা 
যায় আর তেল নেই। শিল্পী হতাশ হয়ে সসেজটি তুলে ধরে, হঠাৎ 
রেগে গিয়ে ছুড়ে সেটা ফেলে দেয়। সেই সময় দরজা খুলে যায়, 
এক ব্যক্তি ঢোকে, সসেজটি লাগে তার নাকে । সে যেন চেঁচিয়ে ওঠে 
নাচের ভঙ্গিতে হ-একটি পা! ক্ষেত তালে চলে । আগন্তকের লাল মুখ, 
ছটফটে, কৌতৃহলী চেহারা, মনে হয় জাতিতে আইরিশ । এর পরে 
দেখা! যায় সে প্রবল হাসিতে ফেটে পড়ছে । স্টোভটা সে লাথি 
মেরে ফেলে দেয়। শিল্পীর পিঠে চাপড় লাগায়, শিল্পী বৃথাই তার 
হাত ধরে বাধ! দেবার চেষ্টা করে। তারপরে সে মুকাভিনয় স্থুরু করে 
যার থেকে বুদ্ধিমান শ্রোতা বুঝতে পারে যে সে অনেক টাকা 
রোজগার করেছে হীন্ুয়া আর ক্ষুর বিক্রি করে কডিলিয়ের। পৰত 
আঞ্চলে রেড ইনডিয়ানদের কাছে ন্বর্ণ-রেণুর বিনিময়ে । পকেট থেকে 
বের করে ছোট পাউরুটির সাইজের একটি নোটের তাড়া। মাথার 
ওপর সেটা সে দোলায়, এবং সেই সঙ্গে হাতের ভঙ্গিতে গ্লাস থেকে 
পান কর! বোঝাতে চেষ্টা করে। শিল্পী তার টুপী নেয় এবং হুজনে 
একসঙ্গে স্টংডিও ত্যাগ করে। 
বালির উপরে লিখন 

দৃশ্য £ নাইস-এর সমুদ্রতট-__একটি স্ত্রীলোক, সুন্দরী, এখনও যৌবন 
আছে, সুচারু বেশবাস, আত্মতৃপ্তা, আত্মসমাহিতা, জলের ধারে ঝু'কে 
বসে বালির ওপরে আঁচড় ক।টছে ছাতার ডাটি দিয়ে। মুখের সৌন্দর্য 
হুধিনীত, ওর শিথিল ভঙ্গি, তোমার মনে হবে সাময়িক-_তুমি 
অপেক্ষা কয়ো, উচ্চকিত, যে কোন সময়ে ওকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বা 
পিছলে যেতে ব৷ হামাগুড়ি দিয়ে চলতে দেখবে, যেন একটি চিতাৰাঘ 
ফোন এক-অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ পাষাণ, স্থির হয়ে আছে। অলসভাবে 
ও বালিতে জাচড় কাটে, যে কথ! ও সর্ধদা লিখে থাকে সেটি 
পইসাবেল? | কয়েক গজ দূয়ে এক ব্যক্তি বসে থাকে । তুমি বুঝতে 
পারো! ওর। সঙ্গী, সাথী বদি একাস্ত নাও হয়। মুগ্ের রং গাঢ়, মন্থণ, 
প্রায় হর্জেয়--কিত্ত পুরোপুরি নয় | ওরা পক্সক্পরে কোন ক! বলে 


ৎ*২ 


না। পুরুষটিও বালির ওপর আঁচড় কাটে তার ছড়ি দিয়ে--যে শকটি 
সে লেখে সেটি 'আপ্চুরিয়া”। তারপরে সে দিগস্তে তাকায় যেখানে, 
ভূমধ্যসাগর আর আকাশ একত্রে মিলেছে, দৃষ্টিতে তার মৃত্যুর 
ছুজ্ঞেয়তা। 

অরণ্য ওতুমি 


দৃশ্য £ এক ভদ্রলোকের জমিদারীর সীমানা, কোন এক উষ্ণমগ্ডলের 
দেশে । একজন বৃদ্ধ রেড ইনডিয়ান, মেহগনি রঙের মুখ, একটি 
সমাধিস্থলের ঘাস ছাটছে, সুন্দরী গাছের জলার ধারে। শীশ্রই সে 
উঠে দীড়ায়, চলতে থাকে ঘনিয়ে আস গোধূলির ছায়ায় আচ্ছাদিত 
একটি কুঞ্জের দিকে । সেই কুঞ্জের কিনারায় এক ব্যক্তি দাড়িয়ে আছে, 
যার আকৃতি শক্তিশালী, ভঙ্গি বিনভ্রখ এবং একটি স্ত্রীলোক যার 
সৌন্দর্য শাস্ত এবং সুস্পষ্ট । বৃদ্ধ রেড ইনডিয়ান যখন তাদের কাছে 
আসে তার! ওই ব্যক্তির হাতে অর্থ দেয়। সমাধি রক্ষক তার জাতীয় 
বৈশিষ্ট্য মতো! ভাবলেশহীন গর্বের সঙ্গে সেই অর্থ নিজের প্রাপ্যরূপে 
গ্রহণ করে, তারপরে চলে যায়। 

হুজনে কুঞ্জের কিনারায় ঘুরে বেড়ায়, অন্ধকার পথ ধরে ঘনিষ্ঠ ভাবে 
হাটে, আরে! ঘনিষ্ঠ, আরো, আরো-_পৃথিবীর চলচ্ছবির শ্রেষ্ঠতম দৃশ্য 
আর কী হতে পারে সেই চিরন্তন দৃশ্যের থেকে, যে দৃশ্টে বৃত্তাকার 
ছোট প্রান্তরে যুগল নরনারী ঘনিষ্ঠভাবে চলতে চলতে দিগন্তে অপন্ত 
হয়। 


২৭৩ 


৪. হেনরী 


ও. হেনরীর আসল মাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার। জন্ম ১৮৬২ 
সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরে ক্যারোলাইন! 
রাজ্য, গ্রীণসবরোতে । বাবার নাম ডাঃ আলজারনন সিডনি 
পোর্টার। সদাহান্তময় মানুষ, যোগ্য ডাক্তারও--জীবনের শেবার্ঘ ব্যয় 
করেছিলেন কতকগুলি অসফল আবিষ্কারের চেষ্টায়। ও. হেনরীর 


সা ছিলেন বিদুষী, প্রতিভাশালিনী। গ্রীণসবরো৷ মহিলা কলেজে 
তিনি অলঙ্কার শাস্ত্র, গণিত, ন্যায়, জ্যোতিধিজ্জান ছাড়াও ফরাসীভাষ। 
যব করে শিখেছিলেন। ত্রিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান যক্ষারোগে 
_-সে সময়ে ও, হেনরীর বয়স তিন বছর। 

ও. হেনরীর একমাত্র শিক্ষিকা ছিলেন তীর পিসীমা, ইভলিনা! মারিয়া 
পোটার--সংক্ষেপে লিনা পিশী-ওরই ব্যক্তিগত শিক্ষায়তনে ও. হেনরীর 
বালাশিক্ষা-_জীবন ভোর ও. হেনরীর সরগ্রন্থের প্রতি ভালবাসা 
পিসীমার অনুপ্রাণনা-সমৃদ্ধ শিক্ষণ পদ্ধতির কারণেই । পনের বছর 
ৰয়সে ও. হেনরী তার কাকার ওষুধের দোকানে কেরানী হিসেৰে কর্মে 
প্রবেশ করেন-_ অল্পদিনেই সে অঞ্চলে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন, তার সহান্তয 
সহ্ৃদয় আচার ব্যবহার আর কার্টুন অঙ্কনের বিশেষ পারদগিতার জন্য । 
দোকানের বদ্ধ আবহাওয়া, অক্রান্ত পাঠাভাস আর শরীর চর্চার 
অভাবের জন্যে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে তাই হিতৈষা এক ডাক্তারের 
পরামর্শে চলে যান টেকসাসে লা সেল কাউনটিতে, ডাক্তারের ছেলেদের 
সঙ্গে যোগ দেন তাদের পশুচারণ ক্ষেত্রে। টেকসাসের পটভূমিতে 
লেখ! বু কাহিনী তিনি পরৰতাঁ কালে স্মরণীয় করে রেখেছেন। 
এরপরে তার কর্মক্ষেত্র টেকসাসের প্রধান শহর অস্টরিন। প্রথমে 
সম্পতির কারবারী একটি সংস্থায়, তারপরে জে. এল. অফিসে সহকারী 
নথি লেখকের পদে ১৮৯১ সাল পর্যস্ত। ১৮৮৭ সালে সতের বছরের 
একটি মেয়ের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিবাহ__এই বিবাঁতের ফলে একটি 
কন্যার জন্ম হয়েছিল৷ ভূমি রাজস্ব অফিস ছেড়ে অন্টিনের ফার্স্ট 
ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে কাউনটার ক্লার্ক হিসেবে যোগ দেন, একটি সাপ্তাহিক 
পত্রিকার প্রকাশনাও চলে একই সঙ্গে, পত্রিকাটি বেশি দিন টিকে 


৪৫ 


থাকতে পারেনি। ১৮৯৫ সালে হিউমটন ডেলি পোস্ট পত্রিকায় 
চাকরী নেন-_-এই পত্রিকায় তার লেখা ও অশকা ছবির জন্ত শীভ্রই 
সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি আসতে থাকে । 

১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তাকে তলব করেন 
ব্যাঙ্কে কাজ করবার কালে সংঘটিত তহবিল তছরুপের মামলায় 
অভিযুক্ত রূপে । মোট অর্থ যা নিয়ে মামলা সেট! ছিল ১১৫৩'৬৮ 
ডলার, যার মধ্যে আবার ২৯৯৬০ ডলার, অপহৃত হয়েছিল তিনি 
ব্যাঙ্কের চাকরী ছেড়ে দেবার পরে। খুবই সম্ভব তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ 
ছিলেন এবং অন্য লোকের ভূল বা দোষের জন্তে ব্যাঙ্কের দ্বারা অভিযুক্ত 
হয়েছিলেন, যে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম পরিচালনায় ছিল অনেক শৈথিল্য 
ও ক্রটি। তিনি বেকম্ুর খালাস নিশ্চয় পেতেন কিন্তু তার তীব্র 
কল্পনাশক্তি তাকে মৃঢ়তায় প্ররোচিত করেছিল। ট্রেনে একা একা 
অস্টিন অভিমুখে যাওয়ার পথে আসন্ন বিচার, সম্ভাব্য সাজা ও সঙ্গে 
অবমাননার চেতনা তার যুক্তি বিচারকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। 
অস্টিনের বদলে ট্রেন পরিবর্তন করে চলে যান নিউ অলিয়নস এবং 
সেখান থেকে পাড়ি দেন হ্রাস । আল জেনিংস ও অন্তান্ত পলাতক- 
দের সঙ্গে কয়েকমাস লাটিন আমেরিকার স্থানে স্থানে ঘুরে বেড়ান । 
১৮৯৭ সালের শুরুতে তিনি খবর পান তার স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়--ফিরে 
এসে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিনে ছাড়া পান। বিচার শুরু হয় 
এক বছর পরে-বিচার চলা কালে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিলিপ্ত ও 
নিবাক--পীচ বছরের জেলের সাজ! হয়ে যায় ওহায়ো পেনিটেন- 
শিয়ারিতে । ২৫শে এপ্রিল ১৮৯৮ সালে তিনি জেলে প্রবেশ করেন । 
কাকার ওষুধের দোকানে পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতা এখন কাজে 
লাগে। জেলের ডিলপেনসারীতে রাত্রের কেরাণীর কাজ তাকে দেওয়! 
হয়-_-কাজটি তিনি বিশেষ দক্ষতা ও মমত্ববাধের সঙ্গে সম্পন্ন 
করতেন । 

এর ফলে জেলের বাঁধাধরা কাজকর্মের থেকে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ মুক্তি 
পেয়েছিলেন, ভাল থাকার জায়গা এবং আরো অনেকগুলি স্ুবিধ! 
পেয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল অবসর সময়ে লেখার সুযোগ । তার 
গল্পগুলি বেরোতে থাকে বিভিন্ন পত্রিকায়, অধিকাংশ ও. হেনরী 
ছদ্মনামে নামটি তিনি জেলে প্রবেশ করার কিছুদিন পূর্বে গ্রহণ 


২০৬ 


করেছিলেন। ২৪শে জুলাই ১৯০১ সালে যখন বন্দীশালা ত্যাগ 
করেন তখন তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক এবং যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে 
মহত্বে পৌছানো একজন খাঁটি মানুষ, মানব দরদী আর ক্ষোভশৃন্য ! 
প্রথমে যান পিটসবার্গে, সেখান থেকে নিউইয়র্ক, জীবনের বাকি 
আট বছর কাটে সেখানেই। এই শহর ছিল তার কাছে অফুরন্ত 
প্রেরণার উৎস। কাঁজের সময়ের বাইরে প্রীয় সব সময় ভিনি 
কাটাতেন কাফেতে, রেস্তেবরায়, ক্যাবারেতে-__মিশতেন শকট চালক, 
অভিনেতা, কেরানী আর দোকানের মেয়েদের সঙ্গে, সংক্ষেপে সাধারণ 
লোকেদের সঙ্গে যাঁদের জীবনের প্রতি ছিল তার প্রগাঢ সহদয় 
আগ্রহ। প্রায় সবগল্পই তার লেখা এদের নিয়ে, চার নিষুত' যাঁদের 
তিনি বলতেন। তীর রচনা সম্ভার ছিল প্রচুর এবং দ্রেত, ১৯০৪ সাল 
থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে পথশশটি গল্প বেরিয়েছিল'অধিকাংশই 
সাপ্তাহিক পত্র পত্রিকাতে । 

১৯০৫ সালে তার প্রথম গ্রন্থ “ক্যাবেজেস আযাণ্ড কিংস' প্রকাশ পায়। 
দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চাৎপটে লেখা কতকগুলি উপাখ্যান উপন্যাসের 
আকাঁরে গাথা । এরপর প্রতি বছর ছুটি করে গল্প সংকলন প্রকাশ 
পেয়েছিল । ১৯০৮ সালে তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে । ১৯০৭ সালে 
দ্বিতীয় বার বিবাহ করেছিলেন । অতিরিক্ত পরিশ্রমে এবং সম্ভবত 
মাত্রাছাঁড়। মগ্যপানে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। 

১৯১০ সালের ৫ ই জুন নিউ ইয়র্কে তার মৃত্যু হয়। 


২০৭ 


॥ অনেষা্র আনান) তনুবাক গর্ত ॥ 


গল্প প 


হোইনরিষ ব্যোলের গল্প সংগ্রহ 
সম্পাঁদনা/ভাঁধাস্তর : নীহার ভট্টাচার্য 


আঙ্ষিন কল্ডওষ়েলের নির্বাচিত গল্প 
সম্পাদনা : সব্যপাটী দেব 


আইজাক সিঙ্গারের নির্বাচিত গল্প 
সম্পাদনা|ভাষাস্তর : বৌধায়ন মুখোপাধ্যায় 


শ্রেঠ গল্প গু 
চীনের শেঠ গল 
সম্পাদন? : রম! ভদ্রাচার্ষ/ সিদ্ধার্থ ঘোষ 


আমেরিকার শ্রেষ্ঠ গল্প 
সম্পাদন। : সিদ্ধার্থ ঘোষ 


রহস্তা উপন্যাস গু 
মৃত্যু মদির ছায়া/জন ভিকসন কার 
ভাষাস্তর : সস্তোঁষ চট্রোপাধ্যায় 


ডেড ম্যান নক/জন ভডিকসন কার 
ভাষ'স্তর : অসিত মৈত্র 


এ্যাসাসিনেশন ব্যুরো! লিমিটেড/জ্যাক লগ্ন 
ভাষাস্তর : সিদ্ধার্থ ঘোষ 


ফলেন এ্যাঞ্জেল/হাঁওয়ার্ড ফাস্ট 
ভাষান্তর : দেবকুমার মুখোপাধ্যায় 


২২০৮